নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন ভীরু মানুষ...

একজন ভীরু মানুষ...

তানজিমস্‌

একজন ভীরু মানুষ...

তানজিমস্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিলোত্তমা ( গাল-গপ্প)

১২ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১১



সেইগ্রীক পৌরাণিকের সময়ের কথা। যখন প্রেমিক-মনা দেবতাগণ তাদের সারথীর খোঁজে নানাচিপাচাপায় উঁকি মারতেন আর যার-তার সাধনায় মুগ্ধ হয়ে নানা ভুলভাল বর দিয়ে দিতেন। তোযাহোক, স্যাড আর স্যাডো নামে দুই ভাই প্রবল প্রতাপশালী দৈত্য ছিল। এদের মত জিউসপ্রেমী সে যুগে আর কেউ ছিল না। কিন্তু দুই ভাই ছিল ভীষণ উচ্চাকাঙ্ক্ষী। ত্রিভুবনজয় করবে, এই তাঁদের আশা। তাই মাউন্ট অব জিউস-এ গিয়ে এরা শুরু করল কঠিন তপস্যা।সহস্র বছর পর, সে তপস্যার গুণে তাঁদের সামনে এলেন জিউসতার নধর ভোগী চেহারা নিয়ে। বলো জিউস প্রেমীদ্বয়, কি বরচাও। দুজনে বর চাইল, প্রভু, আমাদেরঅমর করে দিন। জিউস মাথা চুলকালেন। এরা একেতে রাক্ষস, দুয়েতেত্রিভুবন দখলের চিন্তা মাথায় রাখে। অমর করে দিলেই তো হয়েছে। স্বর্গ-মর্ত্য-নরকজ্বালিয়ে খাবে। কিছুক্ষণ চিন্তার পর জিউস নতুন আইডিয়াপেলেন। শব্দের প্যাঁচগোচ মেরে বললেন, যাও বৎস, অন্য কেউ তোমাদের মারতে পারবে না।

দুই ভাই তো দারুণ খুশি হয়ে ড্যাং ড্যাং করে নেচে নেচে ত্রিভুবন জ্বালিয়ে খেতে লাগল। এই হুংকার দেয়, এই আবার স্বর্গের সুধা আর নরকের আগুন মিশিয়ে কেমিস্ট্রি এক্সপেরিমেন্টকরে। দেবতা হেডকোয়ার্টারের তিন প্রধান অতিষ্ঠ হয়ে ব্রহ্মার কাছে গিয়ে বিচার দিলেন।পিতাশ্রী , হচ্ছে কি এসব? আমরা কিবানের জলে ভেসে এসেছি নাকি? নতুন নতুন রাক্ষস-ক্ষোক্কসবসে তপস্যা করবে, তাতেই তুমি গলে-পটে ওদের যা নয় তাই বরদেবে? আমাদের হাইট অফ রেসপেক্ট বলেও তো একটা কথা আছে! তাড়াতাড়িপ্রতিবিধান কর, নইলে আমরা চললুম অ্যামাযনে।

জিউস বিশেষ আরকে একখানা লম্বা সিপ দিয়ে বললেন। রোসো, বাছারা, রোসো। বাবার থানে এয়েচো, একটু ঠাণ্ডা-গরম কিছু খাও। ওরে, কে কোথায় আছিস,ওদের তিনটে চেয়ার দে। সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে রয়েচে!

দীর্ঘ সময় কেটে গেল। না এল চেয়ার, না এলঠাণ্ডা গরম। তিন দেবতা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। জিউসকে একটু বিব্রত দেখায়। আসলেহয়েচে কি, কাজের লোকের খুব অভাব, বুঝলে বাছারা? তা ভাল কোন অপ্সরা পেলে পাঠিয়ে দিও, হ্যাঁ? মানে... তিন দেবতার রোষ ও অনল সিক্তবুলবুলি মার্কা চোখ দেখে জিউস আরেকবার ঢোক গিললেন।আরকের মৌজ কেটে যাচ্ছেদেখে জিউস তাড়তাড়ি বললেন-

ও হ্যাঁ হ্যাঁ, প্রতিবিধান। তা খুব সোজাকিন্তু। ত্রিভুবনের সমস্ত ভাল ভাল বস্তু দিয়ে বানাও এক নারীকে, আর তাঁকে পাঠিয়ে দাও ওই দুই বজ্জাতের কাছে। ব্যাস, কম্ম কাবার!

বলা শেষ হয়েছে কি হয়নি, সাথে সাথে দাঁতকসকস করতে করতে স্বর্গ-মর্ত কাঁপিয়ে হেরা দেবী ইয়াব্বড় এক ময়ূরের পালক নিয়ে হাজির।তবে রে, আমার কম্ম কাবার? আমার?আজ তোর স্প্র্শকাতর স্থানে পালক গুজে ক্যাবারে ড্যান্স শেখাব। এইবলে জিউস-হেরা চুলোচুলি-টিকিটাকা-হুটোপাটি খেতে লাগলেন। কোথায় লাগে শুভ-অশুভের লড়াই!অবস্থা দেখে দেবতা তিনজনই কেটে পড়লেন। কোথায়? টু দ্য গবেষণাগার!

গবেষণাগারে তিনজনে বিশ্বব্রমান্ডের যত ভাল ভাল জিনিস আছে তাই এনেজড় করতে লাগলেন। আধ-ঘণ্টা পরে দেখা গেল, বাকি দুজনেএনেছেন ফুল-ফল-পাখি-সবুজ গাছ ইত্যাদি ইত্যাদি, আর হারকিউলিসএনেছে যত ইংরেজি-ফরাসি মদ আর ভারতবর্ষের কৈলাসের বিখ্যাতগাঁজা। প্রথম দেবতা নাক ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ওরেবেজন্মা নচ্ছার! এ কি এনেছিস?' হারকিউলিস হিক্কা তুলেবললেন, আজ্ঞে, ক্রাসি। প্রথমদেবতা এবার হুঙ্কার ছেড়ে হারকিউলিসের মাথায় গাট্টা মেরে বসলেন। হারকিউলিস মাথা ধরেহাইমাই করে উঠলেন। আরে বাবা, মাল, মাল। গ্রীক ভাষা বোঝ না, পাঠশালা ফাঁকিদিয়েছিলে নাকি? নারীর মাঝে নেশা ঢুকাতে হবে না? তাই তো নিয়ে এলাম।

প্রথম দেবতা এবার আশেপাশে তাকালেন। কাঁচামাল সব এসেছে। এখনকারিগরের অপেক্ষা। তিনি এক দানব-কে ডাকলেন। অ্যাই ব্যাটা দানব, কবি হেক্টর-কে ধরে নিয়ে আয়।

হেক্টর তখন সবেমাত্র শুধু টাওয়েল জড়িয়ে পরে বাথরুম থেকেবেড়িয়েছেন। হঠাত দানব দেখে ভিমড়ি খেয়ে টাওয়েল ছাড়া হয়ে গেলেন। দানব তার সামনেউপস্থিত। পণ্ডিত, চলো। প্রথম দেবতা ডাকে তোমায়। দানবের হঠাৎআবির্ভাবে হেক্টরের খুলে যাওয়া টাওয়েল পরতে পরতে হেক্টর বিড়বিড়িয়েবকতে লাগলেন, যাচ্ছি বাপ যাচ্ছি। নক তো করতে পারিস কখনো! প্রাইভেসি বলেও তো একটাকথা আছে। আমরা তো আর দানব বা দেবতা নয় যে সবার সামনে আধা-নেংটা হয়ে ঘুরবো, তাইনা?

তারপর দানব হুস করে হেক্টরকে প্রথমদেবতার সামনে হাজির করলেন। প্রথম দেবতা কবিকেসব বুঝিয়ে বললেন। বললেন, তুমি তো কবি মানুষ। কিভাবে সেইজিনিস বানাই বলো দিকিনি।

হেক্টর বললেন, তবে শোনো-
ব্লাআয়দি...দুউয়ক মদবচ
লদসাইকইইকহ কদবচ
অক্বাচনদজকহদ দজক্বু
কচঞ্চচিকহ ক্ববচ ল্যচ্চু
জক্সকাও নজ্বভন ওয়েওব
দন্সাউফ্বুন উহফ্বন্ন গেওব.............

প্রথম দেবতা মনোযোগ দিয়ে পাঁচ-ছ লাইন শুনলেন, তারপর প্রবলবেগে মাথা নাড়াতে লাগলেন। বুঝি না, বুঝি না। মিশরীয় দেবতা পাইসো আমারে? গ্রীকভাষায় কও। হারকিউলিস চান্স পেয়ে টিপ্পনি কাটে, সেটাও বুঝলে হয়। হেক্টর বললেন, দেবা, এইটাই গ্রীক ভাষা। উপস্থিত সকলকেবিভ্রান্ত দেখায়। গ্রীক মানে? গ্রীক এরকম এত কঠিন হয় নাকি!প্রথম দেবতা; ধুত, তুমি আমারকানে কানে চলিত ভাষায় কও শুনি।

হেক্টর বললেন। শুনতে শুনতে প্রথম দেবতারকান গরম-লাল হয়ে ওঠে। তিনি সবজান্তার হাসি হাসেন। হেক্টরের পিঠে থাবড়া মেরে বলেন, তা বদ আছ তুমি কবি,অ্যাঁ? দুষ্টু কোথাকার! অ্যাই কানাদানব,ব্যাটা চোখে না দেখলেও মন্ত্রযোগে সবই তো শুনলি, এবার কাজ শুরু করে দে। আমি দেখি কোন অপ্সরা খুঁজে পাই কিনা।
হেক্টর শুনে চোখ বড় বড় করে প্রথম দেবতার দিকে তাকান।প্রথম দেবতা ফিচলে হাসি দিয়ে বলেন, আহা, খারাপ ভাব কেন? বাবাজিউসের ফরমায়েশ। অন্য কিছু না তো!

দুদিনের মধ্যে কানাদানব হাতুড়ি-বাটাল দিয়ে কুঁতে কুঁতে এক অপরূপানারী তৈরি করে ফেলল। শেষ করেই কবির হাতে বাটাল দিয়ে বলল, কবিতুমি এগুলো ধর। আমি চললাম। হেক্টর অবাক হয়ে বললেন,কেন কি হল? কানাদানব কোমরে হাত রেখে বলল,আরে বয়সকালে এত কুঁতাকুঁতি সহ্য হয় নাকি? কি আর হবে, অশ্ব বড় যন্ত্রণা দেয়। বদ্যির কাছেযাচ্ছি।

এদিকে দেবতারা তেজ ক্ষয় করে এসে পড়েছেন। হেক্টর বললেন, হে নারী, তিলতিল করে তোমায় গড়া হয়েছে বলে তোমার নাম দিলাম তিলোত্তমা (গ্রীক ভাষায় যাহা ছিল"ট্রী-ট্রমা")। যাও স্যাড আর স্যাডো-র কাছে। দুই বজ্জাতকে নাকে দড়ি দিয়েঘুরিয়ে এস। তিলোত্তমা যো হুকুম বলে অদৃশ্য হয়ে গেল।

তখন দুই ভায়ে নরককুণ্ডের আগুনে গ্রিলড মাটন খাচ্ছিল। তিলোত্তমাতার হেক্টরীয় সৌন্দর্য প্রদর্শন করতে করতে দুই ভায়েরসামনে হাজির হল। দেখে উভয়ের লোলগ্রন্থি সক্রিয় হয়ে উঠল। দুজনেই লাফিয়ে গিয়ে তিলোত্তমারদুই হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিল। তিলোত্তমা কৃত্রিম বিরক্তি দেখিয়ে বলল,আরে আরে করে কি করে কি! থাম থাম। আমি তো দুজনের বউ হতে পারব না।এক কাজ কর, কাল ইডেন স্টেডিয়ামে দুজনে কুস্তি কর। যেজিতবে, আমি তারই বগলে দাবা খেলব, অর্থাৎ বগলদাবা হব। এই বলে সকল কবির সকল যৌবন বিষয়ক উক্তি্র সার্থকতাবজায় রাখতে রাখতে চলে গেল। সেদিকে চেয়ে নরকের সকল বাসিন্দাসহ স্যাড আর স্যাডো দীর্ঘশ্বাসফেলল।

পরের দিন। স্থান ইডেন স্টেডিয়াম। স্যাড আর স্যাডো গায়ে তেল মেখে,পাটভাঙা নেংটি পরে উপস্থিত। তিলোত্তমা তার সখি অপ্সরাদের নিয়েবসেছে গ্যালারিতে। তিলোত্তমা দুই জনকে দুই হাতে ফ্লাইং কিস দিল। ব্যাস, দুই ভাইই রণোম্মুখ। শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। সে কি নৃশংস যুদ্ধ! স্যাড আরস্যাডোর চুল টানে তো স্যাডো স্যাডের নেংটি খুলে দেয়। ধারাভাষ্যকার চৌধুরী সাহেবেরমত জ্বালাময়ী কমেন্ট করা শুরু করল, হিয়ার টুডে, হোঅট আ ডগ-ফাইটিং ম্যাচ উই হ্যাভ! ক্ষণে ক্ষণে এদের মারামারি দেখে পুরোগ্যালারি শিউরে শিউরে উঠতে লাগল। গোটা আড়াই বছর পর, বিধ্বস্ত-মৃতপ্রায়হয়ে দুজনেই পড়ে গেল মাটিতে। পড়েই জিউসকে গালাগালি। সেই গালির তেজে জিউস একটুল্যামচাতে ল্যামচাতে দেখা দিলেন। হেরা আবার তার কথা রেখেছিল কিনা!

বলো, বৎসগণ, আমাকে এত গালাগাল দিচ্ছ কেন?
দুইভাই তো খেপেই লাল। ব্যাটা মিথ্যুক, বলেছিলি আমরা অমর; তা এখন মরছি কেন?

জিউস খুক খুক করে হাসলেন। বোকার দল, আমিবলেছিলাম 'অন্য' কেউ তোমাদের মারতেপারবে না। কিন্তু এটা তো বলিনি তোমরা একে অপরকে মারতে পারবে না!

এই শুনে শক খেয়ে স্যাড আর স্যাডো ধুপ করে মরে গেল।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা! কি গপ্পো ভায়া!!! দারুন!

এখন আমাদের ইডেন স্টেডিয়ামটা জেনো কুনে?????;)

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৪৯

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: আপনি বেশ চমৎকার লিখেন। ভালো লাগল।

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৫৯

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: নাইসলি রিটেন। ন্যাচারাল। খালি কিছু যায়গায় শব্দ জোড়া লাইগা গেছে বেশি। স্পেসবার চাপতে একটু খেয়াল কইরেন।

৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১:১৮

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বগলে দাবা খেলব
হাহাহাহাহাহা

=p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.