![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই যে ব্যাস্ততা বাড়ছে, এই যে নিকোটিন!জ্বালিয়ে দেয়া সিগারেটে ধোয়াচ্ছন্ন বেডরুমপ্রতিদিন ভাল্লাগেনার ছাই জমে এস্ট্রেতেব্যাস্ততার কালচে লাইটার, এই যে অলস ঘুম!এক কপি স্বপ্ন আসে সৌজন্য কপি হয়েসারারাত ঘুমিয়ে থাকি প্রচ্ছদে হাত বুলিয়ে।কাশাফাদৌজা নোমান
সিনেমার নাম মাসের শেষ! এ যেন মাসের শেষ ক’টা দিনে ঈশ্বর হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্রনাথ -শেষ হইয়াও হইলো না শেষ! ফুরোবার নয়, কিছুতেই ফুরোবার নয়! ত্রিশের মাস একত্রিশে শেষ হয়ে মাঝে মাঝে এই সিনেমাকে অসম্ভব পূর্ণতা দেয়!
বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত জীবনে মাসের শেষ বলে নিদারূন এক সময় আছে! এসময় মঞ্জুরের মন বেশ খারাপ হয়। বেচেঁ থাকা হয়ে পড়ে অর্থহীন, ভাবটা এমন, পকেট ই যখন ফাঁকা তখন আর বেচেঁ থেকে কি হবে! বেনসন নেমে যায় হলিউডে! ভালোবাসার বাসর ধুঁকতে ধুকঁতে উঠে যায় সিএনজি থেকে রিক্সায়! ভর দুপুরে রাস্তার পাশে মুভ এন পিকের অর্ধনগ্ন গোল ঠোঁট, আইস্ক্রীমে চাটন্ত জিভ দেখে শিহরীত শরীর তৃষ্ণা মেটায় তাদের গলার! বড় অদ্ভূত এই সময়! অসহায় পুরোপুরি!
এই যেমন বাড়ির মেগাবাইট শেষ হয়ে যাওয়াতে অফিস থেকে আপডেট দেয়া! চব্বিশ ঘন্টা অনলাইন মঞ্জুরেরা বিরতিহীন হরতালের মত টানা অফলাইন থাকে! থাকতে বাধ্য হয়! বন্ধুদের সাথে আড্ডায় দু’কাপ চা তিন কাপে তিনজনে বেশ আরামসে খায় তখন মঞ্জুরেরা! এক সিগারেট ঘোরে বহু ঠোঁট, মোহনাদের মতামত- ছিহ, তোমাদের কি ঘেন্না বলে কিছু নেই?? তখন হয়ে যায় প্রাণ খুলে হাসার উপাদান! বাকির খাতায় ক্লান্ত হাতে লিখতে লিখতে চায়ের দোকানে সোহেল মামাকে অভয় দেয়া, স্মিত লাজুক হাসির সাথে কেউ যেন শুনতে না পারে এমন ভাবে বলা- মামা বেতনটা পেলেই শোধ করে দেব! শোনা যায় আস্তে করে কিন্তু নিয়মিত সোহেল মামার ছোট করে ফেলা দীর্ঘশ্বাস!!!
লন্ড্রীকে ভুলে যায় মঞ্জুর এসপ্তাহে পুরোপুরি, চার টাকার হুইল দিয়ে ডোবানো কাপড় ইস্ত্রি করতে করতে আয়রন হাতে আয়রনম্যান ভাবতে নিজেকে খারাপ লাগেনা মঞ্জুরের! অসহায় ক্ষোভ ইস্ত্রির শক্তি যোগায় বেশ! বেশ জোরেই ডলা খেয়ে ভাঁজহীন কাপড় ভাঁজ হয়ে যায়!! ধার চাইবে? বন্ধুদের কাছে, ফোনটা ধরেই হাসি মুখে বলবে দোস্ত, মাসের তো শেষ! সবার মুখে একই কথা! এ যেন টক অফ দ্য টাইম!
এ যেন প্রতিকারবিহীন এক অন্যায়! পকেটে থাকা মুঠোফোনে ব্যালেন্স শেষে সুকন্ঠীর গলা বড্ড অপমানের সুরে কানে বাজে তখন! প্রতিধ্বনি হয় যেন ক্ষণে ক্ষণে! ব্যর্থ রাগ জিদে খিটখিটে হয়ে থাকা মেজাজ তখন সহসাই দূষিত করে প্রেমকে, পরিবেশকে-প্রতিবেশ কে! সিলিং এ লোডশেডিং এ নিভে যাওয়া ফ্যানের তিন পাখাকে দেখে মনে হয় সরকারের কুৎসিত হাসি! সরকারের প্রতি বিষেদাগার উপচে ওঠে তখন, মনে হয় হাতের কাছে পেলে খুন করে ফেলতাম সবগুলোকে! তোরা যাবি কোথায়!!!
স্বাস্থ্য ঠিক রাখার অজুহাতে বিশ/ত্রিশ টাকার রিক্সা ভাড়া অনায়াসে হেটেঁ পাড়ি দেয় মঞ্জুরেরা। হাটেঁ আর ভাবে বিশ টাকায় ক’টা সিগারেট হয়! ক’কাপ চা হয়! অল্পকিছু টাকা যদি ফোনে ব্যালেন্স করা যেত, তবু মোহনাকে ফোনে আজ রাতে সে কাছে পেত! মোহনা হয়ত কাল গাল ফুলিয়ে বলবে একটা ফোন দেয়ার সময় কি তার আর কোনদিন হবে না? মোহনারা ভাবে মঞ্জুরেরা তাদের এড়িয়ে যেতে চায়, কিন্তু কিছুতে বুঝতে চায় না, জান, এখন যে মাসের শেষ!!! কেন জান? তুমি কি বোঝনা, এখন যে মাসের শেষ!!!
আসলেই বড় অসহায় এই সময়! শেষ হয়ে যাওয়া টুথপেস্ট কেনার বদলে চলে যায় দক্ষ সার্জনের কাচিঁর তলায়! অসহায় টুথপেস্ট টিউবের পেট চিরে আসে ফেনা! অসহায় শ্যাম্পুর বোতলে পানি ঢুকিয়ে ফেনা বের নাহলে দু’টাকার সানসিল্কের স্যাশে দিয়ে চুল পরিষ্কার করতে হয় মঞ্জুরদের। মঞ্জুর ভাবে, তাদের কথা চিন্তা করেই এই কোম্পানি এক টাকার স্যাশের ব্যবস্থা করেছিল! কোম্পানীর প্রতি কৃতজ্ঞতায় ছেয়ে যায় মঞ্জুরেদের মন!!! শালারা ব্যবসা করলেও মন্যুষত্ব বজায় রেখেছে!!!
জনারণ্যের এইঢাকার শহরটাকে তখন বড্ড ফাঁকা ফাকাঁ লাগে, মঞ্জুরেরা তখন নিজেদের আরো নিঃসঙ্গের দিকে ঠেলে দিতে চায়! অবিবাহিত মঞ্জুর সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে পেপারে মুখ লুকিয়ে মা’কে জিগেস করে, কিছু টাকা হবে মা? বিবাহিত বন্ধুদের কাছে গল্প শুনেছে মঞ্জুর, মাসের শেষে বউ এর গোপন ব্যাঙ্কে হাত দেয়ার! ফেরত নেয়ার সময় বউয়েরা নাকি ভাংতির বদলে নোট চায়! ভ্যাট আর সার্ভিস চার্জের নাম করে!এ যেন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীর রাস্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে প্রাপ্তিতে অক্ষম ক্ষোধের লজ্জার মত! না সইবার, না কইবার!!!
হয়ত জীবন তখন ফরাসী কবি আরতুঁর রেঁবোর বস্তিতে থাকা কবিতা, কিংবা ওপারের মানিক বন্দোপাধ্যায়ের যক্ষাক্রান্ত শেষ ক’টা দিন! ধুঁকে ধুঁকে চলা। ফুরোতেই চায়না, আবার সহ্য ও হয়না! মোহনার সাথে দেখা করবার ইচ্ছেকে মাঝে মাঝে গলা টিপে হত্যা করে মঞ্জুর! কিংবা দেখা হলে, নান্দুজের পেরি পেরি চিকেনের সুরভী পায় মোহনাকে দেয়া পাচঁ টাকার শুকনো-বাসী-জীর্ণ গোলাপ থেকে। তার খুব জানতে ইচ্ছে করে, আহা, মোহনারা কি সেই সুরভী পায়!!!!?
মাসের শেষ ক’টা দিন! এ যেন বিধাতার এক বড় অন্যায়, আদালতের অবিচার!! সইতে বড্ড কস্ট!!!
একমাত্র সুখ হয়ে দাঁড়ায় নতুন মাসের বেতনের চিন্তা! একহাজার টাকার নোটে বঙগবন্ধুর ছবি, লাল-বেগুনী নোট বড্ড আরাম দেয় তখন চিন্তাকে! একা, একা নতুন মাসের বেতনের সূর্যোদয়ের ছবি কল্পনা করতেই অদ্ভূত প্রশান্তি আসে মনে! ফখরুলের পাঞ্জেরী কবিতার মত ক্ষণে ক্ষণে মনে বাজে- মাস শেষ হওয়ার আর কত দেরী, পাঞ্জেরী??? জীবনানন্দের ধানসিড়ি কবিতার মত আবার আসে ফিরে নতুন মাস। ঈশ্বরেরা ভর করে যেন তখন!
কিন্তু! ঐ যে, ফুরোতেই চায় না!! এ যেন রামায়ন মহাভারতের মত বিশাল আখ্যান। সুদূর পথ পাড়ি দেবার মত লম্বা রাস্তা! কিংবা ঈদের নামায শেষে লম্বা মুনাজাত!!! শেষ হবার নয়!!! সেই অস্থিরতা -কখন শেষ হবে মাস!!! এ যেন প্রতিকার বিহীন এক অন্যায়, মধ্যবিত্তের অভিশাপ, পিছু লেগা থাকা মাসিক দুঃস্বপ্ন!
মাসের শেষ ক’টা দিন! এ যেন বিধাতার এক বড় অন্যায়, আদালতের অবিচার!!সইতে বড্ড কস্ট!!!
০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:০৫
সানড্যান্স বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে, নিয়মিত আপনাকে আমার ব্লগটাতে দেখি বলে ভালো লাগাটাও বেশী!!!
২| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০০
হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।
০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:০৬
সানড্যান্স বলেছেন: ধন্যবাদ হামা ভাই, আমাদের মেরী পপিন্স ক্যামন আছে হাসান ভাইয়া?
৩| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:১৮
বোকামন বলেছেন:
কতশত বাধা-বিপত্তি তাই না ! ফুরোতেই চায় না ......।
তবুও এগিয়ে চলা, বেঁচে থাকা। অনেক দুরের ল্যাম্পপোস্টের আলোই ... পথের সঙ্গী .........।
দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন বাস্তবতা। অদ্ভূত প্রশান্তি জড়িয়ে রাখুক আপনাকে।
লেখাটি খুব বেশী ভালো লাগলো :-)
ভালো থাকবেন, এভাবেই।।
[৩+]
০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:০৭
সানড্যান্স বলেছেন: আমার ভালোলাগার বোকামন ভাইকেও বুক ভরা ভালোবাসা!!!
৪| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৫
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ছড়ানো একটা ক্যানভাসের মত প্রশস্ততা নিয়ে লেখাটা চোখের সামনে দাঁড়াল। ভাল লেগেছে।
০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:০৮
সানড্যান্স বলেছেন: ঐ যে বলছি!
সিনেমার নাম মাসের শেষ!!!
৫| ৩১ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯
কালোপরী বলেছেন: +++++++++++++
০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:০৯
সানড্যান্স বলেছেন:
৬| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:৪০
ভূতাত্মা বলেছেন:
০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:০৯
সানড্যান্স বলেছেন: ভূত ভয় পেলে হবে?
৭| ০১ লা আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৫:০২
*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: ++++
০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৩:১০
সানড্যান্স বলেছেন: হাই কুনোব্যাং!!!
ধন্যবাদ!
৮| ০২ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৮:৫৪
ভূতাত্মা বলেছেন: ভয় পাই নি । রেজা ঘটক
০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৪২
সানড্যান্স বলেছেন: খানে রেজা ঘটক সাহেব কই থেকে আসলেন?
৯| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৫১
মামুন রশিদ বলেছেন: View this link
০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৪৪
সানড্যান্স বলেছেন: ভাইয়া, আসলেই কি এত ভাল হয়েছে? অনেক ধন্যবাদ!!!!
১০| ০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:২৭
মাহী ফ্লোরা বলেছেন: পড়তে ভাল লাগছিলো! কষ্ট কষ্ট ভাল!
০৫ ই আগস্ট, ২০১৩ রাত ১২:৪১
সানড্যান্স বলেছেন: আর খুলে বললে ট্র্যাজেডি চলে আসতে পারে, তাই ভেঙ্গেচূড়ে কাহিনী লম্বা না করে স্যাটায়ার হিসেবে দায়সারা কাজ চালিয়ে দিয়েছি আর কি!
ধন্যবাদ মিস!
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:৪৩
মামুন রশিদ বলেছেন: চমৎকার !!!
একটা বাস্তব, এটা নির্মম, এটা এড়ানোর উপায় নেই মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীর ।
চিত্রটা খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন । মাসের শেষ কটা দিন গল্প-সিনেমাকেও হার মানায় ।
চমৎকার গল্পে ভালোলাগা ++