![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে যারা ‘মমি’ শব্দটির সাথে পরিচিত নন, তা বিশ্বের যে প্রান্তেই হোকনা কেন। মমি শব্দটা মনে আসলেই চোখে ভেসে ওঠে মিসরের পিরামিড, মনে পরে ফেরাউনের নাম, ধু ধু মরুভুমি!! কিন্তু কোথায় নেই এই মমি? সাইবেরিয়া থেকে নিউজিল্যান্ড, পেরু থেকে চায়না, দক্ষিন আফ্রিকা থেকে উত্তর আমেরিকা, দুনিয়ার কোনায় কোনায় পাওয়া গেছে প্রাকৃতিক এবং ইচ্ছাকৃতভাবে সংরক্ষিত মমি। আমাদের দেশেও এমন হাজার হাজার মানুষ পাওয়া যাবে যাদের নাম 'মমি', তা সেটা মমি কি তা না জেনেই হোক, কিংবা নামের জনপ্রিয়তার কারনেই হোক!
মমি কিঃ
মমি হলো একটি মৃতদেহ যা মানবিক প্রযুক্তির মাধ্যমে অথবা প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস এবং হ্ময়প্রাপ্ত হওয়া থেকে রহ্মা করা হয়েছে কিংবা রক্ষা পেয়েছে।
কিংবা খুব সাধারনভাবে বললে,
মমি একটি মৃতদেহ (যেকোন প্রানী কিংবা মানুষের) যাকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা হয়েছে।
দুটি মিসরীয় প্রায় অবিকৃত মমি
মমি শব্দের উৎপত্তি
মমি শব্দটি মধ্যে যুগের লাতিন শব্দ 'mumia' থেকে এসেছে, যা আরবী শব্দ 'মুমিয়া' এবং পারস্য (ফার্সি) ভাষার 'মোম' (বাংলাতেও মোম, ইংরেজীতে যা 'Wax' ) থেকে আনা হয়েছে যার অর্থ হলো বিটুমিন।
প্রথম মমিকরনের উৎপত্তি
চিনচরোদের মমিঃ
মমি বলতে চোখের সামনে ভেসে ওঠে মিসরের মরুভূমি, পিরামিড আর ফারাও। কিন্তু মিসরীয়দের অনেক আগেই এই পদ্ধতি আয়ত্ব করেছিলো যারা, তারা উত্তর চিলি এবং দক্ষিণ পেরুর চিনচরো জাতি। মিসরীয় সভ্যতা শুরুর এক হাজার বছর আগে চিনচরো সভ্যতা লুপ্ত হয়ে যায়। উষ্ণ ও পানিহীন পরিবেশে ১০ হাজার বছরের পুরনো মানবদেহগুলো আজও অবিকৃত রয়েছে।
চিনচরো মমি
দক্ষিণ আমেরিকার ক্যামারোনাইস উপত্যকা থেকে পাওয়া একটি চিনচরো উপজাতির শিশুর মমিতে রেডিও কার্বন ডেটিং টেস্ট করে দেখা যায়, সে মমি তৈরি করা হয়েছে ৫ হাজার ৫০ পূর্বাব্দে, অর্থাৎ মিসরীয়দের থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে! মিসরীয়রা মমি বানানোর কৌশল রপ্ত করেছিল তিন হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে।
চিনচরোরা বসবাস করত সমুদ্রতীরে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে। তারা চাষাবাদ জানত না। তাদের খাদ্য ছিল শুধু সামুদ্রিক মাছ, সি-লায়নের মাংস। চিলির প্রাচীনতম মমির দেহের চারপাশে মিসরের মমির মতো মৃৎপাত্র, কাপড়-চোপড়, স্বর্ণালঙ্কার, অর্থকড়ি পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে মাছ ধরার সামগ্রীর মতো সাধারণ সব জিনিসপত্র।
মৃতদেহকে মমি বানানোর বিশেষ প্রক্রিয়া
চিনচরোদের মমিকরন পদ্ধতিঃ
চিনচরোদের মমি তৈরির পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত উন্নত। চিনচরোরা বিশ্বাস করত মৃত্যুতেই শেষ নয়, তারপরও থাকে আর এক জীবন। এই বিশ্বাস থেকেই মমি তৈরির শুরু। মিসরীয়রা যেখানে মমি করার সময় ব্যবহার করত কোনো অজ্ঞাত রাসায়নিক, সেখানে চিনচরোরা অবলম্বন করত এক ‘ইকো ফ্রেন্ডলি’ পদ্ধতি।
মমি তৈরির আগে তারা মৃতের হাত-পা কেটে গরম ছাই ঘষে শুকিয়ে ছোট কাঠি আর ঘাসের বাঁধনে শরীর পুনর্গঠন করত। তারপর মাথার খুলির ভেতর ঘাস, চুল আর ছাই ভরে চামড়া লাগিয়ে দেওয়া হতো। ঠিক যেমনভাবে আজকাল জীবজন্তুর দেহ ‘স্টাফ’ করা হয়। মৃতের নিজস্ব চামড়া ছাড়াও সিল ও পেলিকানের চামড়ায় মৃতদেহ ঢেকে দেওয়া হতো। শেষে মুখ ও শরীরে ছাইয়ের প্রলেপ দিয়ে লাল-কালো রংয়ে সাজানো হতো মমি। মাথায় লম্বা চুলে এদের অনেক জীবন্ত লাগত। তারপর মূর্তিপূজার মতো ওই স্টাফ করা দেহকে সামনে বসিয়ে সারা হতো মৃতের পারলৌকিক কাজকর্ম। মমি তৈরির পরপরই সেগুলোকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো না। কোনো কোনো মমির মুখে রঙের কয়েক রকমের প্রলেপ দেখা গেছে। কেন চিনচরো সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যায় তা স্পষ্ট নয়। তাদের অনেক ধর্মীয় আচার-আচরণ ইনকাদের ধর্মবিশ্বাসের মতো ছিল বলে গবেষকরা মনে করেন। চিনচরোদের মধ্যে উন্নত জীবনধারার প্রচলন ছিল এবং বিকশিত সভ্যতার প্রকাশ ঘটেছিল। সুনিপুণভাবে সংরক্ষিত এই মমিগুলোর নিদর্শন থেকে তা বুঝতে কষ্ট হয় না। কেন চিনচরো জনগোষ্ঠীর মধ্যে মমি তৈরির ধারণা জন্মায়, তার কারণ আজও অস্পষ্ট।
মিসরীয়দের পদ্ধতিঃ
মমিকরণ প্রক্রিয়ার শুরুর দিকে এর সাথে জড়িত ব্যক্তিরা মৃতদেহটিকে রজনে (গাছের আঠালো রস) সিক্ত পাটের কাপড় দিয়ে ভালোভাবে মুড়িয়ে দিতেন। এভাবে ব্যান্ডেজ করার ফলে মৃতদেহটি অনেকটা জীবিত মানুষের দেহাবয়ব পেলেও এর পচন প্রক্রিয়াকে ব্যান্ডেজ রোধ করতে পারেনি। ব্যান্ডেজের ভেতরে ঠিকই ব্যাকটেরিয়া থেকে যেত। একসময় মৃতদেহটি তাই কঙ্কালে পরিণত হয়ে যেত যা ছিলো একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে মিশরীয়রা বুঝতে পারে যে শরীরের ভেতরে থাকা অঙ্গগুলোর পচনই তাদের হতাশার মূল কারণ। তাই তারা শরীরের ভেতরের সেই অঙ্গগুলো অপসারণ করে মৃতদেহ সংরক্ষণের চমৎকার, বুদ্ধিদীপ্ত এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করে।
দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে প্রাচীন মিশরীয়রা মমি তৈরির একটি নির্দিষ্ট নিয়ম বের করেন। যা প্রাচীন ইতিহাসবিদ হেরোডেটাসের বর্ণনায় জানা যায়ঃ
মমিকরনের প্রধান কারিগর সাধারনত ছিলেন একজন পুরোহিত যিনি আনুবিসের মুখোশ পড়তেন। আনুবিস হলেন হলেন মিসরীয়দের শেয়ালমুখো মৃত্যু দেবতা। এই আনুবিস মমকরন প্রক্রিয়ার সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন যার কারনে এই মমকরন প্রক্রিয়া এবং সমাহিতকরনের সময় পুরোহিতরা আনুবিসের মুখোশ পড়তেন।
মমিকরনের ধারাবাহিক ধাপসমুহ পর্যায়ক্রমে সংক্ষেপে বললে অনেকটা এমন ছিলো। তবে এখানে কেবল ধনী রাজা রানীদের সবচেয়ে ব্য্যবহুল পদ্ধতির কথা বলা হচ্ছেঃ
১। একটী লোহার হুকের সাহায্যে নাকের ছিদ্র দিয়ে ব্রেন বের করে আনা।
২। পেটের কাছে বামদিকে কিছু জায়গা কেটে ছিদ্র করা।
৩। সমস্ত অভ্যন্তরীন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বের করে আনা।
৪। অভ্যন্তরীন অঙ্গ গুলোকে শুকাতে দেয়া।
৫। যকৃত, পাকস্থলী, ফুসফুস এসব অঙ্গসমুহকে বিশেষ পাত্রে সংরক্ষন।
৬। হৃদপিন্ডকে শরীরের ভেতর প্রতিস্থাপন করা।
৭। শরীরের অভ্যন্তর এলকোহল বা মদ এবং নানা মসলা দিয়ে পরিস্কার এবং পক্রিয়াজাত করা।
৮। দেহকে নেট্রন নামক প্রাকৃতিক লবন দিয়ে ৭০ দিন পর্যন্ত সংরক্ষন করা।
৯। ৪০ দিন পর দেহটা লিলেনের কাপড় অথবা বালু দিয়ে ভর্তি করা হত যাতে মানবাকৃতি পায়।
১০। ৭০ দিন পর পা থেকে মাথা পর্যন্ত লিলেনের কাপড় দিয়ে ব্যান্ডেজের মতো করে মুড়ানো হত।
১১। এরপর মমিটিকে স্যারকোফ্যাগাস নামের একধরনের কফিনে স্থানান্তিরিত করা হত।
নির্মম নিষ্ঠুর অদ্ভুত ভৌতিক চমৎকার সেই পদ্ধতিটির ধাপে ধাপে সচিত্র বর্ণনা
মৃতদেহকে মমি করার আগে শুরুতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হতো ‘ইবু (Ibu)’ বা বিশুদ্ধিকরণ স্থানে। এখানে দেহটিকে প্রথমে সুগন্ধযুক্ত তাড়ি (তালের রস থেকে তৈরি মদ) দিয়ে ধোয়া হতো। এরপর নীল নদের পানি দিয়ে দেহটিকে ভালোভাবে পরিষ্কার করা হতো।
নেট্রন পাউডার
নাক দিয়ে ব্রেন বের করে আনার পদ্ধতি
এখান থেকে দেহটিকে নিয়ে যাওয়া হতো ‘পার-নেফার (Per-Nefer)’ বা মমিকরণ কক্ষে। এখানেই মৃতদেহকে মমিতে পরিণত করার মূল কাজটি শুরু হতো। পার নেফারে নেবার পর দেহটিকে একটি কাঠের টেবিলের উপর রাখা হতো। এবার মৃতদেহকে পচনের হাত থেকে রক্ষার জন্য চলতো এর ভেতরের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অপসারণের কাজ। শুরু করা হতো মস্তিষ্ক দিয়ে। এজন্য তারা প্রথমে নাকের ভেতর দিয়ে তীক্ষ্ম কোনো কিছু একেবারে মাথার খুলি পর্যন্ত ঢুকিয়ে দিতো। এরপর লম্বা, লোহার তৈরি হুকের সাহায্যে তারা নাকের ভেতর দিয়েই পুরো মগজটুকু বের করে আনতো। বোঝাই যায় যে একটি হুক দিয়ে পুরো মগজ ঠিক মতো বের করে আনা সম্ভব নয়। তাই তারা এরপর লম্বা একটি চামচের সাহায্যে মগজের অবশিষ্টাংশ বের করে আনতো। মজার ব্যাপার হলো, মিশরীয়রা কিন্তু এত কসরত করে বের করা মগজ সংরক্ষণ করতো না। তারা আসলে বুঝে উঠতে পারেনি যে মগজ কী কাজে লাগে! তবে তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলো যে পরকালে এই মগজ আর কোনো কাজেই আসবে না!
এবার মমিকরণ প্রক্রিয়ায় জড়িত ব্যক্তিরা অবসিডিয়ান (Obsidian) নামক শক্ত পাথরে তৈরি ব্লেডের সাহায্যে মৃতের দেহের বাম পাশে পেটের উপরের দিকে অল্প জায়গা কেটে ফেলতেন। সেখান দিয়ে একে একে যকৃত, ফুসফুস, পাকস্থলী এবং অন্ত্র বের করে আনতেন তারা। প্রাচীন মিশরীয়রা মনে করতো হৃৎপিণ্ডই মানুষের সকল আবেগ আর অনুভূতির মূল কেন্দ্র। তাই শরীরের এই অংশটিকে তারা কিছু করতো না। পৃথক করা অংশগুলো ভালোমতো ধুয়ে, রজনের প্রলেপ দিয়ে, লিলেনের কাপড়ে পেঁচিয়ে এক বিশেষ ধরণের পাত্রে সংরক্ষণ করা হতো। এই পাত্রকে ‘ক্যানোপিক জার (Canopic Jar)’ বলা হয়ে থাকে। প্রাচীন মিশরের অধিবাসীদের মতে এই পাত্রগুলোতে সংরক্ষণ করা অঙ্গগুলো পরকালে মৃতব্যক্তির সঙ্গী হতো।
কয়েকটি ক্যানোপিক জার দেখে নেওয়া যাক (উপর থেকে নীচে):
(১) মানুষের মাথার মত জারটির নাম ইমসেটি যাতে যকৃত রাখা হতো।
(২) বেবুনের মাথার মতো দেখতে হাপি নামের জারে ফুসফুস রাখা হতো।
(৩) খেঁকশেয়ালের মাথার মতো দেখতে ডুয়ামুটেফ নামের জারে পাকস্থলী রাখা হতো।
(৪) বাজপাখির মাথার মতো দেখতে কেবহেসনুয়েফ নামের জারে অন্ত্র রাখা হতো।
এরপর শরীরের ভেতরের অঙ্গগুলো অপসারণের জন্য যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হলো পরিশুদ্ধির জন্য সেই জায়গাটি আবারো মদ দিয়ে ধুয়ে দেওয়া হতো। এরপর মৃতদেহকে যেন জীবিতের মতোই দেখায়, যেন চামড়া শুকিয়ে গেলে পেটের দিকে তা ভেতরে ঢুকে না যায় সেজন্য ফাঁকা জায়গাটি লিলেনের কাপড়, বালি, ধুপ এবং অন্যান্য পদার্থ দিয়ে ভরাট করে দেয়া হতো।
এবার পুরো দেহটিকে ন্যাট্রনে (Natron, এক ধরণের প্রাক্বৃতিক লবন) ঢেকে দেওয়া হতো। এই ন্যাট্রন চামড়ার রঙ খুব বেশি পরিবর্তন করা অথবা শক্ত করা ছাড়াই মৃতদেহের জলীয় পদার্থ শোষণ করে নিতো। দেহটিকে এভাবে ৩৫-৪০ (সর্বোচ্চ ৭০ দিন) দিন ন্যাট্রনের মাঝে রাখা হতো। এই সময়ের মাঝে দেহটি পুরোপুরি শুকিয়ে যেতো। তবে মৃতের দেহের গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তো বলে নানা রকম শবভূক প্রাণির আগমনও ঘটতো। এদের হাত থেকে মৃতদেহকে বাঁচাতে পাহারাদার নিযুক্ত করা হতো।
৪০ দিন পর দেহটি নিয়ে আসা হতো ‘ওয়াবেট (Wabet)’ বা বিশুদ্ধিকরণ ঘরে। এখানে এনে এতদিন ধরে মৃতের দেহের শূণ্যস্থান পূরণ করতে থাকা সব পদার্থ বের করে ফেলা হতো। এরপর সেই জায়গাটি ন্যাট্রন, রজনে সিক্ত কাপড় এবং অন্যান্য পদার্থ দিয়ে পূর্ণ করে দেয়া হতো। এরপর কাটা স্থানগুলো সেলাই করে আর্দ্রতা শোষণের জন্য পুরো শরীরের উপর রজনের আস্তরণ দেয়া হতো। এরপর শুরু হতো ব্যান্ডেজ দিয়ে দেহটিকে মুড়িয়ে দেওয়ার কাজ।
ব্যান্ডেজ করার পুরো প্রক্রিয়াটিই ছিলো বেশ জটিল এবং এজন্য প্রায় এক থেকে দু’সপ্তাহ সময় লেগে যেতো।
শুরু করা হতো মাথা ও গলা দিয়ে। এরপর একে একে হাত, পা এবং পুরো শরীরটিকে ব্যান্ডেজ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হতো। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আলাদা আলাদা করে ব্যান্ডেজ করা হয়ে গেলে পুরো শরীরটি আরেকবার ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো হতো। নতুন নতুন স্তর দেয়ার সময় সেগুলোর মাঝে রজনকে আঠা হিসেবে ব্যবহার করা হতো। রজনের ব্যবহার মিসরীয়রা জেনেই করতো সেটা বোঝা যায়। তারা রজনের এন্টিব্যাক্টেরিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতো কিংবা লক্ষ্য করেছিলো। এই ব্যান্ডেজ করার পুরো প্রক্রিয়াটির সময় মমিকরণে জড়িত লোকজন নানা মন্ত্র উচ্চারণ করতো আর মৃতের দেহে নানা মন্ত্রপূত কবচ ছড়িয়ে দিতো। হাত-পা একসাথে বেঁধে দেয়া হতো। হাতের মাঝে ‘বুক অফ ডেড’ থেকে সংগৃহীত প্যাপিরাসে লেখা মন্ত্র আটকানো থাকতো।
পুরো দেহটিকে ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো শেষ হলে শরীরের বিভিন্ন অংশে শক্ত খাঁচা আর মাথার অংশে একটি মুখোশ পড়িয়ে দেওয়া হতো। মুখোশটি দেখতে হয় মৃতের মুখের মতো অথবা কোনো মিশরীয় দেবতার মুখের মতো হতো। তাদের ভাষ্যমতে- এটি তাদের পরকালে যাত্রার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। এটি মৃতের আত্মাকে সঠিক দেহ খুঁজে বের করতে সাহায্য করতো।
মমি করা, খাঁচায় আবদ্ধ দেহটিকে এবার কফিনে অথবা স্যারকোফ্যাগাসে রেখে দেয়া হতো। মৃতব্যক্তির জন্য পরকালে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য, মূল্যবান গয়না, রত্ন ইত্যাদি দিয়ে দেওয়া হতো। এভাবেই শেষ হতো একটি মৃতদেহকে মমিতে পরিণত করার পুরো প্রক্রিয়াটি।
অনেক এবং অনেকটাই সময় বিরক্তি লুকিয়ে কেউ যদি এই পোস্টটি পড়ে শেষ করতে পারেন তবে সেইসব আদিভৌতিক, নিস্পাপ, নিরীহ, বাকরুদ্ধ মমিদের পক্ষ থেকে আপনাকে লাল সালাম জানাচ্ছি।
তথ্যসুত্র এবং ছবির উৎসঃ
উইকিপিডিয়া, মাইলার্নিং ডট অর্গ, এন্সিয়েন্ট ইজিপ্ট ডট কো ডট ইউকে, হাউ স্টাফস ওয়ার্ক ডট কম, ফেসবুক, বাংলাপিডিয়া, সমকাল, বাংলাদেশ টাইমস, পেরুভিয়ান ডট কম।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুন, ২০২১ রাত ২:০৯
শায়মা বলেছেন: মমি আমার কাছে এক রহস্য। এই নিকটাও।