![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যাকাত নিতে এসে ২৭ টি প্রাণ পদদলিত হওয়ার ঘটনায় অনেকেই কথিত উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এটা স্বাভাবিক। কারণ নিম্ন আয়ের দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের কথা বলা হলেও সামাজিক সূচকে এদেশের মানুষের অবস্থা কেমন তা এই যাকাত প্রদানের ঘটনা থেকে অনুমেয়।
যাকাত হল ইসলামের ৫ টি মূল স্তম্ভের একটি। ধনী ব্যক্তিদের সম্পদের একটি অংশ গরীবদের দান করার জন্য ধনীদের জন্য এটি ফরজ করা হয়েছে। তার মানে যাকাতের আশায় এই গরীব মানুষদের সংখ্যা ও চিত্রই বলে দেয় দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য কতটা চরমে। এটি শুধু ময়মনসিংহ নয়, গোটা বাংলাদেশের চিত্র।
আমাদের একটা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছেেএকটা সার্টিফিকেট যেকোনভাবে অর্জন করা। কারণ ঐ সার্টিফিকেট শো করে বুক টান করে কথা বলা যায়। এই ধরুন, শিক্ষার মান নিয়ে ভাবার দরকার নেই-কেবল একটা সার্টিফিকেট হলেই হল; সেটা টাকার বিনিময়ে হলেও চলবে। এরকম আমরা একটি সার্টিফিকেট অর্জন করেছিলাম জনসমক্ষে ধূমপান মুক্ত দেশ হিসেবে। কিন্তু তা আর কেউ মানে না। আর রাষ্ট্র তো চরম উদাসীন সব ব্যাপারেই। যাই হোক, ছেলে মেয়েরা পাঠ্যপুস্তকে কিন্তু পড়তে থাকবে বাংলাদেশ জনসমক্ষে ধূমপান মুক্ত দেশ এবং তারা গর্বিত হবে, কিন্তু আসল চিত্রটা জানবে না্
আবার, আমাদের আরও একটি সনদ আছে, সেটি হল গণতন্ত্রের সনদ। বিশ্ববাসী জানে বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। কিন্তু এদেশে কতটা গনতন্ত্র আছে তা দেখলে আব্রাহাম লিংকন বুড়িগঙ্গায় ঝাঁপ দিতেন !
ঠিক সেরকম সনদ লাভের জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শান্তির মডেল উপস্থাপন করে বিশ্ববাসীর কাছে প্রশংসিত হন, অথচ তার দেশেই শান্তির মা মরে যায় প্রতিদিন। এমনকি পার্বত্য অঞ্চলের শান্তি বুটের তলায় চেপে রেখেছে রাষ্ট্র।
ঠিক একইভাবে বুক টান করে উন্নয়ন প্রচার করতে তথাকথিত উন্নয়ন চিত্র, জিডিপি দেখিয়ে আমরা সার্টিফিকেট অর্জন করেছি নিম্ন মধ্যম আয় করা দেশ হিসেবে। অথচ এদেশের মানুষ এখনও যাকাতের জন্য প্রাণ দেয়। তাহলে বিশ্বব্যাংকের মানদন্ডে ঘোষিত মাথাপিছু আয় মূলত কাদের ? মূল সত্যটি হল- এদেশে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য এখনও চরমে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপের দিকে চোখ বুলালেই এটা স্পষ্ট বোঝা যায়। মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (মিক্স) শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- সামাজিক সূচকে বাংলাদেশে গ্রাম ও শহরের পরিবারগুলোর মধ্যে বিরাট বৈষম্য বিদ্যমান। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৪২ শতাংশই খর্বাকৃতির এবং এদের ৫৩ শতাংশই দরিদ্র পরিবার থেকে আসা। আর ৭৪ শতাংশ দরিদ্র পরিবার সন্তান প্রসবের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মি পায় না। ফলে তাদের মধ্যে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বেশি। পক্ষান্তরে ৭৩ শতাংশ ধনী পরিবার প্রসবের সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মি পান। এমনকি দরিদ্রদের ৫৩ শতাংশ পরিবারে ১৮ বছরের আগেই বিয়ের ঘটনা ঘটছে, ১৮ শতাংশ পরিবারের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগেই।
আবার, দেশে ক্রমাগত ভিক্ষুকের সংখ্যা বাড়ছে। কই তাদের পূর্ণবাসনের কোন ব্যবস্থা তো নেয়া হচ্ছে না। তারাও আজ লাইন ধরে দাঁড়াচ্ছে যাকাত নেবার আশায়। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকদের বেতন দিতে তালবাহানা করছে, সেই শ্রমিকদের মাথাপিছু আয় কি বেড়েছে ? তাদের অবস্থা কি উন্নত হয়েছে ? কেউ নায্য মজুরির জন্য মার খাচ্ছে, কেউ যাকাতের জন্য মার খাচ্ছে। এই যখন প্রকৃত অবস্থা তখন এটা তো নিঃসন্দেহে বলা যায়, এদেশে গণতন্ত্র যেমন ধণীক শ্রেণীর গণতন্ত্র তেমনি উন্নয়নও ধণীক শ্রেণীর উন্নয়ন। আপামর জনসাধারণের উন্নয়ন নয়।
©somewhere in net ltd.