![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভোরের আলোয়, দুপুর রোদে আর হয়নাকো সুড়সুড়ি। হচ্ছি আমি বুড়োই ভীষণ, হচ্ছ তুমি বুড়ি। [email protected]
মিলনের গল্প দিয়ে শুরু করি।
নিম্নবিত্তের সন্তান মিলন। অভাবের ঘরে বিলাসিতার শিক্ষালাভ হয়নি। টেনেটুনে পাঁচ কিলাস পাশ। দেশের মজদুর বাজারে ত্যাক্ত হয়ে সব ছেড়েছুড়ে সিদ্ধান্ত -বিদেশ যাবো। বুড়ো বাবা-মার থাকার শেষ সম্বল ভিটে বাড়ি বেচার ব্যাবস্থা করা হয়। পাশে বসে থাকে হয়তো অবিবাহিত বোনটি। কিন্তু, মিলনের তা ভাবলে চলে না। তার তো যেতেই হবে বিদেশ বিভূঁই।
এখন পাসপোর্ট দরকার। অশিক্ষিত বা সল্পশিক্ষিত গরিবের বড় সহায় দালাল। কিন্তু মিলন দালাল বোঝেনা, চেনেনা। এক পুরনো বন্ধুকে দিয়ে লিখিয়ে আর প্রত্যায়িত করে নেয় সে সবকিছু। আল্লাহ্ ভরসা বলে পাসপোর্ট অফিসের দিকে রওয়ানা। সে এক বিশাল লাইন অফিসের বাইরে। ঘুপচির মত দেখতে জানালার ওপারে বসে আছেন সরকারী কোন ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী যিনি একই সাথে একজন কুকুর শ্রেণীর মানুষ। ২০০ জনের লাইনে মুখচেনা সাপেক্ষে হয়তো দু' জনের আবেদনপত্র গৃহীত হয়েছে।
নাহ, মিলন সেই সৌভাগ্যবানদের কেউ নয়। তাকে চিনতে পারা বরং মহানুভবতা। এভাবেই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তার নানা ভুল ধরে তার আবেদনপত্রে স্রেফ কালিই পড়েছে। অবশেষে, দালালের আগমনী-ই মুক্তি দেয় মিলনদের। আর, না হলে পাসপোর্ট আবেদনপত্রেই বিদেশ যাত্রার ইতি।
এমনটা হচ্ছে হাজারো মিলনের সাথে প্রতিদিন।
আমার অভিজ্ঞতাঃ
অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম পাসপোর্ট করিয়ে রাখি। আগে থেকেই বিভিন্ন সুত্রে জেনে মনে মনে তৈরি হচ্ছিলাম পাসপোর্ট তৈরির যুদ্ধে নামার।
যুদ্ধে নামলাম। অফিস থেকে ছুটি পাওয়া কঠিন। তারপরও স্রেফ পাসপোর্ট করার জন্যে ছুটি নিতে হোল। আবেদনপত্র পুরন করলাম। সোনালি ব্যাংকে টাকা জমা দিলাম। ৩০১০/- টাকা জমা দিতে হয়, দিলাম এবং ৩০০০/- টাকার ভাউচার পেলাম। ছবি নিজের হাতে আইকা গাম দিয়ে লাগালাম। প্রত্যায়ন করার জন্যে এই জায়গায়, ঐ জায়গায় দৌড়াতে হয়না, এখন আর। বন্ধুরাই আছে।
পরদিন সক্কাল সক্কাল গেলাম লাইন ধরতে। হরতাল থাকায় লাইনে মানুষ কম। জানালার উপরে সাদা কাগজে কম্পুটার কম্পোজে লেখা ৯.৩০ মিনিট থেকে ফর্ম জমা নেয়া হবে দুপুর একটা পর্যন্ত। ৮ টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো আমরা। ৯.৩০- এর সেই মহান লোকটি আসলেন যখন, তখন মোবাইলে দেখাচ্ছে ১১.২৭ মিনিট!!!!!
যাই হোক, রাজা সাহেব তার ভারী পাছাখানা তশরিফ রেখেছেন, খুশী হলাম, খুশীরে ঠুশি মেরে দিলেন আবেদনপত্র নিরীক্ষণের দায়িত্বে অসাধারণ অমানুষ টি। সামনে যারাই ছিল সবার আবেদনপত্রই তিনি একরকম ছুড়ে ফেলে দিচ্ছিলেন, আর মাঝে মাঝে ভেতর থেকে তার কানাকানি হয়ে আসা কিছু মানুষের- গুলো চলে যাচ্ছিল ভেতর থেকে ভেতরেই। আমার সামনে একজন মহিলা ছিলেন, তার আগেই পাসপোর্ট ছিল, নবায়ন করতে এসেছেন। তাকে বলা হল- একই ফোন নাম্বার তিনি আবেদনকারী আর আর জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগকারী ব্যাক্তির কলামে পুরন করেছেন, তাই সেটি নেয়া হবেনা। মহিলা বললেন, তারাই তাকে বলেছেন একই নাম্বার দিতে, কারন পাসপোর্টে contact নাম্বার হিসেবে যেটি উল্লেখ থাকবে সেটি জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগকারী ব্যাক্তির!!!!! আর এখন বলছেন ভুল। মহিলাকে লাইন থেকে বের করে দেয়া হল- তিনি শুধু একটি নাম্বার লিখতে আবার লাইনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন। তার দিন আবার শুরু হল। আগের কালি ঢাকার জন্যে পাশের দোকান থেকে সাদা তরল পদার্থ আনান হোল। পুরো টিউব নয়, স্রেফ এক ফোটা সাদা তরল ২০ টাকা করে!!!!! ব্যাবসায়ি বাঙ্গালী আর ব্যাবসায়ি বাংলাদেশ!!!!!!!!
নিচের ছবিতে কলাম গুলো দেখালাম।
আমি একরকম নিঃশঙ্ক ছিলাম যে অন্তত কোন ভুল তিনি পাবেন না। নাহ, তিনি পেলেন। আমার না। প্রত্যায়নকারীর সীলমোহরের!!! অনেকক্ষণ খুচিয়ে দেখার পর তিনি তার অমর বানী আমার কানে ঢাললেন- সীলমোহরে নাম থাকা চাই। এখন প্রত্যায়নকারী একজন বিশ্ববিদ্যালয় প্রভাষক, সব প্রভাষকের জন্যে রাখা সাধারণ সিল খানা দিয়েই ওখানে প্রত্যায়ন করা হয়েছে। তার NID বা জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার, ফোন নাম্বার এবং নিবাসের ঠিকানাও আছে। আর কিভাবে আমি নিজেকে তানভীর বিন হাসান দাবী করলে সেটা অন্যায্য হবেনা????!!!!!
দালালী বাবদ একটা টাকাও খরচ না করার সংকল্প ছিল আমার। তাই বুঝতে পারছিলাম আমিও আরেকজন মিলনে পরিণত হবার দিকে। কিন্তু মিলন বেকার ছিল, আমি কার। আমাকে পরদিন থেকেই আবার কাজে যেতে হবে। আমার কি আর পাসপোর্ট করা হবেনা!!!! মাথা দুলে উঠলো। দুই দুইটি ফর্ম আবার লেখা, আবার প্রত্যায়ন করা একজন কর্মজীবীর working day কে খুন করে আসা সময়ের মূল্য দিতে পারবেনা।
অদ্ভুত গ্লানি নিয়ে দালালের শরণাপন্ন হবার কথা চিন্তা করছিলাম। ক্যামন হয় এই দালালেরা??? দেখি এরা দেখতে পুলিশের মত। I mean এরা তাদের মত uniform পড়ে, ব্যাজে নাম লিখা থাকে, মুখে চোরা হাসি থাকে আর পকেটে থাকে হাত। আগে দালালের চিন্তা মাথায় ছিলোনা, তাই খেয়াল করিনি। এখন দেখি, আমি দালাল চেনা শুরু করেছি। এরা ইঙ্গিত দিয়েই রাখে। মনে পড়লো আগের দিন এক পুলিশ হুদাই বলেছিল -ভাই এখনো ভালো আছেন????!!!! এই ভালো থাকার মানে ঐ দিন বুঝছি।
If u wanna b sound, just give them a sound....!!!!!
এলাকার এক পরিচিত, যে আগে TTC এর ম্যানেজার ছিল, সে দেখি এক বিশেষ মহলের পা চেটে এখানে বিশাল পার্টে। আমারে দেইখা বলল, আরে তুই কোন চিন্তা করিস না। তার অবশ্যি লজ্জা আছে। মাথা নিচু করে বলল- ওরে ১৫০০ টাকা একটা অফিস ফি আছে, ওইটা দে। আজকেই সব হয়ে যাবে।
office fee- শুনে হাসিতে পেটে খিল ধরে গেলো। দালাল চোরায় বলে ওইটা ঘুষ ফি। সব দেখে টাস্কিত আমি। কোন লেভেলে চুরি করা হলে সেটা প্রকাশ্যে হাসাহাসির বিষয়ে পরিণত হয়, এবং অবাধে হয়। এতদিন আমি কোন দুনিয়ায় ছিলাম। নিজেরে আমি তৎক্ষণাৎ ভোঁদাই কমিটির চেয়ারম্যান ঘোষণা দিলাম।
আমার দুর্নীতিতে আপোষ করা চরিত্র তার খেলা দেখাল। টাকা দিলাম। এরপর যা ঘটল তা ম্যাজিক। স্রেফ ম্যাজিক। সরাসরি ভেতরে গেলাম, দু' মিনিটে ছবি ওঠাল ভেতরের ছেলেরা, তারপর সব শেষ!!!!!
এখন আর প্রত্যায়নে কোন সমস্যা নেই, কালো কালিতে যে সিলে গোল দাগ দেয়া হয়েছিল, সেটা দেখি ওরা সাদা কালিতে ভরপুর করে রেখেছে। এখন নেই কোন নাম্বার সংক্রান্ত সমস্যা, নেই কোন ভুল। টাকার নিচে চাপা পড়ে আছে সব তাইনা!!!!!! যাদের টাকা নাই, তাদের জন্যে তাই জায়গায় জায়গায় লাত্থি - উশটা বরাদ্দ করে হয়েছে।
নিজ অভিজ্ঞতা থেকে বলি, এই দেশের একটা অংশ যতদিন পেটের তাগিদে মাঠে না নামে ততদিন সে দুর্নীতির বাইরে থাকতে পারে। একটা অংশ জন্ম থেকেই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত, আরেকটা অংশ দুর্নীতির শিকার, আর প্রতিবাদিরা জেলখানা অথবা স্বর্গে।
মোট কথা, ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হই, বেচে থাকা আমরা শত ভাগই কোন না কোন ভাবে দুর্নীতিগ্রস্থ। আমি, আপনি, সবাই। কেউ বলছি, কেউ মুখ বন্ধ করে ভাবছি আমিতো ভালোই, আমিতো সৎ!!!!! কেউতো দেখেনি, কেউতো ভাবেনি। আরে ভাই, আপনার মুখ বন্ধ মানে এই না যে সবার চোখ বন্ধ। নিজে চোখ বন্ধ করে ন্যাংটো হয়ে রাস্তায় দৌড়ুচ্ছেন আর ভাবছেন কেউ দেখছেনা!!!!
বলিহারি আপনি!!!!!
চুপ করে না থাকি। অন্তত নিজের সাথে ঘটা নষ্টামির কথা বলি। আজকের রানা প্লাজার ঘটনা অন্যরকম হতে পারতো। যদি ঘটনা ঘটার পর নয়, আগেই ২০০৬ সালে ঐ ভবনের নকশা প্রত্যাখ্যান করা প্রকৌশলী আপুটি এতদিন পর সে কথা না জানিয়ে, আগেই বলতেন। নিদেন পক্ষে বিদেশ পাড়ি জমাবার সাথে সাথে বলতেন। তারপরও তাকে সাধুবাদ, বলেছেন তো অন্তত।
পরিশেষ, যারা নিজেদের 'পাচফুট' বানাতে চান, তাদের জন্যে শুভকামনা রইল। !!!!!
২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:১৯
তানভীর- বিন- হাসান বলেছেন: আপনার পাসপোর্ট ইতিহাস লিঙ্কান। পড়ুম। কামলা খাইটা আসি ভাই, হাতে সময় থাকে না, নাইলে খুইজা নিয়া পড়তাম সিউর।
২| ২৬ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:১১
বাকপটু বলেছেন: ভাল্লাগসে!!!!!!!!
৩য় +খানা আমি দিলাম
২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:১৬
তানভীর- বিন- হাসান বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:২৮
কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: লেখি নাই তো !! প্যাটের ভিত্রে রাইখ্যা দিসি !! হাহাহা
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৫৬
কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। দারুন লেখনী।
আমারো পাসপোর্ট নিয়ে ব্যাপক ইতিহাস আছে। আর আপনার মত আমার এক বন্ধুও এক টাকাও ঘুষ না দিয়ে পাসপোর্ট করার প্রতিজ্ঞা করেছিল। এবং বহু কাঠখর পুড়িয়ে ৯০% সফল হয়েছিল।