নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন ভীরু মানুষ...

একজন ভীরু মানুষ...

তানজিমস্‌

একজন ভীরু মানুষ...

তানজিমস্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেবতারা

২১ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৪৭

আমার বাবার এক চাচি ছিলেন যার সবচেয়ে প্রিয় কর্মটি ছিল ঝগড়া করা। রোজ সকালে উঠে কারো সাথে ঝগড়া করতে না পারলে তাঁর নাকি অম্বল উঠতো যাকে আমরা আজকাল বাংলায় গ্যাস বলে থাকি। তো সকাল সকাল ঝগড়া করতে না পারলে তাঁর অম্বল ওঠার সমস্যাটা এমন পর্যায়ে পৌচ্ছাত যে তিনি চুকা ঢেঁকুর তোলা শুরু করতেন, এই যখন অবস্থা ঝগড়া করার কোন মানুষ খুঁজে না পেলে তিনি তখন আকাশ, বাতাস, গাছ-গাছড়া এসবের সাথে ঝগড়া শুরু করে দিতেন। উদাহরণ স্বরুপ- হয়তো একটু জোড় হাওয়া দিয়ে তাঁর চুলোর আগুন কমিয়ে দিলো আর অমনি তিনি শুরু করে দিলেন, “মরার বাতাস অন্য কুটিও (কোথাও) যায়ে মরবার (মরতে) পারিস না, আমার হাইসালে(চুলোতে)আসেই তোক মরতে হয়রে নিমক্ষারাম (নিমক-হারাম)” বা আকাশটা হয়তো সকালে কিছুটা মেঘলা আর অমনি তিনি বলতে লাগলেন, “ঢেমনির মুকটা দেখছো, কেঙ্কা (কেমন) কালির লাকান (মত) করে রাইকছে (রাখছে)? তোর উঙ্কা (অমন) ভুসকা (কালো) মুখ কেডা দেখবি, কতো? তোর বেবাক (সব)আজ-শরম (লাজ-শরম) কি হাটত (হাটে) বেচে থুয়ে আচ্চু-রে *****?” ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। আফসোস, আমার এই দাদি যখন বেঁচে ছিলেন তখন টেকনোলজিটা এখনকার মত উন্নত হয়নি, যদি হতো তবে নিশ্চয় সে আমেরিকা অথবা রাশিয়ার পররাষ্ট্র বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর পদ অলংকৃত করতো। এই মানবতাবাদী দেশগুলো মানব কল্যাণে প্রথম হবার জন্য যেভাবে নিজেদের ল্যাঞ্জা ধরে টানাটানি করে তাতে আকাশ-বাতাসের সাথে ঝগড়া করতে পারা মানুষদের হেভি ডিম্যান্ড থাকার কথা তাদের কাছে। অন্য দেশের অর্ন্তগত মানুষের প্রতি তাদের যে মমত্ববোধ তা অতীতে পৃথিবীর মানুষকে বিস্মিত করেছে আর বর্তমানেও করছে।







এদের এই কুমিরীয় কান্নার সাথে সংগতিযুক্ত একটা জোকস বলে শেষ করিঃ মার্কিন রাষ্ট্রপতি ও রাশিয়ার প্রধান নেতা নতুন প্লেন চালানো শিখেছে। পৃথিবী নামক গ্রহের সর্বশ্রেষ্ঠ মানবতাবাদী এই দুই মানব তাদের মানব সেবার উদবাই থেকে ভাবলেন- গরিব দেশের হাঁড়জিরজিরা মানুষগুলান কখনো প্লেনে চড়তে পারেনা, সেক্ষেত্রে চল আমরা দুইজন মিলে গরীব দেশের ১০০ বাছাইকৃত মানুষকে প্লেনে করে ঘুরিয়ে মানবতার ইতিহাসে এক বিশাল অবদান রাখি। তো যেই ভাবা সেই কাজ। পৃথিবীর সব গরীব দেশ থেকে আবেদন চাওয়া হলো আর যথারীতি কোটি কোটি হা-করা মানুষের আবেদন পড়লো, গুজব আছে আবেদনকারীদের ভেতরে বেশকিছু হা-করা দেশের প্রধান ও দাগপড়া ধনকুবেরও ছিল; কিন্তু সভ্য দেশের বিচার বলে কথা, তারা নানান বিচার বিশ্লেষণের পর ১০০ খাঁটি ও সাচ্চা হা-করা কে বাছাই করলো। নির্দিষ্ট দিনে বাছাই একশ’কে প্লেনে তোলা হলো আর আমলা ও মন্ত্রী পর্যায়ে একাধিক অভিজাত সভ্য-কাঁদা ছুঁড়াছুঁড়ির পর মার্কিন রাষ্ট্রপতিকে পাইলট ও রাশিয়ার প্রধান নেতাকে কো-পাইলট নির্বাচিত করা হলো। অবশেষে মহান যাত্রা হলো শুরু। পাইলট ও কো-পাইলট তাদের নবীন জোশে প্লেন উপরে উঠাতেই থাকল আর কিছুক্ষণ পরপর-ই হা-করাদের উদ্দেশ্যে নানা উৎসাহব্যঞ্জক স্বপ্নজাগানিয়া বক্তিতা দিয়ে চলল। হঠাত ১০-২০ মি. যাবত ককপিট থেকে কোন উচ্চবাচ্য না আসাতে হা-করারা ভাবল পাইলট আর কো-পাইলট বোধহয় একসাথে টয়লেটে গেছে। ঠিক ২১ মিনিটের মাথায় আবার ককপিট থেকে সেই মহান নেতাদের উচ্ছ্বাসপূর্ণ গলা ভেসে আসাতে হা-করা মানুষেরা উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। এদিকে পিএ সিষ্টেমে বেজে চলছে- “আমি আপনাদের পাইলট বলছি। আমি, আমার কো-পাইলট ও অন্যান্য ক্রুদের পক্ষ থেকে ‘মানবতার উড়ালে’ আপনাদের আরো একবার স্বাগত জানাচ্ছি। আমরা এখন নীল চোখের মত সুন্দর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রায় ৩৫ হাজার ফিট উপর দিয়ে উড়ে চলেছি। আপনারা যদি এখন ডান বা বাম যেকোন জানালা দিয়ে বাইরে তাকান দেখবেন প্লেনের পাখা দুটো জ্বলছে আর যদি কেউ একটু কষ্ট করে সামনের দিকে তাকান তবে দেখবেন এর সামনের অংশ খুলে পড়ে যাচ্ছে; নীচে আটলান্টিকের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন হলুদ রঙয়ের ছোট্ট একটা ভেলা যেখানে দু’জন মানুষ আপনাদের দিকে তাকিয়ে গুডবাই জানাচ্ছে। এদের একজন আমি, আপনাদের প্রিয় পাইলট আর অন্যজন আমাদের সৎ-সাহসী কো-পাইলট। এটি একটি পূর্ব-ধারণকৃত ঘোষণা ছিল; মানবতার এই যাত্রা শুভ হোক”।





জয়তু সাম্য ও মানবতার দেবতাদের।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.