নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিন্ক সহ পোষ্টের বাহবা/দায়, মূল লেখকের।
কর্নেল জাফর ইমাম একাত্তরে ছিলেন সাব সেক্টর কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য পেয়েছেন বীর বিক্রম খেতাব। পরে রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে মন্ত্রীত্বও পেয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা দখল করলে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এই সামরিক কর্মকর্তা। খালেদ মোশাররফ বীর উত্তমের নেতৃত্বে ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানে ছিলেন সামনের কাতারে। সেদিনের সেই রোমহর্ষক ঘটনা পূর্বপশ্চিমের প্রতিবেদক সিয়াম সারোয়ার জামিলের কাছে বর্ণনা করেছেন তিনি।
unnamed-2সেদিন আমরা আগেই কয়েকজন পৌছে যাই বঙ্গভবনে। খবর পেয়েছি বঙ্গভবনে সব জড়ো হয়েছে। ৪র্থ বেঙ্গল রেজিমেন্ট আসছে। এদিকে জিয়াউর রহমানও গৃহবন্দী আছেন, বলে জেনেছি আমরা। তার বাসার ফোন সংযোগ কেটে দিয়েছিল একদল সামরিক কর্মকর্তা। বঙ্গভবনে সন্ধ্যার পর সাফায়াত জামিলের নেতৃত্বে চতুর্থ বেঙ্গল থেকে কর্নেল গাফফার, ক্যাপ্টেন তাজ, হাফিজ, ক্যাপ্টেন হুমায়ুন, মেজর হাফিজউদ্দিন, মেজর ইকবালরা মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে। প্রায় সবার হাতেই স্টেনগান, পিস্তল। তারা তেড়ে গেলেন মোশতাক ও মন্ত্রীদের দিকে।
আমরা প্রবেশ করতেই মন্ত্রীরা সব জড়সড়। টেবিলের নিচে আশ্রয় নিলেন অনেকে। টেবিলে ছিলো মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র, মোশতাকের বুকে মেজর ইকবাল অস্ত্র ধরলে, ওসমানী মাঝখানে দাঁড়ান। মেজর ইকবাল বলেন, ‘পাকিস্তানি জেনারেল দেখেছো বাংলাদেশী মেজর দেখনি!’ মোশতাক টেবিলের নীচে বসলেন, আমার পা সেই টেবিলের উপরে। জেনারেল ওসমানী আগত অফিসারদের বারবার নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছিলেন।
অনেকে আবার স্টেনগান কক করে গুলি করার উদ্যোগ নিচ্ছিলেন। অনেক অফিসার চিৎকার করছিলেন। তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন চার নেতা হত্যার ঘটনায়। মোশতাক চেয়ারে বসেছিলেন, তার চারপাশে বসা মন্ত্রীদের অধিকাংশই চেয়ার ছেড়ে সামনের টেবিলের দিকে এগিয়ে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা করলেন। একপর্যায়ে জেলহত্যা সম্পর্কে মোশতাককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হলো। তিনি স্বীকারোক্তি দিলেন যে, পুরো ব্যাপারটি সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন।
unnamed-1তখন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার ছিলেন ফরিদপুরের আমিনুর রহমান মিন্টু। ওই মিন্টু এখন জেলহত্যা মামলার সাক্ষী। অথচ তদন্ত করে জেনেছি, খুনিচক্র যখন চার নেতাকে হত্যার পর কারাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক ওই সময় তাদের পুনরায় কারাগারে ডেকে নেন এই মিন্টু। ওই সময় তিনি তাদের বলেন, ওই কি গুলি মারলা? একজন বাঁইচা আছে। যাও ঠাণ্ডা করো। খুনিরা এরপর বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে কারাগার ত্যাগ করে। এটা শোনার পর আমাদের মাথা ঘুরে গেছিল।
এরপর খালেদ পদোন্নতি পেয়ে সেনাপ্রধান হলেন। মোশতাককে গৃহবন্দী করা হলো। মোশতাককে আটক করে নিয়ে যাবার সময় প্রশ্ন করলাম, ‘এখন কি করবেন?’ সে উত্তর দিল, ‘ওয়েট অ্যান্ড সি।’ তখন বুঝলাম, ষড়যন্ত্র তখনো শেষ হয়নি। আমি নিচে নেমে এলাম। সভাকক্ষে তখন মোশতাকের মন্ত্রীদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হলো। আমরা কয়েকজন অফিসার খালেদকে রেডিও বন্ধ না রাখার পরামর্শ দিলাম। আমরা বললাম, আপনি জাতির উদ্দেশে কিছু বলতে পারেন রেডিওতে।
unnamed-4খালেদ জানালেন, বিচারপতি সায়েমের ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি দায়িত্ব দেওয়ার জন্য। সায়েম অথবা তার জায়গায় নতুন যিনি দায়িত্বে আসবেন, তিনিই দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। আমরা কিছুটা আশ্বস্ত হলাম। ওই রাতে বিচারপতি সায়েম দায়িত্ব নিতে সম্মতি জানালেন। খালেদ খুব ঠান্ডা মাথায় সবকিছু মোকাবিলা করলেন। তিনি খুব সতর্ক ছিলেন এবং অন্যদেরও সতর্ক করে দিয়েছিলেন। শেষ রাতে সিদ্ধান্ত হলো নুরুল ইসলাম মঞ্জুর ও তাহের উদ্দিন ঠাকুরকে জেলে পাঠানো হবে। পরদিন মোশতাকের শাষণ মুক্ত হওয়া নতুন বাংলাদেশ দেখলাম আমরা।
সূত্র
©somewhere in net ltd.