নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুমনজাহিদ

T

সুমনজাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের ইলিশময় শৈশবঃ

৩১ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৮

আমাদের ইলিশময় শৈশবঃ



‘স্যার পায়রাইদ্যা ধইরা আনছি, পিঠটা দ্যাহেন কত মোটা, একহাতে আলগাইতে পারবেন না! একদম ডিম ছাড়া, রানতে এক ফোঁটা ত্যালও লাগবে না; উল্ডা জমাইতেও পারবেন। ৬০ ট্যাহা জোড়া বেচছি, তয় আফনের জন্য একদাম ৫০ ট্যাহা। আরে না না, ট্যাহা না থাকলে সমস্যা নাই, ভালোমাছতো রোজ আয় না! পড়ে বাসা দিয়া চাচীর কাছ থেহে আনমু আনে’।

বাবা ফিরলেন দড়ি দিয়া কানসা বাঁধা একজোড়া দাসা সাইজের রূপালী মাছ নিয়ে। মা মাত্র মাগরেবের নামাজের ছালাম ফিরালেন। আমিনের আগেই জগতের যাবতীয় বিরক্তি নিয়ে একপলক তাকালেন কর্তার দিকে। দু সেকেন্ডেই আমিন শেষ করে নামাজের পাটি থেকেই মাতৃমুখ থেকে শুরু হলো অনর্গল অনল বর্ষণ ঃ

‘আমারে আর সুস্থ থাকতে দিবা না, রাইতের ব্যালা কেড কইছে তোমারে এই ঝামেলা আনতে? জীবনডা অতিষ্ট কইরা দিলা! তা কত নিছে ?’ ৫০। ‘ কী ? প ন চা শ ! নিশ্চয়ই ঐ ব্যাডা মাউচ্ছা সামসু তোমারে গছাইয়া দেছে। ও একটা হারে হারামজাদা শয়তান! শরমে দরদামও করতে পারে না, হে আবার পুরুষ মানুষ! শামীমের বাফে সকালে এর চাইয়াও বড় দুইডা মাছ আনছে ৩০ ট্যাহায়। তোমার ফুডানি আর কমলো না!’

২৫ বছরের দাম্পত্য অভিজ্ঞতায় চিরায়ত বুলিতে অভ্যস্ত পিতা একটু পিংচি হেসে গোসল খানায় ঢুকলেন ওজু করতে। কর্তার সাময়িক প্রস্থানের সুযোগে সাহসী হয়ে উঠলেন এবার পুরনো কাজের বুয়া রহিমের মা ঃ

‘ও খালাম্মা আমাগো রহিমের বাফে এরাম চাইরডা ইলিশ আনছে পাঁচশিয়া দিয়া। রিসকা লইয়া কাইল রাইতে বাড়ীত ফেরার আগে কাঠপট্টির মাউচ্ছা পট্টিইদ্যা লইয়াইছে। বেশী নরম আছিল না। ঝুরঝুরা কইরা ভাইজ্জা দিছি, কি মজা! হুনছি বরফের নাকি খুবই আকাল, মাছের চইয়া বরফের দাম বেশী!’

এটি শায়েস্তাখানের আমলের বাংলার কোন সান্ধ্যলিপি নয়। তিন দিক নদী দিয়ে ঘেরা, লোহালিয়ার পারের ছবিরমত সুন্দর ছোট্ট একটু শহর, আমার শহর পটুয়াখালীর ৮০র দশকের গোড়ার দিককার বর্ষাকালীন প্রাত্যহিক সান্ধ্যচিত্র ।

হায় শৈশব! আমাদের ইলিশময় শৈশব!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.