![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই যে ব্যাস্ততা বাড়ছে, এই যে নিকোটিন!জ্বালিয়ে দেয়া সিগারেটে ধোয়াচ্ছন্ন বেডরুমপ্রতিদিন ভাল্লাগেনার ছাই জমে এস্ট্রেতেব্যাস্ততার কালচে লাইটার, এই যে অলস ঘুম!এক কপি স্বপ্ন আসে সৌজন্য কপি হয়েসারারাত ঘুমিয়ে থাকি প্রচ্ছদে হাত বুলিয়ে।কাশাফাদৌজা নোমান
কফিল মিয়া মারা গেলেন দুপুর দুইটায়।
আগেও না পরেও না,ঠিক ঠিক দুইটায়।খাটিয়ার উপর লাশ শোয়ানো,গোসল হবে,দাফন হবে।খবর পেয়ে আত্মীয় স্বজনরা একে একে আসা শুরু করেছেন।সময় নাই,শেষ দেখা দেখতে হবে,মাসে ছ’মাসে যারা দেখেন নাই,তারাও আসতেছেন কফিল মিয়ার বাড়িতে।চারিদিকে কেমন উতসব উতসব ভাব!বেশভালই পরিচিত ছিলেন কফিল মিয়া।মানুষ টা খারাপ নাকি মন্দ,মানুষ জনের কাছে ঠাহর করার মত কোন কারন পায়নাই তার আশ-পাশের মানুষ।মরে গেলে নাকি মানুষের নামে খারাপ কথা বলতে নাই,তাই তার পাশের বাড়ির মুরুব্বী হানিফ মিয়া বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন-আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করবেন,বড ভাল মানুষ ছিলেন!যদিও কখনই তেমন মিশেন নি কফিল মিয়ার সাথে!
কফিল মিয়ার জামাই আলতাফ দাঁড়ায় আছে শশুরের বাড়ীর সামনে,বড় মেয়ের জামাই আলতাফ,শেষ দেখা দেখতে আসা কফিল মিয়ার স্বজন দের চা-সিগারেট খাওয়ানোর দায়িত্ব নিছে সে,পান চিবুতে চিবুতে সিগারেটের ধোয়া ছাড়তে ছাড়তে কর্তব্যের দায় সেরে নিচ্ছে সে!খবর পেয়ে পথে আসতেই চা-সিগারেট-পান এর এন্তেজাম করে সে!এর আগে,তার শাশুরী যখন মারা যান,সেবার এই পান-চা-সিগারেট এর অভাব আগত অতিথিদের বেশ ভুগিয়েছে,জামাই হিসেবে দায়িত্ববান হয়ার এই উছিলা ত্যাগ করার মত বুকের পাটা হয়নি তার! এই হয়তো শশুরের প্রতি তার শেষ সেবা!
কবর খোড়ার দায়িত্ব নিয়েছে ইদ্রিস আর ঈমান আলী।ওযু করে কোদাল নিয়ে মাটি কোপায় তারা,উঠোনের শিউলি গাছের নীচে কবর হবে,বেচে থাকতে বলে গিয়েছিলেন কফিল মিয়া,শিউলি ফুল গুলো বেশ পছন্দ করতেন কফিল মিয়া,গোরস্তানে একা থাকার ভয় নাকি শিউলির প্রতি ভালবাসা কোনটা তাকে এখানে টানলো,হয়তো কফিল মিয়া নিজেও কোন দিন বুঝে উঠেন নি!মানুষ হয়তো মরে যেয়েও আলাদা হতে চায়না!!কবরের অর্ধেক খুড়তে খুড়তে কন্ঠে বেশ জোর দিয়ে ইদ্রিস, ঈমান আলীকে বলে,আলহামদুলিল্লাহ,কবর তো বেশ সুন্দর হচ্ছে!ঈমান আলী অস্ফূট একটা শব্দ করে,যেন কবর সুন্দর হওয়া কথাটার মানে বুঝতে পারেনি সে!কিংবা বুঝেও হয়তো না বোঝার ভান করছে!!সবার এই ভয় আছে,এমন কী যে কবর খুড়ে,তারো!মনে মনে খুব অবাক হয় ঈমান আলী নিজের দূর্বলতা কে বুঝতে পারে!
পাড়ার ছেলেরা থম থমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে কফিল মিয়ার বাড়ীর সামনে,এলাকার মুরুব্বীর এই মৃত্যু আজ তাদের জোরে হাসতে দিচ্ছে না,তবু থেমে নেই,সিগারেটের ফাকে ফাকে কথা চলছেই,বাড়ির সামনে রাস্তা পরিষ্কার রাখা হয়েছে,অতিথিদের রিক্সা জযাতায়াতে যাতে কোন সমস্যা না হয় কিংবা পেতে!খানিক বাদে বাদে রতন নামে ছেলেটি মিহি সুর করে বলে উঠে-মরা মানুষ জীবিত হয়না!
কাফনের কাপর কিনতে এসে হাসান বুঝে উঠতে পারেনা!এখানেও দামী কমদামী আছে!বড় অদ্ভুত লাগে হাসানের!শেষ যাত্রায় ও বৈষম্য!কলেজগেটের এই আখেরী বিদায় স্টোরে কফিন থেকে লোবান সবই পাওয়া যায়,শুধু লাশটা ক্রেতার হতে হয়!বিক্রেতা কি ভেবে এরকম ব্যবসা শুরু করে সে চিন্তা করে কিছুটা ভাবালু হয়ে যায় হাসান!!
বরই পাতার পানিতে গোসল শেষে কাপড় পড়ানো হয় কফিন আলীকে,কাফনের শুভ্র কাপড়!বেশী দামী কিনতে পারেনি হাসান,ঠকেছে,কাপড়ের সাদা রংটা বড্ড ময়লা দেখায়!ঠিক ময়লা সাদাটে হয়েছে কাপড়টার রং!আসলে ময়লা নাকি লাইটের অনুজ্জ্বল আলোতে এরকম টা মনে হয় এই নিয়ে হাল্কা দ্বিধা দ্বন্দে ভোগে সে কিছুক্ষন!
মাইকিং হয়ে গেছে জানাজার।,মানুষ প্রস্তুতি নেয়,পানের পিক থুঃ করে ফেলতে জোরে গড়গড়া দিয়ে কুলি করে সবাই!সাথে স্তুতি পর্ব চলতে থাকেই,খোজ-খবর করতে নেয়া বেচে থাকা মানুষ গুলোও,তারা পরস্পরের খোজ নেয়।মেয়েটা কোন ক্লাসে উঠল কিংবা অমুকের শালীর বিয়ের খবর।একসময় শেষ হয় জানাজা,ভারাক্রান্ত পুত্র পাওনার দাইয়ত্ব নিয়ে সবাইকে বলে দেয় তার সাথে যোগাযোগ করতে,সে শোধ করবে,পিতার দায় নিজে নিয়ে পিতাকে বেহেস্তে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
আড়াআড়ি করে দু পাশে গামছা ঝুলিয়ে কফিল মিয়াকে কবরে নামায় ইদ্রিস আর ঈমান আলী,হয়তো আসলেই কবর ভাল হয়েছে,কাদা উঠেনি খুব একটা,বাশের চাটাই ছারাই শোয়ায়ে দেয়া হয়,উত্তর দিকে মাথা,কেবলা মুখী মুখ।আস্তে আস্তে মাটি চাপা পরতে থাকে কফিল আলির কবরে।সব শেষে সবার উপরে বাশের চাটাই দেয়া হয় আবার।খেজুর গাছের কাটাওয়ালা ডাল পুতে দেয়া হয় মাটির উপর!
ধীরে ধীরে হাল্কা হয় মানুষের ভীড়,অন্যজগতে,সম্পুর্ন একা যাত্রী হয় কফিল মিয়া।হয়তো কবরে শুয়ে ভাবে সে,বেচে থাকার ভীড়ে মৃত্যুরা খুব আচমকা হাজির হলেও,মানুষ এর সাথেই হয়তো অভ্যস্ত,এরকমটাই নিয়ম!
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪৭
সানড্যান্স বলেছেন: ধন্যবাদ
জীবন থেকে নেয়া এটা বলতে পারেন।
২| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৫৯
ফারজানা শিরিন বলেছেন: জীবন থেকে নেয়া বললাম !
৩| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৪৮
ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন: অই মিয়া এই সব গল্প পড়তে ডড় লাগে ।
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১৭
সানড্যান্স বলেছেন: সত্যি বলতে আমার নিজের ও লেখার সময় কেমন ভয় ভয় লেগেছে!!
স্যরি ঘুপা ভাই,আজ আসতে পারলাম না!!
৪| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫০
কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: সেই মন খারাপ করা বিষন্ন সময়ের চমৎকার বর্ননা দিয়েছেন।
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৯
সানড্যান্স বলেছেন: ধন্যবাদ,চেস্টা করেছি বলতে পারেন
৫| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:১১
যুবায়ের বলেছেন: চমৎকার বর্ণনায় অসাধারন চিত্রন্কন করেছেন গল্পের ঘটনাগুলিকে..
শেষটা বিষন্ন হলেও লেখা অনেক শক্তিশালি হয়েছে।
প্লাস++++
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪০
সানড্যান্স বলেছেন: ক্ষনিকের বিষন্নতা নয় কি?মাটি চাপার পরে আফসোস করার ফুসরত টুকু মেলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩৭
ফারজানা শিরিন বলেছেন: ধীরে ধীরে হাল্কা হয় মানুষের ভীড়,অন্যজগতে,সম্পুর্ন একা যাত্রী হয় কফিল মিয়া।হয়তো কবরে শুয়ে ভাবে সে,বেচে থাকার ভীড়ে মৃত্যুরা খুব আচমকা হাজির হলেও,মানুষ এর সাথেই হয়তো অভ্যস্ত,এরকমটাই নিয়ম!
সুন্দর ভাবনা ।