![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে সরকারের নীরবতার কঠোর সমালোচনা করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। গতকাল মঙ্গলবার স্বাধীনতা দিবসে প্রজন্ম চত্বরে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার বিশাল সমাবেশে উদ্যোক্তারা বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকারকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া হলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, জাগরণ মঞ্চের দাবিকে পাশ কাটিয়ে সরকার গণদাবিকে অশ্রদ্ধা করছে। গণজারণ মঞ্চ কোনো দলের নয়, ১৬ কোটি মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। তাই জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের গণদাবি সরকারকে মানতেই হবে। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করুন। জল ঘোলা করবেন না। গণজারণ মঞ্চের পক্ষ থেকে তিনি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আগামী ৪ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানসহ সংসদ অভিমুখে পদযাত্রা। এ ছাড়া প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাবেশের কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা-জনতার এ সমাবেশে দ্বিতীয়পর্বে তরুণ প্রজন্মের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন মুক্তিযোদ্ধারা। আর তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে আলোর প্রদীপ তুলে দেওয়া হয়।
সমাবেশে ইমরান বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করাসহ সুস্পষ্টভাবে ছয় দফা দাবি জানানো হয়েছিল। ২৬ মার্চের মধ্যে দাবি পূরণের আলটিমেটামও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলো, এ ব্যাপারে সরকারের টনক নড়েনি। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়নি। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে স্থায়ী রূপ দেওয়া হয়নি। এসব গণদাবি উপেক্ষা করার নজিরবিহীন স্পর্ধা দেখিয়েছে সরকার। এ ঘটনা চেতনার গণআন্দোলনকে অশ্রদ্ধা করার শামিল। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, জামায়াত কি এ দেশে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাবে? তাদের নিষিদ্ধ করার জন্য ২০০৯ সালের রিট আবেদনটি যথেষ্ট নয়? সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি
করে তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। যেমনভাবে ২০০৯ সালে হিযবুত তাহ্রীরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ করে যুদ্ধাপরাধীদের গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ার পরও ধর্মীয় উস্কানিদাতা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। তিনি আরও বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে আইনে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা থাকলেও সরকার পানি ঘোলা করছে। অথচ ব্লগাররা কে কি লিখছে তা জানতে কমিটি করেছে। কিন্তু এভাবে পাশ কাটিয়ে গণদাবিকে উপেক্ষা করে থাকা যাবে না। তিনি আরও বলেন, ১৯৭৩ সালের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট সংশোধন করলেও সরকার অন্যান্য গণদাবি বাস্তবায়ন না করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ইমরান বলেন, 'আপনি আমাদের বেদনার জায়গাটি বুঝবেন। আমরা যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। এ দাবি পূরণ না করে আমরা ঘরে ফিরে যাব না।' যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও তা কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।
এর আগে 'আলটিমেটাম শেষ হলো, সরকার কী করল'_ স্লোগানে উচ্চকিত মুক্তিযোদ্ধা-জনতার সমাবেশের প্রথম পর্বে বিকেল ৪টা থেকে বক্তব্য রাখেন ছাত্র নেতারা। মাগরিবের নামাজের পর সন্ধ্যায় বক্তব্য রাখেন দেশের প্রথম সারির মুক্তিযোদ্ধারা। এর পর রাতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন ডা. ইমরান এইচ সরকার। এসবের আগে বিকেল সোয়া ৩টায় চৈত্রের খরতাপ উপেক্ষা করে মূলমঞ্চে সারিগান পরিবেশন করে টাঙ্গাইলের বাহাদুর মিয়ার দল। সারি গানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-জনতার সমাবেশ শুরু হয়।
দুপুর থেকেই মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে যোগ দিতে থাকে বিভিন্ন সংগঠন। মিছিলকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা ছিল_ 'পার্লামেন্টে বিল আন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ কর'/'জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ চাই'/'ঘেরাও ঘেরাও ঘেরাও চাই'/'শাহবাগের গর্জন, জামায়াত-শিবির বর্জন' স্লোগান। মিছিলের সামনের ব্যানারে লেখা ছিল_ 'জামায়াতের অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য তদন্ত কমিশন গঠন কর, রাষ্ট্রায়ত্ত কর'।
বিপুলসংখ্যক মানুষ গতকালের সমাবেশে যোগ দেন। শাহবাগ মোড় থেকে চারুকলা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায় সমাবেশের বিস্তৃতি।
সমাবেশ শুরুর আগে দুপুর ১টায় পাবলিক লাইব্রেরির সামনে জমায়েত হয় আন্দোলনকারী ১৯টি সংগঠন। এই ১৯ সংগঠনের মধ্যে রয়েছে_ জাতীয় স্বার্থে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, গণরায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অধিকার মঞ্চ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্কোয়াড, আমরা শহীদ রুমী স্কোয়াড, জেগে আছি, বিক্ষুব্ধ নারী সমাজ, ফাঁসির মঞ্চ, মুভিয়ানা, রাস্তা, অর্বাক, ম্যাজিক মুভমেন্ট, বাঁশের কেল্লা, আহমদ ছফা রাষ্ট্রসভা-সর্বজন, আদিবাসী ফোরাম, সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও তীরন্দাজ।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি গণজাগরণ মঞ্চের মহাসমাবেশ থেকে জামায়াত নিষিদ্ধের প্রক্রিয়া শুরু করতে সরকারকে সময় বেঁধে দেয় গণজাগরণ মঞ্চ। বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলেও জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলো নিষিদ্ধ করার কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
সমাবেশে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, ছাত্রঐক্যের আহ্বায়ক সোহান সোবহান, ছাত্র সমিতির আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান খান, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি বাপ্পাদিত্য বসু, জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হোসাইন আহমেদ তফছির, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি এসএম শুভ, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি প্রবীর সাহা, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি আবদুর রউফ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান তমাল, ছাত্র সমিতির আহ্বায়ক জাহিদুর রহমান খান, বিপ্লবী ছাত্র সংহতির সভাপতি মীর রেজাউল আলম ও ছাত্র আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মনজুর রহমান মিঠু প্রমুখ বক্তৃতা করেন। ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের অন্যতম সংগঠক মারুফ রসূলের পরিচালনায় এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
১৪ নারী মুক্তিযোদ্ধার একাত্মতা :গণজাগরণ সমাবেশে একাত্মতা জানাতে মঙ্গলবার ১৪ নারী মুক্তিযোদ্ধা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে যোগ দেন। '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার এই নারী মুক্তিযোদ্ধারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে একাত্মতা জানাতে এখানে ছুটে আসেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু তাদের সবাইকে মঞ্চে পরিচয় করিয়ে দেন। সাফিনা লোহানীর সঙ্গে সিরাজগঞ্জ থেকে ১০ নারী মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে যোগদান করেন।
সিরাজগঞ্জের সেফহোম থেকে আসেন সূর্য বেগম, রাহেলা বেগম, করিমন বেগম, নূরজাহান বেগম, আয়েশা বেগম, রাজুবালা, শামসুন নাহার, রহিমা, জোসনা ও মাহেলা বেওয়া।
এছাড়া গোপালগঞ্জ থেকে শেখ ফাতেমা আলী, যশোর থেকে মোমেনা বেগম, নারিন্দা থেকে সাফিয়া বেগম, যশোর থেকে রাইসা বেগম গণজাগরণ মঞ্চে এসে সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ ের দাবিতে এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া হলো পতাকা : সন্ধ্যায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ নতুন প্রজন্মের ৪২ তরুণ-তরুণীর হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ইমরান এইচ সরকারের হাতে পতাকা ?তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এ কে খন্দকার। তরুণ প্রজন্মের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা-জনতা মহাসমাবেশে আসা সব মুক্তিযোদ্ধার হাতে প্রদীপ তুলে দেন গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকরা। এ সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে' গানটি পরিবেশন করা হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল (অব.) কেএম সফিউল্লাহ, লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হেলাল মোর্শেদ চৌধুরী, নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, সাইফুল ইসলাম রঞ্জু, রাহেলা বেগম, সৈয়দ মো. সামসুল কুতুব প্রমুখ।
আকাশে উড়ল ৪২ ফানুস : রাতে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে স্বাধীনতার ৪২তম বার্ষিকী উপলক্ষে রাত ৮টায় সমাবেশস্থল থেকে ৪২টি ফানুস ওড়ানো হয়। আকাশে আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে দূর দিগন্তের পানে একের পর এক ফানুস পাড়ি দিতে থাকে। উপস্থিত ছাত্র-জনতা হাততালি দিয়ে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করেন।
কর্মসূচি : যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধসহ ৬ দফা দাবিতে আগামী ৪ এপ্রিল সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। ওই দিন সকাল ১১টায় গণজাগরণ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি পেশ করা হবে। একই সময়ে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ৩১ মার্চ সকাল ১১টায় সংসদ অভিমুখে গণপদযাত্রা বের হবে প্রজন্ম চত্বর থেকে। এ পদযাত্রা থেকে সারাদেশ থেকে সংগৃহীত গণস্বাক্ষর সংবলিত দাবিনামা তুলে দেওয়া হবে জাতীয় সংসদের স্পিকারের হাতে। প্রজন্ম চত্বরে ৫ এপ্রিল বিকেল ৪টায় প্রতিবাদী অনুষ্ঠান এবং ৬ এপ্রিল বিকেল ৪টায় সমাবেশ কর্মসূচিরও ডাক দিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।
তবে এ কর্মসূচি ঘোষণার সময় সমাবেশের একটি অংশ থেকে 'ঘেরাও-ঘেরাও' স্লোগান ওঠে, যা থামাতে সমাবেশ মঞ্চ থেকে সংগঠকদের বেগ পেতে হয়। স্লোগানকারীরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার দাবি জানান।
©somewhere in net ltd.