![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট
সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) যিনি এক সময় একটি টিভি ইন্টারভিউতে বলে ছিলেন এসব ট্রাইবুনাল তার কিছুই করতে পারবে না, একটি রিটে সব বাতিল হয়ে যাবে। যার কথা বলার সময় চোখে-মুখে ভেসে উঠতো বাংলাদেশকে নিয়ে উপহাস, স্বাধীনতাকে নিয়ে উপহাস এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে উপহাস। তার নাম শুনলে এক সময় রাউজান, ফটিকছড়ি ছাড়াও পুরো চট্টগ্রামের মানুষ আতকে উঠতো। হিন্দুদের কাছে সে ছিল একটি দুঃস্বপ্ন। এই লোকটির পুরো রাজনৈতিক জীবনে যতবার নির্বাচন করেছে তাতে একবারও হিন্দুরা অংশ গ্রহন করেনি আসলে করতে দেয়া হয়নি। সে হিন্দুদের বাড়িতে গিয়ে বলতো আপনাদের ভোট আমি পেয়ে গেছি, ভোট কেন্দ্রে যাওয়া লাগবে না। এক কথায় বলতে গেলে সে ছিল চট্টগ্রাম বাসির জন্য ত্রাস।
২০১০ সালের ১৬ই ডিসেম্বর গ্রেফতার করা হয় দাম্ভিকতায় ভোরপুর সাকাকে। তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনাল ১৯৭১ সালে মানবতা বিরোধী অপরাধে ২৩টি অভিযোগ গঠন করে। এর মধ্যে অন্যতম হল:
১) ১৯৭১ সালের ৪-৫ই এপ্রিল সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের ৭ জনকে অপহরণ ও এর মধ্যে ৬ জনকে হত্যা ।
২) ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল রাউজানের মধ্যে গহিরা হিন্দু পাড়ায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে গণহত্যা।
৩) ১৯৭১ সালের ১৩ই এপ্রিল কুন্ডেশ^রী ঔষুধালয়ের মালিক নতুন চন্দ্র সিংহকে হত্যা।
৪) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে মিলে ৩২ জনকে হত্যা,বাড়িতে আগুন দেয়া ও ধর্ষণের অভিযোগ।
৫) ১৪ই এপ্রিল সতিশ চন্দ্র হত্যা, তার বাড়িতে আগুন ও পরিবারের সদস্যদের ধর্মান্তরে বাধ্য করা।
৬) পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে মিলে বোয়াল খালির শাখাপুর হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলে হামলা ও ৭৬ জনকে হত্যা।
সাকার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ গুলো ১লা অক্টোবর ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল- ২৩টি মামলার মধ্যে হত্যা, নির্যাতন, গণহত্যা সব মিলিয়ে ৯টি মামলায় দোষী প্রমানীত হওয়ায় ফাঁসির আদেশ দেন। এরপর সাকার পক্ষ থেকে আপিল করা হয় এবং সেখানেও তার মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয়। আইনী যুদ্ধের সব শেষ, রিভিওতেও বহাল রাখা হয় তার মৃত্যুদন্ড। এরপর নিজের ওপর আনীত সকল দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করা হলে, রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেয়। অতঃপর ২২ নভেম্বর ২০১৫ সালে ১২টা ৪৫ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয় সাকার।
সাকার এ বিচারের মধ্য দিয়ে যে আইনের শাসন আরো সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বলাবাহুল্য। প্রামন হয়েছে একজন ব্যক্তি যত ক্ষমতা ধরই হয়ে থাক, তাকেও বিচারের সম্মুখিন হতে হবে। আসলে সাকার’ই বা দোষ কি, তার শরীরে তো বাংলাদেশ বিরোধীই রক্ত কনিকা। তার বাবা ছিলেন ফজলুল কাদের (ফকা)। যে ছিল পাকিস্তানের ৫ম স্পিকার এবং রাজনীতিবিদ। ফকা তার রাজনৈতিক জীবনে ছিলেন অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামীলীগের উত্থাপিত ছয় দফার বিরোধী। অবশ্য তাকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়ে ছিলো। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নৌকা দিয়ে বার্মা পালিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার হন বাংলাদেশ বিরোধী ফকা এবং ১৯৭৩ সালের ১৮ জুলাই ঢাকার কেন্দ্রিয় কারাগারে মৃত্যুবরণ করে।
একটু ইতিহাসের পাতা থেকে যদি আজকে পর্যন্ত চোখ বুলাই, তাহলে আমরা দেখতে পাই:
১৯৭২ সালে দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধিদের যে বিচারটি শুরু করে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বন্ধ করে দেয় জিয়া উর রহমান গং। এরপর থেকে গোপনে কেঁদে ছিলো শহীদ পরিবার এবং মুক্তিযোদ্ধারা, দেখতে হয়েছে এই স্বাধীন দেশের পতাকাবাহী গাড়িতে রাজাকারদের চলাফেরা। অবশেষে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের নির্বাচনে থ্রি-ফোর্ত মেজরিটি নিয়ে ভোটে নির্বাচীত হয়ে এ বিচার শুরু করেন। ২০০৯ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম একটি অঙ্গিকারও ছিল ক্ষমতায় গেলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১০ সালে আওয়ামীলীগ সরকার আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল (আইসিটি) নামে একটি ট্রাইবুনাল গঠন করে এবং যুদ্ধাপরাধিদের বিচার কাজ শুরু করে। ইংরেজীতে একটি কথা আছে- “বেটার লেট দ্যান নেভার”। আমরা কোন দিনই এই মাহেন্দ্রক্ষণটি পেতাম না যদি ১৯৮১ সালের ১৭ই মে শেখ হাসিনা জীবনের রিস্ক নিয়ে বাংলাদেশে না আসতেন।
সবশেষে একটি কথাই বলতে চাই, ফকার ছেলে সাকাকে যেমন বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তেমনি যেন সাকার ছেলে হুকা (হুম্মাম কাদের) কে এই দেশের মাটিতে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া না হয়। কারণ এরা একটি দর্শনে বিশ্বাসী আর সে দর্শনটি হচ্ছে পাকিস্তান। তারা কোন কালেই বালাদেশকে মেনে নেয়নি, মেনে নিতে পারে না।
২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৩৮
সাদ আমান বলেছেন: টাইটানিক ডুবে গিয়ে যেমন অমর হয়ে আছে ঠিক তেমনি সাকার কথাগুলো ও অমর হয়ে থাকবে। আমি তো পুরাই স্পিকার
৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৪৩
নীলতিমি বলেছেন: আপনারা অনেকেই তো আছেন- দেখেন তারে আবার ভাসাইতে পারেন কি-না!
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৯
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
ফকার ছেলে সাকাকে যেমন বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়েছে, তেমনি যেন সাকার ছেলে হুকা (হুম্মাম কাদের) কে এই দেশের মাটিতে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া না হয়। কারণ এরা একটি দর্শনে বিশ্বাসী আর সে দর্শনটি হচ্ছে পাকিস্তান। তারা কোন কালেই বালাদেশকে মেনে নেয়নি, মেনে নিতে পারে না।
সহমত!!!!