![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্ষুদে চাকুরে , লড়াই করি জীবনের সাথে
আব্বাকে অনেকবার বলেছি যে পাঁচবার পানি দিয়ে ওযু করতে না গিয়ে এর বদলে তায়াম্মুম করলে ভাল হয়। কারণ তিনি তো অসুস্থ। হাঁটতেও পারতেন না ঠিকমত। 'ওয়াকার' অর্থাত্ হাঁটার জন্য একটি সাপোর্টের সাহায্যে শুধুমাত্র খানিকটা জায়গা যেতে পারতেন। কিন্তু আব্বা নামাজে মনের সর্বাত্মক প্রশান্তির জন্য প্রতিবার ওযু করতেন ঐ ওয়াকারে ভর করে। আমার অনুরোধটাকে পাশ কাটানোর জন্য শিশু সুলভ মুচকি হাসি হাসতেন শুধু। শিশুর মত হাসি। যা ছিল তাঁর জীবনের মহামূল্যবান দু'টো সম্পদ অর্থাত্ সততা ও সরলতার বহিঃপ্রকাশ। চৌধুরী নাসিমুল বাকী, বলছিলাম আমার বাবার কথা। যিনি গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৩ তে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গেছেন অন্তিম গন্তব্যে। একজন সত্, সরল ও লোভহীন মানুষের বিদায়। এর আগে নভেম্বরের ৩ তারিখ ঐ ওয়াকারটির সাহায্যে নামাজ পড়ার জন্য ওযু করতে গিয়ে হঠাত্ পড়ে যান। তারপর ব্রেইন স্ট্রোক এবং বাঁ দিক সম্পূর্ণ প্যারালাইজড। প্রায় দু'মাস হাসপাতালে সর্বাত্মক চেষ্টার পরও লাইফ সাপোর্টে চলে যান নিমুনিয়া ও ডায়াবেটিকস এর কারণে। এরপর লাইফ সাপোর্ট চলতে চলতেই থেমে যায় সব।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের প্রস্থানের পর সাধারণত কিছু বাক্য উচ্চারিত হতে শোনা যায় যেমন—'বাবা-মা থাকতে বোঝা যায় নাই তাদের গুরুত্ব', 'ছায়া সরে গেল বটবৃক্ষের', 'আহা সেবা করার সুযোগটা যদি পেতাম আরেকবার'। অনেকে বলেন 'কষ্ট দিয়ে দিয়েছি না বুঝে' এ উপলব্ধিতে মাতম করতে থাকেন তারা। আমার ব্যক্তিগত অনুভূতিটা একটু অন্যরকম। আমার বাবার জীবদ্দশায় আল্লাহ আমাকে যতটুকু ক্ষমতা দিয়েছেন তার মধ্য থেকে তার সন্তুষ্টির জন্য সর্বাত্মক করার চেষ্টাটা অন্তত করেছি। আমার মনে হয়েছে তিনি আমার ওপর সন্তুষ্ট ছিলেন। এটা অন্যদের থেকে আমি শুনেছি যাদেরকে তিনি বলেছেন। আব্বাকে সন্তুষ্টচিত্তে রাখতে পেরেছিলাম এটা এখন গর্ব করে বলতে পারার তৃপ্তি উপভোগ করছি। আমি বাবা চলে যাওয়ার তীব্র কষ্টের পাশাপাশি। আব্বাকে ঘিরে যে কোন বিশেষ দিনগুলোসহ তার পছন্দের বিষয়গুলো খেয়াল রাখার চেষ্টা করছি সব সময়। তিনি যে আয়োজন করতে বলেছেন তাও আমি পরিপূর্ণভাবে তাঁকে আনন্দ দেয়ার জন্য চেষ্টা করেছি। বিগত 'বাবা দিবসে' তার জন্য একটি উপহার দিয়েছিলাম। 'আড়ং' বাবা দিবসের ঐ উপহার প্যাকেটে ২০১৩ সালে একটি সুন্দর স্টিকার দিয়েছিল। স্টিকারে লেখা ছিল 'Love you BABA'। আমার আব্বা ঐ স্টিকারটি দেখে এতটাই খুশী হয়েছিলেন যে নিজ হাতে উনি ওটা তাঁর ঘরের দরজায় লাগিয়ে ছিলেন। পরে আমাকে বলেছিলেন— 'তোর জন্য এটা এখানে লাগিয়ে রেখেছি'। একজন সন্তানের কাছে এর চাইতে বড় উপহার আর কিইবা হতে পারে। আমি তাঁর সুখ ও আনন্দকে বড় করার চেষ্টা করেছি আমার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। জীবন চলার ক্ষেত্রে তাঁর আদেশ, নির্দেশ ও উপদেশ পালনের মাধ্যমে। তিনি খুশী হয়েছেন আমার কৃতকর্মের সফলতায়। এটাই একটি বড় প্রাপ্তি আমার কাছে। গত বছর এই দিনে রাত ১২টা ১ মিনিটে আমার বাবা-মা'কে নিয়ে একটি কেক কেটে আনন্দ করেছিল আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা। এবার থেকে ঐ কেকটি আর কাটতে হবে না আমাকে। কারণ এ বছরের (২০১৩) ঐ দিনটি অর্থাত্ ৩০ ডিসেম্বর আমার জন্মদিনের দিনটিতেই আমার বাবা চলে গেলেন। দিনটি আমার জন্মের তার বিদায়ের। তোমার হল শুরু, আমার হল সারা।
বাবা-মায়ের জন্য একটি দোয়া পবিত্র কোরআন থেকে সব সময় পড়া হয়ে থাকে। সূরা বনী ইস্রাঈল এর ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে আছে— 'সদাচরণ করবে পিতা-মাতার সাথে, তাঁদের একজন কিংবা উভয়ে বার্ধক্যে পৌঁছিলে তাঁদের উদ্দেশ্যে উহ্ শব্দটুকু বলবে না এবং না তাদেরকে ধমক দিবে, বরং কথা বলবে আদবের সাথে। বিনয় নম্র অনুকম্পিত থেকো তাঁদের সম্মুখে, আর বলবে— আয় আমার রব্ব; তাঁদের (বাবা-মায়ের) প্রতি অনুগ্রহ কর, শৈশবে যেভাবে তাঁরা আমার প্রতিপালন করেছেন অর্থাত্ 'রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানী সাগীরা'। পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোসহ বিভিন্ন আদর্শ ভিত্তিক শিক্ষা আমাদেরকে সব সময়ই এটা বলে আসছে যেন আমরা বাবা-মায়ের ব্যাপারে যত্নশীল হই। তাই যাদের বাবা-মা এখনো বেঁচে আছেন তাদেরকে উপরের আয়াতের আলোকে মনে রাখতে হবে যে আমাদেরকে যেমন শিশুবস্থা থেকে তাঁরা স্নেহ, মমতা ও শক্তির ছায়া দিয়ে লালন পালন করেছেন, বড় করেছেন। সে রকম আমাদেরও দায়িত্ব পড়েছে তাদেরকেও সেরকমভাবে সম্মান ও যত্ন করার। এ ব্যাপারে কোন শৈথিল্য চলবে না। একটি গানের কলিতে শুনেছিলাম— 'তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন, বনস্পতির ছায়া দিলেন সারাজীবন। সারাজীবনের পাওয়া ঐ ছায়াকে যেন আমরা অনুভব করি বাবা-মায়ের জীবদ্দশাতেই। তাদের মৃত্যুর পর কখনোই নয়।'
Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১০:১১
জো জো বলেছেন: দোয়া করি আল্লাহ আপনার বাবাকে জান্নাতবাসী করুন।