![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“খুবই সাধারণ একটা ছেলে। আলাদা করে বলার কিছু নাই। আমার মাঝে বিশেষত্ব না খুঁজতে যাওয়া ই ভাল। অনেক বেশি বৃষ্টি বিলাসী আমি, বৃষ্টির জল এ সবকিছু ধুয়েমুছে শুদ্ধ কররার অভিপ্রায়। যে বৃষ্টি এলে ঝুম্ বৃষ্টিতে ভিজে যায়। আমার ধারণা বৃষ্টি এলে যদি না ভিজি আমরা,তাহলে বৃষ্টি খুব কষ্ট পায়।হৃদয় একলা করা নীল জোছনায় স্বপ্নকে আলোকিত করি। আমার বাসার পাশে একটা জল দিঘী ছিলও ,এখনও আছে। যেখানে সন্ধ্যা হলে আমি একা একা বসে থাকতাম , এলোমেলো ভাবনা নিয়ে। সবসময়ই সবাই কে হাসিখুশি রাখতে চাই... দেখতে চাই...সবার ভালবাসা পেতে চাই এবং সবার ভালবাসা পেয়ে আমি সত্যি অভীভূত !! জীবন নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই। কিছু কষ্ট আছে , সেটা না থাকলে বোধোহয় সুখী হতে পারতাম না। আমি তাই বিশ্বাস করি।””
বৃষ্টি টা তখন পুরোপুরি থেমে গিয়েছে। কখনও হিমেল বাতাসে গাছের পাতা থেকে জল ঝরছে। তার ই একবিন্দু জল পরতেই , সাজ্জাদ শিহরিত হয়ে উপরে তাকালও।
শেষ বিকেলে আকাশের বুকে জমাট বাঁধানো মেঘ। সাজ্জাদ আর বুকে ও ওরকম একটা কষ্ট আছড়ে পরেছে। অধর কাঁপানো কথা গুলো কাউকে বলতে না পেরে-ই, আজ ভেজা পিছঢালা পথে নেমেছে সে। একটু অজানা দূরে গিয়ে যদি কষ্টগুলো ভেজানো যায়, যদি খসে পরে বুক থেকে, মন থেকে কিংবা পুরো অস্তিত্ব থেকে!
সব ই “যদির” উপর নির্ভরশীল। ভেজা অনুভুতি গুলোকে সাথে নিতেই ,রাস্তার মাঝে দেখল, এলো চুলে আঁচল ছড়িয়ে একটা মেয়ে বসে আছে নির্বাক চিত্তে।
বিস্ময়ের পুরো রেশ নিয়ে সাজ্জাদ মেয়েটির খুব কাছে চলে গেল। মেয়েটির পরনে রক্তজবা রঙ এর লাল শাড়ি। হাজার কৌতূহল এর ভিড়েও , সব চেষ্টাকে নিস্ফল করে দিয়ে , মেয়েটি নিজেকে দেখতে দেয়নি।
রেখে দিলো শুভ্র জোছনার হাহাকারে। সাজ্জাদ আর না পেরে প্রশ্ন ই করে বসলো,
কে তুমি? মাঝ পথে বসে আছো এভাবে?
সাজ্জাদ এর মনে হলও মেয়েটি ক্ষীণ হেসে বলছে,
আমি পরবাসিনী! শুনেছি তোমার অনেক কষ্ট?
হতভম্ব সাজ্জাদ বলল,
তুমি কিভাবে জানলে?
-বৃষ্টির জল এসে ছুঁয়ে বলে গেছে আমায়! পরবাসিনী যে আমি, যাকে তোমরা চায়ের কাপ আর সিগারেট এর তিক্ত ধোঁয়ায় উড়িয়ে দাও!! কিংবা কাব্য করে বানাও বনলতা সেন, নয়তো অবুঝ গাঁয়ের কচি ধান পাতায় মিশে থাকা পল্লীবালা। কিংবা শহুরে হাওয়ায় বেল্কনিতে দাঁড়িয়ে থাকা কোন যুবতী। এতো আয়োজন করে যার মন পেতে চাও, সে কি তোমার মন জানে না?
-কি চাও তুমি?
-তোমার কষ্টের সাথে যোগ করবো এক আজন্ম পরবাসিনীর কষ্ট !
-এতে কি লাভ তোমার?
-দেখতে চাই, এরপরও তুমি কষ্ট হাতড়ে বেড়াও কিনা।
থমকে যাওয়া সাজ্জাদ কিছু বলতে পারল না। পরবাসিনী নিজেকে ঠিক আগের মতই আড়াল করে বলল,
এক বীরঙ্গনার কথা বলি তোমায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে তাঁর ভাইদের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে নিজেকে সমর্পণ করেছিলো নির্দ্বিধায়, পাকিস্তানি বুনো হায়নাদের কাছে। দুর্ভিক্ষের ক্ষুধার্ত কুকুরের মত ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো সেইসব বুনো দল। নিথর দেহে নির্বিকার ভাবে সে এঁকেছিল এই বাংলাদেশ। ঠোঁটের কোণায় লেগেছিল বাঁকানো হাসি। যেন বুনো হায়নাদের প্রতি তাচ্ছিলের উপহাস।
সাজ্জাদ হতভম্বের মত চেয়ে রইল। তাঁর দুচোখে নদীর চিরচেনা জোয়ার। সন্ধ্যা পেরিয়ে ক্রমশ রাত নামছে। পরবাসিনীকে ঘিরে ধরল জোনাকির মিছিল। পরবাসিনী দুহাতের মুঠোয় জোনাকি নিয়ে বলল,
এক জোছনা প্রেমীর গল্প শোন। প্রবল জোছনার বানে তাঁর মনে অজানা হাহাকার তৈরি হতো। সেই হাহাকারের সন্ধানে এক রাত এ প্রিয় আঙ্গিনা ছাড়তেই পরিনত হল,
কুৎসিত শিকারির শিকারে। না, লোভনীয় সেই যৌবনকে সেদিন অবাক জোছনা বাঁচাতে পারেনি। জোছনাবিলাসী সেই মানবীকে , জোছনার জল টেনে নিয়েছিলো গভীর মমতার আবেগে। মানবী যে ঝলসানো পরিনয় চায়নি!!
সাজ্জাদ এর বুকের ঠিক মাঝখানটায় মোচড় দিয়ে উঠলো যেন। কপলে নোনা জল পানির স্রোত। জোছনা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুরো দুনিয়াকে। আহারে! সেই মানবী আর দেখছে না।
পরবাসিনী বলেই যেতে লাগলো অকৃপণ গলায়,
এক পল্লীবধূর কথা শোন। সবে মাত্র যৌবনে পদার্পণ হতেই, তাকে জড়িয়ে দেওয়া হল শুভ পরিণয়ে। সেই নাবালিকা বধূ কল্পনাই করেনি কি এক বিভীষিকা অপেক্ষা করছিলো তাঁর পরিণয়ে। দুচোখে ছিল গোছানো সংসারের মায়া। তাঁর স্বামীর পাশবিক নির্যাতনে গোছানো সংসার হল অগোছালো। বাড়ির পিছনে লেবু বাগানে ঝরাত নিবৃতে চোখের জল। হায়! কে জানতো, সেই লেবুবাগানেই শায়িত হবে যৌতুক বলী হওয়া নববধূটির।
সাজ্জাদ দুহাতে দুকান চেপে ধরল।আর কোন পরবাসিনীর কষ্ট সে শুনতে চায় না। পরবাসিনী না তাকিয়েই বলল,
এখনই থামিয়ে দিতে চাইছ? তোমার রমণী এখনও বেল্কনিতে দাঁড়িয়ে তোমায় খুজছে। তোমাকে ফেরারী করতে চায়নি সে। তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ব্লাড ক্যান্সার। যেদিন থেকে সে একথা জানে, তোমার প্রতিটা নীল খাম আর চিঠি সযত্নে রেখে দিয়েছে বুকের মাঝখানে। শুধু ফিরিয়ে দিয়েছে তোমায় ফেরানোর ছলে। তাঁর এই ভয়ংকর অস্ততিতে তোমার কোন অস্তিত্ব জন্মাতে দিতে চায় না সে! তুমি যাবে কি? একবার গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরো, মাথাটা বুকের সাথে চেপে ধরবে? খুব কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা!!
সাজ্জাদ স্তম্ভিত হয়ে হাঁটু ঘেরে বসে পড়ল। পরবাসিনী উঠে দাঁড়িয়ে চলে যেতে লাগলেই , সে বলল,
পরবাসিনী, তুমি কেন আমায় এসব বললে?
শুধু তোমাকে উপলব্ধি করাতে, তোমার চাইতেও অন্য এর কষ্টও অনেক বেশি প্রখর হতে পারে। তুমি যেখানে কাপুরুষের মতো যেতে চাইছিলে, সেখানে তোমায় যেতে দিলাম না।
আর তোমার রমণী যেখানে যাবে, যাওয়ার সময় যেন তোমার ঢের ভালবাসা ,গভীর মমতায় জড়িয়ে নিতে পারে।
-কিন্তু তুমি কে পরবাসিনী?
একটা হালকা দখিণা বাতাস এসে পরবাসিনীর চুল উড়িয়ে নিয়ে গেল,
পরবাসিনীর পরিচয় কোন দিন জানতে হয় না, কখনও জানতে ও চেও না। তোমার আশেপাশেই অসংখ্য পরবাসিনী আছে। পারো তো , সেইসব পরবাসিনীর কষ্টে এক ঝাঁক ফানুস উড়িয়ে দিও। যাতে সেইসব কষ্টরা ফেরারী হতে না পারে। ফেরারী ফানুস পরবাসিনীরা চায় না।
(সমাপ্ত)
View this link
©somewhere in net ltd.