নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুরেশ কুমার দাশ

সুরেশ কুমার দাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্প্রদায়িকতা : নিন্দা কিংবা প্রতিবাদ নয়

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৪৪



কোন সাধারণ অপরাধ তো নয়ই। সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের মত ভয়ঙ্কর কোন অপরাধ করার পরও যখন রাষ্ট্র এ ঘটনার বিচার করতে ব্যর্থ হয় তখন কিছু জনগণ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে কথা বললে কোন কাজে আসবে না। আজ পর্যন্ত তাই সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের নখ-দন্ত থেকে সংখ্যলঘুরা রক্ষা পায়নি। এটা আদৌ সম্ভব কিনা সংখ্যালঘুরা জানে না। তারা এদেশে বসবাস করে আসছে এ অজ্ঞাত আতঙ্ককে সঙ্গে নিয়ে। ঘটনা এটা যে, যে কোন মুসলমান এসে আমার ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিতে পারবে। আমার মা বোনকে ধর্ষণ করতে পারবে। আমাকে হত্যা কিংবা নির্মমভাবে নির্যাতন করতে পারবে। শুধু আমাকে নয় আমার পরিবার-পরিজন, পাড়া- প্রতিবেশি সকলের উপর এ ভয়ঙ্কর অপরাধ করার অধিকার এদেশের মুসলমান সম্প্রদায় রাখে। এটা সকল মুসলমানই করতে পারে কিন্তু কেউ কেউ করতে চাই না। কেউ কেউ আশ্রয় দেয়- তাদের আশ্রিত হিসাবে। কোন মুসলমান মারবে আর কোন মুসলমান আমাদের মলম লাগাবে। আর কোন কোন মুসলমান সাম্প্রদায়িকতা লালন করে। আর যারা মলম লাগাবে তারা অসাম্প্রদায়িক তকমা পায়। তারাও কিন্তু একটা মজা লুটে। এটা একটা চমৎকার মজা। আর হিন্দুরা এভাবেই নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে। তাদের আর সাহস ও অধিকার নিয়ে বেড়ে উঠার কিংবা বেঁচে থাকার সুযোগ থাকছে না। যেখানে সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে সেখানেই এটা সংখ্যালঘুদের নিয়তি। আজকে একটা পত্রিকায় রিপোর্ট পড়লাম সেটা আরও চমৎকার- ঘটনা ঘটার পর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের শিকার কেউ মামলা করতে চায় না। করলেও আর আইন আদালতের কাছে ধর্ণা দিতে চাই না। এটা রাষ্ট্রের একমাত্র জবাব হতে পারে না, জোচ্চুরি ছাড়া।

রামুর প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষুর কথা মনে পড়ছে। রামুর ঘটনার পর তিনি খুব চমৎকারভাবে পত্রিকায় লিখেছেন- রামুর সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের মূল হোতা তাদের গ্রেফতার করেনি সরকারের পুলিশ। কিন্তু ভাঙ্গা মন্দির ও মূর্তিগুলো পলিশ করতে সরকার খুব একটা দেরি করেনি। তিনি লিখেছেন- মন্দির ও মূর্তিনির্মাণ করে রামুর ক্ষত ঘুচানো হলেও প্রকৃতই যারা সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিল তাদের মনের দাগ, ক্ষোভ ও আতঙ্ক দূর করার কি ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে। রামুতে আমি গিয়েছিলাম। সেখানকার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসে দলমত নির্বিশেষে মুসলমান সম্প্রদায়ের লোকজন সন্ত্রাস ও তা-বে অংশ নিয়েছিলেন। ঠিকই আবার আশ্রয়ও দিয়েছে মুসলমানরা।

বাস্তবতা হচ্ছে- এ যাবত বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও অপরাধের বিচার হয়নি। রাষ্ট্র কেন এসব ঘটনার বিচার করেনি এসব আসলেই রহস্যজনক। কিংবা যারা ঘটনার শিকার তাদের বিচার পেতে সহযোগিতা করেনি।

আমি মুসলমানদের কথা এ লেখায় উল্লেখ করেছি। বাংলাদেশি মুসলমান। রাষ্ট্র কি মনে করে সংখ্যালঘুর মেয়েকে ধর্ষণ করলে, কোন সংখ্যালঘুকে নির্যাতন করলে, হত্যা করলে বা তাদের বাড়ি-ঘর-মন্দির জ্বালিয়ে দেয়ার ঘটনায় বিচার করলে আসামি যদি সাজা পায়, তার যাবজ্জীবন কারাদ- হয়, মৃত্যুদ- হয় তাহলে এ ঘটনায় সকল মুসলমানের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে। তার কারণে কেউ কেউ নতুনভাবে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ করে বসবে। এমনকি সব মুসলমান মিলেও হতে পারে। তার মানেটা দাঁড়াচ্ছে মুসলমান চাইলে সংখ্যালঘুর উপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ করতে পারবে। পরে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িকতা থেকে রেহাই পাবার জন্য যারা মার খেয়েছে তারা আর বিচারও পাবেনা। এটা রাষ্ট্রের আইন ও আদালতের কিংবা রাষ্ট্রের একটি ভয়ঙ্কর মনস্তাত্ত্বিক ব্যাধি। পরিস্কার অর্থে রাষ্ট্র সরাসরি সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। সত্যিকার অর্থে লালন করছে। কিংবা রাষ্ট্র কোন কারণে সংখ্যালঘুদের প্রতি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠেছে। নাকি এটাই বাংলাদেশের প্রকৃত চরিত্র।

মুসলিম ভ্রাতৃত্বের কারণে ৪৭ সালে মহা ধূমধামের সহিত ভারত পাকিস্তান ভাগ হয়েছিল। এটা ছিল ভারতীয় মুসলমানদের ঐক্যের জন্য এক গভীর প্রেম। এ প্রেমের যথেষ্ট কারণও ছিল। মুসলমানরাও নিগ্রহের শিকার হয়েছিল ভারতীয় হিন্দুদের আচার-সংস্কৃতির নামে ও সাম্প্রদায়িকতার কারণে। বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে জানিয়েছেন, তিনি সর্বপ্রথম জেলে গিয়েছিলেন হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে মারামারি করে।



৪৭ সালের সেই প্রেমে খুব সহজেই চিড় ধরে পাকিস্তানি বাংলাদেশিদের। ৭১ সাল এ ঘটনার প্রমাণ। এটা আসলে চিড় ধরানোর মত কোন প্রেমও ছিল না। বঙ্গবন্ধু এক যাদুকরি মোহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলেন বলেই তা সম্ভব হয়েছিল। আর ছিল শত শত বছর ধরে নিপীড়িত বাঙালির আকাক্সক্ষা। বাংলাদেশ হয়েছে কিন্তু মুসলমানদের সেই ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক তথা চেতনা কিংবা ভারতীয় হিন্দুদের আচার-সংস্কৃতির নামে ও সাম্প্রদায়িকতা বিষবাষ্পের সেই প্রতিশোধস্পৃহা যে মুসলমানরা খুব বেশি ভুলতে পেরেছে তা নয়। অবদমনে হলেও তারা এটা ভাবতেই পারে। আর যারা সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী তারাও অবদমিতদের অংশ। রাষ্ট্র পরিচালনায়ও তারা। তাই এখানে বিচার নয় সংখ্যালঘু হয়ে মার খাওয়াটা বিস্ময়ের কিছু নয়। বিচার না পাওয়াটাও বিস্ময়কর নয়। এখানে একপক্ষ মারবে আর এক পক্ষ অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে মলম লাগাবে। এ অবস্থায় সংখ্যালঘুদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নিতে হবে। কারণ ভারত- পাকিস্তান ও বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীটা অনেক বড়। কারণ ২১ শতকে বর্বররাও এ রকম রাষ্ট্রব্যবস্থা চাইত না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.