![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ
যাত্রা হল শুরুঃ
২০০৯ সালের ২৩ জুন। কি বার ছিল ঠিক মনে করতে পারছি না (ক্যালেন্ডারে খোঁজ নিলে অবশ্য জানা যায় কিন্তু ইচ্ছা করছে না)। সকাল থেকেই বাসায় আত্মীয় আর বন্ধুরা আসছিলো। সারা দিন তাদের সাথে ভালোই সময় কাটলো। কিন্তু যতোই সময় যাচ্ছিলো বাসার পরিস্থিতি ততই কেমন যেন শীতল থেকে শীতলতর হয়ে উঠছিলো। আমি বন্ধুদের সাথে আমার রুমে ব্যস্ত ছিলাম তাই সত্যি বলতে তখন কিছুই অনুভব করিনি। আমার ফ্লাইট ছিল রাত ১২ টা ৩০ এ (যত টুকু মনে পড়ছে আর কি – প্রায় ৪ বছর আগের কথা)। সন্ধ্যার দিকে হঠাৎ আব্বু এসে আমাকে ঝাড়ি। বললেন, ‘তোর আম্মু কান্নাকাটি শুরু করেছে, কই তুই তার কাছে গিয়ে বসবি, একটু সান্ত্বনা দিবি, না বন্ধুদের নিয়ে আড্ডায় ব্যস্ত’। আমি তখন বিরক্ত হয়ে বললাম, আরে কান্না কাটি করার কি আছে? আমি কি মারা যাচ্ছি না কি? প্রতি বছরই তো আসবো। পরে আম্মুকে গিয়েও একই কথা বললাম। আরও বললাম দেখো এক বছর বলতে বলতে চলে যাবে। (তখন ঠিকই বলেছিলাম যে প্রতি বছর যাবো কিন্তু আজ প্রায় ৪ বছর হতে চলল কিন্তু এখনো একটি বারের জন্যও মাকে দেখতে যেতে পারিনি। সামর্থ্যে হয়নি)। তবে আম্মুর কষ্টও একটু একটু বুঝতে পারলাম । আসলে আমরা মাত্র দুই ভাই। আমার ছোট ভাই আরও আগে ঘর ছেড়েছে। মাত্র ১২ বছর বয়সে ( ও ক্যাডেট কলেজে পরে) আর আমি ও ঘর ছাড়ছি ১৯ বছর বয়সে। তবে এখন এতটুকু বুঝতে পারি যে, বাবা মা ছেড়ে থাকার কষ্ট যদি এতো হয় তাহলে বাবা মার তাদের সন্তানকে ছেড়ে থাকার কষ্ট হয়তো এর চেয়ে হাজার গুণ। তখন আসলে এতো কিছু বুঝিনি। সত্যি বলতে কি, আমার দেশ ছেড়ে আসতে এতটুকু খারাপও লাগেনি। আমার পাথরের মত শক্ত আব্বু যখন আমাকে ইমেগ্রাশান এর ভিতরে দিয়ে আমার মামার কাধে কান্নায় ঢলে পরে, তার আমার সামনে কান্না চেপে হাসার অভিনয়ের কষ্ট আমি সেদিন বুঝিনি, আমাকে জড়িয়ে বন্ধুদের কান্না করাটা আমার ছেলেমানুষি মনে হয়েছে। আমার মনে ছিলো তখন অজানাকে জানার ক্ষুধা, চোখে ছিলো অদেখাকে দেখার তৃষ্ণা। রক্তে টগবক করা রোমাঞ্চ সেদিন আমাকে কোন দুঃখে দুঃখিত হতে দেয়নি।
আমার ফ্লাইট ছিল মালয়শিয়া এয়ারলাইন্সে। প্লেন প্রথমে যাবে মালয়শিয়া তারপর সেখানে ৪ ঘণ্টা বিরতি তারপর রওনা হবে আমার স্বপ্নের অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে। অস্ট্রেলিয়ায় আমার গন্তব্য ছিল মেলবোর্ন। যথা সময়ে প্লেন ছাড়লো। প্রথম বিমান ভ্রমণ। একটু ভয়ে ভয়ে ছিলাম কিন্তু কিছু বোঝার আগেই দেখি কানে তালা লেগে যাওয়ার অবস্থা। কেমন যেন একটা অনুভুতি। যেন কান ভার হয়ে আছে। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে জেনেছি যে, অভিকর্ষজ ত্বরণের বিপরীতে দ্রুত বেগে ওঠার কারনে অমন অনুভুতি হয় কানে। যাই হোক, কিছুক্ষণ পরে সব ঠিক হয়ে গেলো। সম্ভবত প্রায় ৪ ঘণ্টা পর মালয়শিয়া তে পৌঁছুলাম। বিমানের বাইরে বের হয়ে দেখি বিশাল বড় এয়ারপোর্ট। আমাদের এয়ারপোর্ট এর তুলনায় কিছুই না। ম্যাপ দেখে আমার পরবর্তী গন্তব্যের গেটে পৌঁছুতে পৌঁছুতে প্রায় আধা ঘণ্টার মত লেগে গেলো। গিয়ে দেখি যাত্রীরা কেউ এখনো আসে নি। আরও আধা ঘণ্টা একটু এদিন ওদিক ঘোরাফেরা করে এসে বড় দেখে একটা বেঞ্চ দেখে ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে দিলাম এক ঘুম। ( আমার আবার ইচ্ছা ঘুম, যখন ইচ্ছা তখন ঘুমাতে পারি)। ঘুম থেকে উঠে মেলবোর্ন গামী প্লেনে করে রওনা দিলাম মেলবোর্নের উদ্দেশ্যে। প্লেনে আমার পাশে ছিল এক অস্ট্রেলিয়ান ভদ্রমহিলা। উনি আমাকে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাস করলো, আমি ওনার কথার ৫০% বুঝলাম আর ৫০% আন্তাজের উপর উত্তর দিলাম।(আসলে লোকালদের ইংরেজি বোঝা খুবই কষ্টের, যারা অস্ট্রেলিয়াতে আছেন তারা এইটা হারে হারে জানেন)। এভাবেই প্রায় দুর্ঘটনা বিহীন ভাবেই আমি যথা সময়ে মেলবোর্নে এসে পৌঁছুলাম।
আমার মামা তখন এখানে এসেছেন প্রায় এক বছর । উনি আসলেন আমাকে নিতে। আমি তো ওনাকে দেখে পুরা অবাক। যেই লোকের বাংলাদেশে থাকতে ওজন ছিল প্রায় ৮০ কেজি তার এখন ওজন ৬০!!! পরে অবশ্য বুঝেছি এতো ওজন কই যায়। সেই গল্প আরেক দিন করব। তো উনি আমাকে নিয়ে ট্যাক্সি তে উঠলেন। রাতের মেলবোর্ন সেদিন তেমন উপভোগ করতে পারিনি কারন মামার বাসা এয়ারপোর্ট থেকে বেশী দূরে ছিল না। দূরত্ব বেশী না হলেও ভাড়া কিন্তু কম ওঠেনি। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে পকেট থেকে কড়করা ৫০ ডলারের নোট দিয়ে মেলবোর্নে প্রথম খরচের খাতা খুলি। সেদিন যে খাতা খুলেছিলাম তা আজও বন্ধ হয়নি। তবে সুখের কথা যে তার সাথে আরও একটি খাতা যুক্ত হয়েছে তা হল ‘আয়ের খাতা’। কিন্তু এই ৫০ ডলারের কষ্ট ফ্যাকাসে হয়ে যায় যখন মামার বাসার দিকে তাকালাম। অনুভুতি টা ছিল পাথর হওয়ার অনুভুতি ( তবে তা শোকে পাথর না আনন্দে পাথর তা সামনের পর্বে বলবো)। মামা চিংড়ি মাছ রান্না করে রেখেছিলেন। এসে হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে নিলাম। পরে মামা তার হউসমেট দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ঐদিন আর কারো সাথে তেমন কথা হয় নি। শুধু বাসায় ফোন করে বলে দিলাম যে আমি ভালোভাবে পৌঁছেছি। আমার থাকার ব্যাবস্থা হল মামার সাথে, এক বিছানায়। ঐ বাসায় তখন আর কোন রুম খালি ছিল না। রুমে টিভি নাই। তখন আমার ব্যক্তিগত কোন কম্পিউটারও ছিল না। মামার ল্যাপটপ থেকে ফেসবুক এ একটা ‘আমি ভালোভাবে পৌঁছেছি, কেউ চিন্তা কোরো না মার্কা স্ট্যাটাস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে পড়লাম আগামী সূর্যোদয়ের অপেক্ষায়। মেলবোর্নে আমার প্রথম দিনের অপেক্ষায়।
পরবর্তী পর্বঃ মেলবোর্নে আমার প্রথম দিন
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৯
হয়তো একা নয়তো পরাজিত বলেছেন: ধন্যবাদ মন্তব্য দেওয়ার জন্য। আপনাদের মন্তব্য আসলে নতুন করে লিখার অনুপ্রেরণা যোগায়। অবশ্যই লিখবো। সামনের লেখা গুলো আরও ইনফরমেটিভ করার চেষ্টা করবো যেন নতুন যারা প্রবাসে আসতে চায় তারা যেন প্রবাস সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারনা পায়। দোয়া করবেন ।
২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৪
জেমস বন্ড বলেছেন:
হায়রে বিদেশ । যে যায় সেই বুঝে ফার্স্ট নাইট কেমন লাগে ।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২০
হয়তো একা নয়তো পরাজিত বলেছেন: ঠিকই বলেছেন ভাই। হায়রে বিদেশ !!
৩| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৫
আবু শাকিল বলেছেন: আমি ও ঘর ছাড়ছি ১৯ বছর বয়সে।
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২
হয়তো একা নয়তো পরাজিত বলেছেন:
৪| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪০
বইয়ের পোকা বলেছেন: অপেক্ষায় রইলাম পরের পর্বের জন্য। বিদেশ যাইবার পারুম কিনা ঠিক নাই তাই আপনেরা যারা আছেন তাদের লেখা পরে দুধের সাধ ঘোলে মিটাই
৫| ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:২৬
নাহিদ তামিম বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে ভাল লাগল। আমি অস্ট্রেলিয়া ছেড়েছি ২০০৯ এ। ৪বছর অনেক কষ্টে কাটাইছি। ভালই আছি এখন দেশে সবার সাথে।
৬| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:০৭
সুমন ২০১২ বলেছেন: কি ভাই পরের পোষ্ট কই???
২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৪৭
হয়তো একা নয়তো পরাজিত বলেছেন: ভাই এতদিন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এ টানা কামলা খাটছি। তাই লেখার সময় পাই নাই। পরের পর্ব খুব তাড়াতাড়ি দিতে পারবো বলে আশা রাখি
৭| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪২
ময়ূখ বলেছেন: আমিও মেলবোর্নে থাকি...আপনি কোথায়?
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১
শ্রাবণধারা বলেছেন: বেশ ভাল লাগলো। বিশেষ করে এই লাইনটা পরে নিজের পুরনো দিনের কথাই মনে পরলো- " আমার পাথরের মত শক্ত আব্বু যখন আমাকে ইমিগ্রেশন এর ভিতরে দিয়ে আমার মামার কাধে কান্নায় ঢলে পরে, তার আমার সামনে কান্না চেপে হাসার অভিনয়ের কষ্ট আমি সেদিন বুঝিনি"
পরের লেখাগুলোর অপেক্ষায় রইলাম..।