![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্ষুদে চাকুরে , লড়াই করি জীবনের সাথে
২০০৭ সাল। মাস্টার্স পরীক্ষার্থী। থাকি চট্টগ্রাম শহরের বাকলিয়া এলাকার একটি বাড়ির নিচ তলার ফ্ল্যাটে এক বন্ধুর সঙ্গে।
বন্ধুটি বাড়ির মালিকের আত্মীয় হওয়ায় ওই ফ্ল্যাটটি আমার বন্ধুর নিয়ন্ত্রণে ছিল।
আমি তার অনুগ্রহে অস্থায়ী ভিত্তিতে সেখানে থাকতাম।
গ্রীষ্মের কোনো একদিন আমি কর্ণফুলী নদীর ওপারে আমার সেই বন্ধুর গ্রামের বাড়িতে তার পিতাকে দেখতে যাই।
বিকেলে শহরে ফিরে আসার জন্য একটি লোকাল বাসে উঠি। প্রচ- যানজটে বাস চলে তো চলে না, নড়ে তো নড়ে না অবস্থা।
গরমে আমি অতিষ্ঠ। অনেক্ষণ বসে থাকার পর শরীরের আড়মোড়া ভাঙার জন্য আমার সিটের পেছনে দুই হাত রেখে রিলাক্স হয়ে বসি। হঠাৎ অনুভব করলাম, পেছনের সিটে বসা কেউ আমার বাম হাতের আঙুলের নখে হালকা চাপ দিচ্ছে।
বিষয়টি প্রথমে গুরুত্ব না দিলেও পরক্ষণে অনুভব করলাম, সব আঙুলের নখে চাপ দিয়ে বাশি বাজানোর মতো করে কে যেন খেলা করছিল।
কৌতূহলবশত পেছনে তাকিয়ে এক যুবতী বোরখাওয়ালিকে দেখতে পেলাম।
চোখাচোখি হতেই সে লজ্জাবনত হলো।
আমিও সংকোচে আর কিছু বললাম না।
কালুর ঘাট বৃজের দক্ষিণ প্রান্তে এসে আমাদের গাড়িটি সিরিয়ালের জন্য লাইনে দাড়ালে অনেক মানুষ নেমে গেল।
মেয়েটি তার আসন হতে উঠে এসে আমাকে জানালো, তার পাশের সিটের লোকটি বিড়ি খাচ্ছিল। তার অসুবিধা হচ্ছিল। তাই সে আমার পাশের খালি আসনটিতে বসার অনুমতি চাইলো।
প্রচ- গরমে আমার তখন বমি বমি ভাব হচ্ছিল। তাই একজন নেকাব পরা বোরখাওয়ালির উষ্ণতা পাওয়ার কথা চিন্তা না করে বললাম, দেখুন, আমি গাড়িটা কিনে ফেলিনি। আপনি যেখানে ইচ্ছা বসতে পারে।
এ কথা বলে আমি গাড়ি থেকে কয়েক মিনিটের জন্য নিচে নেমের পানের দোকান থেকে একটি চকোলেট কিনলাম। পান দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করলাম, এই যানজট কতোক্ষণ স্থায়ী হয় ইত্যাদি।
পরক্ষণে লক্ষ্য করলাম, মেয়েটি আমার পাশে দাড়িয়ে আছে।
আমি তাকাতেই সে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি এই পান দোকানদারকে চেনেন?
আমি উত্তর দিলাম, চিনি না।
তখন সে বললো, তাহলে আপনি তার সঙ্গে কথা বললেন কেন?
এতো আনাড়ি প্রশ্ন শুনে বললাম, আপনি কি আমাকে চেনেন?
সে উত্তরে বললো, না।
বললাম, তাহলে আপনি আমার সঙ্গে কথা বললেন কেন?
মনে হলো আমার কথায় সে লজ্জা পেল।
পরে তার সঙ্গে কিছু কথা বললাম। যেমন, সে কোথায় যাবে, কি করে, আমি কোথায় নামবো, কি করি ইত্যাদি।
ততোক্ষণে আমাদের বাস ছেড়ে দিলে আমরা পাশাপাশি আসনে বসলাম।
গাড়ি কালুর ঘাট বৃজে উঠলে সে আমার মোবাইল ফোন নাম্বারটি চাইলো।
বললাম, আমি মোবাইল ফোন ব্যবহার করি না।
কিছুক্ষণ পর দুর্ভাগ্যবশত আমার মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। স্বাভাবিক ভাবে কল রিসিভ করলাম।
কথা বলা শেষে সে আমাকে প্রশ্ন করলো আমি সবার সঙ্গে এ রকম মিথ্যা কথা বলি কি না।
সঙ্গে সঙ্গে তাকে বলা মিথ্যা কথাটা আমার মনে পড়ে যায়। আমি খুব বিব্রত হয়ে তাকে সরি বললাম এবং আমার মোবাইল ফোন নাম্বারটি তাকে দিলাম।
ততোক্ষণে গাড়ি গন্তব্যে এসে গেলে দ্রুত নেমে পড়লাম।
বাসায় এসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। হঠাৎ মোবাইল ফোনে অপরিচিত কল এলো।
রিসিভ করলে জানলাম সেই মেয়েটি।
জিজ্ঞাসা করলাম, হঠাৎ কেন কল করলেন?
উত্তর দিল, আমি নাম্বারটি সঠিক দিয়েছি কি না তা জানার জন্য। সে বললো, মাঝে মধ্যে শহরে এলে আমাকে কল করলে আমি তার সঙ্গে দেখা করবো কি না।
আমি চেষ্টা করবো বলে তাকে আশ্বস্ত করে কথা শেষ করি।
এক সপ্তাহ পর আবার কল এলো।
দেখা করলাম চক ভিউ মার্কেটের সামনে।
তারপরের সপ্তাহে আবার কল এলো।
রিসিভ করলে বললো, সে আমার বাসার সামনে দাড়িয়ে আছে। খুব ক্লান্ত। তাই আমার বাসায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে চাইলো।
আমি ব্যাচেলর মেসে থাকি। তাই সম্ভব নয় বলার পরও সে আমাকে অত্যন্ত বিনীতভাবে অনুরোধ করতে থাকলো।
তখন আমার সেই বন্ধুকে ফোন দিয়ে কথাটা জানালে সে অনুমতি দিল।
মেয়েটিকে বাসায় নিয়ে এসে কলা-বিস্কিট দিয়ে অতিথেয়তা করলাম।
ততোক্ষণে আমার বন্ধু এসে হাজির।
প্রাথমিক পরিচয় পর্ব শেষে বন্ধু আমাকে অন্য রুমে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো আমি মেয়েটির সঙ্গে কোনো কিছু করতে ইচ্ছুক কি না।
বললাম, কখনো না।
তখন বন্ধু আমাকে জরুরি প্রয়োজন আছে বলে বাইরে চলে যাওয়ার অনুরোধ করলো।
বন্ধুর অনুগ্রহে ফ্ল্যাটে থাকার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেয়েটিকে গিয়ে বললাম, জরুরি প্রয়োজনে আমি বাইরে যাচ্ছি। তুমি এবারের মতো চলে যেতে পারো অথবা বিশ্রাম নিতে পারো। আমার বন্ধু বাসায় থাকবে।
এ কথা শোনার পর মেয়েটি আরো কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে রাজি হলো।
আমি পরাজিত কাপুরুষের মতো বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম।
আমার গুণধর বন্ধুটি আমার জমিতে এরপর বীজ বপন করলো। শুধু তাই নয়, আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ আমাকে দেখানোর জন্য আমার বন্ধু তার মিনি ভিডিও ক্যামেরায় মেয়েটির সঙ্গে তার মিলনের পুরো দৃশ্যটি গোপনে ভিডিও করে রাখলো। রাতে আমি বাসায় এলে সে ভিডিও দৃশ্যটি আমাকে দেখালো।
জিজ্ঞাসা করলাম, এতো অল্প সময়ে অল্প পরিচয়ে কিভাবে তুমি এতো দূর এগিয়ে গেলে?
বন্ধু উত্তর দিল, আমার অডিও-ভিডিও সিডি দোকানে বেচার জন্য অনেক সিডি বাসায় ছিল। সেখানে এমন একটি সিডি ছিল যার শুরুতে সুন্দর কাহিনী। তারপর ব্লু দৃশ্য ছিল। আমি সিডি ক্যাসেটটি কম্পিউটারে চালু করে ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছুক্ষণ অন্য রুমে চলে যাই।
প্রথমে সুন্দর দৃশ্য দেখে মেয়েটিও মনোযোগ দিয়ে ছবিটি দেখতে থাকে। কিছুক্ষণ পর খারাপ ভিডিও শুরু হলেও সে তা দেখতে দেখতে তার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ঠিক এই সময় আমার বন্ধু রুমে এসে ক্যাসেটটি বন্ধ করতে চাইলেও মেয়েটি চালানোর অনুরোধ করে। তার আগেই আলনার কাপড়ের নিচে বন্ধু তার ভিডিও ক্যামেরাটি চালু করে অন্য রুমে চলে যায়।
এভাবে শুরু হয় তাদের মিলন পর্ব। তা প্রতি সপ্তাহে দুই-তিনবার করে চলতে থাকে।
এখন মেয়েটি আর আমার সঙ্গে কথা বলে না। গুরুত্ব দেয় না। ফোন করলে রিসিভ করে না।
ইতিমধ্যে মেয়েটির অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।
সে বিয়ের নিমন্ত্রণ দেয়ার জন্য এলে আমরা দুই বন্ধু তার সঙ্গে শেষ বারের মতো দেখা করি।
তার হবু বরের মোবাইল ফোন নাম্বার দেখে আমার বন্ধু চমকে ওঠে।
সে ছিল ঢাকা শহরের এক শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং আমার বন্ধুর ফুপাতো ভাই।
বন্ধু তার মোবাইল ফোন থেকে মেয়েটির হবু বরকে ফোন দিলে জানালো, সে এমন একটি মেয়েকে বিয়ে করছে যে মেয়েটির ব্যাংক একাউন্টে সাত-আট লাখ টাকা জমা আছে। টাকার লোভে সে মেয়েটিকে বিয়ে করতে যাচ্ছে।
মোবাইল ফোনের লাউড স্পিকারে এ কথা শুনে মেয়েটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
এরপর আমরা দুই বন্ধু একটি পরিচিত ফার্মাসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেয়েটিকে বাড়ি পাঠিয়ে দিলাম।
তার আর কোনো খবর নিইনি।
আমিও বন্ধুর ফ্ল্যাট ছেড়ে চাকরির প্রয়োজনে ঢাকা চলে আসি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৩:৫৮
অপ্রচলিত বলেছেন: সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের বাস্তব চিত্র।