নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপাতত ব্যস্ত আছি, কথা হলে পরিচয় দেওয়া যাবে।

@সুলতান মির্জা ২

তৃতীয় শ্রেনীর জীবন্ত ব্লগার

@সুলতান মির্জা ২ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খালেদার নতুন সরকার কেমন হবে ? তা ২০০১-২০০৬ আমলের হাওয়া ভবন নামা দেখলেই বুঝা যাবে।

২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৭

বিশদ বলার ইচ্ছা আজকে নেই। তবে একটা বিষয় প্রায় পরিষ্কার হয়ে গেছে পাচ সিটিতে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীদের ফলাফল বিএনপি কে এই প্রথম আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আমি অস্বীকার করছি না যে বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারবে না। তবে কথা থাকে যে ২০০১-২০০৬ খালেদা-নিজামী সরকারের শাসনামলের অনেক চিত্র নিয়ে ভেবে দেখার দরকার আছে। আজকে ততকালীন ক্ষমতার সময়ের খালেদা-নিজামী সরকারের বিকল্প সরকার হাওয়া ভবনের কিছু খন্ডচিত্র তুলে ধরছি আপনাদের সামনে। যে সরকারের প্রধান ছিল বেগম জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।



তারেক রহমান এর তারেক ভাইয়া হয়ে ওঠা:

‘হাওয়া ভবনে’ তারেক রহমানকে মধ্যমণি করে যারা সম্পদ ও টাকার পাহাড় গড়েছিল তারা এখন ‘হাওয়া’। আহা কী মধুর ‘ভাইয়া’ সম্ভাষণ! এই ‘ভাইয়া’র নাম ব্যবহার করে সেই সব ছায়াসঙ্গীরা জোট সরকারের ৫ বছরে হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক এসব দুষ্কৃতি-দুর্নীতির পাগলা ঘোড়ায় চড়ে তছনছ করে দিয়েছে বিশাল একটি দলের সুনাম, সুকৃতি। বিএনপির ত্যাগী দামি দামি নেতা ও নিবেদিত কর্মীরা অসহায়ের মতো বীভৎস দৃশ্যাবলী প্রত্যক্ষ করেছেন। হূদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে তাদের। কিন্তু সেই সময় কারও কিছুই করার ছিল না।





২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরই তারেক রহমানের মামা মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ড্যান্ডি ডাইং, বিএনপির মুখপত্র দৈনিক দিনকাল, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়া ও দলের অন্যতম অঙ্গ সংগঠন ছাত্রদল- এই চার উৎস থেকে আসা ছয়জনের একটি শক্তিশালী চক্র গড়ে উঠেছিল হাওয়া ভবনে। এদের মধ্যে ড্যান্ডি ডাইংয়ের অন্যতম পরিচালক ও তারেক রহমানের ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, ড্যান্ডি ডাইং ও দিনকাল পত্রিকা অফিসের কর্মচারী এবং বগুড়ার বহুল আলোচিত সাবেক সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর পুত্র সাজ্জাদ সিরাজ জয়, দিনকালের মফস্বল ডেস্কে কর্মরত তৌহিদুল ইসলাম ওরফে আশিক ইসলাম, সাবেক ছাত্রদল নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, মিয়া নুরুদ্দিন অপু ও বগুড়ার সন-ান সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল ছিল অন্যতম। যাহাদের দুর্নীতির বিষয়ে কোনও কথা বললে আপোষহীন মা খালেদা টিস্যু পেপারে উনার চোখের পবিত্র পানি মুছতে মুছতে বলে দেন এইগুলো সব ষড়যন্ত্র হচ্ছে তারেক রেহমান এর বিরুদ্ধে।



বলছি হাওয়া ভবনের জন্ম কাহিনী:

২০০১ সালের নির্বাচনের আগে তারেক রহমান হাওয়া ভবন থেকে নির্বাচনী জরিপ ও দলীয় মনোনয়ন প্রদানসহ নানামুখী সাংগঠনিক তৎপরতা পরিচালনা করায় সারাদেশে তা পরিচিতি লাভ করে। নির্বাচনে জয়লাভের পর ওই চক্রটি তারেক রহমানকে সামনে রেখে হাওয়া ভবনকে প্যারালাল সরকার পরিচালনার উপযুক্ত স্থান হিসেবে বেছে নেয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিকল্প একটি কার্যালয়ে পরিণত করে। তারেক রহমান বিগত সরকার ও বিএনপির ভেতর একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে আবির্ভূত হন। হাওয়া ভবনকে প্রতিষ্ঠিত করা হয় বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের কিছু তরুণ মন্ত্রী-এমপির সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় পৃথক একটি মন্ত্রিসভা। এই ‘মন্ত্রিসভা’র সদস্যরা তারেক রহমানকে আগামীদিনের রাষ্ট্রনায়ক ও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রচার করতে থাকে। এভাবেই তারেক রহমানকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসা হয়। স্বতীততে মুগ্ধ তারেক রহমানও এদের পুরস্কৃত করেন একেকজনকে এক এক ‘সেক্টরের’ দায়িত্ব দিয়ে। এর মধ্যে তার মূল ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে, অর্থাৎ তিনি ‘অর্থমন্ত্রী’। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ও প্রশাসনে দলীয় লোক নিয়োগের দায়িত্ব দেয়া হয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুলকে। সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্ব পায় আশিক ইসলাম। হাওয়া ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ দেয়া হয় জয়কে এবং বগুড়ার সন্তান নাইটকে প্রথমে তার ব্যক্তিগত সহকারী ও পরে আরেক ছাত্রদল নেতা মিয়া নুরুদ্দিন অপুকে দেয়া হয় এই পদ। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সার্বিক খোঁজখবর তারেককে পৌঁছে দেয়ার জন্য সাবেক ছাত্রদল নেতা ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবালকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এসব কর্মকর্তা তত্কালীন পাঁচ বছর তারেক রহমানের পাশাপাশি হাওয়া ভবনের নাম ভাঙিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। একেবারে শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় অনেকে। এদের মেধা, দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নানারকম অভিযোগ পেলেও মোটেও সেগুলো আমলে নিতেন না তারেক রহমান। উল্টো তার প্রশ্রয়ে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান করেছে। নিজেরা পরিণত হয়েছে টাকার কুমিরে। নিন্মে সেই কুখ্যাত হাওয়া ভবনের কিছু হাওয়া হয়ে যাওয়া ব্যক্তির গল্প বলছি,



হাওয়া ভবনের জৈনক মিয়া নুরুদ্দিন অপু :

শরিয়তপুর জেলার গোসাইরহাটের এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাবা পেশায় কৃষক। ’৯২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে অর্থনীতিতে ভর্তি হয়েই ছাত্রদলের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। প্রথমে কলেজ শাখার সেক্রেটারি ও পরে নাসিরউদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু ও সাহাবুদ্দিন লাল্টুর কমিটির কেন্দ্রীয় সহ-পাঠাগার সম্পাদকের পদে দায়িত্ব পালন করেন। এক পর্যায়ে তৎকালীন ছাত্রদল ক্যাডার সাগীরের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়ায় ছাত্রদলে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য ধরনা দেন। এর মধ্যে ছাত্রদল করার সুবাদে সাবেক ডাকসু ভিপি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমানের সাহচর্যে আসার সুযোগ পান। এরপর থেকে সব সময় আমানের সঙ্গে থাকতেন। ’৯৯ সালে পল্টনে বিএনপির মিছিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে আমানকে জড়িয়ে ধরে পুলিশের পিটুনি থেকে রক্ষা করেন অপু। তারপর থেকে আমানের দেহরক্ষীর দায়িত্ব পেয়ে যান তিনি। তত্কালীন জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরও আমানউল্লাহ আমানের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সালের শেষের দিকে তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী নাইট জোরপূর্বক একটি বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকের পদ দখল করলে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া হয়। তখনই কপাল খুলে যায় অপুর। আমানউল্লাহ আমানের অনুরোধে তারেক রহমান ব্যক্তিগত সহকারী পদে নিয়োগ দেন অপুকে। তারেক রহমানের দৈনন্দিন কর্মসূচি তদারকি, কোন মন্ত্রী-এমপির সাক্ষাৎ বা দলীয় নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমানের সাক্ষাৎ- এসব বিষয় দেখাই ছিল অপুর প্রধান কাজ। ‘ভাইয়া’র সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের দায়িত্ব পেয়েই তিনি টাকা পয়সা উপার্জনে নেমে পড়েন। হাওয়া ভবনে চাকরি নেয়ার ৬ মাসের মাথায় তারেক রহমানের কাছে নিজেকে অত্যান্ত আস্থাভাজন করে তোলেন। তার ভাই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সিবিএ নেতা শাহাবুদ্দিন বাচ্চু মিয়ার পরামর্শে অপু নিজের আখের গোছাতে নেমে পড়েন। যুবলীগের সমর্থক থাকায় বাচ্চু মিয়াকে মেয়র খোকা নগর ভবন থেকে বের করে দিলেও অপু তাকে আবার সেখানে পুনর্বহাল করেন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ঠিকাদার সমিতির সভাপতি দিপুর সঙ্গে তারা ঠিকাদারি ব্যবসা শুরু করেন। শুধু তাই নয়, বিএনপির সাবেক অনেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাকে তারেক রহমানের সঙ্গে সমঝোতা করিয়ে দেয়ার বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন অপু। চাকরি ও বদলি কার্যক্রমেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। জগন্নাথের সাবেক ছাত্রদল নেতা ও পরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহমেদের মাধ্যমে মাথাপিছু তিন লাখ টাকা করে নিয়ে ৪ জনকে থানা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। এরা হলেন- রাকীবুজ্জামান রেনু, দাদন মুন্সী, নাজমূল হাসান ও তার স্ত্রী মিনা হাসান। তার ভাইকে অরিয়ন গ্রুপের অধীনে নির্মাণাধীণ গুলিস-ান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের প্রায় একশ’ কোটি টাকার রড-সিমেন্ট সাপ্লাইয়ের কাজ পাইয়ে দেন। এক সময়ে পুরান ঢাকায় মেসে থাকলেও বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া ও বনানীতে রয়েছে তার একাধিক ফ্ল্যাট। নিজে থাকেন লালমাটিয়ার ‘সি’ বক্লের ৭/৫ নম্বর ময়ূরী নামের একটি সুউচ্চ ভবনের চারতলার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে। চড়েন হাইলাক্স গাড়িতে। শুধু তাই নয়, অপুর হাতে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার অপদস্থ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করার জন্য হাওয়া ভবনে গিয়ে অপুর দুর্ব্যবহারের শিকার হন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ খান। জোট সরকার ক্ষমতা ছাড়ার পর প্রথম দিকে ঘটে এ ঘটনা। অপুর অনুমতি না নিয়ে তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ হাওয়া ভবনে গেলে অপু তাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার কথা বলেন। ক্ষোভে-দুঃখে ওইদিনই তিনি এলডিপিতে যোগ দেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর নয়াপল্টনে আয়োজিত চার দলের এক সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেগম জিয়া। ওই অনুষ্ঠানে অপুু ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম চৌধুরী ববিকে মঞ্চ থেকে ধাক্কা মেরে নামিয়ে দেন। এভাবে তারেক রহমানের পাশে থাকার সুবাদে তার ক্ষমতার অপব্যবহার চলছিল সব সময়। অপু এখন পলাতক।



হাওয়া ভবনের জৈনক সাজ্জাদ সিরাজ জয়:

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান বগুড়ার গাবতলীর সন্তান সাজ্জাদ সিরাজ জয়। বাবা জোট সরকারের সময় গম কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ‘বগুড়ার হাজারী’ খ্যাত সাংসদ হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর পুত্র। প্রচণ্ড বদমেজাজী ও একরোখা হিসেবে এলাকার সবার কাছে ঘাড়তেড়া জয় হিসেবে পরিচিত। ’৯৫ সালে বগুড়ার আযিযুল হক কলেজে এইচএসসিতে পড়া অবস্থায় বাবার অমতে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার মেয়েকে বিয়ে করেন। ক্ষোভে ছেলেকে বাসা থেকে বের করে দেন লালু। সেখান থেকে ঢাকায় এসে ভর্তি হন তেজগাঁও কলেজে। বগুড়ার সন্তান হিসেবে চাকরি পান ড্যান্ডি ডাইংয়ে। এরপর দিনকালে চাকরি নেন। দিনকালে থাকাকালে বগুড়ার ছেলে হিসেবে ধীরে ধীরে তারেক রহমানের কাছাকাছি চলে আসেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর হাওয়া ভবনের প্রশাসনিক কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে। তারেক রহমানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দায়িত্বও ছিল তার। সেই সুবাদে জয় তারেক রহমানের অত্যন- কাছাকাছি চলে যান। হাওয়া ভবনে সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতাকর্মীদের প্রবেশ, যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা সবকিছুর নিয়ন্ত্রক হয়ে পড়েন তিনি। শুরু হয় ক্ষমতার অপব্যবহার। বিভিন্ন জেলায় ও থানায় টেন্ডার, বদলি ও নিয়োগ থেকে শুরু করে সবকিছুতেই চলে জয়ের খবরদারি। বিভিন্ন ব্যাংক-বীমা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সিবিএ নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা কালেকশন করাও ছিল তার অন্যতম একটি কাজ। শুধু সোনালী ব্যাংক সিবিএ ও এক শ্রমিক দল নেতার কাছ থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ টাকা নিতেন। ওই সিবিএ নেতা জয়ের ভয় দেখিয়ে ব্যাংকপাড়ায় গত পাঁচ বছর দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। নিজে হয়েছেন কোটিপতি। শুধু তাই নয়, হাওয়া ভবনে প্রবেশের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে তিনি বিএনপির বিভিন্ন নেতার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর এলাকার মনোনয়ন প্রত্যাশী নামকরা ঠিকাদার মজিবুর রহমান ইকবালের সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। ক্ষমতায় আসার দু’বছরের মাথায় সিদ্ধেশরী এলাকায় ৬৫-৬৬ হোল্ডিংয়ে র্যাংগস প্রপার্টির হাফিজ টাওয়ারের ১০ তলায় প্রায় কোটি টাকা দিয়ে ডুপ্লেক্স অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় করেন। তার ড্রইং রুমে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফার্নিচার রয়েছে। জয়ের ব্যবহারের জন্য বাড়ির নিচে ৩টি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে। এগুলো সবই দামি গাড়ি।



হাওয়া ভবনের জনৈক রকিবুল ইসলাম বকুল:

হাওয়া ভবনের অত্যান্ত- ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত সাবেক ছাত্রদল নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল এখনকার মতো জোট সরকারের পাঁচ বছরেও ছিলেন অনেকটা ধরাছোঁয়ার বাইরে। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়োগ-বদলিসহ বিএনপির সাংগঠনিক কর্মসূচি দেখভাল করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তার ওপর। একই সঙ্গে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের মনোনয়ন ও মন্ত্রিসভায় তাদের অন-র্ভুক্তির বিষয়টি দেখভাল করতেন বকুল। তারেক রহমান, সাবেক ডাকসু ভিপি আমানউল্লাহ আমান, সাংসদ ইলিয়াস আলী, ফজলুল হক মিলন ও বকুলের দেয়া তালিকা অনুযায়ী ২০০১ সালে প্রায় অর্ধশত আসনে বিএনপির প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়। বিনিময়ে এসব প্রার্থীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমানের কোটায় অনেককে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়া হয়। এদের মধ্যে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আমানউল্লাহ আমান, যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদ, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু অন্যতম। এদের মাধ্যমে তারেক রহমানের পক্ষে বকুল জোট সরকারের মন্ত্রিসভার ভেতর একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। প্রশাসনে এরা তারেক রহমান গ্রুপ হিসেবে পরিচিতি পায়। এ সুযোগে বকুল তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে প্রশাসনে নিয়োগ, বদলি ও টেন্ডারসহ যাবতীয় কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। কোন মন্ত্রী তাদের কথা না শুনলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে নানারকম চাপ দেয়া হতো। অনেক মন্ত্রীকে অকার্যকর করে রাখা হয়। কাউকে কাউকে সরিয়ে দেয়া হয় এর মধ্যে। সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালকুদার দুলুর সঙ্গে বিরোধ হওয়ায় সাবেক ভূমিমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়। শামসুল ইসলাম হাওয়া ভবনকে তেমন একটা গুরুত্ব না দেয়ায় ওই মন্ত্রণালয়ের খবরদারির জন্য ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর ভাই সাবেক শিল্প উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে তথ্য উপমন্ত্রী করা হয়। তার মাধ্যমে তথ্য মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় কাজ করানো হয়। এক পর্যায়ে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদার মতো মন্ত্রীরাও নিজের গদি রক্ষায় হাওয়া ভবনঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন। এসব কাজের সমন্বয় করতেন বকুল। পাবলিক সার্ভিস কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসনে কোথাও কোন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেই ছাত্রদলের নেতাদের নিয়োগের জন্য দায়িত্ব পেতেন বকুল। নিজের অনুগত ছাত্রদলের কর্মীদের বিভিন্ন পদে নিয়োগের সুপারিশ করা হতো মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে। বকুলের দেয়া তালিকা পৌঁছে দেয়া হতো সংশ্লিষ্ট বিভাগে। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ হতো হাওয়া ভবনের পছন্দের তালিকা অনুযায়ী। বকুলের বন্ধু ও খুলনার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুল বারী হেলালকে ছাত্রদলের সভাপতির পদ দেয়া হয়। হেলাল দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। নির্দিষ্ট কমিশনে অন্যদের ঠিকাদারি কাজ পাইয়ে দেয়াই ছিল বকুল ও হেলালের কাজ। সিলেট বিমানবন্দর আধুনিকায়নের নামে ২৩ কোটি টাকার একটি কাজ বকুল, হেলাল ও সিভিল এভিয়েশনের ঠিকাদার মিনহাজউদ্দিন মিনহাজ দেড় কোটি টাকার বিনিময়ে আবদুল মোনেম লিমিটেডকে পাইয়ে দেন। অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণী পাওয়া সত্ত্বেও বকুল ২০০৩ সালে তার ভগ্নিপতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেজবাহ উদ্দিনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়লয়ের তথ্য ও গ্রন্থব্যবস্থাপনা বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চাকরি পাইয়ে দেন। ছোট ভাই শহিদুল ইসলাম বিপুলের বয়স ৩০ অতিক্রম করলেও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দেখিয়ে (মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য বয়সসীমা ৩২) ২৭তম বিসিএস ফরেন সার্ভিসে চাকরি পাইয়ে দেন বকুল।



হাওয়া ভবনের জনৈক আশিক ইসলাম:

পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের ছেলে আশিক ইসলাম। বাড়ি মাগুরার শ্রীপুরে। তার প্রকৃত নাম তৌহিদুল ইসলাম। গ্রামে সবাই তাকে পাপ্পু বলে ডাকত। ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ধানমণ্ডি ল’ কলেজে কিছুদিন লেখাপড়া করেন। ’৯৮ সালের দিকে দৈনিক দিনকালে মফস্বল ডেস্কে সহ-সম্পাদকের চাকরি নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের বছরখানেক আগে হাওয়া ভবনে ঢুকে পড়েন। পত্রিকায় চাকরি করার সুবাদে হাওয়া ভবনে বসে সংগঠনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রেরণ ও দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত দলীয় প্রতিবেদন সংরক্ষণ করাই ছিল তার অন্যতম কাজ। হাওয়া ভবনে থাকার সুবাদে ধীরে ধীরে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ ও আস্থাভাজনে পরিণত হন। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর হাওয়া ভবনের মুখপাত্র হিসেবে তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব নিয়োগ দেয়া হয়। একই সঙ্গে তারেক রহমানের প্রেস সচিবের দায়িত্বও পালন করেন। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিবের চেয়ে হাওয়া ভবনের মুখপাত্র হিসেবে পরিচয় দিতেই পছন্দ করতেন বেশি। তারেক রহমানের সংবাদ সংগ্রহকারীদের তিনি এই পরিচয় ব্যবহার করতে বলতেন। বিএনপি সরকারের পাঁচ বছরে গুলশান-বনানীতে নামে-বেনামে একাধিক ফ্ল্যাট, বাড়ি ও গাড়ির মালিক হয়েছেন। ঢাকার মিরপুরে গোলারটেক এলাকায় পাঁচতলায় নিজ বাড়িতে থাকেন তিনি। বাবা-ভাই-বোন সবাই থাকেন আমেরিকায়। আশিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও হাওয়া ভবনের প্রেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় গত পাঁচ বছর মিডিয়াগুলোতে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক একটি মিডিয়া চক্র। নিজের আখের গোছানোর পাশাপাশি এদেরও ভাগ্য গড়ে দিতে সাহায্য করেছেন। তিনি নিজের ছেলের নামে রোমিও মাল্টিমিডিয়া ও বন্ধুর সঙ্গে শেয়ারে নকশী বাংলা টেলিফিল্মসহ মিডিয়া ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। তারেক রহমানের নাম ভাঙিয়ে মিডিয়ার ওপর এক ধরনের আধিপত্য বিস্তার করেন। বিটিভি থেকে সপ্তাহে চারদিন পরিচালক (পিক আওয়ার-সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন-) আধাঘণ্টা সময় বরাদ্দ নিয়ে প্রতিটি পরিচালক প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউসের কাছে বিক্রি করে দিতেন। এছাড়া বিটিভিতে নিয়োগ, বদলি, শিল্পীদের অংশগ্রহণ অনেক কিছুই তার কথামতো হতো।বিটিভিতে তাকে এ কাজে সহযোগিতা করতেন উপ-মহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) মাহবুবুল আলম গোরা। বাড়ি মাগুরা হওয়ার সুবাদে মাহবুবুল আলমও পাঁচ বছর বিটিভিতে দোর্দণ্ড প্রতাপে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুধু বিটিভি নয়, রেডিও এমনকি চলচ্চিত্র অঙ্গনেও ছিল আশিকের অবাধ বিচরণ। চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের মতো একটি জায়গায় যেখানে সদস্য হতে হলে চলচ্চিত্র সম্পর্কে অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হয় সেটিরও সদস্য হয়েছিলেন তিনি। তিন বছর সদস্য থাকাকালে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে অশ্লীল ছবি মুক্তি দেয়াই ছিল তার প্রধান কাজ। চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বরা আশিকের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ তথ্যমন্ত্রীর কাছে নানারকম অভিযোগ করলেও কোন লাভ হয়নি। এক পর্যায়ে তার অভিযোগের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০০৫ সালে সেন্সর বোর্ডের সদস্যপদ থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়। এছাড়া ২০০৫ সালে আশিক ইসলাম পুরনো ছবি ঠিক করার নামে ডিএফপির একটি বায়বীয় প্রজেক্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুবাদে সাবেক অনেক মন্ত্রী-এমপিও তাকে সমীহ করে চলতেন। প্রায়শ এসব মন্ত্রী-এমপিকে মিডিয়ার ভয় দেখিয়ে নানারকম কাজ বাগিয়ে নিতেন তিনি। জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের পরও হাওয়া ভবনে তার দাপটে অনেকেই কোণঠাসা ছিলেন। হাওয়া ভবনের মুখপাত্র হিসেবে বিতর্কিত হয়ে পড়ায় মাসখানেক আগে তাকে প্রেসের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ও যুগ্ম মহাসচিব নজরুল ইসলাম খানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুন গ্রেফতারের পর থেকে আশিক লাপাত্তা।





হাওয়া ভবনের জনৈক ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল:

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আলিয়ারহাট গ্রামের ডা. ফিরোজ মাহমুদ ইকবাল ‘হাওয়া ভবনের’ আশীর্বাদে সামান্য মেডিকেল অফিসার থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার হয়েছিলেন। তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাওয়া ভবনে পাচার করাই ছিল তার কাজ। এছাড়া সারাদেশে স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ-বদলির মাধ্যমে তিনি কয়েকশ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আলিয়ারহাটের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ফিরোজ ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দার পরিচিত ছিলেন। ১৯৮৭ সালে বগুড়া শহরের সাতমাথায় জাসদ নেতা লাকী হত্যার আসামি কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকে তিনি ঢাকায় শেল্টার দিয়েছিলেন। এ কারণে তিনি বিএনপির ঊর্ধ্বতন নেতাদের কাছে পরিচিত ছিলেন। লেখাপড়া শেষ করার পর দলীয় প্রভাবে সহজেই স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি লাভ করেন। এরপর বিএনপি সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব নেতা হন। ১৯৯৬ পরবর্তী সময়ে তিনি বগুড়ায় তারেক রহমানের আর্থিক ও রাজনৈতিক বিষয়টি দেখতেন। পুরস্কার হিসেবে ২০০১ সালে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারেক রহমানের সহযোগিতায় তাকে ডেপুটেশনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার করা হয়। অফিসিয়াল ডিউটির পরিবর্তে তিনি তারেক রহমানকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকতেন। জোট সরকারের তত্কালীন ৫ বছর তিনি বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে ভিড়তে দেননি। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সব গোপন তথ্য হাওয়া ভবনে সরবরাহ করতেন। পাশাপাশি তারেক রহমানের পক্ষে সারাদেশে স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ সব প্রকল্পে নিয়োগ-বদলির কাজ করে সেখান থেকে অন-ত হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তার নিয়োগ প্রেসক্রিপশন অমান্য করায় তিনি বগুড়ার তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা. একেএম মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করেন। শুধু তাই নয়, তাকে এ জেলা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর ওএসডি করার কথাও শোনা গেছে। তার গ্রামের বাড়ি আলিয়ারহাটকে শহরে পরিণত করতে তিনি ব্যাপক উদ্যোগ নেন। পিতা-মাতার নামে প্রতিষ্ঠিত রোকেয়া-সাত্তার ফাউন্ডেশন খোলেন। আর এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রভাব খাটিয়ে অন্তত ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৮টি প্রকল্প বাস-বায়ন করা হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান ২০০৫ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। আলিয়ারহাটে পুকুরঘাটসহ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি আলিশান বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। এ বাড়িতে প্রতি ২ মাস পরপর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা গেটটুগেদারে মিলিত হতেন। সেখানে ভূরিভোজের পাশাপাশি মোটা অংকের টাকা লেনদেন হতো। তিনি প্রভাব খাটিয়ে তার গ্রামে ৫ কোটি টাকার রাজশাহী বিভাগীয় এতিম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রশিক্ষণ প্রকল্প বাস-বায়নের সব প্রস’তি সম্পন্ন করেন। এছাড়া তার গ্রামের নাম আলিয়ারহাটের পরিবর্তে ‘ফিরোজনগর’ করার পরিকল্পনা করেছিলেন; কিন’ পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। ডা.ফিরোজের শহরে মালতিনগরের বাড়িতে গাড়ি ঢোকার সুবিধার্থে পৌরসভার ওপর হস্তক্ষেপ করে ‘বকশীবাজার থেকে মাদলা পর্যন্ত সমপ্রসারণ প্রকল্প’ দেখানো হয়। এতে সরকারের অন্তত ৬ কোটি টাকা গচ্ছা গেছে। এ রাস্তা করতে গিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ তার মা রোকেয়া বেওয়াকে এক লাখ সাত হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়। এছাড়া তিনি বগুড়ায় ‘বন্ধন ৭৯’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান খুলে তার চাঁদাবাজির পথ প্রশস্ত করেন। এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বর্তমানে যারা জড়িত তাদের অনেকেই বিএনপির ঘোর বিরোধী ছিলেন। ‘বন্ধন ৭৯’-এর আড়ালে তার একজন চিকিৎসক বন্ধুসহ কয়েকজন স্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি-বদলিসহ বিভিন্ন তদবির করেছেন। এ প্রতিষ্ঠানের নামে শহরের সাতমাথায় ডাকবাংলোর সঙ্গে একটি সরকারি জমি দখল করে সেখানে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছিল। ডা.ফিরোজের অযাচিত শস্তক্ষেপে বগুড়ায় স্থাপিত সরকারি ওষুধ কারখানা এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড ধ্বংসের পথে চলে গিয়েছিল। আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনার রশিদকে ৬ বার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। ডা. ফিরোজকে খুশি রাখতে তার ব্যবহারের জন্য একটি পাজেরো গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-খ-১২-০৩১৬) দেয়া হয়েছিল। এখানে ২০০১ সালে লোকবল ২৩৩ জন থাকলেও এখন ৭০০ করা হয়েছিল। অধিকাংশ দলীয় লোক, বসে বসে বেতন গ্রহণ করেছিলেন। তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকেও উচ্চপদে চাকরি দেয়া হয়েছিল। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করা হয়েছিল। নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত করায় অনেক সময় তা ফেরত আসার কথাও জানা গেছে।





প্রিয় পাঠক একবার অনুমান করুন আমরা কত বড় আহাম্মক এর দেশে বসবাস করছি। এতক্ষণ যা পড়েছেন তা হচ্ছে খালেদার প্রিয় সন্তান আমাদের প্রিয় তারেক ভাইয়ার সংক্ষিপ্ত কিছু সত্‍ জীবন যাপনের গল্প। এই সংক্রান্ত আরও অনেক গল্প রয়েছে যা কী না দুই তিন রাত বলেও শেষ করা যাবে না। কিন্তু আপোষ হীন নেত্রী বেগম খালেদা যখন তার প্রিয় পুত্র তারেক রেহমান কে নিয়ে গর্বের সাথে গতকাল বলেছিলেন.....



ছেলে তারেক রহমান কোনো ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন না।

ছেলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগকে ‘অপপ্রচার’ আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “তারেক অত্যন্ত সৎভাবে জীবনযাপন করেছে। দুর্নীতির সঙ্গে কখনোই তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তার কোথাও তেমন কোনো সম্পদও নেই।

“ষড়যন্ত্রকারীরা তার (তারেক) বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই অপপ্রচার চালিয়েছে। ওই সূত্র ধরে মইন-ফখরুদ্দীন নেতৃত্বাধীন অবৈধ সরকার তারেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়। তারা তাকে শেষ করে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তা তারা পারেনি।”

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে প্রভাব নিয়ে থাকা তারেক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে ডজনখানেক মামলা হয়। বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সংগঠিত করার উদ্যোগের জন্যই তারেককে ‘ষড়যন্ত্রের মধ্যে’ পড়তে হয়। “তারেক যেভাবে দলকে এগিয়ে নিচ্ছিল, তাতে দল ও দেশ উপকৃত হত। কিন্তু চক্রান্তকারীরা আগে থেকেই তারেককে টার্গেট করে নানাভাবে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অপপ্রচার চালাতে শুরু করে।”

সব মামলায় জামিন নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেই চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান তারেক। এরপর তিনি আর ফেরেননি। তার স্ত্রী-সন্তানরাও সেখানে রয়েছেন।





এখন প্রশ্ন হচ্ছে খালেদা কি করে আমাদের কে নতুন সরকারের স্বপ্ন দেখাচ্ছে ? উনি কি আমাদের কাছে আগের সময়ের ভুল গুলো উল্লেখ করে কখনো ক্ষমা ছেয়েছিলেন ? যদি না চেয়ে থাকে তাহলে কেন আমরা খালেদা কে বর্জন করছি না ?



লেখাটির তথ্য আরো রয়েছে বিস্তারিত দেখার জন্য এই লিঙ্কে দেখুন।



মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৩২

গারো হিল বলেছেন: সুলতান ভায়া হারুন ভাইরে দেখছেন :-< তারে দেহিনা অনেকদিন :>

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:৩৫

কৃষি এবং কৃষক বলেছেন: বি এন পি ক্ষমতায় আসিলে যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে আবারো পতাকা ঝুলিবে। :(( :(( :((

৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:০৫

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন: ভাল লিখেছেন ...

৪| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১০

নয়ামুখ বলেছেন: কাকে যেনো আদালত 'রং হেডেড' ঘোষনা করেছিল ? সম্প্রতি সময়ে আরেকটি আদালত কাকে যেনো 'হায়েনা' হিসেবে চিহ্নিত করেছে ?
আচ্ছা বলুনতো আদালত কর্তৃক স্বীকৃত 'রং হেডেড' বা 'হায়েনা' সাংবিধানিক এবং নৈতিক ভাবে কি কোনো দেশের সরকার প্রধান হওয়ার যোগ্যতা রাখেন ?

৫| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:২১

সাবু ছেেল বলেছেন: অথচ এই অসভ্যটাকে নিয়ে আমাদের সময় আর বিম্পি-জামাত কতটাই না সন্তুষ্ট!একেই বলে,"কুত্তায় চিনে পচা ফ্যান!"

দারুণ লিখেছেন,চালিয়ে যান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.