![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চোখ দুটো বন্ধ করে নীরবে গভীর মনোযোগ দিয়ে, কিসের যেন আওয়াজ শোনার চেষ্টা করছি ।
প্রতিনিয়ত বাতাস মুখে এসে বারী খাচ্ছে, কেমন জানি অদ্ভুত একটা অনুভুতি ।
হাল্কা চোখ খুললেই অতি দ্রুত পাশকাটিয়ে যাওয়া ল্যাম্পপোষ্টের আলো চোখে লাগছে, আলসেমির দরুন আপ্নাআপ্নি চোখটা বন্ধ করে নিচ্ছি ।
বিশ্ব বিচিত্রার সবকিছুর যেন পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুভুত হচ্ছে, কানে বাজছে। গাড়ির ইঞ্জিনের হুংকার, পায়ের শিরশিরানি, বাতাসের সাথে ধেয়ে আশা বালুকণা, গ্লাসের একে অপরের সাথে সংঘর্ষ, মাথার ভিতরে অদ্ভুত রকমের একটা চাপ, যেন দেহের তুলনায় মাথাটা খুব ভারী হয়ে গেছে । অনুভব করতে করতেই অবচেতন মনে প্রবেশ করলাম, মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি।
সত্যি কি? সত্যি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিনাতো ?
“আম্মু, এই আম্মু, আম্মু, শুনতে পাচ্ছ ? আমার না খুব খারাপ লাগছে, আম্মু, এই আম্মু, আম্মুউউউ”
খুব বলতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু আওয়াজ বের হচ্ছেনা কেন ? ঠোঁট নরছে না, মাথাটা আরও ভারী হয়ে আসছে ।
উফফ! খুব ব্যাথা করছে, ধীরেধীরে যেন পুরো শরীরটা নিথর হয়ে যাচ্ছে ।আছতে আছতে চোখের সামনে সব কিছু ঘোলা হয়ে যাচ্ছে, নিরব, নিথর, নিছতব্ধ ।
আধো আধো চোখটা খোলার চেষ্টা করছি, তলপেটের নীচটা কিছুতেই অনুভব করতে পারছি না;
মাথার উপরে তাকাতেই টের পেলাম আমি কোন বাড়িতে আছি, বিছানায় শুয়ে আছি।
বাহিরে কে যেন কথা বলছে, আম্মু না!! হ্যাঁ, আম্মুই তো । গায়ের সমস্থ শক্তি দিয়ে ওঠার চেষ্টা করলাম ।
কিন্তু পুরো দেহটা কে যেন বিছানার সাথে চেপে ধরে আছে; নাহ! পারছি না ।
খুব কষ্টে বাম হাতটা তলপেটের নীচে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, গোপন অঙ্গে হাতটা লাগতেই অসম্ভব ব্যাথা বিদ্যুৎ বেগে মাথায় আঘাত করলো ।
মাথাটা তুলে দেখি জায়গাটায়, জায়গাটায় অনেক রক্ত, জমাট বেঁধে আছে, শক্ত হয়ে দানা বেঁধেছে । ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম ।
হকচকিতে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো; সূর্যের আলো মুখে লাগতেই বিরক্তিতে চোখটা বন্ধ করে ফেললাম, সকাল হয়ে গেছে । ধুর ছ্যাই ! স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষণ ।
।
পাশ ফিরে দেখি আম্মু এখনও ঘুমচ্ছে, এত্ত কিছু হয়ে গেল,আর তুমি টেরই পেলেনা মা? মনে মনে অভিমান নিয়ে ভাবলাম যাক, বেঁচে আছি তাহলে । বাসের সীটে আবার হেলান দিয়ে শুয়ে পরলাম, গন্তব্য এখনও অনেক দেরী । এই প্রথম নানু বাড়িতে যাচ্ছি, ওখানকার মানুষজন যে কেমন কি হবে তাই ভাবছি মনে মনে । কিন্তু ভয় হচ্ছে, একটু আগে যে স্বপ্নটা দেখলাম, তা যদি সত্যি হয় ?
জানালার কার্নিশে মাথাটা এলিয়ে দিলাম, থুঁতি রেখে আছতে আছতে বাহিরে তাকাতে চেষ্টা করলাম। আবছা আবছা থেকে সোনালি সকালটা স্পষ্ট হতে শুরু করলো, হাত রেখে ভালো করে জায়গাটা তৈরি করে নিলাম ।
আজ এতো দিন পরে সুযোগ হয়েছে, সেই জিনিসটা দেখার, এতো দিন যার গল্প শুনে এসেছি মার কাছে। মা বলেছিল সেটি দেখতে নাকি, অনেএএএএএএক সুন্দর, বিশাল বড়, এত্ত উঁচু যে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখাই যায়না। আর ঠিক তার নিচ দিয়ে বয়ে গেছে এক বিশাল নদী, সেই নদীতে আছে অনেক দৈত্য দানব আর মানুষ খেকো বিশাল বিশাল মাছ।
কিন্তু, এখনও সেটা আসছেনা কেন ? মার কাছে কতদিন শুনেছি, নদীর গল্প, সমুদ্রের গল্প, ইয়া বড় বড় মাছের গল্প, বিশাল বিশাল নৌকার গল্প । আজ কতদিন পর সেই স্বপ্ন পুরন হতে যাচ্ছে কিন্তু কই? কই সেই দৈবিক বস্তু?
কই সেই ‘যমুনা সেতু’ ?
মা বলেছিল, নানু বাড়ি যাওয়ার পথেই যমুনা সেতু পরবে, আমাদের সেতুর উপর দিয়ে পার হতে হবে। কিন্তু সেতু এখনও আসছেনা কেন ? আচ্ছা, ঘুমের মধ্যে সেতু পার হয়ে যাইনি তো?
আম্মু, এই আম্মু, আম্মু, আর কত দেরী মা, সেতু আসতে? আমরা কি সেতু পার হয়ে গেছি ?
মা চোখ খুলল, আলতো হাঁসি দিয়ে মা আমাকে কাছে টেনে নিল । ইশসসস, কি মমতা মাখানো সে হাঁসি, যে হাসিটা আমার সব চেয়ে বেশি ভালো লাগে, যার জন্য মাকে আমি এত্ত ভালবাসি। আর থাকতে পারলাম না,মার গলাটা জোরায় ধরলাম ।
বলনা, কখন আসবে সেতুটা ?
মা বলল; এইতো বাবা, আর কিছুক্ষণ, তার পরেই সেতু এসে পরবে ।
©somewhere in net ltd.