![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট
১৯৭১ সালে জামাতের কর্মকান্ড এবং বাংলাদেশ বিরোধী ভূমিকা নিয়ে আমাদের সকলের জানা আছে। তারপর তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালে গঠিত দালাল আইনের মাধ্যমে বিচারিক তৎপরতাও দেখা গেছে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নিহত করার মাধ্যমে দেশের প্রেক্ষাপট পুরো পাল্টে যায়। ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর বন্ধ করা হয় এই দালাল আইনে গঠিত ট্রাইবুনাল। বহুদলীয় গনতন্ত্র’র কথা বলে ১৯৭৮ সালে দেশে ফিরিয়ে আনা হয় গোলাম আযম, নিজামী গংদের। পুনর্বাসন করা হয় এদেশের রাজনীতিতে। আর ১৯৯৪ সালে খালেদা জিয়া তাদের কে নাগরিকত্ব দিয়ে মোটামোটি ১৬ কলা পূর্ণ করেন। যাই হোক, এইসব ইতিহাস কম বেশি সবার জানা, তাই আজ আর এসব নিয়ে কথা বলছি না। ....................
১৯৭৮ সালের দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে জামাত বুঝেছিলো কিছু মানুষের সমর্থন পেলেও বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট জনগনের কাছে তারা কোন দিন ঠাই পাবে না। আর তা তারা টের পেয়েছিলো বিভিন্ন সময় গনসংযোগ করার সময়। যেমন, গোলাম আজম একবার বায়তুল মোকাররম এ জনগনের রোষানলে পরে ছিলো। জুতা দিয়ে তাকে মারধর করা হয়।
ঠিক একই ভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের রোষানলে পড়েছিলো নিজামী।
এ অবস্থায় তারা বুঝে ছিলো বাংলাদেশের নাগরীক তাদেরকে কখনোই ক্ষমা করেনি, আর করবেও না। তাই তারা তাদের রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন করলো। একটি দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেয় তারা। যার ফল হল, আজকে তাদের এত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অর্থনৈতিক ভাবে অনেক শক্তিশালি। এছাড়াও তাদের আরেকটি বড় পরিকল্পনা ছিল দেশের বাহিরে বন্ধু রাষ্ট্র তৈরি করা। আর তার জন্য তাদের প্রথম পছন্দ ছিল, যে রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালে সমর্থন দেয়নি তারা। এরমধ্যে প্রথমেই আছে যুক্তরাষ্ট্র, লিবিয়া, মিশর, এবং কালক্রমে তুরস্কসহ গোটা মিডিল ইস্ট। আর পাকিস্তান তো তাদের দর্শনই, তাই সেটা আর বলার কিছু নাই। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতারা মিডিল ইস্ট দেশগুলোর যেই দলগুলোকে বেছে নিয়ে ছিলো, পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সেই দলগুলোও রাজনৈতিক ভাবে জামাতের আদর্শের সাথে মিল। বলা যায়, মৌলবাদি চেতনার সরকার গঠনে সক্রিয়। যদিও সেক্ষেত্রে ইরাক এবং ইরানের সাথে হয়ে উঠেনি, কারণ দেশটির সরকার শিয়া পন্থি। আর মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তুরস্কের একে পার্টির সাথে সম্পর্কের কথা তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে। এদিকে মার্কিনিদের সাথে জামাতের সম্পর্ক তৈরি হওয়ার বিষয়টি সত্যি মজার। তার প্রথম কারণ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট ভাবে স্বাধীনতার বিরোধীতা করে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ছিলো ৭১” সালে। তাই জামাত আবারো তাদেরকে কাছে পেতে চেয়েছিলো। আর যুক্তরাষ্ট্র যে এখনো বাংলাদেশের মধ্যে পাকিস্তানি আদর্শ ঢুকাতে চায় তাও দৃশ্যমান। তবে এটি’র মধ্যে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ অনেক বড় ব্যাপার। সেই অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আরেক দিন আলোচনা করবো বিস্তারিত ভাবে।
যাই হোক যা বলছিলাম, মার্কিন প্রশাসনের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চরিত্রটি দেশ ভেদে পরিবর্তনশী। আর তাদের বন্ধু বানানোর প্রক্রিয়াটিও ভিন্ন। যার সাথে দুইয়ে দুইয়ে চার হয়েগেছে জামাতের। কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া মিশরের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি কে সরিয়ে দেওয়াটা অগণতান্ত্রিক হওয়া স্বত্বেও তাদের চোখে এটি একটি গণতান্ত্রিক পদক্ষেপ । কারন মুরসি মুসলিম ব্রাদার হুডের রাজনৈতিক আদর্শবাদী নেতা। যে দলটি মৌলবাদি। আর তাদের চোখে এখনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে সংজ্ঞায়িত। ব্রাদার হুডকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে মার্কিনীদের আজ্ঞাবহ সেনাবাহিনীকে ক্ষমতায় আনা হল। ঠিক আছে খুব ভালো কথা। কিন্তু বাংলাদেশের ধর্মীয় জঙ্গিবাদী দল জামায়েত ইসলামসহ ধর্মীয় উগ্র দল ও সংগঠনগুলির জঙ্গিবাদী, অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিস্ট কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে একেবারেই নীরব। যদিও তাদের স্ট্যাট ডিপার্টম্যান্ট অব ইউএস’র তালিকা ভুক্ত সন্ত্রাসীদের মধ্যে জামাত শিবিরকে বলা হয়েছে, তারপরও তারা নীরব। আর এতে করে বাংলাদেশকে নিয়েও তাদের প্রশাসনের দ্বিমুখী সমান্তরাল নীতির প্রয়োগ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। মার্কিনীদের এই তথাকথিত বহুমুখী গণতান্ত্রিকনীতির প্রেসক্রিপশনে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মত অনেকে নিজ দেশে জঙ্গি গোষ্ঠী তৈরি করছে এবং ধর্মীয় জিহাদের নামে নামাজের সময়ও মসজিদে বোমা ফাটাচ্ছে। আর সেসব দেশেও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু মৌলবাদি প্রতিক্রিয়াশীল দলগুলো। অনেক দেশের নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর মতই জামাত-শিবিরের সাথে যুক্তরাষ্ট্রর সম্পর্কটা অনেক বছরের। এই সম্পর্কটা যুক্তরাষ্ট্র একান্ত নিজের স্বার্থেই আজ পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে। মার্কিন প্রশাসন জামাতের রাজনৈতিক আদর্শ কি এটা ভাল করে জানা সত্ত্বেও জামায়েত ইসলামের মৌলবাদি চেতনাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে উগ্র রাজনীতি করে আসছে। দেশটি এও জানে, জঙ্গিবাদীদের সংগঠক হিসেবে কাজ করছে এই জামাত। তারা সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পও ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রতিটি ঘরে। এখানেই হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছে করে, মার্কিনীরা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস বিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে অথচ আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন, এমনকি আল কায়েদার সাথে জামাত শিবিরের কানেকশনের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ার পরেও জামাতের বিষয়ে তারা নীরব কেন??? উত্তর একটি, আমার শত্রুর শত্রু, আমার পরম বন্ধু।
ইতোমধ্যেই জামাতের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো জামাতের প্রতি বন্ধুত্বতা দেখিয়েছে, এবং দেখাচ্ছে। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার আগেই তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বলে ছিলো, ক্ষমতায় আসলে মানবতা বিরোধীদের বিচার করবে। আর এরফলেই, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর ফিক্সড ভোটারের বাহিরের একটি বিশাল অংশ নতুন প্রজন্মের যুবসমাজের ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয় মহাজোট সরকার। এরপর থেকেই তারা তাদের ওয়াদা মাফিক মানবতা বিরোধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। এপর্যন্ত পৃথিবীতে যত মানবতা বিরোধী বিচার হয়েছে, তার থেকে বেশি স্বচ্ছ ভাবে এ বিচার কাজ করা সত্ত্বেও প্রতিনিয়ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে জামাতের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো এর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, সেই সময় গঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনাল- নুরেমবার্গ ট্রায়ালে যা সুবিধা দেয়া হয়নি অপরাধীদের, তাও দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের গঠিত মানবতা বিরোধী অপরাধীদের। তারপরও তাদের এক্ষেত্রে দ্বৈতনীতি লক্ষ্য করা গেছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে, মার্কিন সিনেটর, হিউ্ম্যান রাইটস ওয়াচ, মিডিল ইস্ট প্রতিনিয়ত হুমকি, ধামকির মধ্যে রেখেছে সরকারকে। শুধু তাইনয়,কখনো মিডিল ইস্ট থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে দেয়া, কখনো বিশ্বব্যাংক বিনিয়োগ না করা, ইত্যাদি কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে দেশগুলো। এই ব্লগটি যখন লিখছি, ঠিক তার কয়েক ঘন্টা আগে রয়টার্স এর মাধ্যমে খবর পেলাম, তুরস্ক তাদের কূটনীতিককে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে, শুধু মাত্র নিজামীকে ফাঁসি দেয়ার কারণে। যাক তারা তাদের বন্ধুত্বর পরিচয় দিচ্ছে। তবে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের প্রথম ধাপের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়ে গেলেও, জামাতের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে, তা আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছু না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদি অর্থনীতির কারণে তারা এবং তাদের সহযোগি দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্ব পূর্ণ একটি দেশ। আর তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে একটি কারণ বাংলাদেশের পাশে রয়েছে, ভারতের মত বৃহৎ দেশ। যাদেরকে অনেক বেশি প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক এবং ভারতের পাশে চীন থাকার কারণে। তাই সবসময়ই জামাতের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো চাইবে, বাংলাদেশের সরকারে সবসময় এমন কোন প্রতিক্রিয়াশীল দল ক্ষমতায় থাকুক, যাদের কে দিয়ে তারা তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারবে। কথাটা হয়তো মাথার উপর দিয়ে গেছে, বাংলাদেশে প্রতিক্রিয়াশীল দল থাকলে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধাটা কোথায়?? তাই না। সুবিধা আছে। ভারতকে সর্বদা পাকিস্তান এবং চীনের সাথের সীমানা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। আর জোট সরকারের আমলে ভরতের নাভিশ্বাস উঠেছিলো বাংলাদেশের জঙ্গি তৎপরতার কারণে। আর তখন ভারত বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্টের সাথে এশিয়া মহাদেশের জঙ্গি বিরোধী কার্যক্রমে যোগদেয়। এতে করে ভারতের সাথে যেকোন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বণিবনা করতে সুবিধা হয়েছিলো। কিন্তু মহাজোট সরকারের আমলে এদেশের জঙ্গিবাদ নিয়ে ভারতকে চিন্তা করতে হচ্ছে না দেখেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অনেক বিষয়ে তারা দ্বিমত করে কার্যক্রম করে আসছে। যেমন, ইউএস’র কথা উপেক্ষা করে সিরিয়া সরকার বাশার আল আসাদকে সমর্থন দেয়া, রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক, ইরানের কাছ থেকে তেল আমদানি করা ইত্যাদি। সবমিলিয়ে এই মূহুর্তে বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রকে ফাইট দিতে হলে, তাদের দরকার ভারতকে এবং তাও আবার যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত একটি রাষ্ট্র হিসেবে। আর তার অনেকটাই সম্ভব হবে, বাংলাদেশে জামাতের মত প্রতিক্রিয়াশীল দল অথবা তাদেরকে সাহয্য করবে এমন দল যদি ক্ষমতায় থাকে। এসব বিষয়ে আরেকদিন বিস্তারিত লিখবো। তবে পরিশেষে এটুকুই বলতেচাই, বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতি, স্বাধীনতার পক্ষের রাজনীতি, সর্বদাই জামাতের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো দ্বারা হুমকির সম্মখিন ছিল এবং থাকবে। তারা কোন ভাবেই চায় না বা চাইবেও না, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াক। তাই বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে সবসময় এক হয়ে কাজ করতে হবে, এবং করা উচিত। আজ এই পর্যন্তই। আপনারা ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন, এবং স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে চলুন এই কামনা করে বিদায় নিচ্ছি। খোদা হাফেজ
©somewhere in net ltd.