নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাব্যগ্রন্থ : ট্রাফিক সিগন্যালে প্রজাপতি, না গৃহী না সন্ন্যাসী; \nরম্যগল্পগ্রন্থ : কান্না হাসি রম্য রাশি। \nছোটদের বই : রহস্যে ঘেরা রেইনফরেস্ট \nইতিহাস গ্রন্থ: শেরে বাংলা ও যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন কিছু দুষ্প্রাপ্য দলিল

তরুন ইউসুফ

ভিজলে বলিস ই্চ্ছেমত তোর শরীরে স্নান হবো

তরুন ইউসুফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘোটক শক্তি মালিশ তৈল

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩১


ইদানিং পথে ঘাটে, আনাচে কানাচে, গলির মোড়ে হারবাল ঔষধের পোস্টারের প্রাচুর্য বেশ চোখে পড়ে।বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোস্টার সাধারণত ভোটের সময় কিংবা বিশেষ বিশেষ কোন দিবসে দেয়ালে সাটাতে দেখা যায়। কিন্তু এই হারবাল দাওয়াখানা এবং হারবাল ঔষধের পোস্টার সারাবছরই দেয়ালে সাটা থাকে। বেশ রঙ্গিন তথ্য সমৃদ্ধ সব পোস্টার। বিভিন্ন ঔষধের সব রোমহর্ষক বিজ্ঞাপন। নিচে ফোন নামাবার সহ দাওয়াখানার ঠিকানা। মাঝে মাঝে সেখানে অমুক কবিরাজ তমুক কবিরাজের যোগ্যতা সহ নাম ঠিকানা। পাশাপাশি চব্বিশ ঘণ্টায় ফলাফল এবং বিফলে মূল্য ফেরতের আশ্বাস।
পোস্টারের শুরু হয় আল্লাহ সর্বশক্তিমান লেখা দিয়ে। তারপর একে একে ঔষধের বর্ণনা। প্রথমেই ধরুন লেখা আছে বডি গোল্ড যা বাংলায় অর্থ দাঁড়ায় শরীর সোনা। পাশে সালমান খানের গগস পরা আদুল গায়ের ফটো। নিচে ছোট ছোট অক্ষরে লেখা সুন্দর পেশীবহুল স্বাস্থ্যের জন্য আজই সেবন করুন। এক ফাইলই যথেষ্ট। ভাবখানা এমন বডি গোল্ড খান সালমান খান হয়ে যান।
ধীরে ধীরে জটিল কঠিন পুরাতন এবং গোপন রোগের সব ঔষধ। পুরাতন জ্বর পুরাতন, আমশয়, জন্ডিস উইথ ভাইরাস, মাঝে মাঝে ক্যানসার। কি এক বিচিত্র কারনে এখানে নতুন এবং সহজ রোগের কোন ঔষধ পাওয়া যায় না। সব ওষুধই জটিল, কঠিন এবং পুরাতন রোগের।
এরপর শুরু হয় গোপন রোগের বর্ণনা এবং দাওয়াই। অমুক দুর্বলতা তমুক দুর্বলতা। সংসারে অশান্তি, উত্থানেও এবং পতন দ্রুত। ছোট বড় বাকা ত্যাড়া হাবিজাবি। হার্নিয়া, গনোরিয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি এলাহি কারবার। আর এদের পোস্টার দেখে মনে হয় এইসব আন্ডারগ্রাউন্ডের রোগ ছাড়া পৃথিবীতে আর কোন রোগ নেই।
গেল রোগের বর্ণনা এবার দাওইয়াই। দু প্রকার দাওয়াই। পিল এবং মালিশ। পাওয়ার পিল টাইপের কোন নাম থাকে। আর মালিশের একটা কমন নাম যেটা সব পোস্টারেই লক্ষ্য করা যায়। হর্স পাওয়ার ম্যাসাজ অয়েল। বাংলায় যার অর্থ দাঁড়ায় ঘোটক শক্তি মালিশ তৈল। বুঝলাম না মানুষ হয়ে ঘোটক শক্তির কি দরকার। ঘোড়ার দরকার হর্স পাওয়ার মানুষের দরকার ম্যানপাওয়ার।কারন আমদের দেশে ম্যান আছে তো পাওয়ার নেই পাওয়ার আছে তো ম্যান নেই।দুটা একসাথে হয়না বলেই ম্যানপাওয়ারের বড্ড অভাব। ম্যানপাওয়ার ম্যাসাজ অয়েল হলেও সেক্ষেত্রে একটা কথা ছিল। তা না হয়ে হল হর্স পাওয়ার। যাই হোক হয়তবা কারন একটা আছে এবং সেটা গুপ্ত কোন কারণ যা আমাদের বোধের বাইরে।
গুপ্ত, সুপ্ত আভ্যন্তরীণ যে কারণই থাক পোস্টার গুলো কিন্ত গুপ্ত নয়। যেখানে সেখানে চোখের সামনে সাটা থাকে। আগে একসময় যখন বাংলা ছিনেমায় অশ্লীলতার জয়জয়কার ছিল (দুষ্টু ছেলেদের ভাষায় স্বর্ণযুগ)তখন ছিনেমার পোস্টার দেখে ভীষণ বিব্রত হতে হত। বিশেষ করে সাথে কোন মুরুব্ববি থাকলে। সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হত সাথে কোন মেয়ে থাকলে। সে পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেলেও তার স্থান দখল করে নিয়েছে এইসব হারবাল চিকিৎসা এবং ওষুধের বিজ্ঞাপন সম্বলিত পোস্টার। শুধু তাই নায় কিছু জায়গা আছে যেখানে লিফলেট বিতরণ করা হয় কিংবা ছুড়ে মারা হয়। ময়মনসিংহ শহরের শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ মোড় সেরকম একটি জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পরতাম শহরে যেতে কিংবা বাড়িতে যেতে ও পথ দিয়েই যাওয়া আসা করতে হত। রিকশায় যেতে অনেক সময়ই এইসব পোস্টার কোলের উপর এসে পরত। বন্ধুবান্ধব থাকলে না হয় এক কথা কিন্তু সাথে যদি মুরুব্বি কিংবা মেয়েবন্ধু থাকে তাহলে কি অবস্থা একটু কল্পনা করুন এবং এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমাকে বেশ কয়েকবার পরতে হয়েছে। আমি জানি না এখন সেখানকার কি অবস্থা। আমার মনে হয় অবস্থা আজও অপরিবর্তিত আছে। আমার বিশ্বাস সারা বাংলাদেশের প্রায় সব শহর এবং শহরতলীতে এইসব হারবাল ওষুধের বিজ্ঞাপনের অত্যাচার সহ্য করতে হয়।
হারবাল ওষুধের প্রচারণা সম্বন্ধীয় ছোটবেলার কিছু স্মৃতি আছে। আমি তখন পরিবারের সাথে সবেমাত্র আমাদের মফঃস্বল শহর সলঙ্গাতে বসবাস শুরু করেছি। আমদের সলঙ্গা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে বড় হাট বসে। সলঙ্গার হাট নামে পরিচিত। সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। সোমবার এবং বৃহস্পতিবার। সোমবার বসে প্রধান হাট। সেই হাটে দেখতাম হকাররা বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে আসত। কেউ আনত জোঁকের তেল, কেউ সান্ডার তেল (গুইসাপের মত দেখতে। হকারদের ভাষায় মরুভূমির প্রাণী।) কেউ বিভিন্ন সালসা, কিংবা হালুয়া জাতীয় কিছু একটা। লোক জমানোর জন্য হকাররা প্রথমে সাপের খেলা, ম্যাজিক ইত্যাদি দেখাত। কেউ কেউ আবার বিভিন্ন ধরনের মজার মজার কৌতুক বলত। যে যাই দেখাক কিংবা বলুক না কেন শেষের দিকে কিছু একটা আকর্ষণ রেখে দিয়ে ওষুধ বিক্রি শুরু করত। হাঁটুর ব্যাথা, মাজার ব্যাথা, চুলকানি, গোপন রোগের ঔষধ। ওষুধ বিক্রির সময়ও অনেক ঐতিহাসিক ডায়লগ পাওয়া যেত। যেমন চুলকাইতে চুলকাইতে প্যান্টের পকেট ছিঁড়া ফালাইছেন... কিংবা বাঘের মত ধরবেন সিংহের মত পিষবেন এইসব আর কি! প্রথম প্রথম কেউ ওষুধ নিতে চাইত না। কিন্তু একজন নেয়া শুরু করলে দেখা যেত অনেকে ওষুধ কেনা শুরু করেছে।ওষুধ বেচা শেষ হলে আকর্ষণ আকর্ষণই থেকে যেত। সেই সময়ে হারবাল এই জাতীয় হারবাল ওষুধের এত প্রাতিষ্ঠানিক প্রচার ছিল না। শুধু যেসব জায়গায় হাট বসত সেসব জায়গায় এদের কার্যক্রম লক্ষ্য করা যেত।সময়ের সাথে সাথে যেহেতু চিকিৎসা শাস্ত্রের উন্নতি হয়েছে সেহেতু হারবাল চিকিৎসা নামের এই ধরণের প্রতারণা কমে যাওয়ার কথা ছিল।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এসব তো কমেই নি বরঞ্চ যা ছিল ছিন্নমূল হকারদের লোক ঠকানো ব্যাবসা তা আজ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। এসবের মুল কারন শিক্ষার অভাব। অবশ্য এসব নিয়ে আফসোস করে লাভ নেই। এটা বার ভূতের দেশ। যে যার মত লুটেপুটে খাচ্ছে।মানুষের দিকে নজর দিবে কে! মানুষের মুল্য এখানে সবচেয়ে কম। কারণ এখানে প্রচুর দোপায়া জানোয়ার আছে শুধু মানুষ নেই। সে জানোয়ার গুলোকে মানুষ বানানোর জন্য যে মানুষ দরকার সেটাও নেই। সুতরাং এখানে মানুষ হারবাল খাবে না কার বাল খাবে তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে।





মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৪

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব সুন্দর একটা লেখা। লেখটা পড়ে যেমন মজা পেয়েছি তেমনই এটার দৌড়াত্ব পীড়া দেয়। যেখানে সেখানে পোস্টার দেখা যায়। পোস্টার তো মামুলী, অনেক টিভি চ্যানেল সেসবের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে। বিভিন্ন আংটি, তেল ইত্যাদি। এসব দেখলে মনে হয় বিষ খাই। সেসব বিজ্ঞাপনে আবার দেশের বিভিন্ন নামকরা অভিনেতাকে আসএ দেখা যায়!
শিক্ষার আসলেই যে কত বেশি অভাব এদেশে, এগুল দেখলেই বোঝা যায়

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৩

তরুন ইউসুফ বলেছেন: ধন্যবাদ। আসলেই প্রকৃত শিক্ষার বড়ই অভাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.