![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বের যে দেশেই বামপন্থিরা ক্ষমতায় এসেছে বা আসতে চেয়েছে সেখানেই চলেছে দ্বিমুখী চক্রান্ত। একটা হচ্ছে দেশের ভেতরে আরেকটি দেশের বাইরে। মানে বামপন্থিদের একদিকে মোকাবিলা করতে হয়েছে দেশিয় প্রতিপক্ষ তথা দক্ষিণপন্থি ও মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক শক্তিকে অন্যদিকে মোকাবিলা করতে হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী দেশ তথা বিভিন্ন পুঁজিবাদী সংস্থাকে। এই অপশক্তিগুলো বরাবরই বামপন্থিদের ভয় পেয়ে এসেছে। তাই যেকোন ব্যবস্থায় বামপন্থিদের দমন করতে এরা মরিয়া।
এটা নতুন নয়। ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের স্বাধীনতা প্রদানের ক্ষেত্রে দোদুল্যমান ছিল, কারণ তাদের আশংকা ছিল ক্ষমতা যেন বামপন্থিদের হাতে না চলে যায়। বলতে দ্বিধা নেই-ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অনেকটা দানে পাওয়ার মত। এবং মাহাত্মা গান্ধীসহ জাতীয়তাবাদী নেতারা ব্রিটিশদের নিশ্চিত করেছিল ক্ষমতা অন্তত কমিউনিস্টদের হাতে যাবে না।
একই চিত্র আমরা দেখতে পাই দক্ষিণ আফ্রিকায়। নেলসন ম্যান্ডেলা মুক্তি পেলেও ক্ষমতায় থাকতে তিনিও সাম্যাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদীদের সাথে আপোষ করেন যাতে ক্ষমতা কমিউনিস্টদের হাতে না যায়। একারণেই দক্ষিন আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য কমে নি।
বাংলাদেশেও একই অবস্থা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেলেও প্রকৃত মুক্তি আসে নি। সদ্য স্বাধীন দেশটা সাম্রাজ্যবাদ প্রচারক আমেরিকার বন্ধু রাষ্ট্রে পরিণত হল। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছিল। পরবর্তীতে ৭৫ এর মর্মান্তিক ঘটনার পর সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে বাদ দেয়া হল। চলতে লাগল বামপন্থিদের নিয়ে অপপ্রচার, নির্যাতন, হত্যা ও গুম। যে অপপ্রচার এখনও অব্যাহত এবং কমিউনিস্টরা পুঁজিবাদীদের চক্ষুশূলে পরিণত। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও রাজনৈতিক দলগুলো সাম্রাজ্যবাদী ও পুঁজিবাদী দেশ এবং সংস্থার তাবেদারি করে যাচ্ছে যাতে ক্ষমতায় থাকা যায়, এবং লুটপাটতন্ত্র অব্যাহত রাখা যায়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ করাও হয়েছেে এই উপমহাদেশে।
এবার আসা যাক এই বিষয়টা নিয়ে গ্রীসের প্রসঙ্গে। গ্রীসে ক্ষমতায় আসে অ্যালেক্সিস সিপ্রাসের বামপন্থি সরকার। অমনি বিশ্বসংস্থাগুলোর গা জ্বালা শুরু হল। একারণেই দেখা গেল ফ্রান্সের মত ইউরোপীও ইউনিয়নের প্রভাবশালী দেশগুলোকে যেখানে ঋণ দিতে ইইউ নমনীয় হচ্ছে সেখানে গ্রীসের বেলায় জুড়ে দিচ্ছে কঠিন শর্ত। এছাড়া ঋণদাতারা যেসমস্ত শর্ত দিয়েছিল সেগুলো একটা দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়িয়ে তোলে। আরও পরনির্ভরশীল করে তোলে। এ প্রসঙ্গে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যানের একটা কথা উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি বলেছেন- “ ইউরোপের স্বঘোষিত টেকনোক্র্যাটরা মধ্যযুগের ডাক্তারদের শত রোগীর যন্ত্রণাকাতরতা পছন্দ করে। তাদের চিকিৎসা যখন রোগীকে আরও রুগ্ন করে দিত, তখন তারা রোগীর আরও বেশি যন্ত্রণাকাতরতা চাইত।” কিন্তু ঋণদাতাদের শর্তের প্রেক্ষিতে গ্রীসের জনগন সিপ্রাসের আহবানে সাড়া দিয়ে ৬১ শতাংশ না ভোট প্রদানের মাধ্যমে পুঁজিবাদী বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। বামপন্থী সরকারকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে গ্রীসে।
তবে গ্রীসকে সুকৌশলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নতুন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নির্মাণে। যাতে তারা একটি বৈষম্যহীন সমাজের মডেল দাঁড় করাতে পারে বিশ্বের সামনে।
©somewhere in net ltd.