নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য শুভ

সূর্য শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘দ্যা লাস্ট কিস’ প্রথম ঢাকাই সিনেমা

২০ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ২:২৬

উপমহাদেশে চলচ্চিত্রের যাত্রা শুরু একজন বাঙালীর হাত ধরে। আরও স্পষ্ট করে বললে আমাদের দেশের সন্তান মানিকগঞ্জের ‘হীরালাল সেন’ এর হাত ধরে ১৯০২ সালে। কিন্তু পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের যাত্রা ১৯৫৬ সালে আব্দুল জব্বার খানের ' মুখ ও মুখোশ' সিনেমা দিয়ে। এ আমাদের সবারই জানা। কিন্তু যেটা একটু কম মানুষের জানা ‘মুখ ও মুখোশ সিনেমার আগেও এই বাঙলায় তথা ঢাকায় সিনেমা নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছিল।

তা হলো নবাব পরিবারের পৃষ্ঠপোষকতা ও তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের শিক্ষক অম্বুজ গুপ্তের পরিচালনায় ১৯৩১ সালে নির্মিত হয়েছিল ‘দ্যা লাস্ট কিস’। এই সিনেমার পিছনে নবাব পরিবারের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও বিনিয়োগ ছিল।

'দ্যা লাস্ট কিস' সিনেমার একটি দৃশ্যে নায়িকা

‘দ্যা লাস্ট কিস’ নির্মাণের আগে পরীক্ষামূলক (১৯২৭-সালে) ভাবে তারা নির্মাণ করেছিলেন শর্ট ফিল্ম ‘সুকুমারী’। দু’টি সিনেমাই পরিচালনা করেন অম্বুজ গুপ্ত। দু’ একটি পরিবর্তন ছাড়া অভিনয়শিল্পিরাও ছিলেন একই। সুকুমারী সিনেমায় নায়ক ছিলেন খাজা নসুরুল্লাহ। আর নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেন সুদর্শন যুবক সৈয়দ আব্দুস সোবাহান। ছবিটি নবাবদের ঘরোয়া পরিবেশে দেখানো হয়।

এর সাফল্য থেকেই তারা ‘দ্যা লাস্ট কিস সিনেমা নির্মাণে হাত দেন। এ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন ঢাকা নবাব পরিবারের সদস্য খাজা আজমল ও নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেন ললিতা বা লোলিটা বা বুড়ি। ললিতা ছিলেন বাদামতলী পতিতালয়ের একজন যৌনকর্মী। চারুবালা, দেববালা বা দেবী নামের আরও দুই যৌনকর্মী এতে অভিনয় করেন। হরিমতি নামে একজন অভিনেত্রীও এতে অভিনয় করেন। একবছর পর লোলিটা তার আগের পেশায় ফিরে যান। অন্যান অভিনেতারা হলেন নবাববাড়ির খাজা আজমল, খাজা আদিল, খাজা আকমল, খাজা নসরুল্লাহ, খাজা অজয়, খাজা আকিল, খাজা জহিরে, খাজা শাহেদ, শৈলেন রায় বা টোনা বাবু । ঢাকা শহরের প্রাকৃতিক দৃশ্যসংবলিত "দ্য লাস্ট কিস" ছবির দৃশ্য ধারণ করা হয় মতিঝিল, দিলকুশা, শাহবাগ, নীলক্ষেত ও আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয়ের কাছে নবাবদের বাগানে। এ ছবির চিত্রগ্রহণের কাজ শেষ হতে প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল। চিত্রগ্রাহকের ভূমিকাও পালন করেন খাজা আজমল।

ঢাকায় এ ছবির শুটিং হলেও এর প্রিন্ট ও প্রসেসিং হয় কলকাতায়। ১২ রিলের ছবিটি ১৯৩১ সালে এই চলচ্চিত্র মুক্তি পায় ঢাকার মুকুল হলে (অধুনা আজাদ হল), এর প্রিমিয়ার শো উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার (১৮৮৮-১৯৮০), পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (১৯৩৬-১৯৪২) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রিলিজের সময় নির্বাক এ ছবি বাংলা, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় সাবটাইটেল করে দেওয়া হয়েছিল। ইংরেজি সাবটাইটেল করেন পরিচালক অম্বুজ গুপ্ত নিজেই ও উর্দু সাবটাইটেল করেন অধ্যাপক ড. আব্দুল শাদানী। প্রায় এক মাস এ ছবির প্রদর্শনী চলে।

ছবিটি কলকাতায় প্রদর্শনের জন্য মাত্র এক হাজার টাকায় একমাত্র রিলটি ‘অরোরা ফিল্ম কোম্পানি’ হাতিয়ে নেয়। পরে আর সিনেমাটি উদ্ধার করা যায়নি। কালের গর্ভে হারিয়ে গেলো প্রথম ঢাকাই সিনেমা ‘দ্যা লাস্ট কিস’। উগ্র জাত্যাভিমান থেকে এই সিনেমার কোনও স্বীকৃতি আমরা দেই না। কেননা, এই সিনেমার পরিচালক -কলাকুশলী দেশভাগের সময় কেউ কেউ ভারতে চলে গেছেন। আর যারা পাকিস্তানে ছিলেন তাদের ভূমিকাও ছিল বাঙালী বিদ্বেষী, বাঙালী বিরোধী।

তারপও ... ঐতিহাসিক বিচারে এটাই প্রথম ঢাকাই সিনেমা।


তথ্য সহায়তা:

১। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্প: সংকটে জনসংস্কৃতি , গীতি আরা নাসরীন ও ফাহমিদুল হক

২। বাংলাদেশে চলচ্চিত্রের রূপরেখা, অনুপম হায়াত

৩। উইকিপিডিয়া ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.