নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।

তালপাতারসেপাই

লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।

তালপাতারসেপাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমান প্রজন্মের ভাবনা

১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৭:৫৪


আমরা বর্তমান প্রজন্ম নিজের চোখে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েই একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। চোখে অদেখা ছিল সাধারণ বাঙালির ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর দমন-পীড়ন শোষণ নির্যাতন। এরপর ঐক্যবদ্ধ মুক্তিকামী বাঙালির বলিষ্ঠ প্রতিবাদ আর জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া, ফলাফলে প্রিয় মাতৃভূমিকে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করা। আজ হয়তো মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছে কেবলই একটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র! মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দিবসগুলো দায়সারা ভাবে বা কোনো একভাবে পালন করেই যেন এই দেশে জন্মাবার দায় এড়াতে চাই। তারপর মুক্তিযুদ্ধ ভুলে গিয়ে জড়িয়ে পড়ি জীবনযুদ্ধে, জীবন এভাবেই ছুটে চলছে তিল তিল করে। যারা এই দেশকে জন্ম দিয়েছেন কেবল তারাই জানেন এই দেশকে পৃথিবীর আলোয় আনতে কতটা অবর্ণনীয় দুর্ভোগ তাদের পোহাতে হয়েছে, আমরা তা সঠিকভাবে জানি না বলেই কারণে-অকারণে দেশকে ছোট করে ফেলি বিশ্বের কাছে। প্রসব বেদনায় কাতর একজন মা-ই কেবল জানেন একজন সন্তান জন্ম দিতে কতটা কষ্ট সহ্য করতে হয়। অতঃপর ভূমিষ্ঠ সন্তানের দিকে তাকিয়ে সব যন্ত্রণা হাসিমুখে ভুলে যান এবং সেই সন্তানকে জীবনের চেয়েও ভালোবেসে সারা জীবন আগলে রাখেন। কিন্তু আমাদের কাছে সেই কষ্টানুভূতি পৌঁছায়নি বলেই ছোট ছোট কারণেই আমরা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ফেলি।

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমাদের কাছে পৌঁছায়নি বলেই আমাদের পূর্বসূরিদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতা আমাদের নাড়া দেয় না, আমাদের মহান বিজয় আমাদের সত্যিকার অর্থে উল্লসিত করে না, উজ্জীবিত করে না। শুধু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসই নয়, আমাদের নবীন প্রজন্মদের অনেকেই জানে না আমাদের বাংলা সংস্কৃতি, সঠিক তত্ত্বাবধানের অভাবেই তারা বড় হচ্ছে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে; এই দেশে জন্মে এই দেশের আলো-বাতাস গায়ে মেখে। তারা জানে না ষড়ঋতু মানে কি বা কয়টি ঋতু আছে আমাদের, তারা জানে না বাংলা বারো মাসের নাম তবুও তারা বিশ্বাস করে তারা বাঙালি, তারা বাংলাদেশি। আমাদের জীবনে ধর্ম যেমন একটা বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তেমনি করে আমাদের প্রজন্মের কাছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসটাও এখন যেন একটা বিশ্বাসের ওপর হাত-পা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু আমরা প্রকৃত ইতিহাস থেকে বঞ্চিত তাই যে যেভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা দিচ্ছেন আমাদেরও ঠিক সেভাবেই বিশ্বাস করতে হচ্ছে। নানা ধর্মে যেমন নানা রকম বিশ্বাস প্রচলিত ঠিক তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও যেন নানা রকম বিশ্বাস প্রচলিত হয়ে আসছে আর এমনটা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধকে দলীয়করণ করে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চে, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানীর নেতৃত্বে প্রায় নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ের প্রধান ফটকে পৌঁছে যায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বিজয়ের দিন, সেদিন বিকেলে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বাংলাদেশে অবস্থিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর অধিনায়ক লে. জে. এ এ কে নিয়াজী হাজার হাজার উৎফুল্ল জনতার সামনে প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য নিয়ে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন, বাংলাদেশের পক্ষে ভারতীয় লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা আত্মসমর্পণের নির্দশনপত্র গ্রহণ করেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও সারা দেশে সব পাকিস্তানির আত্মসমর্পণ করাতে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত লেগে যায়। একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের এই প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশ বিশ্বের মাত্রচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে- এটা আমাদের জন্য কম গর্বের কথা নয়, কম অহঙ্কারের নয় আর এই গর্ব ও অহঙ্কারের সূচনা হয়েছিল আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে। কিন্তু ৪৫ বছর আগে বিজয় অর্জন করেও কি সত্যিকার অর্থে আমরা বিজয়ী হতে পেরেছি? আমরা কি পেরেছি স্বাধীনতার সুফল সবার কাছে পৌঁছে দিতে? এখনো অনাহারে অর্ধাহারে ধুঁকে ধুঁকে মরছে শত সহস্র বাংলাদেশি; এখনো বস্ত্রের অভাবে লজ্জা ঢাকতে পারছে না অনেকেই কিংবা শীতবস্ত্রের অভাবে বিভিন্ন স্থানে মৃত্যুর খবর ভেসে আসে পত্রিকার পাতায় কিংবা টেলিভিশনের পর্দায়; এখনো লাখো বাংলাদেশি ফুটপাতে খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন; আমাদের শিক্ষাঙ্গন আজ কলুষিত, রাজনীতি, সন্ত্রাসী, দখলবাজি, চাঁদাবাজির ও নানা রকম অপরাধের কালো থাবায়, শিক্ষকদের কাছেও আজকাল শিক্ষার্থীরা নিরাপদ নয়, স্বীয় শিক্ষক দ্বারাই আজ শিক্ষার্থীরা ধর্ষিত হচ্ছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে, শিক্ষকরাও সমান তালে প্রকাশ্যে নানা অপরাধে নিজেদের জড়াচ্ছে; চিকিৎসকরাও আজকাল চিকিৎসাসেবাকে মহৎ পেশা হিসেবে দেখছেন না। তারাও রাজনীতিবিদ হয়ে উঠছেন, চিকিৎসাসেবার চাইতে তারা দলাদলি, মিছিল-মিটিং, জ্বালাও-পোড়াও, ঘেরাও ইত্যাদি কর্মকাণ্ডতেই নিজেদের বেশি দেখতে চাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের মান বাড়েনি, এখনো অবর্ণনীয় নিম্ন পর্যায়ে রয়ে গেছে। তারপরও আমি বাংলাদেশি, জন্মেছি এই বাংলাদেশে।

এই দেশের মাটির ওপর ভর করেই হাঁটতে শিখেছি, ৪৫ বছর আগে আমার পূর্বসূরিদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল আমার গায়ে না লাগলেও এই দেশের আলো-বাতাস গায়ে মেখে বড় হয়েছি। তৃষ্ণায় যখন বুকের ছাতি ফেটে যাওয়ার জোগাড় হয় তখন এই দেশের জল পান করেই তৃষ্ণা নিবারণ করি, এই দেশের মাটি থেকে উৎপাদিত ফল-ফসল খেয়ে এখনো জীবন ধারণ করে আছি, এই ঋণও কখনো শোধিবার নয়। লাখো শহীদের রক্তে, লাখো মা-বোনের সম্ভ্রমে অর্জিত আমাদের এই প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমিকে পাকিদের ফেলে দেয়া বীর্যের উচ্ছিষ্ট থেকে উৎপাদিত বেজন্মারা যতই গালমন্দ করুক যতই ভর্ৎসনা করুক, দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোরেরা দেশটাকে যতই ধ্বংসের পথে নিয়ে যাক আমরা ততই এই দেশটাকে আগলে রাখতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় এই দেশটাকে গড়তে চাই, স্বাধীনতা ও বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চাই। এবার শুধু আমাদের সুযোগ দাও, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আমাদের হাতে তুলে দাও, আমরা সঠিকভাবে দেখতে চাই কিভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে দেশমাতৃকার তরে তরতাজা জীবন হাসিমুখে বিলিয়ে দেয়া যায়। গ্রেনেড নয়, বোমা নয়, আমাদের হাতে ন্যায়নীতি আর সততার অস্ত্র তুলে দাও। এই অস্ত্র দিয়ে দেশকে আরো একবার স্বাধীন করতে চাই। পৃথিবীর বুকে এই দেশটাকে সত্যিকার অর্থে একটা বসবাসযোগ্য দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন জন্ম নেয়ার পর পরই বুক ফুলিয়ে বলতে পারে, সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে। পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, এই দেশ যে আমার মা, আমি যে দেশকে মায়ের মতো ভালোবাসি।
সুত্র

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৮:০৭

বিজন রয় বলেছেন: বর্তমান প্রজন্মের একটি বড় অংশকে মুক্তিযুদ্ধ ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.