নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসসালামু আলাইকুম\nআমি আপনাদের সান ড্যান্স aka স্যাম রহমান :)

সানড্যান্স

এই যে ব্যাস্ততা বাড়ছে, এই যে নিকোটিন!জ্বালিয়ে দেয়া সিগারেটে ধোয়াচ্ছন্ন বেডরুমপ্রতিদিন ভাল্লাগেনার ছাই জমে এস্ট্রেতেব্যাস্ততার কালচে লাইটার, এই যে অলস ঘুম!এক কপি স্বপ্ন আসে সৌজন্য কপি হয়েসারারাত ঘুমিয়ে থাকি প্রচ্ছদে হাত বুলিয়ে।কাশাফাদৌজা নোমান

সানড্যান্স › বিস্তারিত পোস্টঃ

কোট প্যান্ট

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:১৫

একটা কোট-প্যান্টের বড় শখ ছিল মঞ্জুরের।মানুষ কে দেখে,ছোটবেলা থেকে মঞ্জুর বড় শখ,একদিন সেও কোট-প্যান্ট পড়বে।মানুষের কত্রকম শখ থাকে,তার শখটা তো খুব বেশী দামী নয়,আনমনে ভাবে মঞ্জু,ভাবতে ভাবতে চোখের সামনে কোট-প্যান্ট পড়া মঞ্জুকে দিব্যি দেখতে পায় সে,নিজেকে হঠাত খুব স্মার্ট মনে হয়,ভাবে কোট-প্যান্ট পড়লে তাকে ভালই মানাবে!হয়তো মুখ তুলে সুন্দরীরা একটু তাকাবে!মেঘে মেঘে অনেক বেলা তারো হয়েছে,ত্রিশটি বসন্ত সে কোট প্যান্ট ছাড়াই কাটিয়ে দিল!একটা কোটের বড় দরকার তার।



গত কয়েকদিন ধরে বড্ড শীত পড়েছে ঢাকায়,শৈত্য প্রবাহ বোনাস হিসেবে হাড় কাপানো ঠান্ডা বাতাস ও দিচ্ছে,এই তীব্র শীতই তাকে আজীবন লালিত স্বপ্নের কথা বারবার মনে করায়ে দেয়!প্রথম যখন নয় নাম্বার বাসের হেল্পারী করত,তখন মঞ্জুর ধারনাই ছিল না,কত দাম হবে একটা স্যুটের!বাস যখন সাইন্সল্যাব ক্রস করে নিউমার্কেট এর দিকে যেত,তখন সে বিশাল বিলবোর্ডে নায়ক ফেরদৌসের ছবির সাথে নিজেকে তুলনা দিত,তাকে কি ফেরদৌসের চে বেশী সুন্দর দেখাবে না?



তিথি তাকে একদিন বলেছিল,মঞ্জুর নাকি নায়কের মত দেখতে,কোট-প্যান্ট পড়লে নাকি আমিন খান কিংবা শাকিব খানের মত তারো নামের শেষে খান লাগাতে হবে!মজা করেছিল কি তিথি?তিথিকে সে জানিয়েছিল তার এই গোপন স্বপ্নের কথা,শুনে খুব হেসেছিল তিথি,লজ্জা লেগেছিল খুব মঞ্জুরের!মেয়ে মানুষ এরকম বেহায়ার মত কি করে হাসে?পুরুষ মানুষ বলে তার কি একটু শখ-আহ্লাদ থাকতে পারেনা?অভিমান করেছিল মঞ্জু,তিথির উপর!খুব রাগ হয়েছিল তার!!



কত দাম একটা কোট-প্যান্টের?মঞ্জু ভাবে,একবার কিছু টাকা পয়সা জমালে মন্দ হোত না।তা সে বেশ কিছুদিন জমিয়েছিল।অল্প অল্প করে,এদিক সেদিক করে প্রায় দু হাজার টাকা জমিয়ে ফেলে মঞ্জু!দুহাতে চারটে পাচশো টাকার নোট নিয়ে সে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকে,নিজেকে খুব শক্তিশালী মনে হয়েছিল হঠাত!এমন কি দোকানে যেয়ে শেখের বদলে একটা বেনসন ও সেদিন সে ধরিয়েছিল,যেন টাকার শক্তি সে উপল্বদ্ধি করে উঠেছে,শুনেছিল বংগবন্ধু এভিনিউ তে কাপড়ের দাম নাকি সাইন্স ল্যাবের চে সস্তা!বংগবন্ধু এভিনিউতে নেমে প্যান্টের পকেটে হাত দিতে টের পায়,সব চাওয়া সব সময় পাওয়া হয় না!সবগুলো পকে্টে হাজারবার করে হাত দিয়ে আবার দেখে,নেই,সেই দুহাজার টাকা আর নেই! হয়তো কোন এক পকেটমারের বাড়িতে আজ জম্পেশ রান্না হবে,ধোয়া ওঠা গরম ভাত আর ইলিশ মাছ দিয়ে ভাত খেয়ে আরাম করে পান চিবুতে চিবুতে বউকে জড়িয়ে ধরবে সেই পকেটমার!ভেবে বরং আনন্দই লাগে মঞ্জু’র!





গরীব মানুষের হতাশাবোধ খুব কম,তাদের সংগ্রাম করে বাচতে হয় বলে দুঃখ বিলাসের ধারে কাছে যায়না তারা,মঞ্জু ও এর ব্যতিক্রম নয়!টাকার শোক খুব দ্রুত কাটিয়ে ওঠে সে!মঞ্জু এখন বৈশাখী বাসের টিকেট চেকার,ভালই প্রমোশন হয়েছে তার!গালের দাড়ি গুলো যখন বড় হয়ে যায়,তখন সে বুঝতে পারে তার বয়স হচ্ছে,নিজেকে তার ভারীক্কী লাগে!ভাবে,এই তো বয়স কোট প্যান্ট পড়ার!দ্বিতীয়বারের মত টাকা জমানোর মত সাহস বা শক্তি কোনটাই ছিল না মঞ্জুর,কিভাবে পাবে সে জানে না,তবে এটুকু জানে,একটা কোট পেলে মন্দ হয়না!কোট-প্যান্ট কিংবা স্যুট দিয়ে সে কি করবে?তাছাড়া কোটের সাথে যে কোন প্যান্ট ই তো পড়া যায়!মনে মনে খুজতে থাকে সে একটা কোট!



আজ বাস নিয়ে মতিঝিল পর্যন্ত চলে এসেছিল,বেশ ভালই ইনকাম তার,পকেট এ ছয়-সাতশ টাকা,গেল সপ্তাহের বেতন।তাদের বেতন হয় সপ্তাহান্তে,মাসের শেষে নয়।মেজাজটাও ছিল বেশ ফুরফুরে!বাস থেকে নেমে গুলিস্তানের দিকে পা বাড়ায় মঞ্জুর,সেখানে নাকি সস্তায় কোট-প্যান্ট পাওয়া যায়।হোল ই বা একটু পুরানো,তবু তা কোট তো!বাসের ওস্তাদ তাকে বলেছে,পুরানো হলে কি আসে যায়?সবাই কি নতুন কোট পড়ে?কিংবা সে যদি পুরোনো কোট পড়ে,মানুষ কি ধরে দেখতে যাবে?কিংবা,মঞ্জু,তুই কি এমন লাটের ব্যাটা,যে তোকে নতুন একটা কোট কিনতে হবে?এতই যখন শখ,মিটিয়ে ফেললেই তো হয়!



দ্রুত পা চালায় মঞ্জুর,ঐ তো সামনে,অসঙ্খ্য কোটের পসরা নিয়ে ফুটপাথে বসে আছে দোকানীরা!ওখানকার একটা কোট আমার হবে,ভেবে উল্লসিত মঞ্জুর হাটার গতি আগের চে বাড়িয়ে দেয়,দোকানের কাছে আসে,কাল,নীল,খয়েরি নানা রঙের কোট!কোন কোনটার রঙ একটু জ্বলে গেছে,কোন কোনটার এখানে সেখানে তালি দেয়া,হালকা সেলাই দেয়া,তবু কোট তো!!স্বপ্নপূরনের দোরগোড়ায় সে!



সামনে এত কোট দেখে একটু বিচলিত মঞ্জু ভাবে,কোন রংটা তাকে মানাবে?তিথি তাকে বলেছিল,সে কাল মানুষ,গাড় রঙের পোশাকেই তাকে ভাল লাগবে!অনেকক্ষন ধরে দেখে,কালচে নীল রং এর একটা কোট পছন্দ হয় তার,বেশ ভালই মানিয়েছে তাকে,হাতাটা একটু নাহয় খাটো হবে,কিংবা বোতামের বিভিন্নতা হয়তো একটু খারাপ ই লাগছে দেখতে,কিংবা বা পাশে কাধের দিকটায় একটু সুতো নাহয় উঠেই গেছে,তবে সব মিলিয়ে মন্দ নয়!দোকানীও হয়তো বুঝতে পেরছিল তার স্বপ্নের কথা,কিংবা এত যাচাই বাছাইতে একটু বিরক্ত হয়েছিল,তাই খুব একটা মুলোমুলি ছাড়াই ৩৮০টাকায় কোট টা পেয়ে যায় মঞ্জু!



কোট টা গায়ে হাটা শুরু করে মঞ্জুর,এখনো পকেটে বশ কিছু টাকা রয়ে গেছে,জীবনটা হঠাত খুব রঙ্গীন মনে হয় তার,ফোন বের করে তিথি কে ফোন দেয় সে,বলে বিকেলে আজ আমরা নাহয় একটু ফুচকা খাব?তুমি কি আজ একটু শাড়ী পড়ে,কপালে বড় করে টিপ দিয়ে আসবে?

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২১

ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন: দাড়ুন লিখেছেন । :D

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১১

সানড্যান্স বলেছেন: থ্যাঙ্কু ভাই!!

২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৩২

সত্য নয় মিথ্যা বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১২

সানড্যান্স বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ

৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১৮

আট আনা বলেছেন: আমিও এখন পর্যন্ত কোনদিন কোট পড়িনাই। বছর পাঁচেক আগে কিনসিলাম একটা কিন্তু পড়া আর হয়ে ওঠেনাই :|

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪১

সানড্যান্স বলেছেন: যত জলদি পারেন কিনে ফেলুন,যা শীত পড়েছে এবার!!এরকম শীত খুব কমই পড়ে!সো ইউজ দিস চান্স!!

৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৯

কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: আপনি একজন অসাধারন গল্পকার সানড্যান্স। আপনার লেখার ক্ষমতা দারুন। চরিত্র গুলো ফুটিয়েছেন খুব সুন্দর করে।

তবে খটকা লাগছে এক জায়গায়, মঞ্জু আর তিথির ক্লাসের মানুষ (গল্পে যে রকম বুঝেছি), তাদের চাওয়া কি ফুচকা আর কপালে বড় টিপ, শাড়ি হয়?

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৭

সানড্যান্স বলেছেন: মঞ্জুর আর তিঠিরা ফুসকাই খায়,আমরা কেবল নিনফাজ,ব্যাটন রুজ কিংবা ইমানুয়েলস এ যাই!!

হ্যা,তাদের চাওয়া এখনো ফুসকাতেই সীমাবদ্ধ,এক বেলা বাইরে খেতে কমপক্ষে ৫/৭টাকা খরচ করার বিলাসিতা তাদের এখনো হয়ে ঊঠেনি!

প্রশংসার জন্য অনেক ধন্যবাদ!

৫| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩০

যুবায়ের বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন ++++

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৮

সানড্যান্স বলেছেন: ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.