নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সিরাজগঞ্জে জন্ম, পৈতিৃক নিবাস মাগুরা। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের সাথে যুক্ত আছি। সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলাম। কবিতা, গল্প ও ফিচার লিখি।

সুদেব চক্রবর্তী

ঢাকা।

সুদেব চক্রবর্তী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আদিবাসীদের স্বীকৃতি কতদূর ?

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:২০

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের মধ্যাহ্নে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হওয়া র‌্যালিতে হাঁঠছিলাম আর আর নানান রঙ ছড়ানো অনুভূতি ছুঁয়ে যাচ্ছিল চারপাশ। বাংলা একাডেমিতে ব্যান্ড দল ‘মাদল’-এর গান গুলোতেও উঠে এল আদিবাসীদের সংগ্রাম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতির নানা কথা। বাস্তবিক অর্থেই বাংলাদেশের আদিবাসীদের সংগ্রাম এখনও চলমান।

অবাক হই যখন দেখি আদিবাসীরা এদেশে নিজ ভূমে পরবাসীর মত হয়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের ভূমি দখল, খুন, ধর্ষনসহ তাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। একাত্তরে পাক সেনারা বলেছিল- প্রত্যেকটি বাঙালির ঘরে একেকটা পাকিস্তানি জন্ম দাও- এই কথা বলে তারা নির্বিচারে ধর্ষন চালিয়েছিল। একইভাবে বাঙালি সেটেলাররাও জুম্ম নারীকে বানিয়েছে ধর্ষিতা। তাদের মাতৃভাষার স্বীকৃতিটুকুও দেয়া হয় নি। চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বাংলা ভাষা। ফলে আদিবাসী শিশুরা পিছিয়ে পড়ছে শিক্ষাতেও। এই রাষ্ট্রীয় অনাচারে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের অনেক ভাষাও। ইউনেস্কো বলছে- আগামি ২০৯০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ৬০০০ হাজার ভাষার মধ্যে ৩০০০ ভাষা হারিয়ে যাবে। বলা বাহুল্য, বিলুপ্তির পথে এই ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের আদিবাসীদের ভাষাও রয়েছে। অবাক হতে হয় যখন ভাবি যে রাষ্ট্রটি রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার সম্মান বাঁচিয়েছিল সেই রাষ্ট্রই অন্যের মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি দিতে অপারগ। জাতি হিসেবে এটা লজ্জার নয় কি ? পার্বত্য অঞ্চলে চলছে অলিখিত সেনা শাসন। যেন স্বাধীন দেশে ব্যাপক একটা জনগোষ্ঠি পরাধীন।

মূল সমস্যাটি হচ্ছে- তাদের প্রকৃত স্বীকৃতির প্রশ্ন। রাষ্ট্র এখনও আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয় নি। এমন কি বলা হচ্ছে- এদেশে কোন আদিবাসী নেই। আদিবাসী শব্দটির পরিবর্তে ‘ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টি’ বা ‘উপজাতি’ আখ্যা দেয়া হচ্ছে। যদিও বর্তমান আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার করেছিল কিন্তু পরে তারা ঘোষণা দিল এ দেশে আদিবাসী বলে কিছু নেই। অথচ জাতিসংঘ প্রণীত আদিবাসী শব্দের যে সঙ্গা প্রদান করা হয়েছে তাতে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে কোন বাঁধা থাকে না। কারণ এটাই ঐতিহাসিক সত্য যে, জুম্মরা এই মাটিতে প্রাক-আগ্রাসন সময় থেকে বসবাস করে আসছে। কিন্তু তাদের জমি দখল ও আগ্রাসনের নোংরা মানসিকতায় আমরা তাদের স্বীকৃতি দিচ্ছি না। এমনকি তথ্যগত ভাবে বিভ্রান্ত ছড়িয়ে অপপ্রচার চালাতেও বদ্ধ পরিকর এক শ্রেণীর জাতীয়তাবাদী শ্রেণী।

এই নোংরা জাতীয়তাবাদ আদিবাসীদের ঠেলে দিয়েছে সংগ্রামের পথে। তারা অস্ত্র হাতে নিয়েছিল অধিকার আদায়ে। ১৯৯৭ সালে পার্বত্য শান্তিচুক্তি করা হয় যা নিয়ে এখনও বড় বড় কথা বলা হয়। কিন্তু সেই শান্তি চুক্তি কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে তা প্রশ্নের সম্মুখীন। শুধু তাই নয়, সেখানে বিভেদ বজায় রাখতে রাজনৈতিকভাবে কৃত্রিম গ্রুপিং সৃষ্টি করা হয়েছে। ফায়দা লুটছে বাঙালিরা। যেমনটি সম্প্রতি রাঙামাটিতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে ফায়দা লোটার আভাস পাই আমরা। কারণ সচেতন মানুষ মাত্রই জানে- মাতৃভাষার সংকটে ও নানাবিধ রাষ্ট্রীয় বৈষম্যে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে না। সুতরাং বাঙালিদের আধিপত্য নতুনভাবে সেখানে প্রবেশ করানো যাবে। অথচ কেউ কেউ এটাকে উন্নয়ন বলে বগল বাজাচ্ছেন।

অনেকেই মনে করছেন এই কথাগুলো অতি রঞ্জিত কথা। কিন্তু সত্য এটাই যে, আমরা অনেকেই পার্বত্য অঞ্চলের সব সংবাদ সব সময় পাই না। সংবাদ মাধ্যমে আমরা খুব কমই পাই।

আমরা যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গর্ব করি, সেই মুক্তিযুদ্ধেও আদিবাসীদের অবদান রয়েছে। তারা এই বাংলাদেশটার জন্য লড়াই করেছিল। তাদেরও জন্মভূমি এই বাংলাদেশ যেমনটা আমার আপনার। তাহলে কেন তাদের প্রতি এই বৈষম্য ? কেন তাদের দিকে ধেয়ে আসে অপহরন, খুন, ধর্ষন ও বাস্তুচ্যুত করার প্রচেষ্টা ?
একটা দেশে সব ধর্মের, সব বর্ণের, সব জাতির মানুষের বসবাসের অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার পদদলিত করা মানে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ করা। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রপাগান্ডায় মনে হচ্ছে এখনও সরকার আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিতে গড়িমসি করছে। এটা কোন সভ্য রাষ্ট্রের নীতি হতে পারে না। ফিরে আসি আবার ‘মাদল’ ব্যান্ডের গানের কথায়- পাহাড়ে, সমতলে মাদল বেঁজেছে। এই মাদল মুক্তির মাদল। বৈষম্য ভাঙার মাদল। সোনার বাংলায় এই বৈষম্যের চিত্র আসলেই কি মেনে নেয়া যায় ? রাষ্ট্রের শুভবুদ্ধির উদয় হোক, আদিবাসীরা তাদের স্বীকৃতি পাক। সেই স্বীকৃতির আগ পর্যন্ত আদিবাসীদের সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি......।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.