![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের শৈশবটা ছিল খুব দুরন্ত। [যখন বয়স এগারো কিংবা বারো বছর ছিল। হিফজ বিভাগের ছাত্র ছিলাম] ক্লাস থেকে আসা মাত্রই নদীতে দৌড়। সময় বয়সী সবাই নদীতে ঝুপঝাপ করতে করতে চলে যেত প্রায় ঘন্টাখানেক সময়। পানিতে খেলা হতো মরিচ খেলা। ডুব দেওয়ার প্রতিযোগিতা হতো নদীতে৷ ডুব দিয়ে কে কত দূর যেতে পারে। কে কতক্ষণ ডুব দিয়ে পানির নিচে থাকতে পারে। কেউ কেউ এক ডুব দিয়ে নদীর অপর প্রান্তে চলে যেত, আবার কেউ ডুব দিয়ে একই জায়গা থেকে উঠে বলত কত দূর আসলাম।
মাঝে মাঝে দলবেঁধে নদীর ওই পারের ক্ষেতে হামলা দিতাম। প্রায় ক্ষেতে মিষ্টি আলু, বরবটি, শশা, ক্ষিরা এসব সবজি থাকতো। ক্ষিরা আর বরবটির সাথে কাচা মরিচ দিয়ে কামড় দিয়ে খাওয়াতে দারুণ এক মজা ছিল।
নিজেদের ক্ষেতে চুরি করতে ডুকে কতবার ধরা খেয়ে কতবার পানিতে চুবিয়ে রাখছিল বন্ধুদের। কেউ কেউ তরকারি বিক্রি করে আইসক্রিমের টাকা জোগাড় করত। ঘাটে নৌকা করে তরমুজ বিক্রিতা আসলে, একজন তাকে ব্যস্ত রাখে কথা বলে, অন্যজন নৌকা অন্য মাথা থেকে চুরি করত তরমুজ। জানাজানি হলে ক্ষেত থেকে তরকারি দিয়ে ক্ষতিপূরণ দেওয়া লাগতো।
শীতকালে নিজেদের ঘর থেকে রাতা কুরা (মুরগ, যেটা সব থেকে বড়) চুরি করে বৃহস্পতিবার রাতে
হিফজ খানায় চার পাচঁজনের পার্টি হতো। কেউ মশলা, কেউ মরিচ, কেউ তেল এবং কেউ রান্নার অন্যান্য উপকরণ নিয়ে হাজির। পরের দিন রাতা কুরা চুরির অপরাধে পাড়ার কয়েকজন চুরকে সন্দেহ করে মসজিদে মুরব্বিদের আলোচনা হয়তো।
আমাদের বয়সের সাতার জানে না এমন কাউকে খুজে পাওয়া যেত না। সবাই সাতার জানতো। অনেক মেয়েও সাতার জানতো। মেয়েরা একটু ভীতু হয়, তারা অফ টাইমে (যখন সাধারণত পুরুষরা গোসল করতে যায় না) গোসল করেই তাড়াতাড়ি উঠে যেত।
এখন আধুকিতার এই যুগে আমাদের শিশুদের শৈশব বলে কিছু থাকছে না। ভালো রেজাল্ট আর শিক্ষিত এই দুই তকমা লাগানোর জন্য প্রতিটি অভিভাবকই এখন উঠে পড়ে লেগেছে প্রায়। আগে বলা হতো "শিশুর বয়স হলে ছয়, ভর্তি কর বিদ্যালয়" আর এখন সেটা অনেকটা এমন যে ‘বাচ্চা যখন জন্ম নেয়, প্রাইভেট তার চালু হয়’। তিন বছরের শিশুর জন্যও সকাল-বিকাল দুই বেলা টিউটর রেখে দেওয়ার ঘটনা দেখায় যায়।
এরপর সকালে প্রাইভেট। স্কুল শেষে বিকালে প্রাইভেট। স্কুলের কাজ, প্রাইভেটের কাজ এগুলো করতে করতে দিন শেষ। ছেলেমেয়েদের বিনোদন বলে কিছু নেই। নানা রকম সিলেবাস আর কারিকুলামের বেড়াজালে বিলীন হয়ে গেল রঙিন সেই শৈশব।
এরপর আধুনিকতার ছোঁয়া যখন আরও পেয়ে বসল তখন শিশুর শৈশব খেয়ে দিল মোবাইল ফোন। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ মুছতে মুছতে গিয়ে আব্বু কিংবা আম্মুর ফোন ধরে। এরপর শুরু হয় গেম খেলা, নয়তো কার্টুন দেখা। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে বই রেখে ড্রেস না খুলেই বসে পড়ে ফোন নিয়ে। এটা তো গেল প্রাইমারি লেবেলের ছেলেমেয়েদের কথা।
মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের বেলায় এটা আরও ভয়ানক। এখন ক্লাস সেভেনে পড়া ছেলেমেয়েদেরও নিজস্ব টাচ ফোন থাকে। স্কুলে গিয়ে যখনই একটু সুযোগ হয় ফোন নিয়ে শুরু হয় গেমিং কিংবা ভিডিও দেখা। টিফিনে তো আছেই। ছুটি হলে অনেক ছেলে-মেয়ে বাড়িই ফেরে না। পথে বসেই শুরু করে দেয় গেমিং এখনকার জেনারেশনের অধিকাংশই ছেলেমেয়েদের শৈশব কেটে যায় এন্ড্রয়েড মোবাইলে গেইম খেলে৷ কি গ্রাম কি শহর দুই দিকেই একই অবস্থায়।
গেইমের মারাত্মক নেশায় শেষ করে দেয় তাদের শৈশবের মধুর স্মৃতি। এক পর্যায়ে গিয়ে তারা শৈশবের তেমন কোন স্মৃতি খুজে পাবেনা। শৈশবের বন্ধু বলেও কিছু থাকবে না। কারণ তাদের শৈশব কেটেছে মোবাইলে।
সম্ভবত আমরাই শেষ জেনারেশন, যাদের কিছুটা হলেও শৈশবের স্মৃতি বলতে কিছু আছে। আমরাই হয়তো আমাদের পরবর্তী জেনারেশনকে আমাদের শৈশবের গল্পে শোনাতে পারব।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৯:১৬
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: লেখাটি ভালো লাগলো । শুভ কামনা আপনার জন্য