নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিরাজগঞ্জে জন্ম, পৈতিৃক নিবাস মাগুরা। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে যুক্ত আছি। সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলাম। কবিতা, গল্প ও ফিচার লিখি।

সুদেব চক্রবর্তী

ঢাকা।

সুদেব চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই আমার স্বদেশে

০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:১২

এই জনপদে একদিকে যেমন চলছে ধর্ষন ও নারী নির্যাতনের ধারাবাহিকতা তেমনি থেমে নেই খুনের ঘটনা। গত তিন মাসে সারাদেশে ৬৯ জন শিশু নির্মম নির্যাতন ও খুনের শিকার হয়েছে। রক্ষা পায় নি গর্ভস্থ শিশুটিও যে কিনা জন্ম নিল বুলেটের ক্ষত নিয়ে। চারিদিকে যখন এসব নিয়ে হই চই তখন আবারও পূর্বের ধারাবাহিকতায় ব্লগার হত্যা।

২০১৩ সাল থেকে এই হত্যা মিশন শুরু হয়েছে। সেই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয় রাজীব হায়দার শোভনকে, ৯ এপ্রিল হত্যা করা হয় আরিফ রায়হান দ্বীপকে, ১৪ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয় জাফর মুন্সিকে, ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা করা হয় মামুন হোসেনকে, ২মার্চ জগৎজোতি তালুকদারকে, ৯ডিসেম্বর জিয়াউদ্দিন জাকারিয়াকে, গতবছর ৩০ সেপ্টম্বর হত্যা করা হয় আশরাফুল আলম সুজনকে, চলতি বছরে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ রায়কে, ৩০ মার্চ ওয়াশিকুর বাবুকে, সম্প্রতি অনন্ত বিজয় দাশ এবং সর্বশেষ গতকাল নিলয় নীলকে হত্যা করা হল। গত আড়াই বছরে খুন হল ১০ জন ব্লগার।

একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন কেন তাদের খুন করা হচ্ছে ? দায় স্বীকারকারী মৌলবাদীরা বলছে যে তারা নাস্তিক এবং ধর্মের সমালোচনাকারী। কিন্তু কথা হচ্ছে একটি রাষ্ট্র যেমন হিন্দু মুসলাম বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের থাকার অধিকার রয়েছে তেমনি নাস্তিকদেরও থাকার অধিকার রয়েছে। এমনকি সবারই মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। কারো লেখা বা বক্তব্যে মতবিরোধ হলে পাল্টা যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা সভ্য সমাজের নীতি। কিন্তু এখানে যুক্তির বদলে চাপাতি কিংবা রামদা ব্যবহৃত হচ্ছে কেন ?

মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ কেন্দ্র করে মৌলবাদীরা ব্লগারদের উপর নাখোশ হয়। তখন থেকেই তারা বিভিন্নভাবে অপপ্রচার ছড়াতে থাকে। বলা চলে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচীর পাশাপাশি প্রজন্মকে অংশ নিতে হয়েছে সাইবার যুদ্ধেও। কেবল তাই নয় যারাই মঞ্চ বা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কথা বলেছে তাদেরকেই ইসলামের দুশমন বা নাস্তিক আখ্যা দেয়া হয়েছে। একপর্যায়ে মৌলবাদীরা অস্ত্র নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে। সেই সময়ে হেফাজতে ইসলাম ৮৪ জনের একটি হিট লিস্ট তৈরি করেছিল। বলা বাহুল্য, এই ধারাবাহিক ব্লগার হত্যা সেই হিট লিস্ট অনুযায়ি চলছে এবং নিলয় নীলের নাম সেই লিস্টে ৮০ নম্বরে ছিল। তার মানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবী ও গণজাগরণ মঞ্চের উপর প্রতিশোধ নিতে ব্লগার হত্যা অন্যতম প্রধান কারণ। আর এক্ষেত্রে রাষ্ট্র বা প্রশাসন একেবারে ব্যর্থ। আরো পরিস্কারভাবে বলা যায় রাষ্ট্র এ ব্যাপারে উদাসীন। কারণ ইসলামের লেবাস পড়া রাষ্ট্র বাংলাদেশ বরাবরই মৌলবাদীদের সন্তুষ্ট রেখে এগোতে চেয়েছে বারবার। এটি নতুন নয়। সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যে সেদিন রাষ্ট্রর এই চিত্রটি আরও একবার প্রকাশ পেয়েছে। এরকম কথায় মৌলবাদীরা আরও সাহসী হবার সুযোগ পেয়েছে। আরও বড় সংকট হল এই প্রতিক্রিয়াশীলরা সাংগঠনিক ও প্রযুক্তিগতভাবেও প্রশাসনের চেয়ে এগিয়ে।
তারা মূলত স্লিপার সেল গঠন করে কিলিং মিশন পরিচালনা করে। একেকটি সংগঠনে প্রায় শতাধিক স্লিপার সেল রয়েছে। সেলের সদস্যরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে দক্ষ। টার্গেটকৃত ব্যক্তির অবস্থান রেকি করা থেকে হত্যা করা পর্যন্ত এই সেল কাজ করে। সেলের কর্মিরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করে থাকে গোপন আইপি ঠিকানা বা ইন্টারনেট প্রটোকল। তাই একদিকে এই অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করতে রাষ্ট্রের যেমন রয়েছে কৌশলগত দক্ষতার অভাব তেমনি শক্তিশালী স্বদিচ্ছারও অভাব।

কিন্তু কেন এমন হল ? এর কারণ দেশে দিন দিন সাম্প্রদায়িকতা লালন করা। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। স্বাধীনতার পূর্বকাল থেকেই দেশে সাম্প্রদায়িক শিক্ষার প্রসার দিন দিন উৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে এই মাটিতে একটি যুক্তিবাদী ও বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণ সম্ভব হয় নি। এই দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না। কিন্তু সমস্যাটি এখন এত প্রকট যে রাষ্ট্র কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে থাকছে। এমনকি রাষ্ট্রের এই ব্যর্থতার সাথে যোগ হয়েছে বিগত বছরে জামাতের রাজনীতি ও জঙ্গিবাদের প্রত্যক্ষ রাষ্ট্রীয় মদদ যা আজকের পরিস্থিতি তৈরিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে।

তাহলে সমাধান কোথায় ? আমরা কি আফগানিস্তান বা পাকিস্তানে পরিণত হতে যাচ্ছি ? এই প্রশ্নটি করেছিলাম প্রখ্যাত কবি ও শিক্ষাবিদ বোরহান উদ্দিন খান জাহাঙ্গীর স্যারকে। তিনি আমাকে বলেছিলেন যে এদেশ তেভাগা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের দেশ। এদেশে এখনও প্রজন্ম রাজপথে নামে। সুতরাং বাংলাদেশ কখনও আফগানিস্তানে রূপ নেবে না। আমি স্যারের আশাতে ভরসা রাখতে চাই, কিন্তু আজকে সেই রাজপথে নামা প্রজন্মই আঘাতের শিকার। আঘাত করছে প্রজন্মেরই একটা অংশ। আবার ধর্মের জিকির তুলে দেশের বিরাট অংশ রয়েছে নিরব। এটা স্পষ্ট যে, দেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনের অভাব-নোংরা রাজনীতি ও বেড়ে চলা বিচারহীনতার সংস্কৃতি ধর্ষন-খুনকে আলোর পথ দেখিয়েছে। তাহলে কোন পথে হাটছি আমরা? কী করে বলি এই মৃত্যু উপত্যকা আমার স্বদেশ ? দেশে সত্যিকার অর্থে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। বঙ্গবন্ধুর কাছে অমল সেন স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চেয়েছিলেন, অথচ সেই বঙ্গবন্ধুকেই অস্বাভাবিকভাবে খুন হতে হয়েছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৫

হামিদ আহসান বলেছেন: কেন এমন হল দেশটাতে .......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.