নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দ্য েস্লভ

দ্য েস্লভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

২য় বিবাহ

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৩১




ভাবছি দ্বিতীয় স্ত্রী বিষয়টা কেমন?
“কেন? আমি কি খারাপ? আমি কি যথেষ্ট ভালো নই? না, না,না!
আমি কখনোই দ্বিতীয় একজন স্ত্রীকে মেনে নিতে পারি না।
যদি তুমি আরেকজন মহিলাকে বিয়ে করতে চাও, তো করো; কিন্তু
মনে রেখো ফিরে এসে তুমি আমাকে আর
এখানে দেখতে পাবে না।”

এইতো ক’ বছর আগে ঠিক এ কথাগুলোই আমি বলেছিলাম, যখন
আমার স্বামীর মুখে শুনলাম যে তিনি দ্বিতীয়
বিয়ে করতে আগ্রহী। যাকে বিয়ে করতে চাচ্ছিলেন,
তিনি ছিলেন সদ্য-তালাকপ্রাপ্ত,৪ সন্তানের মা। খুব
কষ্টেসৃষ্টে নাকি দিন কাটছিলো উনাদের। আমার স্বামী বললো,
তাদের অবস্থা এতোটাই শোচনীয় যে দুপুর হলে তার বাচ্চাদের
জন্য কোথা থেকে খাবার আসবে সেটাও নাকি তার জানা নেই।
আমি বললাম, কেন? ওদের বাবা কোথায়? সে কি নিজের
বাচ্চাদের দেখাশোনা করতে পারছে না? তুমি একজন বাইরের
মানুষ হয়ে কেন অন্য এক লোকের বোঝা টেনে বেড়াতে যাবে?
নিশ্চয়ই উনাকে সাহায্য করার আরও অনেক উপায় আছে।
তুমি চাইলে তাকে আর্থিকভাবে সাহায্য করতে পারো,
বিয়ে করার কী প্রয়োজন!

বহুবিবাহ মেনে নেওয়ার ব্যাপারটা আমি কল্পনাও
করতে পারছিলাম না! আমার স্বামীকে আরেকজন নারীর
সাথে ভাগাভাগি করতে হবে। তার ভালোবাসা, হাসি,
রসিকতা এগুলো আমি ছাড়াও আরেকজন নারী উপভোগ করবে?
সে আমাকে ছাড়াও আরেকজন নারীকে স্পর্শ করবে, আর
তাকে ভালোবাসার কথা শোনাবে! অসম্ভব।
এটা মেনে নেওয়া যায় না। চরম ক্ষোভ, দুঃখ, আর অপমানের
জ্বালায় আমি নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। আমি ওর
জন্যে কী না হইনি? একজন স্ত্রী, প্রেমিকা, মা, ডাক্তার, গৃহিণী।
আমি ওর তিনটা বাচ্চার মা! কীভাবে পারলো ও
আমাকে এতোটা অপমান করতে?

মনে হচ্ছিলো আমি হয়তো বেশি ভালো না বা বেশি সুন্দরী না
কিংবা অল্পবয়সী না। কিংবা শুধু আমি যেন ওর জন্য যথেষ্ট ই না!
এজন্যই দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলছে..
নাহ্। আমি মেনে নিতে পারলাম না, তখনই ওকে আমার সিদ্ধান্ত
স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলাম। তীব্র কণ্ঠে বলে উঠলাম, যদি কোন
দ্বিতীয় স্ত্রী এই বাড়িতে ঢোকে, তাহলে আমি বেরিয়ে যাব।
যদি ও অন্য এক নারীর জন্য আমাদের বিয়ে, সন্তান, আর জীবনের
ঝুঁকি নিতে চায়, তো নিক। কিন্তু আমি এসব সহ্য করবো না।
মনে হচ্ছে যেন কতোকাল আগের কথা বলছি! এমন এক সময়ের
কথা যখন আমি ভেবেছিলাম এ জীবনটা অনন্তকাল
ধরে চলতে থাকবে, যেন কোনদিনও শেষ হবে না..। যেন কখনও
কিচ্ছু বদলে যাবে না, বদলাতে পারে না। কিন্তু
অদ্ভুতভাবে সবকিছুই বদলে গেলো।

আমার স্বামী অবশ্য দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি। আমার অতো শত
হুমকি আর ওকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলার পরে বহুবিবাহের
কথা আর ধোপে টেকে নি। আমি জানিনা সেই মহিলা ও তার
বাচ্চাগুলোর শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিলো। বোধ হয় ওরা সবাই অন্য
কোন এক শহরে চলে যায়।

এরপর আমার স্বামী আর কখনোই দ্বিতীয় স্ত্রী কথাটি উচ্চারণ
করেন নি, যার কারণে আমিও খুব খুশি। নিজের
স্বামীকে ধরে রাখতে পেরেছি সেই আনন্দে আত্মহারা! কিন্তু
তখনও জানতাম না আমাদের সময় খুব শীঘ্রই ফুরিয়ে আসছে..।
ওর জীবনের শেষ কথাগুলো ছিলো – ওর খুব মাথা ধরেছে, ইশার
সালাহর আগ পর্যন্ত নাকি শুয়ে থাকবে। হায়! ওর আর
সে রাতে ইশার সালাহ আদায় করা হয় নি, কারণ ওর সে ঘুম আর
ভাঙেনি। সে রাতেই উনি মারা যান। ওর
আচমকা মৃত্যুকে আমি পুরো হতবিহ্বল হয়ে পরি! যে মানুষটার
সাথে আমি আমার সারাটা জীবন কাটিয়েছি, তাকে এক মুহূর্তের
মাঝে আমার থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো! এরপর কতোকাল
ধরে যে ওর জন্য কেঁদেছি তা কেউ জানেনা.. হয়তো বা এক
মহাকাল জুড়ে …

সে সময় কোনকিছু দেখাশোনা করে রাখার মতো অবস্থা আমার
ছিল না। অযত্নে অবহেলাতে একে একে সব হারাতে শুরু করলাম।
প্রথমে আমাদের গাড়ি, এরপর দোকান, এরপর বাড়ি।
শেষমেষ আমার তিন সন্তান আর আমি – আমরা সবাই আমার
ভাইয়ের বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। হঠাৎ এতোগুলো মানুষের
উপস্থিতিতে ওদের বাড়িটা গিজগিজ করতো। আমার ভাবীও
দিনে দিনে অতীষ্ট হয়ে উঠছিলেন। খুব ইচ্ছে হতো ঐ
বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাই। সে সময় আমার দরকার ছিল
একটি চাকরি, কিন্তু আমার কোন দক্ষতা ছিল না। বয়সও
হয়ে গিয়েছে। কিছু শিখে চাকরি করতে পারার মতো বয়স ছিল
না। কিন্তু মানুষের দয়ায় এভাবে কতোদিন
মাথা গুঁজে পড়ে থাকা যায়? নিজেদের জন্য
একটি আলাদা বাসার প্রয়োজন খুব বেশি করে অনুভব করছিলাম।
যখন আমার স্বামী বেঁচে ছিলেন, আমরা কতো আরামে ছিলাম!
ঘরের বাইরে যেয়ে কাজ করার প্রয়োজনই ছিল না, তাই
নিজেকে কোন বিষয়ে পারদর্শী করে তোলাও জরুরি মনে হয় নি।
কিন্তু উনি চলে যাওয়ার পরে জীবন এতো কঠিন হয়ে গিয়েছিলো!
আমি প্রতিটা দিন উনার অভাব বোধ করতাম, হৃদয়ের প্রতিটা অংশ
দিয়ে উনাকে খুঁজে ফিরতাম। কী করে মানুষের জীবন
এতো ভয়ানকভাবে পাল্টে যায়?

এভাবেই দিন কাটছিলো। হঠাৎ একদিন আমার ভাই
আমাকে ডেকে তার পরিচিত এক ভাইয়ের কথা বললেন। সেই ভাই
নাকি বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন। ভালো মানুষ, চমৎকার আচার
ব্যবহার, আর অনেক দ্বীনদার। আমার জন্যে নাকি খুব মানাবে!
কিন্তু উনি চান আমি উনার দ্বিতীয় স্ত্রী হই।
আমার জীবনে দ্বিতীয় বারের মতো দ্বিতীয় স্ত্রী কথাটি শুনলাম,
কিন্তু এবারে পরিস্থিতি কতো ভিন্ন!
উনি আমাকে দেখতে একদিন আমার ভাইয়ের বাসায় এলেন।
ক্ষণিকের মাঝেই যেন আমাদের মধ্যে কী একটা হয়ে গেলো!
অবিশ্বাস্য ভাবে আমার উনাকে খুব পছন্দ হয়ে গেলো, উনার
প্রতিটা ব্যাপারই খুব ভালো লাগছিলো। উনি আমাকে বললেন,
তার প্রথম স্ত্রী জানেন যে তিনি দ্বিতীয় বিয়েতে আগ্রহী, আর
স্পষ্টতই সে এর বিপক্ষে। তিনি এটাও বললেন যে, দ্বিতীয়
স্ত্রী হিসেবে একজনকে খুঁজে পেয়েছেন জানলে উনার স্ত্রীর
প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে সেটা তার জানা নেই; তবে উনার
স্ত্রীর বহুবিবাহ মেনে নেওয়ার ওপরই এখন উনার চূড়ান্ত জবাব
নির্ভর করছে।

সে রাতে আমি ইস্তিখারা সালাত আদায় করলাম। আমি পাগলের
মতো চাইছিলাম যেন বিয়েটা ঠিকঠাক হয়ে যায়! আমার
মনে পড়লো, অনেক বছর আগে আরেকজন নারীর জীবনও ঠিক এরকম
করেই আমার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছিলো। মনে পড়ে গেলো,
আমি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। হঠাৎ
করে অনুতাপে পুড়ে যাওয়ার মতো একটা উপলব্ধি হলো। আমার
মনে হচ্ছিলো আমি আমার জীবনে আরেকজন নারীকে স্থান দেই
নি, তাহলে আল্লাহ কেন আমাকে আরেকজন নারীর জীবনে স্থান
নেওয়ার সুযোগ দেবেন? নিশ্চয়ই আল্লাহ
তা’আলা আমাকে শাস্তি দেবেন। আমি ক্ষমা চাইতে থাকলাম।
অবাক লাগছিলো! জীবনে একবারও আমার
মনে হলো না যে আমি যে কাজটি করছি তা কতোটা ভুল?
আমি সবসময় ভেবে এসেছি যে এমন করাটাই সঠিক কাজ ছিল।
আমি আমার সম্পদকে, আমার জিনিসকে আগলে রাখছি –
এতে সমস্যা কোথায়? কিন্তু এখন যখন আমার অবস্থান
পাল্টে গেছে, প্রয়োজনটা যখন এবার আমার, তখন
আমি বুঝতে পারলাম কতোটা ভুল-ই না আমি ছিলাম!
আমি আরেকজন নারীর স্বামী পাবার অধিকারকে অস্বীকার
করছিলাম।

আমি দু’আ করতে থাকলাম যেন উনার স্ত্রী আমাকে মেনে নেন..।
কয়েকদিন পর উনি আমাকে ফোন করলেন। বললেন, উনার স্ত্রীর
এটা মেনে নিতে খুবই কষ্ট হচ্ছে, তবুও তিনি আমার
সাথে দেখা করতে আগ্রহী।
দেখা করতে গেলাম। খুব চিন্তা হচ্ছিলো। সেদিন আল্লাহর
কাছে অনেক দু’আ করলাম আর বললাম – হে আল্লাহ,
আমাকে সাহায্য করো! যখন তাকে দেখলাম, বুঝতে পারলাম,
সে ঠিক আমার মতোই একজন। আমার মতোই একজন নারী। একজন
স্ত্রী যে তার স্বামীকে খুব ভালোবাসে, যে তার
স্বামীকে হারাতে ভয় পায়!
তার চোখগুলোয় বেদনা ছলছল করছিলো। সে আমার হাত
দুটো ধরে বললো: “বোন, আমার জন্য
এটা মেনে নেওয়া কী যে কঠিন! তাও দু’আ করি যেন আমরা দু’ জন
বোনের মতো থাকতে পারি।”

উনার কথায় আমার হৃদয় ভেঙে গেলো! আমার এই কঠিন সময়ে শুধু
এটুকুই লাগতো- একটি সখ্যতার হাত যে আমাকে বুকে টেনে নেবে,
আমাকে আশা দেবে, বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা ফিরিয়ে আনবে।
উনার স্ত্রীর জন্য সেটুকু পেলাম।
উনার স্ত্রী আমার জীবনে এমন একজন নারীর দৃষ্টান্ত, যেমন
নারী আমি নিজে কখনো হতে পারি নি। আমি উনার
প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকবো। একসময় ভাবতাম কেউ
কারো স্বামীকে নিশ্চয়ই আমার
মতো করে এতো বেশি ভালোবাসতে পারে নি। কিন্তু উনার
স্ত্রীকে দেখে ধারণাটি বদলে গেলো। এই মানুষটির কাছ থেকেই
শিখতে পারলাম নিঃস্বার্থ ভালোবাসার আসল পরিচয়।

:সংগৃহীত

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৪৫

কাহাফ বলেছেন:
অন্যের চোখে নিজেকে দেখলে স্বীয় দোষ-ত্রুটি সহজে খুজে পাওয়া যায়!
শিক্ষণীয় গল্পের জন্যে ধন্যবাদ..................

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১৭

নতুন বলেছেন: এই বোধ সবার থাকলে সমাজ খুবই সুন্দর হইতো..

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২০

সরদার হারুন বলেছেন: বিয়ের নাম নাকি দিল্লীর লাড্ডু যে খায় সে পস্তায় আবার যে না খায় সেও পস্তায় ।

+++++

৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২২

কলমের কালি শেষ বলেছেন: হুম দিলদরদের গল্প ভাল লাগলো । +++

৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫৪

টুম্পা মনি বলেছেন: হুম সুন্দর

৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৩

ইয়াশফিশামসইকবাল বলেছেন: আহ, যদি আমিও ২য় বিয়ে করার সুযোগ পেতাম!!

১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২০

দ্য েস্লভ বলেছেন: নারীদের মাথায় যে শিক্ষা ঢুকাইছে,তাতে পরকীয়া গনহারে চললেও ২য় বিয়ে অন্তত বৈধ হবেনা। ২য় বিয়ে হবে প্রস্তর যুগের ব্যাপার ....বোঝেন ঠ্যালা...

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৩

দ্য েস্লভ বলেছেন: :)

৭| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৬

 বলেছেন: সুন্দর++++++++ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.