নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুরেশ কুমার দাশ

সুরেশ কুমার দাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাভার হত্যাকাণ্ড : বিজেএমইএ কেন দায়ি নয়

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৭:৩০





সুরেশ কুমার দাশ



গার্মেন্টসে মৃত্যু যেন এক মহামারির রূপ নিয়েছে যখন ডাক্তার-বৈদ্য, ওষুধ-পথ্য, তাবিজ- কবজ দিয়ে এটা রোধ করা যাচ্ছে না। মহামারির মৃত্যুর সময় মা-বাপ,স্বজন-পরিজন কাছে থাকে। তারা আহাজারি করে, কান্না করে। মৃত্যুপথযাত্রী অন্তত মারা যাবার আগে সান্ত্বনা পায় তার প্রতি সমবেদনাটুকু দেখে। সেবা পরিচর্যা দেখে। কিন্তু গার্মেন্টসে যে হত্যাকাণ্ড শুরু হয়েছে সেই মৃত্যুর মিছিলে যারা মরছে শ্বাসরুদ্ধকর ভয়াবহতা নিয়ে কিংবা কোটি কোটি মণ ওজনের ইট পাথরের চাপায় সেটা তো মহামারির মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর। কি যুদ্ধই না তারা করেছে বাঁচার জন্য নিজের শক্তির চেয়ে হাজারগুণ শক্তির বিরুদ্ধে। তারপর একপর্যায়ে নিস্তেজ, নি¯প্রাণ হয়ে আসা। কিভাবে বর্ণনা করা যাবে মৃত্যুর এমন ভয়াল রূপ। যে মৃত্যু মহামারির নয়, নয় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেও। কারণ একটাই আমরা -এদেশের মানুষের নির্মমমতা। কত সহজেই আমরা আমাদের আত্মীয়-প্রতিবেশিদের জন্য মৃত্যুর অগ্নিকুণ্ড তৈরি করছি। সত্যিকার অগ্নিকুণ্ডই তো। হাত-পা বেঁধে, দরজা-জানালায় তালা দিয়ে আগুনে নিক্ষেপ করার চেয়ে কম তো নয়ই।

এতগুলো মানুষ মারা গেল তবু আমি বিজেএমইএ’র কি কোন দায় নেই। নাকি সংগঠনটি নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে। নাকি আমেরিকান ডলারের গন্ধে তারা বেসামাল হয়ে পড়েছে। এদেশে কৃষির বাইরে অত্যন্ত ২ টি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত হচ্ছে পোশাকশিল্প ও জনশক্তি রপ্তানি। এরমধ্যে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পোশাকশিল্প এখন এদেশের উত্থানের মূল সিঁড়িও। কিন্তু এ খাতটা ধ্বংস হচ্ছে প্রধানত বিজেএমইএ’র গাফিলতির কারণে। যতগুলো অঘটন ঘটেছে সবগুলোর জন্য দায়ি এই বিজেএমইএ। বিজেএমইএ বললে ভুল হবে। বলতে হবে বিজেএমইএ’র নেতাদের কথা। খুব দুর্বল তাদের নেতৃত্ব । এবং এ গামেন্টস খাতকে তারাই শংকায় ফেলে দিচ্ছে বার বার।সোনার ডিম পাড়া হাঁসটিকে তারা গলা টিপে হত্যা করতে চাচ্ছে। দ্বিতীয়ত আমাদের ভয়ঙ্কর রাজনীতির কথা বলা হয়। এ রাজনীতির কারণেও বার বার বলা হচ্ছে এখানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঠিকমত মাল দেয়া নেয়ায় সমস্যা হচ্ছে বায়ারদের।

দেশের সব মানুষ চেপে ধরে হলেও রাজনীতিকে সাইজ করার বিষয়টা কঠিন নয়। হয়ত হয়ে যাবে। সেটা যদি নাও হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে গার্মেন্টস মালিকরা তাদের শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনে আবাসনের ব্যবস্থা করবে। তাতে হরতাল হলেও উৎপাদন ব্যাহত হতো না। এরকম অনেক বিকল্পই ভাবা যেত। কিন্তু এ যে গামেন্টস শ্রমিকরা মারা যাচ্ছে -বার বার- হয় আগুনে না হয় এরকম অভানীয় অনেক বিপদের মধ্যে। গার্মেন্টসে ঢোকার পর জান নিয়ে বের হবে - যেন ভাবনা কতই না কঠিন করে তুলেছে। সেখানে মৃত্য শ্রমিকদের পায়ে পায়ে। হয় পুড়ে মরবে , না হয় এভাবে ভবন ধ্বসের মতো কোন অভাবনীয় ঘটনা তাদেও মৃত্যুরদূত হয়ে হানা দিবে। যেন শ্রমিকদের নিয়তি। এটা এমনই নির্মম নিয়তি যে খুবই মর্মান্তিক, নিষ্ঠুরভাবে এ গরিব গামেন্টস শ্রমিকদের মৃত্যু আমাদের দেখতে হচ্ছে। এ মানুষগুলো আমাদের এতই অবহেলার যে তাদের জীবন আমাদের কাছে কোন মূল্যই পাচ্ছে না। কোন মূল্য নেই তাদের শ্রম ও মেধার। হয়ত শুধু তারা দরিদ্র বলেই আমরা তাদের বার বার নির্মম মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছি। বা তাদের জীবন এদেশের অর্থনীতির নামে বলি দিচ্ছি। যেন গামেন্টস সেক্টর টিকিয়ে রাখতে হলে আমাদের এ নরবলি দিতে-দিতেই হবে। তখন গাঁ - গ্রামে শুনতাম বড় কোন স্থাপনা নির্মাণের আগে নাকি মানুষ বলি দিতে হত। না হয় ওই স্থাপনা নাকি টিকত না। যদিও এটার কোন সত্যতা ছিলনা। তবে কোন দেবদেবির নামে প্রাচীনকালে নরবলির কাহিনী আমরা শুনেছি-পড়েছি। এ যুগে এ কাহিনীগুলো শুনলে আমরা শিউরে উঠি। দ্বিধা তৈরি হয়। দ্বিধা তৈরি হলেও সেসব কাহিনী আজ আমাদের কাছে বার বার ঘুরেফিরে আসছে। আমরা দেখছি যখন আমাদেও অর্থনীতি নিয়ে নানা কথা শুনছি। যতই শুনছি উজ্জ্বল দিনের কথা ততই নরবলি বাড়ছে। এরপরও কি শেষ রক্ষা হবে।

আর কত দেখব। এতগুলো তরুণ-তরুণীর মৃত্যুর পরও গার্মেন্টস সেক্টরের মানুষের প্রাণের ক্ষুধা কি থামবে না। তারা কি বাঁচাতে পারবে গার্মেন্টস সেক্টরটাকে। এরপরও আপনজনের প্রাণের জন্য নয় হাহাকার এ সেক্টরটা কি টিকবে। আমেরিকার বাজারের জন্য যে জিএসপি সুবিধার কথা বলা হচ্ছে সেটা বার বার প্রশ্নের মুখে পড়ছে। বিজেএমইএ নেতাদের কাছে প্রশ্ন এত এত মানুষ হত্যার পর জিএসপির সুবিধাটুকু অর্জন করতে পারবে। যদি না পারে তাহলে তো এই বিজেএমইএ দায়ি থাকবে। কারণ এতগুলো মানুষ হত্যার দায় তাদেরই।

তারাই মেধা, শ্রম ও কৌশল দিয়ে এ শিল্পের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তারা উদ্যোগ নিলেও এ শিল্পের প্রধান পুঁজি ছিল কিন্তু এদেশের গরিব মানুষের সস্তা শ্রম। এটা দিয়েই তারা নিজেরাই যেমন লাভবান হয়েছেন তেমনি দেশের সুনামও নিয়ে এসেছেন। বাস্তবতা হচ্ছে তারা শুধু বিদেশি ডলারের দিকে মনোযোগ দিয়েছিলেন শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য কোন চেষ্টা করছেন না। ভাবছে না। ভাবলে কেন তাদের সংগঠন বিজেএমইএ কেন খোঁজ নেয় না গার্মেন্টস শিল্প স্থাপনের শর্ত মেনে এ শিল্প গড়ে উঠছে কিনা। কেন তারা এ বিষয়টা নিশ্চিত করতে পারছে না। তারা টাকা রোজগার করবে আর রোজগারের শর্তগুলো মানতে চাইবে না- এভাবে আর কতদিন চলবে- হাতের লক্ষ্মি পায়ে ঠেলা, নিজের পায়ে কুড়াল মারা।

কিন্তু বার বার একই ঘটনা ঘটছে। এখনও অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচার উপযোগি স্থাপনায় শিল্প স্থানান্তর করছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন এদেশে ৯০ শতাংশ ভবন বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হয় না। এটা আমি যেমন জানি তেমনি জানার মত সব মানুষরাই জানে। একইভাবে অগ্নিকাণ্ড দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা যায় এমন স্থাপনায় এদেশের কয়টা গার্মেন্টস আছে সেটা আমাদের বুঝতে বাকি নেই। এরপরও আমরা এমন কোন খবর পায়নি বার বার অগ্নিকাণ্ডের পরও গামেন্টসগুলো যথাযথ স্থানে সরানো হয়েছে। বা ব্যাপক মাত্রায় শিল্প স্থাপনা আগুন প্রতিরোধ উপযোগী করা হয়েছে। না আমরা কখনও খবর পায়নি। গার্মেন্টস নামের এ মৃত্যুকূপগুলোতে শুধু যে শ্রমিকরা মরছে তা নয়, যখন তাদেও মৃত্যুটা হচ্ছে ভয়ঙ্কও নির্মমভাবে। আমরা দেখছি ঘন্টার পর ঘন্টা , দিনের পর দিন এ মানুষগুলো প্রচণ্ড মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করে মারা যাচ্ছে। তাদের শত আর্তনাদের পরও তাদের কেউ বাঁচাতে পারছেনা। ১৬ কোটি মানুষই তাদেও মৃত্যুর দৃশ্যটা দেখেও কিছু করতে পারছে না। সেটাই গার্মেন্টস। তাদের মৃত্যু নিশ্চিত হলে আমরা বলছি ‘কি ভয়াবহ ঘটনা। কত নিষ্ঠুর নির্মম মৃত্যু।’ পরে আর এরকম কিছু হবে না তার কোন নিশ্চয়তা মিলছে না। আদৌ মিলছেই না।

সরকার নামে বস্তুটার আসলে কোন দায় নেই। অন্তত এদেশে নেই। তাও -আবার এখানে অধিকাংশ মানুষের ‘লেজ সোজা নয়’। সরকার হাজারবার বললেও তো ‘লেজ বাঁকা’ গার্মেন্টস ব্যবসায়িরা শুনছে না। ‘শ্রমিকরা কাপড় চুরি করবে’ ইত্যাদি নানা ছল-ছুতায় শ্রমিকদের বের হওয়ার পথ বন্ধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করছে। তবু বিজেএমইএ’র নেতারা পরবর্তি কোন জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

আচ্ছা-গামেন্টস সেক্টরটা যে বার বার হুমকির প্রশ্নে আসছে সেটা কি বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে নাকি বিজেএমইএ’র এ ধরনের ভয়ঙ্কর অপরাধ সংগঠনের কারণে। অবশ্যই বিজেএমইএ’র ভয়ঙ্কর অপরাধগুলোর কারণে। এগুলো পরিস্কার অপরাধ। সকলে মিলে রানা প্লাজার রানাকে দায়ি করছে। শুধু রানাকে দায়ি করা যাবে যদি রানা প্লাজার গার্মেন্টগুলোর মালিক তিনি হন। যদি তিনি না হন তাহলে তাকে দায়ি করবেন কেন। এতবড় ঘটনা ঘটেছে রাজনীতির নাম করে সবাই রানার পিছু নিয়েছে। জনগণ রাজনীতি করে না- এমন প্রায়ই বলা হয়। এ জনগণ ভয়ঙ্কর রাজনীতি করে অথবা একেবারে হুজুগে। গার্মেন্টস যদি রানার না হয় তাহলে রানার বাপের সাধ্য আছে গার্মেন্ট শ্রমিকদের জোর করে ফ্যাক্টরিতে নিয়ে কাজ করাবে। তাহলে ওই গার্মেন্টগুলোর কর্তৃপক্ষই এ কাজ করেছে। গার্মেন্টগুলো করা মানে বিজেএমইএ করা। এরকম একটা অনুপযুক্ত ভবনে গার্মেন্টস স্থাপন করা হয়েছে বিজেএমইএ কি তা পরিদর্শন করে দেখেনি। যদি তা দেখে তাহলে কেন সেখানে গার্মেন্ট স্থাপনের অনুমতি দেয়া হল। এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি এ গার্মেন্টস ৪/৫টি বিজেএমইএ’র সদস্য কিনা। নিশ্চয়ই সদস্য। না হলে তারা অনেক আগেই বিবৃতি দিত। সদস্য না হলেও অনেক গার্মেন্টস মালিক আছে যারা এরকম পাতি গার্মেন্টস ব্যবসায়িদের সাব কন্ট্রাক্টে পোশাক বানিয়ে নেয়।

এরমধ্যে সরকারের দায়িত্বও আছে। সরকারের শিল্প-কারখানা পরিদর্শনের একটা সেক্টর আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি আছেন। ধরে নিলাম স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকার একেবারেই অথর্ব। দেশে ও বিদেশের বিশ্লেষকরা বলছেন এদেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি এদেশের সরকারগুলো নয়। এদেশের জনগণই এদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এ কথা বিজেএমই ভালোই জানে। তারপরও কেন তারা সরকারের দিয়ে চেয়ে থাকবে। নিজের পায়ে কুড়াল মারবে। নাকি তারা জানে এ ধরনের গরিব মারলে তাদের ব্যবসার কোন ক্ষতি হবে না। পুরনো গরিব মরলে আরও নতুন গরিব এসে তাদের পায়ের কাছে ধর্ণা দিবে। কেন তারা এ গরিব মানুষগুলোর জীবন নিয়ে এতই উদাসীন। যাদেরকে সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করে তারা টাকাওয়ালা হয়েছে। সৃষ্টিকর্তাও কি এ গরিবদের জন্য একটু সহায় হবে না।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.