![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট
অনেকে মাঝে মাঝে বলে থাকেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র” মানে ভারত জড়িত। এমন কথা শুনলে আমি শুধু ভাবি এদের কি আসলে জ্ঞান আছে নাকি তারা সব কিছু থাকতেও অন্ধ এবং বোধির। আর তাই আজ ইতিহাসের পাতা থেকে কিছু কথা রোমন্থন করবো।
................................
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য দেশ ও বিদেশে ষড়যন্ত্র চলছিলো। এমন তথ্য পেয়ে ভরতের র’ই কয়েক বার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জানানোর জন্য বেশ কয়েকবার বার্তা পাঠিয়ে ছিলো। কিন্তু সেই বার্তা বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত পৌঁছাতে দেয়নি হত্যাকারিদের দোসর মোশতাক। অন্যদিকে, ভারত যে সব বিষয়ে সরাসরি তখন যোগাযোগ করবে এবং সাহায্য করবে, সেই পরিস্থিতিও তাদের ছিলো না, কারণ তখন ভারতে বাম রাজনীতির সন্ত্রাসী গ্রুপ নকশাল মুভমেন্ট খুব বড় আকার ধারণ করে। এরকারণে ভারতের মত দেশে বেশ কয়েক বছর জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিলো। আর এদিকে বাঙ্গালি জাতির উপর বঙ্গবন্ধুর এতটাই আস্থা ও বিশ্বাস ছিলোে যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর প্রোটকল না নিয়ে এবং গনভবনে না থেকে, তিনি ছিলেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। আর খুনিচক্ররা সে সুযোটাই খুব ভালো ভাবে কাজে লাগায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট।
.................................
এবার আসি মূল কথায়। যে রাতে বাংলাদেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়, সেই রাতে বেলজিয়ামের রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের রাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর জামাতা ড. এম ওয়াজেদ, মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা, তার দুই সন্তান জয়,পুতুল এবং মুজিব কন্যা শেখ রেহানা। ঢাকায় যে হত্যা কান্ডটি হয়েছে তখনও সানাউল হক তা জানতেন না। ভোররাত পর্যন্ত মুজিব কন্যাদের আন্তরিকতা দেখাতে কার্পন্যও করেননি। বরং তাদের অনুরোধ করেছিলেন, এবার যেন কয়েকটা দিন নিজ (সানাউলের) বাড়িতে থাকেন। কিন্তু যখনই খবর পেলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছে এবং মোশতাক বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়েছে। তখনই হঠাৎ চোখ পাল্টে ফেললো সানাউল হক। পারলে তাদের তখনই বের করে দেন। এমনটাই স্মৃতিচারণ করেছেন শেখ রেহানা এবং সাবেক স্পীকার হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী তাদের একটি লিখায়।
..................................
সে সময় জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত পরবর্তীকালে ১৯৯৬ সালের আওয়ামীলীগ সরকারের স্পীকার হুমায়ুন রশিদ। তিনি বঙ্গবন্ধু’র হত্যার খবর পেয়ে অস্থির হয়ে উঠলেন এবং বারবার টেলিফোন করলেন ব্রাসেলস এর রাষ্ট্রদূত সানাউল হকের কাছে এবং বললেন আপনি বঙ্গবন্ধু’র জীবিত দুই কন্যাকে নিরাপদে রাখেন। কিন্তু তিনি এ বিষয়ে অনিচ্ছা প্রকাশ করলেন। অথচ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অপছন্দ থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুই তাকে রাষ্ট্রদূত করেন। যাই হোক সানাউল হকের অনিচ্ছার বিষয়টি বুঝতে পেরে হুমায়ুন রশিদ তখন অনুরোধ করলেন, আপনি শুধু নিরাপদে তাদের জার্মানের সীমান্ত পর্যন্ত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন, বাকিটা আমি দেখছি। কিন্তু তাতেও তিনি রাজি হলেন না বরং বললেন আমাকে এসব ঝামেলার মধ্যে জড়াবেন না। এ অবস্থায় ড. ওয়াজেদ এক ব্যবস্থা করে জার্মানের সীমান্ত পর্যন্ত আসেন এবং সেখান থেকে হুমায়ুন রশিদ তাদেরকে জার্মানে প্রবেশ করান এবং নিজ বাড়িতে রাখেন। তবে কাহিনীর শেষ এখানেই নয়।
.....................................
জার্মানিতে এনে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে চাকরি ও আশ্রয় দেয়াতে এবার জীবনের ঝুঁকিতে পরলেন হুমায়ুন রশিদ নিজে। জার্মান প্রবাসী বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দোসর’রা এবার হামলা চালালো হুমায়ুন রশিদের বাড়িতে। এ অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যাকেও রক্ষা করতে পারবেন না বলে মনে হয় হুমায়ুন রশিদের। তাই তিনি আর কোন উপায় না দেখে সরাসরি ফোন করলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরাগান্ধিকে এবং পুরো বিষয় বিস্তারিত ভাবে তাঁকে জানালেন। সাথে সাথে ইন্দিরাগান্ধি জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়কে একটি বার্তা পাঠালেন, এবং বললেন- “ জার্মানে নিযুক্ত বাংলাদেশের দূতাবাসে এই মূহুর্তে ভারতের দুই জন অতিথী আছে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় জার্মান সরকার যেন ভারতের অতিথীদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন যতক্ষন না পর্যন্ত ভারত সরকার তাদেরকে ভরতে নিয়ে না আসছেন”। সাথে সাথে জার্মান সরকার তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহন করেন। আর পরদিন ভারতের নিজস্ব বিমানে করে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে ভারতে নিয়ে আসেন। এরপর ১৯৮১ সালে স্বদেশে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যারা ইন্দিরাগান্ধির নিজ বাসায় অবস্থান করেছেন।
.....................................
এখন আমার একটাই প্রশ্ন: যে ভারত এতটা করলো শেখ পরিবারের সবশেষ দুই আলোকে জ্বালিয়ে রাখার জন্য, সেই ভারত বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করবে!!!!!!!!!! অযৌক্তিক কথা বলারও একটা সীমা থাকা দরকার। প্রকৃত খুনি ও ষড়যন্ত্রকারি দেশ গুলোকে জনগনের কাছ থেকে আড়াল করার জন্যই যে পরবর্তী কালে জিয়া সরকার এমন মনগড়া কাহিনী রচনা করেছিলেন, তা ক্রিস্টাল ক্লিয়ার বর্তমান বাংলাদেশের জনগনের কাছে। আর বর্তমান বাংলাদেশের জনগনকে এতটাও বোকা ভাবা ঠিক নয়, বর্তমান বিএনপি-জামাতের।
......................................
পরিশেষে বলতে চাই, দয়া করে ভুল এবং মিথ্যা কথা বলে জনগনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না, তাতে করে একসময় নিজেরাই বিলীন হয়ে যাবেন। কারণ ইতিহাস কাওকে ক্ষমা করে না, সে তার নিজ পথেই হাটে। আজ এটুকুই, আবার ফিরে আসবো অন্য কোন দিন অন্য কোন বিষয় নিয়ে ইতিহাসের পাতা থেকে স্মৃতি রোমন্থন করতে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ্য থাকুন আর ইতিহাস জানুন, ইতিহাস পড়ুন, এবং তার চর্চা করুন। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ চিরজীবি হোক। শেখ হাসিনা দীর্ঘজীবি হোক।
©somewhere in net ltd.