নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ রক্ষার সৈনিক

মারুফ মুনজির

আমাকে যে ভালবাসে তাকে আমার খুব ভাল লাগে

মারুফ মুনজির › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষা আন্দোলন ও এ প্রজন্মের ভাবনা

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৫১

এই প্রজন্মের নাগরিক হিসেবে ভাষা আন্দোলনের বাস্তব অভিজ্ঞতা আমার নেই, তখন একটু ভাবতে ইচ্ছে হয় আমাদের জীবনে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব কতখানি? আমরা কি ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে জীবনাচরণের আদর্শ মনে করি নাকি কিছু উপন্যাস গল্পের নাটকের ফ্যাশনের মাস হিসেবে পালন করি। এর উত্তরে আমাদের মানসিক দরিদ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ে। অথচ ভাষা আন্দোলনের চেতনা আমাদের বাঙালি জাতিসত্তা, মেধা, মনন ও সৃজনশীলতার বিকাশ করেছে। ভাষা-আন্দোলনের বহুমাত্রিক প্রভাব সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলাসহ সৃষ্টিশীলতার প্রতিটি ক্ষেত্রেই অবদান রেখেছে। বর্তমান প্রজন্মের এই স্মৃতিভ্রষ্টতে আমি লজ্জিত।

ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে যতটুকু জানা তা পাঠ্যপুস্তক আর কিছু পড়াশোনার কারণে, ছোট সময়ে একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল আমার কাছে উৎসবের দিন হিসেবে পরিচিত, কারণ ইটের উপর ইট দিয়ে শহীদ বানানো, বিভিন্ন জায়গা থেকে ফুল চুরি করে শহীদ মিনার পুষ্পস্থাপন, খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে চলা, আমাদের শৈশবকে এক ধরনের দুরন্তপনা যোগ করে দিতো এই দিনটি, আমাদের এলাকায় উপজেলা চত্বর আর হিন্দু বাড়িতে ফুল গাছ ছিল, বন্ধুদের নিয়ে প্লান করে এসব জায়গা থেকে ফুল সংগ্রহ করাই ছিল আমাদের বিশাল এডভেঞ্চার, তার ওপর সামাজিক, কিছু ধর্মীয় অনুভূতির উপেক্ষা আমাদের করতে হতো। মোট কথা একুশে ফেব্রুয়ারির দিন ছিল এক আনন্দঘন, উত্তেজনাপূর্ণ তারুণ্যের দিন। এরপর পাঠ্যপুস্তকে একুশের গল্পের তপু এসে অনেক দিন মনে দাগ কেটে ছিল, যতবার পড়তে হতো ততবার এক ধরনের বেদনাহত হয়ে যেতাম, ইতিহাস আর বাংলা বিষয়ে পাস করার জন্য অনেক সাল তারিখসহ মুখস্ত করতে হয়েছে এই ভাষা আন্দোলন বিষয়ে। কিন্তু একুশের চেতনাবোধ আমাকে নাড়িয়ে তোলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর, যখন সিলেবাসের বাংলা বই খুঁজে পেতে কষ্ট হতো, যখন তারুণ্যের নেশায় ইতিহাস জানার জন্য ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াতাম, জাতীয় জাদুঘর, বর্ধমান হাউস, কলাবাগান স্মৃতি জাদুঘর, ঢাকসু সংগ্রহশালা। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য মুখস্ত বিদ্যার সাথে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি বিজড়িত ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানের সাথে পরিচিত হতাম তখন এক ধরনের মানসিক, শারীরিকভাবে আলোড়িত হয়ে পড়তাম। ভাষা আন্দোলনের বাস্তব অভিজ্ঞতা না থাকায় মাতৃভাষা কি অনুগ্রহ তা বুঝেছি অনেক দেড়িতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাসফরে দেশের বাইরে গিয়ে আমার প্রিয় বাংলা ভাষা আমাদের জন্য কি অনুগ্রহ সেদিন বুঝেছি, আমার মনে হয় এ প্রজন্ম মাতৃভাষার আবেগটা ধরতে পারছেনা, কারণ দেশের বেশিরভাগ মানুষ কথা বলতে অনুকূল পরিবেশ পাচ্ছে, একটু প্রতিকূল পরিবেশে পড়লেই বুঝতে পারতো আমাদের পূর্ব প্রজন্ম কি উপহার আমাদের দিয়ে গেছেন, যেমন আমি বুঝেছি দেশের বাইরে গিয়ে। সেদিন জহির রায়হানকে খুব অনুভব করেছি, ‘জেলার সাহেব, জেলখানা বড় করুন। আসছে ফাল্গুনে আমরা দ্বিগুণ হব।’ এই উক্তিটি অনুধাবন করতে পেরেছি। একধরনের উত্তেজনা আর নিজের ভাষার সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে গর্ব ও স্বস্তিবোধ করেছি।

বাঙলা ভাষার চেতনাবোধ অনুভব করি কবিতা লিখতে, প্রেয়সীর কাছে নিজের আবেগ উপস্থাপন করতে গিয়ে, সত্যি যদি মাতৃভাষা না থাকতো তাহলে কি হতো। যখন দেখি এই প্রজন্মের নাগরিকরা বাংলাকে উপেক্ষা করছে, কথা বলতে গিয়ে ভাষার শ্রুতিমাধুর্য নষ্ট করে ফেলছে, তখন তাদের প্রতি ঘৃণা ছাড়া মনে কিছু আসে না, প্রত্যেক ছাত্রের পড়ার টেবিলে একটা ডিকশনারি থাকলেও বাংলা অভিধান চোখে পড়ে কম, একুশের চেতনাবোধ এখন টিশার্টে অথবা একুশে ফেব্রুয়ারিনির্ভর হয়ে পড়েছে। কখনো কখনো বিশ্বায়নের কারণে বাংলা ভাষাকে একটু অবহেলা করছে এ প্রজন্ম। অন্য ভাষা শিখতে ও শুদ্ধ উচ্চারণ করতে যতটা সময় ব্যয় করছে বাংলা ভাষা চর্চা ও শুদ্ধ উচ্চারণের তত সময় আমরা ব্যয় করতে পারিনি।

বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলোর মধ্যে মাতৃভাষা দিবস পালনে একধরনের স্বস্তি অনুভব করি, কেননা এই দিবস প্রধান দুই দলের ঘৃণ্য রাজনৈতিক ব্যবসার বিষয় থেকে মুক্ত। একুশের চেতনাবোধ একধরনের সামষ্টিক ঐক্য তৈরি করে। আমার খুব ইচ্ছে হয় সিয়েরালিওনের মতো অনেক দেশ যদি বাংলাকে দ্বিতীয় মাতৃভাষা হিসেবে গ্রহণ করতো। আমার মনে হয় এটা সম্ভব, কিভাবে? এজন্য এগিয়ে আসতে হবে আমাদেরই, আমরা কেনো ইংরেজি শিখি, কারণটা হলো পৃথিবীতে জীবন নির্বাহের উপকরণগুলো, উন্নত সংস্কৃতির বেশির ভাগ ইংরেজিতে পাওয়া যাচ্ছে, তাই বিশ্বব্যাপী বাংলাকে ছড়িয়ে দিতে এই সব উপকরণ আমাদেরই তৈরি করতে হবে, একদিন না একদিন বাংলাভাষা সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে, পৃথিবীর সকল নাগরিক আমাদের ভাষা শিখবে তাদের প্রয়োজনেই। এভাবেই বিশ্ব সাম্রাজ্য তৈরি করবো আমরা বাঙালিরাই। এ ক্ষেত্রে বাঙালির এ প্রজন্মকেই হতে হবে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা ভাষার ধারক, বাহক ও প্রচারক।

একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে উপচে পড়া ভিড় আর চাক্ষুস আয়োজন আমাদের যেমন সমৃদ্ধ ইতিহাস তুলে ধরে তেমনি দিননির্ভর সংস্কৃতি পালনে আমাদের মানসিক দরিদ্রতাও মনে করিয়ে দেয়। বর্তমান প্রজন্ম অহেতুক স্মার্ট হতে গিয়ে বাংলা ভাষাকে বিষাক্ত করে ফেলেছে, আমার মনে হয় এই সব মনগড়া গুরুত্বহীন স্মার্ট হওয়া থেকেই নিজেদের বিরত রেখে মূলধারায় ফিরে আসা এবং একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বিশুদ্ধ বাংলা চর্চা অব্যাহত রেখে বাঙালির আত্মমর্যাদাকে অক্ষুণœ রাখাই হোক আমাদের প্রজন্মের অঙ্গীকার। পরিশেষে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কথা দিয়ে শেষ করি- ১৯১৮ সালে ‘আমাদের ভাষা সমস্যা’ শিরোনামে এক বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমরা বঙ্গদেশবাসী। আমাদের কথাবার্তার, ভয়-ভালোবাসার, চিন্তা-কল্পনার ভাষা বাংলা। তাই আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোনো ভাষা কানের ভিতর দিয়া মরমে পৌঁছিয়া পরান আকুল করে? মাতৃভাষা ব্যতীত আর কোন ভাষা কল্পনা-সুন্দরী তাহার মন-মজানো ভাবের ছবি আঁকে? কাহার হৃদয় এত পাষাণ যে মাতৃভাষার অনুরাগ তাহাতে জাগে না? পৃথিবীর ইতিহাস আলোচনা করিয়া দেখ মাতৃভাষার উন্নতি ব্যতীত কোনো জাতি কখনো কি বড় হইতে পারিয়াছে? আরব পারস্যকে জয় করিয়াছিল। পারস্য আরবের ধর্মের নিকট মাথা নিচু করিয়াছিল, কিন্তু আরবের ভাষা লয় নাই; শুধু লইয়াছিল তাহার ধর্মভাব আর কতকগুলি শব্দ। তাই আনোয়ারী, ফেরদৌসী, সাদী, হাফিয, নিযামী, জামী, সানাই, রূমী প্রমুখ কবি ও সাধক-বুলবুলকুলের কলতানে আজ ইরানের কুঞ্জকানন মুখরিত। যে দিন ওয়াইকিফ লাটিন ছাড়িয়া ইংরেজি ভাষায় বাইবেলের অনুবাদ করিলেন, সেই দিন ইংরেজের ভাগ্যলক্ষ্মী সুপ্রসন্ন হইল। যতদিন পর্যন্ত জার্মানিতে জার্মান ভাষা অসভ্য ভাষা বলিয়া পরিগণিত ছিল, ততদিন পর্যন্ত জার্মানির জাতীয় জীবনের বিকাশ হয় নাই।’



মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:২৯

পাঠক১৯৭১ বলেছেন:




" তখন একটু ভাবতে ইচ্ছে হয় আমাদের জীবনে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব কতখানি? "

-আপনার পোস্ট পরে বুঝলাম যে, ২১ আপনার উপর প্রভাব ফেলেনি!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.