নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

থার্ড আই

তাপস কুমার দে

থার্ড আই

তাপস কুমার দে › বিস্তারিত পোস্টঃ

রিভেন্জ

১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৩২

বাপ-মা মরা সখিনা বলে, “জমিনের বদলা জান আর জানের বদলা জমিন!” নিস্তব্ধতায়-নিরবতায় বুক ফেটে চৌঁচির। চারিদিকে হাহাকার । নাই, নাই, নাই। কষ্টে বুক ভারী হয়ে আসছে, সখিনার। কান্নায় বুক ফেটে যায়। দু-চোখে রক্তের নদী। সখিনা,“যে দিকে তাকাই রক্তের ধারা বয়ে চলছিল। রক্তে রাঙ্গা এ জমিন, লাখো শহীদের রক্ত, মা-বাবা-ভাই-বোনের বুকের তাজা রক্ত। প্রতিটি কনিকা আর্তনাদ করছিল, থরে থরে পরে ছিল প্রাণহীন দেহ। থৈ থৈ করে রক্তের ¯্রােত বয়ে চলছিল,রক্তগঙ্গায়।” সবুজে ঘেরা এ জমিন রক্তে রঙ্গিন। বাতাসে পত পত করে উড়ছিল রক্তমাখা লাল-সবুজের পতাকা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিতে সুমহান, উচ্চঃশির। সখিনা,“কার কাছে আর্তি জানাবো। সেও তো ব্যাথ্যাতুর, সমব্যাথি সাথি আমার।” নিজেকে স্বান্তনা জানায় সখিনা,দেশ তো স্বাধীন। আজ আমরা মুক্ত, স্বাধীন .......। বুনো উল্লাসে ফেটে পড়ছিল সখিনার মন।

সখিনার সামনে তার বাবা রহমানকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে গেল। পাকিস্তানি সেনা ও এদেশী দোঁসররা। গণকবরে সখিনা ছুটে গেল বাবাকে খুঁজতে। অনেক খুঁজেও বাবাকে পেলো না সে। প্রিয় বাবার খোঁজ হলো না মেয়ের। দিন শেষে রাতের আধাঁর নেমে এলো। এমন অনেকে। একদিকে কান্নার রোল অন্যপাশে লাশের ঢ়ের। সারা দেশে চলেছিল নির্যাতন, নিপীড়ন। দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু মেলে না শহীদদের লাশ। কে কোথায় কিভাবে মরে আছে কে জানে। চারদিকে শুধু লাশ আর লাশ। প্রাণহীন স্বজনেরা খুঁজছিল তাদের প্রাণের টুকরাকে। কে জানে কোন নদীর কোলে শুয়ে ছিল তার প্রাণের টুকরা। কাঁতরাচ্ছিল সেও স্বজনের খোঁজে। মৃত্যুর আগে শেষবার দেখে যেতে চায় তার স্ত্রী-সন্তানদের প্রিয়মুখ খানি।
লাশের পঁচা গন্ধ চারদিকে। শকুন উড়ছিল আকাশে।
এমন নৃশংস হত্যাযজ্ঞ পৃথিবীর ইতিহাস বিরল!



মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আত্মারা খুঁজে ফেরে নিজের পরিবার পরিজনকে। কে কোথায় কিভাবে আছে? রাতে সখিনার বাবা ডাকছে “ওমা, সখিনা। ওঠ, আমি,তোর বাবা,আমি এখানে।আমার সারা দেহে গুলি মা। যন্ত্রনায় ঘুমোতে পারছিনা।” আধাঁরে সখিনা হাতরায় চারিদিকে। “কোথায়, বাবা তুমি কোথায়?” রাতভর রহমান অপলক নয়নে চেয়ে থাকে সখিনার দিকে.......। অনেক দিন পর বাবাকে পেয়েছে সখিনা। বাবা,বাবা,আমার বাবা! বুকে জড়িয়ে ধরে সখিনা, তুমি আর কোথাও যাবা না। বাবার সাথে রাতে কথা হয় সখিনার।“আমাকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় পাকিস্তানি ক্যাম্পে ,এক পাকিস্তানি সেনা বলে-তুম মুক্তি হ্যায়, মুক্তি। হ্যাম তুমহে মুক্তি দিলাঙ্গে, সারে উমরকে লিয়ে। রাইফেলের বেয়ানট দিয়ে আঘাত করে দু‘পায়ের পাতায়, চিৎকার করি বাঁচাও, বাঁচাও।” কাঁদতে কাঁদতে বলে রহমান। সখিনা হাত বাড়ায় বাবার দিকে কিন্তু শব্দ খুজে না পেয়ে বাবা বলে চিৎকার দিয়ে কাঁদতে শুরু করে। “এদেশী পাকিস্তানি দোঁসর জব্বার মিয়া বলে-রফিক মুক্তি হ্যায়, হুজুর, ও হ্যামে মারনা চাহে,উসকা দোস্ত লোগ ভি জয়বাংলা হ্যায়। পাক সেনা চিৎকার করে বলে-জয় বাংলা,গাড় মে ঘুসাড় দো। বলেই রাইফেলের বাট দিয়ে দু‘জন দু‘দিক থেকে বুকে পিঠে সমস্ত শরীরে আঘাত করে। সারা গায়ে ব্যাথ্যা ,মা ।” বাবার কষ্ট সখিনার সহ্য হয় না। সখিনা শুনতে চায় না আর....সখিনা চিৎকার করে বলে, “বাবা তোমার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছি না,আর বলো না ,বাবা।” চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে সখিনার। “এভাবে আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা, সাধারন মানুষকেও মেরেছে ঐ শয়তানরা। ওদের কান্না শুণতে পাই, মা। ওদের চিৎকার সমুদ্রের ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়ছে বারবার আমার কানে। আমি আর পারছি না ,মা ,আমাকে একটু শান্তি দে, শান্তি।” সখিনা, বাবার কাছে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হয় ,“ওদের বিচার হবেই এ বাংলার মাটিতে। তুমি শান্তিতে ঘুমাবে বাবা। তুমি থাকো আমার পাশে। আমাকে শক্তি দাও, বাবা।” সখিনা জেগে ওঠল। ওর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। রহমান ঘিরে রাখে মেয়েকে। একমাত্র মেয়ে তার। মা-বাবা হারা অনাথ শিশু তার। বাবার আত্ম চিৎকার সখিনার কানে র্মূহু র্মূহু বাজে।

সোনাখালী গ্রামে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, রহমানের বন্ধু কাজল ও কালা। অনেক বছর পর দেখা হল রহমানের সঙ্গে। কাজল, রহমানকে বলে,“বুকের ভিতর চিন চিন ব্যাথ্যা রে। ঘুম আসে না । কুঁকড়ে খাচ্ছে। দেখ, নিরবে নিভৃতে চোখের জল ফেলছে সকল মুক্তিযোদ্ধারা। যে মাটির জন্য প্রাণ বির্সজন, সেই মাটিতে শিকড় গেড়েছে ঐ নরপিসাচরা। এ মাটির রস, রূপ, গন্ধ কেড়ে নিতে চায় ঐ শকুনের দল।” রহমান, “চার দশক ধরে সব শহীদ আত্মারা একত্রিত হয়েছে। লাখ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা আজ রাজ পথে। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখর এ বাংলার পথ,ঘাট,মাঠ ,প্রান্তর, আকাশ-বাতাস, দিন-রাত,সাগর-নদী, ধান ক্ষেত,পাট ক্ষেত সব কিছু ,সর্বত্র। সারা দেশ থেকে লাখো শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা শ্লোগান মুখে জড়ো হচ্ছে শাহবাগে। আজ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মহাকালের মহামিলন ঘটবে।” কালা,“ওদের পায়ের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ওরা আসছে। ওরা আসছে। হাতে হাত বেঁধে। সারি সারি, দলেদলে, দলেদলে। শ্লোগান মুখে। তারা বিচার চায়, বিচার। কাঁদতে কাঁদতে চোখ শুকিয়ে গেছে, আজ পানি নাই দু‘চোখে। না ঘুমোতে ঘুমোতে আজ ঘুম নাই দু‘চোখে। আর হারানোর কিছু নাই। যা ছিল সব হারিয়েছে। যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ছুটে আসছে ওরা।” কাজল, কালাকে বলে,“দোস্ত, যারা আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল, আমাদের স্বাধীনতা হরণ করতে চেয়েছিল,আমাদের জমিনের ফসল কেড়ে নিয়েছে, রক্তে রঞ্জিত করেছে এ মাতৃভূমি। ওরা শান্তিতে নাইরে। আগুনে জ্বলছে সে‘থেকে। অন্যের ক্ষতি করলে নিজের ভাল হয় না। আল্লাহ বিচার করে।” রহমান,“এ দেশে জন্মে যারা দেশের মাটির সাথে বেঈমানী করছে তাদের ক্ষমা নাই।” রহমান, দেখ মা (সখিনাকে),“চারদিকে শহীদদের আত্মা আর আত্মা। তিল পরিমাণ ঠাঁই নাই কোথাও। এ মাটির রং, রূপ, রস ও গন্ধে যারা মাতাল। যারা এর স্বাধীনতায় বিশ্বাসী । যারা বাংলা মায়ের প্রাণের ভাষায় কথা বলতে চায়। তার প্রত্যেকটি প্রাণ আজ জেগেছে। জেগেছে বীরেরা দেখ।”“ প্রতিটি প্রাণ আজ দুলছে হাওয়ায়। সুবাস বইছে এ মাটির। ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলে বাংলা মায়ের আঁচল জুড়ে আছে তার বীর সন্তানরা। অনাদী কাল প্রর্যন্ত ওরা পাহারা দিবে এ মাটির সর্ন্মাম ও স্বাধীনতা রক্ষায়। তাদের কষ্ট আজ কষ্টি পাথর। শোক আজ শক্তিতে পরিণত।” সখিনা মিছিলের মাঝে বাবার হাতে হাত রেখে চলছে। সখিনার মুখে শ্লোগান আর শ্লোগান। রহমান, সখিনার মুখের দিকে তাকিয়ে বলছে,“লাখো মুক্তিযোদ্ধা আজ কোটী কোটী প্রাণে প্রাণময়।” মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিতা শহীদ নারী কুলসুম, লিলি, রূপা, শেফলি, ময়না, জরিনা সবাই আজ শাহবাগে। বিচার না হওয়া প্রর্যন্ত ওরা ফিরবে না,ওরা ফিরবে না আজ। ধর্ষিতারা আজ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নরপিসাচের বিচার চাই। এ মাটির মুক্তি চাই।

শ্লোগানে মুখরিত শহীদ আত্মারা সারি বেঁধে বেঁধে রাজপথ ধরে চলছে বিচারালয়ের দিকে। নরপিসাচ রাজাকারের বিচারের দাবিতে,ধর্ষিতারাও চলছে। আত্মাদের আত্মচিৎকারে বিচারালয়ের প্রতিটি ভিত কেঁপে উঠছে। থর থর করে কাঁপছে বিচারালয়। ধর্ষিতা শহীদ লিলি বিচারকের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে আঙ্গুল উচিয়ে চিৎকার করে বলছে “ঐ কামরুল রাজাকার আমাকে জোর করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি ক্যাম্পে। দশ-বারো জন সেনাসহ ঐ নরঘাতক আমার হাত-পা বেধে পাশবিক নির্যাতন করেছে,আমি ব্যাথায় ,যন্ত্রণায় ছট ফট করে কত কাকুতি মিনতি করেছি,ওরা উল্লাসে ফেটে পরেছে আমার নগ্ন শরীরে। যৌন হিং¯্রতায় ক্ষত-বিক্ষত করেছে প্রতিটি অঙ্গ। আমাকে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে নরপিসাচরা উল্লাসে মেতে ওঠে হাত-পা বাধা নয়-দশ বছরের মেয়েদের বিবস্ত্র করে উন্মাদের মত কামনায় ঝাপিয়ে পড়ে সবাই। বাচ্চা মেয়েদের বাঁচাও, বাঁচাও গগণভেদী চিৎকারে আল্লার আঁড়শ কেপে উঠেছিল সে দিন।” চোখের কালো বন্ধনীভিজে অশ্রু ঝরছে ফোটা ফোটায় দ-ায়মান মুর্ত্তির। ধর্ষিতার জবানবন্দি শুণে বিচারালয়ের প্রতিটি ভিত যেন লজ্জায় ক্ষোভে ভেঙ্গে পড়তে চায়। নরপিসাচ, দালাল কামরুল রাজাকারের মৃত্যু নিশ্চিত করতে চায়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কাজল কাঠ গড়ায় দাড়িয়ে মহামান্য বিচারককে বলছেন ,“জব্বার কমান্ডার তার গ্রুপ নিয়ে, সোনাখালী, জীবনভিটা ও সাতনাও গ্রামের পর গ্রাম লুটপাট করে হিন্দু-মুসলমানদের ঘর-বাড়িতে আগুন দিয়েছে। পাকিস্তানি বাহিনীদের সাথে ও আমাদেরকে গুলি করে মেরেছে। এখন ধর্মের লেবাশ পড়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। অপবিত্র করছে আমাদের পবিত্র মাতৃভূ্িম । মিথ্যাবাদী, দেশদ্রোহী ও। এ মাটিতে ওর কোন স্থান নাই।” লাখ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা বিচারালয়ে সাক্ষীর কাঠগড়ায়। তিল পরিমান ঠাঁই নেই কোথাও। সবার এক সুর “ রাজাকারের ফাঁসি চাই,ফাঁসি চাই। রাজাকার নিপাক যাক, নিপাক যাক।” রহমান,“ প্রতিশোধ, প্রতিশোধের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে শহীদরা।” সখিনা “ যতদিন রবে এ হায়েনার দল ততদিন ফিরে আসবে বাংলার বীর সন্তান।
বাংলার মাটি, বাংলার জল,বাংলার আকাশ, বাংলার বায়ু, মুক্তি পাক,মুক্তি পাক। চিরজীবী হোক বাংলার বীর সন্তান। চিরজীবী হোক।”

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৫৯

শহিদুল বলেছেন: রাজাকার নিপাত যাক
বাংলার মাটি মুক্তি পাক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.