নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুরেশ কুমার দাশ

সুরেশ কুমার দাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঐশীর মাদক গ্রহণের ইতিহাস মূল্যায়নের নির্দেশ

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৭



ঐশী একজন ঘোর মাদক সেবী। এটা বুঝতে এত বেশি দেরি হওয়ার কথা নয়। সে ভয়ঙ্কর রকম মাদকাসক্ত। পুলিশ বার বার চেষ্টা করেছে তার মা বাবার হত্যায় আর কে কে জড়িত ছিল তা বের করার জন্য। কিন্তু সে বার বার মিথ্যা তথ্য দিয়েছে পুলিশকে। পুলিশকে বিভ্রান্ত করেছে। সমস্ত পাঠক আশায় ছিল এ হত্যাকা-ে ঐশী ছাড়া আরও অন্য খুনীদের নামও জানা যাবে। কিন্তু সেটা জানা যায়নি। সেটা জানা যায়নি কারণ -ঐশী একাই এ হত্যাকা- সংঘটিত করেছে। কতটা নিষ্ঠুর ও ভয়ঙ্কর খুনী হলে সে তার মা-বাবাকে ঠা-া মাথায় খুন করতে পারে। একই সঙ্গে খুনের পর সব কিছু সুন্দরভাবে গোছ-গাছ করেছে। লাশ সরানো, লাশের রক্ত পরিস্কার করা, খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রপাতি ধোয়ামোছা থেকে শুরু করে সবকিছু গুছিয়ে রাখা- এরপর সে ঠা-া মাথায় ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। ঘর থেকে বেরিয়ে খুব সুন্দরভাবে তার আত্মীয় -স্বজনদের ভুল-ভাল তথ্য দিচ্ছে।

শুধুমাত্র একটি কাজে তার মানবতা ছিল- যদ্দূর মনে হয় সে তার ছোট ভাইটিকে সেইভ করেছে। সম্ভবত তার প্রতি কোন নিষ্ঠুরতা দেখায়নি। আসল কথা হচ্ছে মা-বাবার লাশ সম্ভবত এ ছেলেটি দেখেনি। খুনের ঘটনাটিও সে দেখেনি। এ কারণে ঐশীর বানানো কথাই সে বলেছে- মা-বাবা ঝগড়া করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। এজন্য তার ভাইয়ের মধ্যে কোন ভাবান্তর ছিলনা হয়তো। যদি ছোট ভাইটি তা দেখত, কোন প্রতিক্রিয়া দেখাত বা কান্নাকাটি করত -তাহলে এই শিশুটির কি পরিণতি হত - সেটা আর একটা বিষয়। কারণ কাজের মেয়েটি- তার আপন জন নয় বলে নিরবে-নিভৃতে ওই পুলিশ দম্পতির খুনের ঘটনাকে মেনে নিতে পারে। অথবা এতবড় একটা খুনের ঘটনা দেখে তার থ বনে যাবার কথা। এছাড়া যে খুনী আপন মা-বাবাকে খুন করেছে সেখানে কাজের মেয়ে উল্টা পাল্টা করলে তাকে -খুন করা হবে না- এটা এমন কি। এ কারণেই মেয়েটি তখন ঐশীর সমস্ত আদেশ মেনে নিতে পারে।

এরপরও কাজের মেয়েটিকে খুনীর দোসর হিসাবে সন্দেহ করা যায়। কারণ এতবড় ঘটনায় সে আগাগোড়াই সঙ্গ দিয়েছে ঐশীকে। এছাড়া যখন তারা ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল- তখন সে ঐশীর সঙ্গ ত্যাগ করে পালানোর চেষ্টা করতে পারত। কিন্তু সে খুনী ঐশীকে কোথাও একটু ঘৃণা করেনি বা তার সঙ্গ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেনি। কেন করেনি , কাজের মেয়েটিও এত স্বাভাবিক ছিল কিভাবে তা আসলে জানা হল না।

এদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে হবে-আর তা জানার অপেক্ষায় আছে মানুষ- কিন্তু কোথাও কোথাও কেউ কেউ খুনীর পক্ষ নিয়ে লেখালেখি করেছে। খুনীর বয়স নিয়ে -ঘাটাঘাটি করেছে। অনেকেই বলেন - পাপীকে নয় পাপকে ঘৃণা করার জন্য। কখন পাপীকে ঘৃণা করতে হবে আর কখন পাপকে ঘৃণা করতে হবে-তারও একটা স্থান কাল আছে। এটা অনেকটা অপরাধকে সমর্থন করা বা আস্কারা দেয়ার মত একটা উদ্ধৃত্তি। পাপ সংঘটিত হওয়ার আগেই এ কথা যত মূল্যবান পাপ সংঘটিত হবার পর এ কথা বলা আকাশ পাতাল পার্থক্য। কেন যে ঐশীর জন্য এত মায়া-মহব্বত দেখা গেল কোন কোন পত্র-পত্রিকায়- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয়। এরা কারা? তাদের বয়সটা জানার কৌতূহলও হচ্ছে। আর তাদের এত মহৎ হবার কারণই কি।

কোন পরিস্থিতিতে, কখন পাপ ও পাপীকে ঘৃণা করতে হবে বা করতে হবে না তার হিসাবটা তারা না করেই এসব বলছে।

ঐশী এত বড় বিপর্যয় ঘটানোর পেছনে তার মা-বাবার মৃত্যু হলেও শেষপর্যন্ত তারাই দায়ি। শুধু তার মা বাবাকে এ কারণে কিছুটা ছাড় দেয়া যায়- তারা মেয়েটিকে অনেক ভালোবেসেই হয়ত তাকে অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছে। যা হজম করাটা ঐশীর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিংবা ঐশী বুঝেও তার চার পাশের সমাজ বাস্তবতাটা মানতে চায়নি। তার মা-বাবার অঢেল টাকায় সে যা করত তাতে বোঝা উচিৎ ছিলো ঐশীর চারপাশে হাজারো দুঃখ-কষ্ট সয়ে কত মানুষ এদেশে জীবন কাটাচ্ছে। ঐশী কিন্তু এটা বুঝবে না - তা হতে পারে না। তাকে দেখে মনে হয় না- সে ইমেসিউরড। সে যে সব জায়গায় ঘোরাফেরা করেছে - তাতে সে অনেকটাই একজন পরিণত মানুষ হবার মত সব কিছু দেখেছে। যেটা তার চেহারার মধ্যে পরিস্কার। এমন কি মা-বাবাকে খুন করার পরও সে তার জগৎটা ফিরে পেতে চায়নি। সে এতকিছুর মধ্যেও তার মা-বাবাকে খুনের বিষয়টি পরিস্কার করেনি। এলোমেলো তথ্য দিয়েছে। বার বার।

এতদিন পর আদালত ঐশী রহমানকে হাসপাতালে রেখে তার মানসিক অবস্থা ও মাদক সেবনের ঘটনা মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে চিকিৎসকে পরার্মশ অনুযায়ী তাকে মনরোগ বিশেষজ্ঞ দ্বারা কাউন্সিলিং করার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

আদালত এটা বুঝতে পেরেছেন। এজন্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাতেই হয়। কারণ মা-বাবা হত্যার পরও ঐশীর মধ্যে যে মানবতাবোধের কোন পরিচয় পাওয়া যায়নি তা ছিল ভয়ঙ্কর। পেশাদার খুনীকে সে হার মানিয়েছে -মিথ্যা বলার খেলায়। অনেক খুনী আছে যারা খুন করার পর বলে, এবার আমাকে শাস্তি দাও। আমি এই এই অপরাধ করেছি। এটা হয় যখন খুনীর ক্ষোভ মিটে যায়। পুলিশ যখন ঐশীর সঙ্গে কথিত সহযোগীদের নাম বার বার চেষ্টা করেও বের করতে পারেনি তখন পরিস্কার বোঝা যায় ঐশী একাই এই খুন সংঘটিত করেছে। এজন্য সে নিখুঁতভাবে খুনের পরিকল্পনাটি করেছে। খুনের পরবর্তি একটা গল্পও সাজিয়েছে।

টাকা অনেক মানুষেরই আছে। ঐশীর পিতার চেয়ে বেশি টাকা অনেকের থাকে। কিন্তু সব মেয়ে ঐশীর মত হওয়ার নজির সমাজে একটাও নেই। কিন্তু ঐশী তাই হয়েছে।

পুলিশের অবৈধ আয়ের কথা যেমন বলা হচ্ছে অর্থাৎ ঐশীর বাবার অঢেল টাকা। যেটা ঐশীকে বিপথগামী হতে সহায়তা করেছে। অন্যদিকে ঐশী বিপথগামী হয়েই পেয়েছে ঢাকা শহরের স্তূপ স্তূপ মাদকের হাতছানি। মাদকাসক্ত বন্ধু। ইত্যাদি।

এ মাদকই ঐশীকে জীবন ও জীবনবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। যদিও পুলিশের টাকা নিয়েই বেশি কথা হয়েছে। মাদক নিয়ে কথা হলেও তা কম। ঢাকা শহর শুধু রাজধানীই নয় মাদকের রাজধানীও বটে। এদেশের এক বিশাল অংশ তরুণকে এক সময় ব্যাপকভাবে মাদকাসক্ত করেছিল ফেনসিডিল। সেই ফেনসিডিলের জায়গা এখন দখল করেছে ইয়াবা। পুলিশ অফিসার মাহফুজুর রহমানের টাকাকে দূষলেই হবে না। তার আগে এই মাদকের জায়গায় হাত দিতে হবে। এজন্য একা একজন পুলিশ অফিসার দায়ি নয়। দায়ি পুরো আইন শৃঙ্খলাবাহিনী। দায়ি যে রাষ্ট্র মাদককে আস্কারা দিচ্ছে পুলিশের আয়ের আর একটি উৎস হিসাবে।

এখন হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ঐশী রহমানকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে মা-বাবার হত্যাকা-ের আগে ও পরে তার মানসিক অবস্থা এবং মাদক নেওয়ার ইতিহাস মূল্যায়ন করতে নির্দেশ দিয়েছে। স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, সমাজকল্যাণ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ বিবাদীদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু পুলিশ কেন বুঝেনি মাদকে আসক্ত একটি মানুষের প্রকৃতি। কিভাবে জেরা করতে হবে। যার কাছে পুলিশের সব কৌশলই ব্যর্থ হয়ে গিয়েছিল স্বীকারোক্তি আদায়ের। ফেনসিডিলের পর ইয়াবাকে এভাবে প্রশ্রয় দিয়ে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী গোটা একটি প্রজন্মকে ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে না। যে পরিণতি থেকে রক্ষা পেল না পুলিশ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.