নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ তার মুক্তির জন্য, অধিকারের জন্য মানুষের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে পারে, প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে পারে। কিন্তু প্রকৃতি যদি আমাদের বদ্ধ করে, মুক্তির অধিকার কেড়ে নেয় তখন মানুষের কিছুই করার থাকে না। মানুষ একপ্রকার নিরুপায় হয়ে যায় তখন। না আন্দোলন করার উপায় থাকে, না উপায় থাকে কোন শক্তি প্রয়োগের। সরকার অর্থনীতি বাঁচাতে একপ্রকার সবকিছু খুলেই দিয়েছে। কিংবা কিছু কিছু সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছে মানুষের উপর। কিন্তু তারপরও অনেক মানুষ, অনেক সমিতি, গোষ্ঠী কিংবা অনেক এলাকা নিজেদের সিদ্ধান্তে সবকিছু বন্ধ করে ঘরে আছে কারন প্রকৃতি এখনও মানুষকে বাইরে বের হওয়ার জন্য মত দেয়নি কিংবা সুযোগ বা সুবিধা দেয়নি। তাই আমরা ঘর থেকে বের হতে পারছি না। কেউ কেউ অবশ্য বের হচ্ছে। কেউ প্রয়োজনে, কেউবা অপ্রয়োজনে। তারা অনেকেই প্রকৃতির সৃষ্ট একটি অদৃশ্য শত্রু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের মাধ্যমে আরও অনেকেই ঘরে থেকে আক্রান্ত হচ্ছে। কেউ কেউ মারা যাচ্ছে।
আজ প্রায় দু মাস হল ঘরে বদ্ধ আছি। এরমধ্যে হাতেগোনা তিনদিন বের হয়েছি বাজার করার জন্য। কিছু জিনিস আছে যেগুলো কিনতেই হয়। সেগুলো কিনেছি পাড়ার মুদি দোকান থেকে। আর সবজি কিনেছি গলির মধ্যে বসা ভ্যান থেকে। সুতরাং বাইরের বিচরণও বাসা থেকে সর্বোচ্চ তিনশ গজ। তারপর ফিরে এসে নয়শ স্কয়ার ফিটের তিনকামড়ার ফ্লাট। বদ্ধ ঘরের পৃথিবী। বদ্ধ থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে মনে হয় চিৎকার করি। কিন্তু কার উদ্দেশ্যে এই চিৎকার করব। প্রকৃতির উদ্দেশ্যে? কিন্তু প্রকৃতি আমার এই চিৎকার শুনবে না। কিংবা শুনলেও আমার এই চিৎকারকে সে ভয় বা পরোয়া করে না। আমাকে বদ্ধ রাখার জন্য প্রকৃতির কোন অনুশোচনাও নেই। কারন প্রকৃতি চলে প্রকৃতির নিয়মে। আমার চিৎকারের নিয়মে বা ইচ্ছার নিয়মে প্রকৃতি চলে না। তাই চিৎকার থুতু গেলার মত গিলে চুপচাপ জানালার ধারে বসি। জানালার ধারে বসে আকাশে মনের আনন্দে ঝাঁক বেধে ওড়া পাখিদের দিকে তাকিয়ে থাকি। আকাশে পাখিদের ওড়ার অবাধ স্বাধীনতা। প্রকৃতির বাধা নেই করোনার ভয় নেই। কি সৌভাগ্য পাখিদের!
বছর দুয়েক আগে একবার আমার আর আমার স্ত্রীর শখ চাপল পাখি পোষার। শখ মেটানোর খায়েশে কাটাবন থেকে কাকাতুয়া প্রজাতির পাখি কিনে আনলাম। সাথে পাখির জন্য খাঁচা। নিজের শখ মেটাতে আকাশের পাখিকে খাঁচায় বদ্ধ করলাম। কিন্তু সে পাখি না খাবার খায় না খায় পানি। না খেলে তো মারা যাবে। প্রাণী বিজ্ঞানী এক বড় ভাইয়ের সাথে পরামর্শ মোতাবেক হাতে তুলে খাবার আর পানি খাওয়ানোর চেষ্টা করলাম সেই পাখিকে। কিন্তু পাখিকে খাওয়াতে গেলে পাখি ভয় পেয়ে কামড়ে হাতের চামড়া তুলে নেয়। এভাবে সপ্তাহ খানেক বাদে পাখিটা মারা গেল । অথবা বলা যায় বদ্ধ করে আমি একটা পাখিকে হত্যা করলাম। বদ্ধ না করলে তো পাখিটি মারা যেত না। কিছুদিন আগে পত্রিকার খবরে
দেখলাম শরীয়তপুরের এক এলাকায় বিষ দিয়ে অনেকগুলো বানরকে কারা যেন হত্যা করেছে। কারা বলতে মানুষেরা হত্যা করেছে।
ফ্রেডরিখ নিৎশে তার উইল টু পাওয়ার নামক দার্শনিক গ্রন্থে মনুষ্য চরিত্রের ক্ষমতালিপ্সু অত্যাচারি দিক খানিকটা উন্মোচন করেছেন। উইল টু পাওয়ার অনুযায়ী,
” আমরা প্রকৃতিতে মজা পাই গাছের ডাল ভেঙ্গে, পাহাড়ের পাথর খুলে নিয়ে, বন্য পশুদের সঙ্গে লড়াই করে তাদের খুঁচিয়ে মেরে, যেন আমরা বুঝতে পারি আমাদের শক্তি ও ক্ষমতার কথা । আমাদের কাছে ভাল কী? ভাল তাই যা কিছু ক্ষমতা থাকার বোধকে বাড়ায়। মন্দ কী? তাই যা কিছু দুর্বলতা থেকে আসে। সুখ কী? সুখ এই বোধ যে ক্ষমতা বাড়ছে, সেই জ্ঞান যে, আরেকটা পথের বাঁধা দূর হল।”
অর্থাৎ আমাদের মজা, ভাল-মন্দ, সুখ সমস্ত কিছুই নির্ভর করছে আমাদের ক্ষমতা কতটুকু তার উপর এবং সেই ক্ষমতা দিয়ে প্রকৃতির উপর শাসন কয়েম করে অত্যাচার করতে পারছি কি না, তার উপর। এরকম ক্ষমতালিপ্সু হন্তারক হয়েও আমরা মানুষেরা নিজেদের আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে ঘোষনা করেছি । তারপর আমরা আমাদের শক্তি, বুদ্ধি (কুবুদ্ধি) দিয়ে পাখি, বানরসহ আরো অনেক প্রাণীকে হত্যা করছি নিয়ত। আমাদের কাছে আমরা ছাড়া প্রকৃতির বাকি প্রাণ প্রকৃতির কোন মূল্য নেই। তবে প্রকৃতি কিন্তু ভারসাম্য পছন্দ করে। প্রকৃতির কাছে তার প্রত্যেকটি উপাদান সমান গুরুত্ব বহন করে। তাই প্রকৃতি তার ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে যদি দেখে পাখি বানর কিংবা অন্য প্রাণ প্রকৃতির তুলনায় মানুষের সংখ্যা বেশি হয়ে গেছে তখন প্রকৃতি তার ভারসাম্য রক্ষা করতে মানুষের সংখ্যা কমাতে বাধ্য হবে। আমাদের, বুদ্ধি, কুবুদ্ধি, প্রযুক্তি সব যে প্রকৃতির কাছে নস্যি, সেটা নিশ্চয়ই করোনা দিয়েই বুঝতে পেরেছি। আমরা কোন শক্তি দিয়েই প্রকৃতির সাথে পেরে উঠব না এটা চিরন্তন সত্য।
তাহলে আমরা প্রকৃতির উপর যে অত্যাচার করেছি, যে সকল নিরীহ পাখিকে, বানরকে, প্রাণীকে হত্যা করেছি প্রকৃতি কি সেইসকল প্রাণীর হয়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে আমাদের উপর? প্রকৃতি আমাদের হাড়ে হাড়ে টের পাওয়াচ্ছে খাঁচার পাখির মত বদ্ধ হয়ে জীবন কাটানো কতটা যন্ত্রনার।
জানালা দিয়ে প্রতিদিন আকাশের দিকে তাকাই। সুনীল আকাশের, বিশাল আকাশের একটা ছোট অংশ দেখা যায় মাত্র। অবিরত আকাশ দেখার অধিকার আমি বা আমাদের এই মুহূর্তে নেই। আমাদের পূর্ব পুরুষ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যতটা অন্যায় করেছি জীব হয়ে জীবের প্রতি, প্রকৃতির অংশ হয়ে প্রকৃতির প্রতি এমনকি মানুষ হয়ে মানুষের প্রতি সেই সকল অন্যায়ের, পাপের প্রতিশোধ তিল তিল করে প্রকৃতি আমাদের উপর নিচ্ছে। চিৎকার করে কোন লাভ নেই। চিৎকার গিলে তাই নিশ্চুপ হয়ে থাকি। এটা আমরা নিশ্চয়ই বুঝেছি যে, মানুষের বাঁচার জন্যই প্রকৃতির প্রতি মানুষের হিংস্রতার অবসান হওয়া খুব জরুরি। তাই মনে মনে বলি আগামীর সুস্থ পৃথিবীতে হিংস্রতার অবসান ঘটিয়ে আমরা মানবিক হব।
১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:৪১
তরুন ইউসুফ বলেছেন:
২| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:১০
চাঁদগাজী বলেছেন:
লিখছেন লেখেন, আপনার ভাবনাচিন্তা এখনো কিশোর বয়সের মতো, ভাবনার সমন্ময় হচ্ছে না এখনো।
১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৫৬
তরুন ইউসুফ বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৮ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
নেওয়াজ আলি বলেছেন: আমজনতা সবসময় দেশের মঙ্গল চায়।
১৩ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:৩৩
তরুন ইউসুফ বলেছেন: ঠিক বলেছেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ১:২৯
রাজীব নুর বলেছেন: স্ত্রী জাতির শখের শেষ নেই। অর্থনীতির সুত্রের মতো তাদের চাহিদা। কোনো দিন তাদের চাহিদা শেষ হবার নয়।