নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিরকাল ভাস্বর হয়ে থাকবে যে নাম! সে নাম শেখ মুজিবুর রহমান।

১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:০৪

আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী।



এই মহান নেতার জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে। বাঙালির নয়নের মণি বঙ্গবন্ধুর আজ ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। শৈশব থেকেই মহত্প্রাণ মহীয়সী মানুষ বঙ্গবন্ধু দেশ-সমাজ ও জাতির মঙ্গল কামনা করেছেন। মধুুমতী নদীর তীরে শৈশবের দিনগুলো থেকেই তার মানস গঠনে গড়ে উঠেছিল দেশ, সমাজ এবং বাঙালির কল্যাণ আকাঙ্ক্ষার কথা। বঙ্গবন্ধু সহস্র বছরের বাঙালির প্রবল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন ভূখণ্ড বাংলাদেশ গঠনের জন্যে সব সময়ে আকাঙ্ক্ষায় প্রোজ্জ্বল ছিলেন এবং ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরী করেন। পরম সুুখের বিষয় ধাপে ধাপে তিনি বাঙালির স্বপ্ন পূরণ করেন। এজন্যে তাকে স্বাধীনতার পূর্বকালে যেমন কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তেমনি স্বাধীনতার পরবর্তীকালে নিজের এবং পরিবারের অধিকাংশ সদস্য-সদস্যার প্রাণ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে দিতে হয়েছে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক বাঙালি চেতনার মূল ধারক ও বাহক, বিশ্ববরণ্য ব্যক্তিত্ব, গণতন্ত্রের এক সুমহান আলোক দিশারী বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তিনি সব সময়ে দেশের কল্যাণের কথা ভেবেছেন।



বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হতো কিনা সন্দেহ রয়েছে। সহস্র বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শশাংক ছিলেন প্রথম বাঙালি নৃপতি। বার বার এদেশের প্রাচুর্য, ভিনদেশিদের শাসন কার্যপরিচালনায় সুযোগ করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সাথে অন্য কোন বাঙালি ব্যক্তিত্বের তুলনা চলে না। তিনি পৃথিবীর বিরল স্টেইটসমেনদের মধ্যে অন্যতম। বঙ্গবন্ধুর সাথে তুলনা করা চলে উইনস্টন চার্চিল, নেলসেন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধীর মত ব্যক্তিত্বের। অমরতার বরপুত্র বঙ্গবন্ধু বাঙালির হূদয়ের গভীরে প্রোথিত রয়েছেন।



বাঙালির হিত সাধন করাই ছিল তার আজন্ম সাধনা। তিনি পরম নিষ্ঠার সাথে তার সেই সাধনা পূর্ণ করতে সচেষ্ট ছিলেন। বাঙালির সুখ-দুঃখের সাথে নিজেকে একাকার করে ফেলেছিলেন। আর তাই তিনি তার পরিবারের সদস্য-সদস্যাদের কষ্ট হবে জেনেও অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে বাঙালির অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছিলেন। এ কাজে তিনি সবসময়ই পাশে পেয়েছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে। স্বামীর ত্যাগ-তিতিক্ষাময় জীবনে যোগ্য সহধর্মিণীর মত এই মহীয়সী রমণী কেবল সংসার ধর্ম পালন করেননি বরং যেকোন আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাঙালির স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা পূরণে বঙ্গবন্ধু যখন ব্যস্ত তখন যাতে সাংসারিক সমস্যা বঙ্গবন্ধুকে আক্রান্ত না করে সেদিকে বেগম মুজিব যথাযোগ্যভাবে এবং সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। আর একারণেই ঘৃণ্য ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুর সাথে এই মহীয়সী রমণীর সাথে শিশু রাসেলকে এবং পরিবারের অন্যদের হত্যা করেছেন। পৃথিবীর অন্যতম বর্বর হত্যাকাণ্ড, যা জাতি হিসাবে আমাদের কলঙ্কিত করেছে।



বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তি হওয়ার পরপরই যখন দেখলেন যে, পাকিস্তানিরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারটুকু পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়, তখন তিনি সরাসরি এর বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত তাকে জেলে যেতে হয়। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবির প্রতি সমর্থন করেও জেলে যেতে হয়েছিল। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারী ভুখা মিছিল বের করায় তাকে আবার জেলে পাঠানো হয়। এমনকি ১৯৫২ সালে তিনি তার পিতাকে দেখতে চাইলেও, তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় এসে দেখেন যে, বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়েছে। ভাষা অন্দোলনের গোড়া থেকে সমর্থনকারী বঙ্গবন্ধু জেলের মধ্যেই ভাষা আন্দোলনের সময়ে সতেরোদিন অনশন করেছেন। জেল-জুলুমের ভয়ে কখনো সত্য থেকে পিছিয়ে যাননি।



যুক্তফ্রন্টের বন ও কৃষি দপ্তরের মন্ত্রিত্ব লাভ করে স্বল্প দিনে কর্মদক্ষতা দেখাতে শুরু করেন। বাংলাদেশের কৃষকেরা ছিল তার প্রাণ। তবে মন্ত্রিপরিষদ বাতিল হয়ে গেলে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন এবং ভিলেজ এইডের মন্ত্রিত্ব লাভ করেন এবং সুচারুরূপে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর মার্শালল' জারি করা হলে তার মন্ত্রিত্বের অবসান ঘটে।



বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানী শাসকচক্র তার নৈতিক মূল্যবোধ এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণে সব সময়েই ভয় পেত। চৌদ্দটি মিথ্যে হয়রানিমূলক মামলা তার বিরুদ্ধে দেয়া হয়। ১৯৬১ সালে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান।



১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তার যে ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড সে ক্ষেত্রে এই ছয় দফা বেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল। আগরতলা মিথ্যে মামলা করা হয় ১৯৬৮ সালে। সমগ্র বাঙালি জাতি সেদিন বঙ্গবন্ধুর পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়। এই মিথ্যে মামলায় যদিও বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তবে এই মামলা ছিল পাকিস্তানীদের অত্যাচারের অন্যতম হাতিয়ার। বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুসহ অন্য কারাবন্দীরা মুক্তি পান।



১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তার দল প্রাদেশিক পরিষদ এবং জাতীয় পরিষদ উভয় ক্ষেত্রেই বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে। তারপরও পাকিস্তানি শাসকবর্গ তাকে শাসন ক্ষমতা দেয়নি। এদেশ শাসন ও শোষণ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।



৭ মার্চের ভাষণ এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে একটি ম্যাগনাকার্টা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে গবেষণায় দেখা যায় যে, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বাঙালির মুক্তির সনদ ছিল। সেদিন তিনি 'জয় বাংলা' শ্লোগানের মাধ্যমে বাংলার মানুষের জয়ের কথা উচ্চারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর যে মাহাত্ম্য তার গভীরতা এতো বেশি ছিল যে, বাঙালির কল্যাণই ছিল তার ব্রত। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান বাহিনী গ্রেফতার করেন। তার পূর্বেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হন। এ জন্যই 'জয় বাংলা'র পাশাপাশি 'জয় বঙ্গবন্ধু' শ্লোগানটি উঠে আসে।



স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়েই দেশ পুনর্গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শিল্প-কল-কারখানা গড়ে তোলার পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু আহরণ এবং খনিজ সম্পদের আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জনে সচেষ্ট হয়। দারিদ্র্য পীড়িত বাংলাদেশের সকল নাগরিকের যাতে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় সেদিকে সচেষ্ট ছিলেন। ব্যাংকিং ব্যবসাকে সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধু দেশের শান্তি-শৃংখলা আনয়নের প্রয়াস নেন। গ্রামীণ মানুষ বিশেষত ভূমিহীনরা যাতে ক্ষুদ্রঋণ পায় সেজন্য বঙ্গবন্ধু পদক্ষেপ নেন। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালকে বলা যায় যে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তিভূমি। স্বল্পকালীন শাসন ব্যবস্থায় এতো বেশি ফ্রন্টে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিলেন যার উপর ভিত্তি করেই আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমপ্রসারমানভাবে অগ্রসর হচ্ছে।



বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর যে অবিস্মরণীয় দান, প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। অসম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু এদেশের প্রতি ঘরে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি পৌঁছে দিতে সচেষ্ট ছিলেন। সেদিন পাকিস্তান বাহিনীর যারা দোসর ছিলেন, আজ তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কিছু ব্যক্তি যারা বিপথগামী তারা আমাদের অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে সচেষ্ট। অথচ বঙ্গবন্ধু ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন। তিনি ধর্মভীরু ছিলেন কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যারা নিরীহ মানুষকে খুন, ধর্ষণ ও সম্পত্তি লুণ্ঠন করেছিল তাদের ক্ষমা করেননি। বঙ্গবন্ধু অনেক বড় মাপের নেতা ছিলেন। কিছু কুচক্রী এই মহান নেতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও উদার নেতৃত্বে আমরা এদেশ পেয়েছি। তার জন্মদিনে তাকে জানাই বুকের গভীর থেকে শ্রদ্ধা। কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। ন্যায়নিষ্ঠ এই মহান নেতা সাম্রাজ্যবাদী চক্রের হিংসার শিকার হন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এবং সমগ্র বাঙালির ওপর তার যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল ভবিষ্যতে এমন নেতা আসার কোন সম্ভাবনা নেই। বঙ্গবন্ধুর তুলনা কেবল তার সাথেই চলে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সম্বল করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগিয়ে যাবে। আর যারা বিপথগামী তাদের সংখ্যা সীমিত। আশার কথা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী। এদেশের মাটিতে গভীরভাবে ব্যাপ্ত হয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাহাত্ম্য। আজকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে একজন মুসলমান হিসেবে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বিনম্র কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করব। একই সাথে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হিন্দু, খৃস্টান, বৌদ্ধ দেশবাসীরা তার জন্য তাদের ধর্মমত অনুযায়ী স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করবেন এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।



বঙ্গবন্ধু এক মহান সংগ্রামী ও অবিসংবাদিত নেতা। এই মহান নেতা চিরজীবন ভাস্বর হয়ে থাকবেন তার কর্ম উজ্জ্বল্যের গুণে। 'জয় বঙ্গবন্ধু' 'জয় বাংলা' শ্লোগান দুটো যেমন সমার্থক তেমনি আমাদের হূদয়ে দোলা দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা অমলিন থাকবে, এই প্রত্যাশা করছি।আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী।

এই মহান নেতার জন্ম হয়েছিল ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে। বাঙালির নয়নের মণি বঙ্গবন্ধুর আজ ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। শৈশব থেকেই মহত্প্রাণ মহীয়সী মানুষ বঙ্গবন্ধু দেশ-সমাজ ও জাতির মঙ্গল কামনা করেছেন। মধুুমতী নদীর তীরে শৈশবের দিনগুলো থেকেই তার মানস গঠনে গড়ে উঠেছিল দেশ, সমাজ এবং বাঙালির কল্যাণ আকাঙ্ক্ষার কথা। বঙ্গবন্ধু সহস্র বছরের বাঙালির প্রবল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন ভূখণ্ড বাংলাদেশ গঠনের জন্যে সব সময়ে আকাঙ্ক্ষায় প্রোজ্জ্বল ছিলেন এবং ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরী করেন। পরম সুুখের বিষয় ধাপে ধাপে তিনি বাঙালির স্বপ্ন পূরণ করেন। এজন্যে তাকে স্বাধীনতার পূর্বকালে যেমন কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তেমনি স্বাধীনতার পরবর্তীকালে নিজের এবং পরিবারের অধিকাংশ সদস্য-সদস্যার প্রাণ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের হাতে দিতে হয়েছে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক বাঙালি চেতনার মূল ধারক ও বাহক, বিশ্ববরণ্য ব্যক্তিত্ব, গণতন্ত্রের এক সুমহান আলোক দিশারী বঙ্গবন্ধুর সমগ্র জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তিনি সব সময়ে দেশের কল্যাণের কথা ভেবেছেন।



বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হতো কিনা সন্দেহ রয়েছে। সহস্র বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শশাংক ছিলেন প্রথম বাঙালি নৃপতি। বার বার এদেশের প্রাচুর্য, ভিনদেশিদের শাসন কার্যপরিচালনায় সুযোগ করে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সাথে অন্য কোন বাঙালি ব্যক্তিত্বের তুলনা চলে না। তিনি পৃথিবীর বিরল স্টেইটসমেনদের মধ্যে অন্যতম। বঙ্গবন্ধুর সাথে তুলনা করা চলে উইনস্টন চার্চিল, নেলসেন ম্যান্ডেলা, মহাত্মা গান্ধীর মত ব্যক্তিত্বের। অমরতার বরপুত্র বঙ্গবন্ধু বাঙালির হূদয়ের গভীরে প্রোথিত রয়েছেন।



বাঙালির হিত সাধন করাই ছিল তার আজন্ম সাধনা। তিনি পরম নিষ্ঠার সাথে তার সেই সাধনা পূর্ণ করতে সচেষ্ট ছিলেন। বাঙালির সুখ-দুঃখের সাথে নিজেকে একাকার করে ফেলেছিলেন। আর তাই তিনি তার পরিবারের সদস্য-সদস্যাদের কষ্ট হবে জেনেও অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে বাঙালির অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছিলেন। এ কাজে তিনি সবসময়ই পাশে পেয়েছেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিবকে। স্বামীর ত্যাগ-তিতিক্ষাময় জীবনে যোগ্য সহধর্মিণীর মত এই মহীয়সী রমণী কেবল সংসার ধর্ম পালন করেননি বরং যেকোন আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। বাঙালির স্বপ্ন আকাঙ্ক্ষা পূরণে বঙ্গবন্ধু যখন ব্যস্ত তখন যাতে সাংসারিক সমস্যা বঙ্গবন্ধুকে আক্রান্ত না করে সেদিকে বেগম মুজিব যথাযোগ্যভাবে এবং সাহসের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। আর একারণেই ঘৃণ্য ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুর সাথে এই মহীয়সী রমণীর সাথে শিশু রাসেলকে এবং পরিবারের অন্যদের হত্যা করেছেন। পৃথিবীর অন্যতম বর্বর হত্যাকাণ্ড, যা জাতি হিসাবে আমাদের কলঙ্কিত করেছে।



বঙ্গবন্ধু ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। ভর্তি হওয়ার পরপরই যখন দেখলেন যে, পাকিস্তানিরা আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকারটুকু পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়, তখন তিনি সরাসরি এর বিরোধিতা করেন। শেষ পর্যন্ত তাকে জেলে যেতে হয়। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের দাবির প্রতি সমর্থন করেও জেলে যেতে হয়েছিল। ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারী ভুখা মিছিল বের করায় তাকে আবার জেলে পাঠানো হয়। এমনকি ১৯৫২ সালে তিনি তার পিতাকে দেখতে চাইলেও, তার পরিবারের সদস্যরা ঢাকায় এসে দেখেন যে, বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানো হয়েছে। ভাষা অন্দোলনের গোড়া থেকে সমর্থনকারী বঙ্গবন্ধু জেলের মধ্যেই ভাষা আন্দোলনের সময়ে সতেরোদিন অনশন করেছেন। জেল-জুলুমের ভয়ে কখনো সত্য থেকে পিছিয়ে যাননি।



যুক্তফ্রন্টের বন ও কৃষি দপ্তরের মন্ত্রিত্ব লাভ করে স্বল্প দিনে কর্মদক্ষতা দেখাতে শুরু করেন। বাংলাদেশের কৃষকেরা ছিল তার প্রাণ। তবে মন্ত্রিপরিষদ বাতিল হয়ে গেলে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নিযুক্ত হন। কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন এবং ভিলেজ এইডের মন্ত্রিত্ব লাভ করেন এবং সুচারুরূপে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর মার্শালল' জারি করা হলে তার মন্ত্রিত্বের অবসান ঘটে।



বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানী শাসকচক্র তার নৈতিক মূল্যবোধ এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণে সব সময়েই ভয় পেত। চৌদ্দটি মিথ্যে হয়রানিমূলক মামলা তার বিরুদ্ধে দেয়া হয়। ১৯৬১ সালে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান।



১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা দাবি পেশ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে তার যে ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড সে ক্ষেত্রে এই ছয় দফা বেশ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিল। আগরতলা মিথ্যে মামলা করা হয় ১৯৬৮ সালে। সমগ্র বাঙালি জাতি সেদিন বঙ্গবন্ধুর পেছনে ঐক্যবদ্ধ হয়। এই মিথ্যে মামলায় যদিও বঙ্গবন্ধুকে এক নম্বর অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তবে এই মামলা ছিল পাকিস্তানীদের অত্যাচারের অন্যতম হাতিয়ার। বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুসহ অন্য কারাবন্দীরা মুক্তি পান।



১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে তার দল প্রাদেশিক পরিষদ এবং জাতীয় পরিষদ উভয় ক্ষেত্রেই বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন। জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসন লাভ করে। তারপরও পাকিস্তানি শাসকবর্গ তাকে শাসন ক্ষমতা দেয়নি। এদেশ শাসন ও শোষণ করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।



৭ মার্চের ভাষণ এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে একটি ম্যাগনাকার্টা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে গবেষণায় দেখা যায় যে, আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বাঙালির মুক্তির সনদ ছিল। সেদিন তিনি 'জয় বাংলা' শ্লোগানের মাধ্যমে বাংলার মানুষের জয়ের কথা উচ্চারণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর যে মাহাত্ম্য তার গভীরতা এতো বেশি ছিল যে, বাঙালির কল্যাণই ছিল তার ব্রত। ১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চের কালরাত্রিতে বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান বাহিনী গ্রেফতার করেন। তার পূর্বেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হন। এ জন্যই 'জয় বাংলা'র পাশাপাশি 'জয় বঙ্গবন্ধু' শ্লোগানটি উঠে আসে।



স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান থেকে মুক্ত হয়েই দেশ পুনর্গঠনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শিল্প-কল-কারখানা গড়ে তোলার পাশাপাশি সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু আহরণ এবং খনিজ সম্পদের আহরণের জন্য প্রয়োজনীয় সক্ষমতা অর্জনে সচেষ্ট হয়। দারিদ্র্য পীড়িত বাংলাদেশের সকল নাগরিকের যাতে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয় সেদিকে সচেষ্ট ছিলেন। ব্যাংকিং ব্যবসাকে সামাজিক উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গড়ে তোলেন। বঙ্গবন্ধু দেশের শান্তি-শৃংখলা আনয়নের প্রয়াস নেন। গ্রামীণ মানুষ বিশেষত ভূমিহীনরা যাতে ক্ষুদ্রঋণ পায় সেজন্য বঙ্গবন্ধু পদক্ষেপ নেন। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের শাসনকালকে বলা যায় যে, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তিভূমি। স্বল্পকালীন শাসন ব্যবস্থায় এতো বেশি ফ্রন্টে তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তি স্থাপন করে গিয়েছিলেন যার উপর ভিত্তি করেই আজ স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমপ্রসারমানভাবে অগ্রসর হচ্ছে।



বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধুর যে অবিস্মরণীয় দান, প্রজন্মের পর প্রজন্ম মনে রাখবে। অসম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু এদেশের প্রতি ঘরে ঘরে সুখ-সমৃদ্ধি পৌঁছে দিতে সচেষ্ট ছিলেন। সেদিন পাকিস্তান বাহিনীর যারা দোসর ছিলেন, আজ তাদের পরবর্তী প্রজন্মের কিছু ব্যক্তি যারা বিপথগামী তারা আমাদের অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টে সচেষ্ট। অথচ বঙ্গবন্ধু ওআইসি সম্মেলনে গিয়েছিলেন। তিনি ধর্মভীরু ছিলেন কিন্তু ধর্মান্ধ ছিলেন না। তিনি মুক্তিযুদ্ধে যারা নিরীহ মানুষকে খুন, ধর্ষণ ও সম্পত্তি লুণ্ঠন করেছিল তাদের ক্ষমা করেননি। বঙ্গবন্ধু অনেক বড় মাপের নেতা ছিলেন। কিছু কুচক্রী এই মহান নেতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ ও উদার নেতৃত্বে আমরা এদেশ পেয়েছি। তার জন্মদিনে তাকে জানাই বুকের গভীর থেকে শ্রদ্ধা। কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। ন্যায়নিষ্ঠ এই মহান নেতা সাম্রাজ্যবাদী চক্রের হিংসার শিকার হন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এবং সমগ্র বাঙালির ওপর তার যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল ভবিষ্যতে এমন নেতা আসার কোন সম্ভাবনা নেই। বঙ্গবন্ধুর তুলনা কেবল তার সাথেই চলে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে সম্বল করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগিয়ে যাবে। আর যারা বিপথগামী তাদের সংখ্যা সীমিত। আশার কথা বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী। এদেশের মাটিতে গভীরভাবে ব্যাপ্ত হয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাহাত্ম্য। আজকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে একজন মুসলমান হিসেবে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বিনম্র কণ্ঠে বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করব। একই সাথে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী হিন্দু, খৃস্টান, বৌদ্ধ দেশবাসীরা তার জন্য তাদের ধর্মমত অনুযায়ী স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করবেন এ বিশ্বাস আমাদের রয়েছে।



বঙ্গবন্ধু এক মহান সংগ্রামী ও অবিসংবাদিত নেতা। এই মহান নেতা চিরজীবন ভাস্বর হয়ে থাকবেন তার কর্ম উজ্জ্বল্যের গুণে। 'জয় বঙ্গবন্ধু' 'জয় বাংলা' শ্লোগান দুটো যেমন সমার্থক তেমনি আমাদের হূদয়ে দোলা দেয়। স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা অমলিন থাকবে, এই প্রত্যাশা করছি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:২৯

মাজহারুল হুসাইন বলেছেন: বঙ্গবন্ধু নাকি কাগজ ফেলে হুকুম দিছিলেন ভাষা আন্দোলন করার জন্য ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.