![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি। তবে এই ধারণা মিথ্যা হলেই ভাল। ১৯৭১ এ স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের কথা ছিল গর্ব করার মত একটি রাষ্ট্রে পরিণত হবার। কিন্তু তা আর হয় নি। কারণ সংবিধানে লেখা হল- গণতন্ত্র। বাস্তবে দীর্ঘ সময় চলল স্বৈরতন্ত্র। যদিও-বা গণতন্ত্র মুক্ত হল তথাপি প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা গণতন্ত্র ধর্ষিত হচ্ছে। ফলে গোটা রাষ্ট্রেই এইচআইভি আতংক।
সংবিধানে ছিল-জাতীয়তাবাদ। জাতীয়তাবাদ বলতে এখানে আছে উগ্র জাতীয়তাবাদ। কেউ কেউ মুসলিম জাতীয়তাবাদও প্রচার করছেন। এই জাতীয়তাবাদের মধ্যে বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
সংবিধানে বলা হল- সমাজতন্ত্র। সমাজতন্ত্র থাকলে শোষন চলবে কী করে ? শাসকরা স্বার্থ উদ্ধার করবে কী করে ? তাই সংবিধান থেকে কেবল সমাজতন্ত্রকে ঝেটিয়ে বিদায় করাই হয় নি বরং দেশে যারা সমাজতন্ত্রের কথা বলে তাদেরও যথাসম্ভব দমিয়ে রাখে রাষ্ট্র। তাছাড়া সমাজতন্ত্র ও কমিউনিস্টদের তো ইসলামে না-জায়েজ ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং ইসলাম কান্ট্রি বাংলাদেশে এদের প্রাপ্য কেবল চাপাতি।
সংবিধানে বলা হল- ধর্ম নিরপেক্ষতা। হায় হায় ! মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের দেশে কিসের ধর্ম নিরপেক্ষতা ? কারণ ইসলামে ধর্ম নিরপেক্ষতার অনুমোদন নেই। তাই রাষ্ট্রেরও ধর্ম হল। একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুসারীদের খুশি রাখতে কেবলমাত্র ধর্মীয় বিষয় বিবেচনা করে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করা হল, সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহ’ জুড়ে দেয়া হল, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে আযান দেয়ার বিধান চালু করা হল। ফলে সাম্প্রদায়িকতা ধীরে ধীরে পরিপুষ্ট হতে লাগলো। জনগনের মনস্তাত্বিকতাও দখল করে নিল এসব। রাজনীতিতে চলল এসবের ব্যবহার। সমৃদ্ধ হল জামাত., হেফাজত, আনসারউল্লাহ, হরকতুল জিহাদ....তালেবান....সর্বশেষ আইএস এর তৎপরতা।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী এসব দেখেই বলে দেয়া যায় ? একদমই না। কারণ এর সাথে আরো কয়েকটি বিষয় যুক্ত রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদের পদলেহনকারী। সাম্রাজ্যবাদীরাও আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর সুযোগ নেয়। অন্যদিকে অশান্ত অবস্থা বজায় রেখে ফায়দা লোটার জন্য জামাতসহ ধর্মান্ধগোষ্ঠিকে গোপন অর্থ দিয়ে পরিপুষ্ট রাখছে এই সাম্রাজ্যবাদীরাই, যেমনটি তারা সৃষ্টি করেছিল তালেবান। ধর্মান্ধ গোষ্ঠিরা তাই ভেতরের অনুকুল অবস্থার পাশাপাশি আভ্যন্তরীন শক্তিগুলোর সমর্থন তো পাচ্ছেই, সেই সাথে বাহ্যিক ভিত্তিটাও তাদের রয়েছে।
দেশে প্রতিনিয়ত মুক্তমনাদের হত্যা করা হচ্ছে, যুক্তির বদলে চলছে চাপাতি আগ্রাসন। এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন বিষয়। ইতালীয় নাগরিক খুন, আইএসের দায় স্বীকার, তার মানে বিদেশিরাও নিজেদের এখানে আর নিরাপদ ভাবতে পারছে না, পাকিস্তানের মত বাংলাদেশেও খেলতে আসা নিয়ে বিদেশিরা নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলছে।
এখন স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাণের মিত্র সাম্রাজ্যবাদীরা বলেতেই পারে- বাংলাদেশ জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। সুতরাং ঐ অঞ্চল সুরক্ষিত রাখতে মার্কিন সৈন্য অথবা ন্যাটো বাহিনী প্রেরণ করা হল। তারপর নজর চলে যাবে ভূগর্ভস্থ তেল-গ্যাস-কয়লার দিকে.......
তারপর ইরাক, আফগানিস্তানে যা হয়েছিল তাই হবে।
এভাবেই বাংলাদেশ পরিণত হবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে। কারণ সাম্রাজ্যবাদ ও মৌলবাদের বিকাশ ঘটাতে রাষ্ট্রই সহায়তা করেছে। এখন এটা এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে সহজে নিস্তার মিলবে না। তাছাড়া রাষ্ট্রের সদিচ্ছাও নেই। আর তাইতো অর্থনীতিতে ভেঙে পড়া গ্রিস যেটা করতে পেরেছে আমরা সেটা করতে পারি নি। প্রতিবেশি ক্ষুদ্র দেশ নেপাল ধর্ম নিরপেক্ষতা ও ভাষা প্রশ্নে যে দৃষ্টান্ত দেখালো আমরা তাও করতে পারি নি।
অথচ আমাদের রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মত ঘটনা যা আমাদের অহংকার। কিন্তু সবই হয়তো বৃথা যাবে। কারণ রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান নিয়ামক রাজনীতি, সেই রাজনীতিই বড্ড বেশি নোংরা। হুমায়ূন আজাদ যথার্থই বলেছেন, ‘একদিন সব নষ্টদের অধিকারে যাবে’।
©somewhere in net ltd.