নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিরাজগঞ্জে জন্ম, পৈতিৃক নিবাস মাগুরা। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে যুক্ত আছি। সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলাম। কবিতা, গল্প ও ফিচার লিখি।

সুদেব চক্রবর্তী

ঢাকা।

সুদেব চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা দুঃখিত, হে মহান ঈদ

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৩২

আমরা দুঃখিত, হে মহান ঈদ। আমরা লজ্জিত হে প্রতিক্ষীত শাওয়ালের চাঁদ।
আপনাকে এবার এসেই দেখতে হবে কিশোর রাজনের এক ফোটা পানির জন্য করুন চিৎকার যা ভেসে বেড়াচ্ছে এই জনপদের বাতাসে বাতাসে। আরও অনেক রাজনের গুপ্ত চিৎকার চাপা পড়ে আছে আমাদের অকর্মণ্য চেতনার আড়ালে। আপনি নিশ্চয়ই জানেন- পিটিয়ে হত্যা আমাদের দেশে নতুন নয়। চোর-ডাকাত সন্দেহে জনতা মানুষ পিটিয়ে মারার ওস্তাদ। বউ পেটানোর নিদর্শনও বহু। আপনি বলবেন-দেশে কি বিচার আইন নেই ? এখানেই কবি নিরব। কারণ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও পিটিয়ে হত্যা করেই কখনও কখনও তাদের কর্ম সম্পাদন করে। এভাবে বিচার বর্হিভূত হত্যার ঘটনা এখানে ধারাবাহিকভাবে চলে। অথচ অপরাধীর বিচারের জন্য আইন আছে, কিন্তু বিচারবর্হিভূত হত্যার কারণে আরও অপরাধ বেড়ে গেছে, কমে নি। কারণ কেউ গুম হলে, খুন হলে বোঝার উপায় নেই যে তাকে পুলিশ-র‌্যাব এ ধরল না তার প্রতিপক্ষের কেউ ধরল। আবার সেটা চিহ্নিত করা গেলেও তার নায্য বিচার মেলে না। সংগতকারণেই আপনিই বলুন হে পবিত্র ঈদের পরিশুদ্ধ চাঁদ- রাজনদের মৃত্যুর দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে কি ? হে মহান ঈদ, আমরা বিব্রত যে- আপনিও লজ্জা পেলেন যখন শুনছেন একজন মন্ত্রীর বক্তব্য যা রাজন ইস্যু নিয়ে নোংরামি ছাড়া কিছু নয়। অবশ্য আমরা মাইন্ড করি নি, কারণ ওনার মত আবাল মন্ত্রীরা প্রায়শঃই নানা ঘটনা নিয়ে উদ্ভট মন্তব্য করেন।
আমরা আরও লজ্জিত হে খুশীর চাঁদ, আমরা নিজেদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হবার গৌরব প্রচার করছি। কিন্তু এখনও যাকাতের আশায় মানুষ এতটাই ছুটে বেড়ায় যে যাকাতের কাপড় তার কাছে কাফনের কাপড় হয়ে ওঠে। পোশাকের কথা বলতেই মনে পড়ে গেল আরেকটি কথা। আমরা পোশাক রপ্তানিতে ব্যাপক উন্নতি করেছি। এবারের ঈদেও আপনি দেখতে পাবেন বাহারি রকমের পোশাক। কিন্তু দুঃখের সাথে আপনাকে জানাচ্ছি যে, এই পোশাকের যারা কারিগর, যাদের ঘামের সোঁদা গন্ধ পারফিউমে ঢেকে র‌্যাম্পে হেঁটে যায় শ্রেষ্ঠতমারা সেই শ্রমিকদের ঈদ উদযাপন অনিশ্চিত। কয়েকমাসের বেতন, বোনাস না পেয়ে তারা নেমেছে রাজপথে। বৃষ্টির পানিতে তাদের চোখের পানি ধুয়ে যাওয়ায় আপনার চোখে ওসব পড়বে না কিন্তু পুঁজিপতিদের বর্ণাঢ্য ঈদ আয়োজন আপনার চোখে মুগ্ধতা ছড়াবে।
তবে কি জানেন হে শুভ ঈদ, আপনার জন্য কেবল একটি সুসংবাদ সাঁজিয়ে রেখেছি আমরা। সেটি হল আমাদের ক্রিকেটের আরেকটি সিরিজ জয়, এখানে আবার লজ্জাও পেতে পারেন। কারণ জয়ের অন্যতম নায়ক সৌম্য ঈদ আয়োজনে অংশ নিলেও নামাজ পড়ে না। ও তো বিধর্মী, আপনার অনুসারীদের মতে কাফের- মালাউন। তাই তো ওকে নিয়ে ইফতার করায় মাশরাফিরা কত কথা শুনলো। কিন্তু আমরা মাইন্ড করিনি, কারণ এরাই সেদিন এই সিরিজ জয়ের আরেক টাইগার নাসিরের বোনকে অশালিন কথা বলেছিল। কুকুরের ঘেউ ঘেউ শোনার দরকার আছে কি ? বেশি ঘেউ ঘেউ করলে মুগুড় তো আছেই, ঠিক বলেছি না ? কিন্তু সবখানে এই মুগুড় প্রয়োগ করতে পারব কিনা সন্দেহ। কারণ এই তো দেখছি জাতীয় পতাকার উপর দাঁড়িয়ে একজন মুমিন নামাজ পড়ছেন। এটা নিয়ে কিছু বললেই বলা হবে আমি ধর্মের বিরূদ্ধে বলেছি। আমার জন্য তেড়ে আসবে ধারালো চাপাতি। কী জানি, আপনাকে এই কথাগুলো বলার জন্য ইতিমধ্যে কেউ কেউ আমার পিন্ডি চটকাচ্ছে কিনা।
হে মহান ঈদ, হে মহান শাওয়ালের চাঁদ, আপনাকে স্বাগত জানাই তবু। আপনার পরশে এই অসংগতিতে ভরা সমাজ কিছুটা তো স্বস্তি পাক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.