নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাব্যগ্রন্থ : ট্রাফিক সিগন্যালে প্রজাপতি, না গৃহী না সন্ন্যাসী; \nরম্যগল্পগ্রন্থ : কান্না হাসি রম্য রাশি। \nছোটদের বই : রহস্যে ঘেরা রেইনফরেস্ট \nইতিহাস গ্রন্থ: শেরে বাংলা ও যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন কিছু দুষ্প্রাপ্য দলিল

তরুন ইউসুফ

ভিজলে বলিস ই্চ্ছেমত তোর শরীরে স্নান হবো

তরুন ইউসুফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারত, গরুজবাই এবং ধর্মীয় সন্ত্রাস

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৫

বহুদিন আগে প্রানের কবি, প্রনয়ের কবি চণ্ডীদাস গেয়েছিলেন
‘শোন হে মানুষ ভাই
সবার উপরে মানুষ সত্য
তাহার উপরে নাই’
যুগে যুগে অনেক মহাপুরুষ এসেছেন, অনেক জ্ঞানী গুণী, কবিসাহিত্যিক এসেছেন তাদের বেশির ভাগই মানুষকে এই সত্য অনুধাবন করানোর চেষ্টা করেছেন যে, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। কিছু মানুষ সেই সত্য অনুধাবন করেছে এবং সেই সত্যকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। আবার কিছু মানুষ সেই সত্য থেকে দূরে চলে গিয়ে নিজেদের স্বার্থ, মত, পথ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মানুষের মধ্যে বিভেদের সৃষ্টি করেছে। যার ফলশ্রুতিতে মানুষে মানুষে হানাহানির সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ একত্রিত না হয়ে বিভিন্ন কিছুর ভিত্তিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। মানুষ যে সকল বিষয় নিয়ে বিভাজিত হয়েছে তার অন্যতম হল ধর্ম। অথচ পৃথিবীতে ধর্ম এসেছিল মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য। অশান্ত পৃথিবীকে শান্ত করার জন্য। মানুষের মধ্যে প্রকৃত মানুষ সত্বা জাগ্রত করার জন্য। হয়ত সাময়িকভাবে ধর্ম সে কাজটি করতে পেরেছিল। কিন্তু একদল মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করেছে। এক ধর্মকে অন্য ধর্ম থেকে নিকৃষ্ট হিসেবে প্রকাশ করেছে। এক ধর্মের মানুষকে অন্য ধর্মের মানুষের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে এবং সৃষ্টি হয়েছে ধর্মীয় হানাহানি। পৃথিবীর অনেক যুদ্ধের ইতিহাস ঘাঁটলে বোঝা যায়, সেই যুদ্ধগুলির অন্যতম কারণ ছিল ধর্ম। সুতরাং ধর্মের নামে সহিংসতা অতিতেও ছিল এবং বর্তমানেও খুব ভালভাবেই তা আমাদের মধ্যে বিরাজ করছে। তার অন্যতম উদাহরণ নিম্ন উল্লিখিত ঘটনা। ৩০/৯/২০১৫ তারিখের দৈনিক প্রথম আলোর আন্তর্জাতিক পাতায় একটি খবরের দিকে লক্ষ্য করুন। খবরটির শিরোনাম ছিল “গরু নিয়ে বিবাদ, প্রাণ গেল বৃদ্ধের”। ঘটনাটি ঘটেছে দিল্লীর খুব কাছের বিসাদা গ্রামে। বিস্তারিত খবরে যেটুকু জানা যায়, একজন লোকের গরু হারানকে কেন্দ্র করে গুজব ওঠে কোরবানি উপলক্ষে সেই গরুটি আখলাক নামের এক ব্যাক্তি জবাই করেছে। এই গুজবের প্রেক্ষিতে কিছু লোক সেই বাড়িতে হামলা চালায় এবং আখলাক কে পিটিয়ে মেরে ফেলে। অথচ পরে প্রমানিত হয় যে মাংসকে তারা গরুর মাংস হিসেবে দাবি করেছিল তা আসলে ছাগলের মাংস। মাংস গরুর না ছাগলের সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হল একটি প্রানি হত্যার গুজবকে পুঁজি করে একটা ধর্মীয় সন্ত্রাসীর দল একজন মানুষকে খুন করল তা আধুনিক সময়ের অন্যতম লজ্জা। এটা ভারতের মত বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের লজ্জাও বটে। ধর্ম মতে গরু হিন্দুদের কাছে আদরণীয় এবং গো হত্যা নিষেধ। হিন্দু ধরমালম্বিদের কাছে গরুর মাহাত্ব তাই অনেক। অন্যদিকে মুসলমানদের অন্যতম খাদ্য গরু। যেহেতু ভারত নিজেকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে সে হিসেবে সবার সমান অধিকার আছে তার নিজস্ব মতামত নিয়ে বেঁচে থাকা। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে এ কথা বলা যায় ভারত সরকার সেই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্রিটিশ আমল থেকেই এ অঞ্চলে হিন্দু মুসলিম দ্বন্দ চলে আসছে। ব্রিটিশরা রাজনৈতিক ভাবে কোণঠাসা করার জন্য যে ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি করেছিল তারই ধারাবাহিকতায় অনেক রাজনৈতিক দল ধর্মীয় সুড়সুড়িকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করছে। ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি তার অন্যতম উদাহরণ। শুরু থেকেই বিজেপি কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল। তাদের অনেক নেতা প্রকাশ্যে অন্য ধর্ম বিশেষ করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয় যা হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার অন্যতম কারণ। বিজেপি সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম ঘোষণা ছিল তারা ক্ষমতায় এলে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠা করবে এবং ভারতে গরু জবাই নিষিদ্ধ করে দিবে। ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গরু জবাইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এবং এর প্রেক্ষিতে অনেক সহিংস ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। আমি আগেই উল্লেখ করেছি ভারত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের দাবিদার। ইসলাম সেখানকার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ভারতে বর্তমানে ১৭২ মিলিয়নের উপরে মুসলমান আছে যাদের অন্যতম খাদ্য গরুর মাংস। শুধু মুসলমানই নয় খ্রিস্টান সহ বেশ কিছু উপজাতির খাদ্য এই গরুর মাংস। এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা না করে বিজেপি শুধুমাত্র রাজনৈতিক ভোটে বিজয়ী হওয়ার জন্য খুব নির্লজ্জ ভাবে হিন্দু ধর্মকে ব্যবহার করেছে যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সখ্যালঘুদের উপর। দিল্লীর বিসাদা গ্রামে ঘটে যাওয়া ঘটনা তারই উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বিশ্বায়নের এই যুগে কোন ঘটনা ঘটলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পরে। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর উপর এর প্রভাব যে পরবে না তা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতেও ধর্মীয় লেবাসধারী সুবিধাবাদীর দল সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। এই ঘটনা তাদেরকে সে সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারে যা এই অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলবে। অর্থাৎ ধর্মীয় অনুভূতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করা খুব ঘৃণ্য একটি কাজ যা বাড়ছে বলেই প্রতিয়মান হয়। অথচ একটি দেশ কিংবা দেশের সরকার কখনও কোন নির্দিষ্ট ধর্ম কিংবা মতামতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। কারণ সেখানে বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ গোত্র এমনকি বিভিন্ন মতামতের মানুষ বাস করে। যদি ধর্মের ভিত্তিতে তা প্রতিষ্ঠিত হয় তবে তাতে সংখ্যালঘু মানুষদের নিগৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। দিল্লিতে যে ঘটনা ঘটেছে তা যে আর ঘটবে না তা বলা যাচ্ছে না। আর এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তা করও জন্যই সুফল বয়ে নিয়ে আসবে না। তাই ভারত সরকারের উচিত হবে কঠোর হস্তে এইসব ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের দমন করা। সর্বোপরি এগিয়ে আসতে হবে ভারতের শান্তিপ্রিয় প্রগতিশীল জনগণকে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর কোন একটা লেখায় লিখেছিলেন ধর্মের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক গরু শুয়োরের ভিত্তিতে বিভক্ত হওয়া। এ সম্বন্ধে নির্মলেন্দু গুণের কসাই নামক সুন্দর একটি কবিতা আছে। কবিতাটি এরকম
একদিন এক বিজ্ঞ কসাই
বলল হেসে এই যে মসাই
বলুন দেখি, পাঠা কেন হিন্দুরা খায়
গরু কেন মুসলিমে?

আমি বললাম সে অনেক কথা
ফ্রেশ করে তা লিখতে হবে
কর্ণফুলীর এক রিমে।

কসাই শুনে মিষ্টি হাসে
বেশ বলেছেন খাঁটি
আমি কিন্তু একি ছোড়ায়
এই দুটোকেই কাটি।

পরিশেষে বলতে চাই মানুষের প্রকৃত ধর্ম মানবতা এবং সেই মানবতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলের উচিত হানাহানি বন্ধ করে মানবজাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.