![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশে সরকারি ও বেসরকারি চাকরির মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়েছে। পার্থক্য আগেও ছিল, তবে উল্টো রকমের। সরকারি চাকরির প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ চিরকালই ছিল, কিন্তু একসময় মেধাবী তরুণেরা বেসরকারি চাকরির প্রতি আকৃষ্ট
হতে শুরু করেছিলেন। ভালো বেতন, চ্যালেঞ্জ, আত্মবিকাশের সুযোগ—এসব কারণে মেধাবী তরুণেরা বেসরকারি চাকরির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছিলেন। কিন্তু অষ্টম বেতনকাঠামো বাস্তবায়নের পর অনেক ক্ষেত্রে সরকারি চাকরির বেতন বেসরকারি চাকরির চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। তার সঙ্গে সরকার গাড়ি ও বাড়ির ঋণসহ যেভাবে নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে, তাতে সরকারি চাকরির প্রতি তরুণদের আকর্ষণ আরও বাড়ছে।
সরকারি চাকরিতে ভালো বেতন দেওয়া হবে—এটা সমস্যা নয়, বরং সরকার যদি তা দিয়ে কুলাতে পারে, তাহলে এ নিয়ে মাথাব্যথার কারণ নেই। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের কাজটা ঠিকমতো করার প্রেরণা পাবেন, ঘুষ-দুর্নীতির প্রবণতা কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বেতন–ভাতা ও সুযোগ–সুবিধা বাড়ানোর পরও ঘুষ-দুর্নীতি কমেনি, বরং বেড়েছে।
বিআইডিএসের গবেষক মো. শহিদুল ইসলাম দেখিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে শ্রমশক্তির মাত্র ২ শতাংশের সংস্থান হয়। আর বাকি মানুষেরা কাজ করছেন বেসরকারি খাতে, তাঁদের একটি বড় অংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে বা আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত। ব্যাপারটা হলো, সরকারি চাকরির প্রতি মানুষের বেশি আগ্রহ দেখা যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। যেসব দেশ যত উন্নতি করে, সেসব দেশে সরকারি চাকরিতে প্রতিযোগিতা তত কমে যায়। এর পেছনে উন্নয়নের ইতিহাস-সম্পর্কিত কিছু কারণ আছে। দেশ যত অনুন্নত হয়, চাকরির বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক খাতের পরিধি তত ছোট হয় এবং তাতে সরকারি খাতের হিস্যা তত বেশি হয়। বিবিএসের শ্রমশক্তি জরিপের উপাত্তে দেখা যায়, গত ১৫ বছরে শ্রমবাজারে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের অবদান ছিল ৮০ শতাংশের ওপরে এবং স্ব-কর্মসংস্থানের অবদান ৪০ শতাংশের ওপরে। অর্থাৎ সরকারি চাকরির জন্য তুমুল প্রতিযোগিতার পেছনের একটি কারণ চাকরির নিরাপত্তা, অন্য কারণ সামাজিক মর্যাদা।
সমস্যাটা ঠিক এখানেই। যেখানে দেশজ উৎপাদনের সিংহভাগই বেসরকারি খাত জোগান দিচ্ছে, সেখানে তরুণদের এভাবে সরকারি চাকরিমুখী হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। এতে উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়। এখন সরকারের উচিত, কোন খাতে কত জনবল ও কী ধরনের দক্ষতা লাগবে, তা নিরূপণ করে সেসব খাতকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা। অথচ বাস্তবতা হলো, তরুণেরা সরকারি চাকরি খুঁজতে গিয়ে জীবনের সোনালি সময়ের চার–পাঁচ বছর নষ্ট করে ফেলেন। কর্মবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতাও তাঁরা রপ্ত করতে পারেন না।
বেসরকারি খাতের উচ্চ স্তরের কর্মকর্তারা মোটা মাইনে ও ভালো সুযোগ-সুবিধা পান, কিন্তু ব্যাংক বা বহুজাতিক কোম্পানি বাদে সাধারণভাবে বেসরকারি খাতের মাঝারি বা নিচু পদের কর্মীরা আকর্ষণীয় বেতন পান না। অথচ এই কর্মীরাই দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এই মানুষদের বঞ্চিত হওয়া কাম্য নয়। আরেকটি ব্যাপার হলো, বেসরকারি খাতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কার বেতন কত হবে, তার নির্দিষ্ট মানদণ্ড নেই। যদিও বলা হয়, এটা বাজারের ব্যাপার, যাঁর দক্ষতা বেশি, তাঁর বেতনই বেশি হবে। কথা সত্য, বাজার অর্থনীতিতে যাঁরা বেশি অবদান রাখবেন, তাঁদের বেতনই বেশি হওয়া উচিত। তবে বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রতিটি খাতের ন্যূনতম বেতন ও মজুরি থাকা উচিত। প্রতিবছর মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি হওয়া দরকার। তা না হলে বৈষম্য মাত্রাছাড়া হয়ে যাবে।
সরকারি কর্মকর্তারা অবসরের পর পেনশনও পান। বেসরকারি খাতের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা এ দেশে নেই, যদিও এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী অনেক দিন ধরেই কথা বলে আসছেন। এ বছরের বাজেট ঘোষণার সময়ও তিনি সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়ে তেমন একটা অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। তাই এখন বেসরকারি খাতগুলোরই এগিয়ে আসা উচিত। তারা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারকে চাপ দিতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো, বেসরকারি খাতে কারখানা ছাড়া ইউনিয়ন নেই বললেই চলে; কর্মীদের কথা বলার সুযোগ খুব কম। সেই সুযোগে মালিকেরা যা খুশি তা-ই করতে পারেন। এই পরিস্থিতির দ্রুত অবসান হওয়া উচিত।
বৈষম্য সারা পৃথিবীতেই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ বছর ধরে মধ্যম সারির কর্মীদের প্রকৃত আয় (মূল্যস্ফীতি সমন্বয়সহ) স্থবির হয়ে আছে। মাঝারি আয় ও শীর্ষ আয়ের ব্যবধানের দুই ধরনের ব্যাখ্যা আছে। দুটো ব্যাখ্যার মধ্যে কোনটা সঠিক, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রথম ব্যাখ্যা হচ্ছে, বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মতো নৈর্ব্যক্তিক ও অপ্রতিরোধ্য প্রক্রিয়াগুলোর ফলে নিম্ন দক্ষতার শ্রমিকের মজুরি কমে যায় আর উচ্চশিক্ষিতদের আয় বাড়ে। দ্বিতীয় ব্যাখ্যা হলো, মাঝারি আয়ের স্থবিরতা মূলত ধনীদের আয় বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ ফল—এই মতের লোকেরা মনে করেন, ধনীরা অন্যদের শোষণ করে আরও ধনী হচ্ছে।
বাজারের নিয়মে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না, তা ঠিক। কিন্তু এটাও মনে রাখা দরকার যে বাজারের অদৃশ্য হাত নেই। বাজার নিজের মতো করে সবকিছু ঠিক করে নিতে পারে না। এটি অত্যন্ত রাজনৈতিক ব্যাপার। সে জন্যই এতে সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার হয়। সরকারের উচিত, বেসরকারি খাতের নিম্ন ও মাঝারি দক্ষতার মানুষদের বেতন বা মজুরির ন্যূনতম মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেওয়া। তা না হলে এই মানুষদের যাপিত জীবন দিন দিন কঠিন হয়ে যাবে। তবে উচ্চ দক্ষতার মানুষেরা নিজেদের চাহিদামতো বেতন ঠিক করে নিতে পারেন।
আজকের বাজার অর্থনীতির যুগে বেসরকারি খাতই অর্থনীতির প্রাণ। কিন্তু সেই খাতের সিংহভাগ মানুষের মধ্যে বঞ্চনার বোধ থাকা অর্থনীতির জন্য ভালো কথা নয়। তাই বেসরকারি খাতের জন্য খাতওয়ারি পৃথক নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকা দরকার। আর অর্থনীতিতে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে ক্রমেই সংকুচিত করে প্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বড় করতে হবে। তাহলে মানুষ সরকারি চাকরির জন্য এত হন্যে হয়ে ছুটবে না। অর্থনীতিও গতিশীল হবে
Link সরকারি-ও-বেসরকারি-চাকরির-পার্থক্য-বাড়ছে
২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৩
ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা, তবে ভাই, লেখা প্যারা করে লিখলে ভালো দেখায়। ছবি যোগ করলে আকর্ষনীয় হয়।
একটা মজার বিষয় হলো যে, সরকারি চাকরি, আপনাকে দিবে টাকা, ক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা একসাথে।
তবে আশার কথা হলো, বাংলাদেশে এই সমস্যা থাকবে না, প্রাইভেট সেক্টরের প্রভূত উন্নতি হচ্ছে...
৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২১
ফেনা বলেছেন: হুম, পড়লাম। কথা ভালই বলেছেন। কিন্তু ভাই আপনার এই সুন্দর কথা এই দেশে কোন কিন কাজে আসবে না।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩১
রাজীব নুর বলেছেন: ১৯৪৬ সালের ১৪ অক্টোবর তারিখে লন্ডনে বিশ্বের ২৫টি দেশের প্রতিনিধিরা বিশ্বব্যাপী পণ্য-সেবার মান বজায় রাখার জন্য একটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মান নির্ধারক সংস্থার বিষয়ে ঐকমত্য পোষন করেন যা পরের বছর থেকে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এর পর থেকে প্রতি বছর ১৪ অক্টোবর তারিখে আন্তর্জাতিকভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে ।