নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঝরাপাতার কথাগুলো

খন্দকার সানাউল ইসলাম তিতাস

খন্দকার সানাউল ইসলাম তিতাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের চাকরী করার মানসিকতা প্রসঙ্গে

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:১০

বড় দুঃখে আজ লিখতে বসেছি। লিখতে বসেছি আমার সমাজ তথা আমার সমাজের মানুষের চিন্তা ভাবনা নিয়ে। প্রথমেই আমি একটা বিষয় পরিষ্কার করে নিতে চাই, আমি বাঙালি হিসেবে জন্ম নিয়ে গর্বিত। আমার মনে কোন হীনমন্যতা নেই, আরো যদি কোন জন্ম থাকে তবে সেই জন্মেও আমি বাঙালি হয়ে জন্মাতে চাই।
কিন্তু আমি হাজার বার প্রার্থনা করি সেই বিধাতার কাছে, যিনি আমাদের জন্ম মৃত্যু আর সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ কর্তা, আমার পরবর্তী জন্মে (যদি থাকে) আমাদের সমাজ যেন কিছুটা হলেও পরিবর্তন হয়। তখন যেন পরশ্রীকাতরতা বিলীন হয়ে যায় আমাদের সমাজের মানুষজনের মন থেকে, যেন পরের গোলামী করার মানসিকতার পরিবর্তন হয়। আমি বলছি সেই গোলামীর কথা যা আমাদের অন্তর আর মজ্জায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল ইংরেজরা, তাদের দুইশত বছরের শাসন আমলে।
তারা আমাদের গোলামী করতে শিখিয়েছে, শিখিয়েছে ব্যবসায় থেকে দূরে থাকতে, যেন আমরা চিরজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাই, কখনো আর শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়াতে না পারি। তারা এটা করেছিল নিজেদের স্বার্থে, সে সময়ের নিম্ন মানসিকতার কিছু মানুষকে দলে টেনে নিয়েছিল নির্বিঘ্নে ব্যবসায় করার জন্য। তারা তাদের সেই পা চাটা কুকুরদের শিখিয়েছিল কি করে ব্যবসায় না করে শুধু অন্যের হুকুম পালন করেই আয়েশি জীবন যাপন করা যায় নিদেনপক্ষে জীবন ধারণ করা যায়। বাঙ্গালিদের ব্যবসায়িক মানসিকতা ধ্বংস করে দেওয়া ছিল তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। ইংরেজরা আমাদের উপমহাদেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে আজ ৬৮ বছর, কিন্তু আমরা কি পেরেছি আমাদের সেই গোলামী করার ইচ্ছেটাকে দূর করতে?
পারিনি। আমাদের সমাজ এখনো ব্যবসায়কে ভাল চোখে দেখেনা। আমাদের স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে এখনো শেখানো হয় কি করে ভাল একটা চাকরি পাওয়া যায়। শেখানো হয় কি করে নিজে নূন্যতম ঝুঁকি না নিয়েই পরের মাথায় কাঁঠাল ভেঙ্গে খাওয়া যায়। এটা শেখানো হয়না যে কি করে নিজেই নিজের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণকারী হওয়া যায়, কি করে একটা ব্যবসায় দাড় করানো যায়, কারণ আমাদের সম্মানিত শিক্ষকরা এখনো শিক্ষকতা পেশাকে সেবা হিসেবে মেনে নিতে পারেননি, এখনো এটাকে সরকারের গোলামী হিসেবেই দেখেন। আমরা দূর থেকে যতই তাদেরকে মানুষ গড়ার কারিগর বলে থাকি, তারা কিন্তু তা ভাবেন না। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদেরকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি, কিন্তু তাদেরকে এই মনোভাব বদলাতে হবে। তাদেরকে এই মানসিকতা বদলাতে হবে নিজের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে। সব ছাত্রদের না হোক অন্তত নিজের সন্তানকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিন, যেন ছাত্র জীবন শেষ করে অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজেই কিছু একটা করতে পারে। আর অভিবাবকদের প্রতি অনুরোধ, নিজের সন্তানকে ছোট কিছু একটা করতে দেখার মানসিকতা তৈরি করুন। সবার ছেলেই শিক্ষক ডাক্তার কিংবা অন্য কিছু হতে পারবেনা, এটা মেনে নিন।সবচেয়ে বড় কথা, ঘুষকে ঘৃণা করতে শিখুন, তাহলেই সরকারী চাকরীর পিছনে দৌড়ানো বন্ধ হবে।
আমাদের অভিবাবকরা পনেরো লাখ টাকা দিয়ে সন্তানকে চাকরি দিতে পারেন, কিন্তু ব্যবসায় করার জন্য পনেরো টাকাও দিতে প্রস্তুত না। কেন এমনটা হবে? ঘুষ কি অনৈতিক নয়? শ্রদ্ধেয় বাবারা, কেন আপনাদের কষ্টে সঞ্চিত টাকা ব্যয় করছেন নিজের সন্তানকে অবৈধ ভাবে জীবনে প্রতিষ্টিত করতে? নিজের সন্তানকে একটিবার প্রশ্ন করুন, কি সে করতে চায়। কারণ, সবার কাছে সফলতার সংজ্ঞা এক না ও হতে পারে।
শিক্ষা জীবন শেষ করা ভাইদের প্রতি আমার অনুরোধ, আপনারা চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেই সৃষ্টিশীল চিন্তা করুন, ভাববেন না বিয়ে করার জন্য মেয়ে আপনি পাবেন। আপনার তৈরি করা একটা উদাহরণ আমাদের মত শত সহস্র যুবককে আপনাদের পিছন পানে চলতে সাহায্য করবে। একবার ভেবে দেখুন, একজন মুর্খ মানুষ যদি মুরগি, গরু কিংবা মাছের খামার করে স্বাবলম্বী হতে পারে, তবে আপনি আমার মত শিক্ষিত, আর পরিশ্রমী ছেলেরা কেন সফল হতে পারবনা?
আসুন না উদাহরণ তৈরী করি, ছোট ভাইদের জন্য, আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম আমাদের মনে রাখবে পথপ্রদর্শক হিসেবে। আমি আপনি না হয় ব্যর্থই হলাম, সফলতার একটা ইট তো জায়গামত বসিয়ে দিয়ে যাব! এটাই আমাদের সফলতা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৩

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: বেসরকারি সরকারি দুই জায়গাতেই চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বাস্তব কথা বলছি, কেউ মাইন্ড করবেন না। সরকারিতে সবার সমান সুযোগ থাকলেও বেসরকারিতে হাতে গোণা কয়েকটা ভার্সিটিকে শুধু সম্মান দেয়া হয়। আবার চাকরি দিলেও বেতন দেয় নামমাত্র বেতনে। আমি সদ্য এমবিএ পাশ করা অনভিজ্ঞ একাউন্টেন্ট হয়ে যা পেতাম আমার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স সাথে সিসি করা অভিজ্ঞ কলিগরা পেত তার অর্ধেক। বেশিরভাগই মেসে থেকে খেয়ে না খেয়ে চাকরি করছে। অথচ তারা যদি একটা মুদি দোকান খুলেও বসত চোখ বন্ধ করে এর চাইতে বেশি কামাতে পারতো। অনেকে বাপের জমি বিক্রি করে ঢাকায় থেকে পড়ালেখা করে সেলসে চাকরি করছে। অথচ সে জমিতে সবজি চাষ করলেই তার বর্তমান বেতনের চাইতে বেশি আয় হতো। তাহলে কেন তারা সস্তা চাকরির পেছনে ছুটে জীবন নষ্ট করছে? অনেকের ইচ্ছা আছে কিন্তু পাড়াপ্রতিবেশির নোংরা মানসিকতার কারণে পারছে না। আমার চাচার পোলট্রি আছে। ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে একবার আগুন দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল, সে যাত্রা বেচে গেছেন। এখন ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে কিন্তু লোকজন নাম দিয়েছে বদার ব্যাপারী (এই পদবীর কারণে তার বড় মেয়েকে বিয়ে দিতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল)। আসলে আমরা এক বিচ্ছিরি সমাজ ব্যবস্থায় বাস করছি। উচ্চ শিক্ষিতদের ভালো চাকরিও কেউ দিবে না আবার নিজে ব্যবসার উদ্যোগ নিলে তাতেও বাগড়া দিবে।

২| ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩২

খন্দকার সানাউল ইসলাম তিতাস বলেছেন: এই অবস্থার পরিবর্তন করতে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে

৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৯

এইচ তালুকদার বলেছেন: চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৬

খন্দকার সানাউল ইসলাম তিতাস বলেছেন: সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ

৪| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮

শোভন১ বলেছেন: শিক্ষা দুই রকমই জরুরী, ব্যবসা এবং চাকরির উপযোগী। ব্যবসা প্রতিস্ঠান চলবেনা যদি না সেখানে ভালো কর্মী থাকে, আবার মানুষ চাকরি পাবেনা যদি ভালো ব্যবসা প্রতিস্ঠান বেশি না থাকে। পন্যের ভালো বিক্রীর জন্যেওতো চাকরিজীবি দরকার, বেতন পাবে আর কিনবে :)। ব্যবসায় সবাই যেতে চায়না কারন ঝুঁকি নেয়ার ক্ষমতা বা পরিস্থিতি সবার থাকেনা। সল্প বেতনের একজন সরকারি কর্মচারী রিটায়ারমেন্টে গিয়ে হয়তো এককালীন কিছু টাকা পেয়েছে, এখন এটা সন্তানকে দেবে ব্যবসা করতে সেটা তার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ন। ঐ টাকাটা ইনভেস্ট করে যে আবার ফেরত আনতে পারবে তার কোন গ্যারান্টি নেই, এরচেয়ে ভালো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ, নিশ্চিত রিটার্ন আবার আসল টাকাটাও থাকলো, এজন্যই সঞ্চয়পত্রের এতো বিক্রী। ব্যবসায় ইনভেস্ট করলে হয়তো টাকাটা বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়ে ফেরত আসতে পারতো, কিন্তু তার গ্যারান্টি কি? এই টাকা গেলেতো তার আর কিছুই থাকবেনা, তখন সে কি করবে? কাজেই আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ যে এ ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহী হয়না তার জন্য তাদের দোষ দেয়া যাবেনা। তবে এটা ঠিক, যাদের গ্রামে জায়গা-জমি আছে, তাদের চাকরি না খুঁজে উৎপাদন মূলক ব্যবসায় আগ্রহী হওয়া উচিৎ, মধ্যস্বত্বভোগী টাইপের ব্যবসায়ী দেশের দরকার নাই। জমি বেঁচে চাকরির জন্য ঘুষ না দিয়ে ওখানে মাছ চাষ বা মুরগির ফার্ম করলেও এখন অনেক বেশি লাভজনক। এখানে ধরা খাবার সম্ভাবনাও কম, খেলেও জমিটাতো অন্তত থাকে, এখানে ঝুঁকি তুলনামূলক অনেক কম।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৩৫

খন্দকার সানাউল ইসলাম তিতাস বলেছেন: ভাই, আমি মুরগী কিংবা মাছ এর উদাহরণ দিয়েছি মাত্র, এসবই যে করতে হবে তা নয়। অনেককেই দেখি সঙ্গতি আছে, কিন্তু ছাত্রজীবন শেষ করে জুতার তলা ক্ষয় করে ফেলছে চাকরির জন্য। এখানেই আমার কষ্টটা, অন্যের প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাবার জন্য যদি এত পরিশ্রম করতে পারে তাহলে নিজের জন্য কেন করতে পারবেনা, তাদের তো অন্তত জেদ হওয়া উচিত, তারাতো জানে বেকারের কষ্ট কত, একবার কি তারা ভাবতে পারেনা যে আমি চাকরি খুঁজব না, চাকরি দিব?!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.