নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুরেশ কুমার দাশ

সুরেশ কুমার দাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শাহবাগ থেকে বাঙালির ঐতিহাসিক অর্জনসমূহ

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২১



অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে একটু ঢুঁ মারলাম। প্রেস ক্লাবে যেতে যেতে মনে পড়ছে গত ২১ দিনের গণ জাগরণ মঞ্চের কথা। এক অভূতপূর্ব প্রতিবাদ মঞ্চের কথা। বাঙালির বিশাল এক উৎসবের। কত দেশপ্রেমিক বাঙালি প্রবাস থেকে ছুটে এসেছেন এ মহান উৎসবে যোগ দেয়ার জন্য। আর এ মঞ্চ থেকে পাওয়া আমাদের অর্জনগুলোর কথা ভাবলে আমাদের ৪২ বছরের লড়াই সংগ্রামে ফিরে যেতে হয়। তাই আনন্দিত হবারই কথা। কারণ ২১ দিনে কম কিছু পায়নি আমরা। যা ৪২ বছরের তুলনায় খুব কম সময়।

তবে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে এখন আর প্রত্যেকদিন থাকছে না গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচী। প্রতি শুক্রবার বিকাল থেকে বসবে জাগরণ মঞ্চ। তবে জাগরণ মঞ্চের সেই দুর্বার শ্লোগান ও প্রতিবাদেও নানা আয়োজন না থাকলেও সেখানে গণস্বাক্ষর কর্মসূচী চলছে।

তবু জামাল খানের সেই বিশাল চত্ত্বরটা খালি দেখে আমার বুকটা খাঁখাঁ করে উঠে। কেন শুনতে পাচ্ছি না রক্তে আগুন ধরা সেই শ্লোগান। বিশাল নান্দনিকতা। বাঙালির পুন জাগরণের অমর সাক্ষ্য। সত্যিই তো এ ২১ দিনে বাঙালির পুন জাগরণ মঞ্চই হয়ে উঠে শাহবাগ থেকে সারা বাংলা।

৭১ সাল যখন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়- এরপর বাঙালিরা এমন মুক্ত প্রাণে Ñমুক্ত হৃদয়ে কখনও একত্রিত হতে পেরেছিল কিনা। হয়ত একত্রিত হবার অনেক সুযোগ হয়েছে। কিন্তু অন্য কারণে। বাঙালি তার জাতীয় চেতনা ও আদর্শের শ্লোগান নিয়ে এভাবে এত বিশাল ও প্রাণময় আয়োজনে আর একত্রিত হবার সুযোগ হয়নি। এমন সাহসী গর্জনও নয়। যারা রাষ্ট্রের চেতনা ও আদর্শকে লালন করেছে তারা তাদের আর্তি কাউকে জানাতে পারেনি। পারলেও সেই আবেদনে কেউ সাড়া দেয়নি। সেই কথা মুখ খুলে, হৃদয় খুলে প্রকাশ করলেও কেউ বাস্তবায়নের জন্য সাহস করেনি।

শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে এসে অনেকে বলেছেন রাষ্ট্র- দেশ ও সমাজ-সম্প্রদায় নিয়ে আমাদের যে ভাবনা ছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। তরুণ সমাজের জাগরণ দেখে তারা অভিভূত।

সেই ৫ ফেব্র“য়ারি নরঘাতক কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় ঘোষণা হয়। কিন্তু মহান ভাষা অঅন্দোলনের মাসেই বাংলার দামাল ছেলেরা তাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে জানান দেয়। এতদিন আমরা ভাবতাম সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো যা ঘটচ্ছে আমরা তাই মেনে নিতে বাধ্য। আমরা তাদের সিদ্ধান্তের ক্রীড়ানক মাত্র। আমরা যেন প্রতিদিন খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার জন্য জীবন শুরু করতাম। না তা নয়। এদেশের তরুণদের বিবেক ও প্রাণময়তাকে কেউ হত্যা করতে পারেনি। রুদ্ধ করতে পারেনি বাংলার তরুণদের প্রাণের জোয়ার। কিন্তু তরুণরা জানিয়ে দিল- আমরা রফিক সালাম জব্বারসহ মুক্তিযুদ্ধে অগণিত শহীদদের প্রকৃত উত্তর সূরী। আমরা বুঝিয়ে দিলাম বাঙালি কখনও কোন হঠকারি অপশক্তির কাছে পরাভব মানে না। বাঙালি তার আত্মপরিচয়কে হাজার বছরে কখনও বিসর্জন দেয়নি। সেটা আমরা দিতে পারিনা। তাই শাহবাগ চত্ত্বরে এদেশের দামাল ছেলেরা আবার গর্জে উঠতে বাধ্য হয়।

না -না ঘাতক কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজা মেনে নেয়নি বাঙালি। বাঙালি মেনে নিতে পারে না। ভয়ঙ্কর খুনি এ কাদের মোল্লার ফাঁসি রায় ছাড়া ঘরে ফিরবে না বলে তরুণ সমাজ বার বার শপথ করে।

শাহবাগ চত্ত্বরে তরুণদের এ অবস্থান এদেশের ইতিহাস বদলের এক বিশাল বাঁক। ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সোনার হরফে লেখা থাকবে এ বিজয়।

কারণ এ গণজাগরণেই যুদ্ধাপরাধের বিচার-আইনে ধরা পড়ে অনেক ফাঁক ফোকর। অথচ বলা হচ্ছিল কাদের মোল্লার সাজা পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। সেই জায়গা থেকে আলোর দেখা মেলে। আইন যে উভয়পক্ষের জন্য আপিল করার সুযোগ থাকে সেটাই ছিল না যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইনে। সুযোগ ছিল অভিযুক্ত অপরাধীদের জন্য। এরপরও সেই খুনীদের দোসররা যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রক্রিয়াটাই অস্বচ্ছ দাবি করে আসছিল। অথচ জনতা জেগে উঠলে কি ঘটে সেটার নাম শাহবাগের গণজাগরণ। এটাই কিন্তু আমাদের ১ নম্বর পাওনা নয়। এখন আইন সংশোধনে ফলে অন্য যারা যুদ্ধাপরাধী আছে তাদের রায়ের বিরুদ্ধেও সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি কিংবা রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করতে পারবে। এছাড়া সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ব্যাপারেও বিহিত করা হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় অর্জনটি হচ্ছে ৭১ এ বাঙালি নিধনের অপরাধ সংগঠনে সহযোগিতা করার জন্য সংগঠন হিসাবে জামাতের অপরাধের বিচারের বিষয়টি। যা আগে সেভাবে চিন্তাই হয়নি। তার মানে অকল্পনীয় ছিল। এমন অকল্পনীয় বিষয়টি খুব যুক্তিসংগতভাবে কল্পনায় আনা হয়েছে, চিন্তা করা হয়েছে, এখন বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলছে। সেটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার সহ অন্যদের যে রাজনৈতিক সংগঠন নাৎসি পার্টি ছিল সেটা যেভাবে বিচারের মুখোমুখি হয়েছিল। একই ভাবে জামাতকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। এখানে আর ইসলাম কিংবা মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা আসবে না। জামাত ইসলামও ইসলামের নামে যেটুকু সহানুভূতি পাবার সম্ভাবনা ছিল সেই সুযোগ কমে আসবে। কথা যেটা -সেটা হচ্ছে একাত্তরে সংগঠনটি মানবতা বিরোধি অপরাধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। এছাড়া শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ থেকে উঠে এসেছে জামাত ইসলামির ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করার বিষয়টি। সম্ভবত শাহবাগের এটা হবে শেষ দাবি।

এটাই বলতে চাই যে শাহবাগের এ গণজাগরণের আগে এদেশের মানুষ ভাবতে পারেনি মাত্র ২১ দিনে বাঙালির ৪২ বছরের প্রাণের দাবিগুলো পূরণ হবে। এজন্য আমরা হারিয়েছি স্থপতি রাজীব হায়দার সহ কয়েকজন সাহসী তরুণদের।

তবু অপপ্রচারের শেষ নেই। বাইরের কোন কোন পত্রিকাগুলো বলছে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে বাংলাদেশে দুটো পক্ষ দাঁড়িয়ে গেছে। এসব খবর আবার এখানে কোন কোন পত্রিকা পুন প্রচার করছে। এ পুন প্রচারের অর্থ হচ্ছে দেশের এ পত্রিকাগুলো যারা যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে সোচ্চার তাদের উপর চাপ প্রয়োগ বা আতঙ্ক তৈরি করতে চায়। জামাত আসলে ব্যাপক টাকা খরচ করছে। এ টাকা যারা খাচ্ছে তাদের তো কিছু না কিছু করে দেখাতে হবে। হতে পারে এ কারণে বিদেশি কতিপয় পত্রিকা নিরপেক্ষতোর নাম করে শাহবাগের গণ আন্দোলনকারিদের যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিপক্ষ বলছে। বাস্তবে তো এদেশে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ বলে কোন পক্ষ থাকতে পারে না। থাকলে তারা বাংলাদেশেরই প্রতিপক্ষ। সুতরাং যারা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ - তাদের পক্ষ যেসব মিডিয়া নিয়েছে তাদেরকে আমাদের হিসাবের বাইরে রাখলেও চলবে। কারণ ৭১ এ এদেশের মুক্তিযোদ্ধারা যাদের বিরুদ্ধে লড়েছে তাদের তুলনায় এরা খড়খুটো ছাড়া আর কিছুই নয়।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৮

মামুনুর রশী২৪৩৭ বলেছেন: শাহবাগ থেকে বাঙালি শুধু ন্যাকামি ছাড়া অন্য কিছু শিখছে না। কারণ ইতিহাস বদলাতে হলে ইতিহাস জানতে হয়। আর রেকর্ড ছাড়াতে হলে রেকর্ড করতে হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.