![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা যদি কোন ব্যক্তির সাবির্ক দিক বিবেচনা করতে যাই তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই ভাবতে হবে ব্যক্তিটি সুশিক্ষিত কিনা? ঠিক তদ্রুপ একটি জাতির ভালো ও মন্দ সার্বিক দিক বিবেচনা করতে আমাদের সামনে প্রথম যে প্রশ্নটি আসে, তা হল জাতিটি কতটুকু সুশিক্ষায় শিক্ষিত। অর্থাৎ যে জাতি যত বেশি সুশিক্ষা অর্জন করতে পারবে সেই জাতিহিসাবে তত বেশি ভদ্র, আদর্শবান, অন্যায়ের প্রতিবাদকারী, ন্যয়পরায়ন, ধর্মভীরু ও দূর্ণীতি মুক্ত হবে। এতে শুধু আমার না বরং অন্যান্য সকলের সন্দেহ থাকার কথা না। ইহা সামান্য কোন আশা থেকে নয় গভীর বিশ্বাস থেকে বলছি। সুশিক্ষা অর্জনের ফলে মানুয়ের শুধুমাত্র বাহ্যিক পরিবর্তন ঘটেনা, বাহ্যিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষিক চিন্তা- চেতনা ও বিবেক-বিবেচনারও পরিবর্তন ঘটে অনেক বেশি। পৃথিবীর আর দশটি চিরন্তন সত্য বাণীর মাঝে এটি একটি অন্যতম সত্য বাণী। এ সব অনেক পুরাতন কথা তাই মানুয় আর শুনতে চায় না। কারণ আমরা অর্থহীনভাবে সুশিক্ষার নামে এতো বেশি চিৎকার-চেচামেচি করেছি যে, এখন সুশিক্ষা শব্দটি শুনতে অথবা বলতে খারাপ লাগে। এটা অস্বাভাবিক কিছু না।
দুঃখজনক হলেও সত্য আমরা খুব অল্প সংখ্যক ব্যক্তি ব্যতিত অধিকাংশ ব্যক্তি জানিনা সুশিক্ষার সঙ্গে একজন আদর্শবান শিক্ষকের সম্পর্ক কতটুকু? অথবা আমরা কখনও জানতে চেষ্টা করিনা একজন আদর্শবান শিক্ষক ব্যতিত সুশিক্ষা সম্ভব না। আমরা যদি বুঝতে পারতাম জাতিকে সুশিক্ষিত করতে হলে আমাদের অবশ্যই আদর্শবান শিক্ষকগনদের মাধ্যমেই আমাদের সন্তানদের শিক্ষা প্রদান করতে হবে, তাহলে আমরা একজন আর্দশবান শিক্ষকের গুরুত্ব বুঝতাম। কিন্তুু আমাদের বুঝার ভুলের কারনে আমরা আজ পর্যন্ত উপলব্ধি করতে পারিনি যে, আমরা অথবা আমাদের সন্তানগণ কেন সুশিক্ষা অর্জন করতে পারিনি বা পারতেছিনা ?
আপনাদের মাঝে হয়তোবা অনেকের জানা আছে তারপরেও আপনাদের আবারও বলছি, এক মুচির নিকট হতে রাসূল (সাঃ) শুধুমাত্র একটি শিক্ষা অর্জন করেছিলেন তা হচ্ছে কুকুর যখন সাবালক হয় তখন সে একপা উপরে তুলে প্রসাব করে । শুধুমাত্র এতটুকু শিক্ষার কারনে রাসূল (সাঃ) পরবর্তীতে আর কোনদিন জুতা পায়ে মুচির বাড়িতে যাননি । এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে ছিলেন এই রাসূল (সাঃ)? এই প্রশ্নের উত্তর খুর সহজ মনে হলেও সত্যিকার অর্থে কিন্তু এতটা সহজ না। কারন এই মহামানব ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি যাকে উপাধি দেওয়া হয়েছিল, পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যত মহামানব এসেছিলেন এবং যত আদর্শবান শিক্ষকের জন্ম হয়েছিল ও ভবিষ্যতে যত মহামানব আসবেন এবং যত আদর্শবান শিক্ষক জন্ম নিবেন তারা সকলেই যে যে ধর্মেরই হোকনা কেন তিনি সবারই শিক্ষক। অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) সর্বকালের সর্বশেষ্ঠ শিক্ষক। সেই তিনি প্রমান করে গেছেন একজন শিক্ষকের মূল্য বা সম্মানের পরিমাণ কতটুকু এবং আরও দেখিয়ে গেছেন যে, একজন শিক্ষককে কিভাবে সম্মান করতে হয়। শিক্ষক ছোট হোক বা বড় হোক অথবা যে ধর্মেরই হোক না কেন সবকিছুর উর্ধ্বে শিক্ষকের সম্মান থাকে অটুট। কারন যিনি শিক্ষক তিনি স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমে শিক্ষক,বারান্দায় শিক্ষক,রাস্তা ও পথ-ঘাটেও শিক্ষক,সর্বশেষে তিনি যখন পৃথিবী ছেড়ে যাওযার জন্য শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ঠিক সেই মুহুর্তে তার গায়ে শিক্ষক নামটি অংকিত থাকে কলঙ্কহীন।
বলতে আমার কষ্ট হচ্ছে, তারপরেও আপনাদের বলছি, যে রাসূল (সাঃ) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক তিনি জুতা পায়ে মুচির বাড়িতে প্রবেশ করেননি সেখানে আজ আমরা পায়ের জুতাকে শিক্ষকের মুখে ছুড়তে সামান্য পরিমাণও দ্বিধা করিনা বা সামান্যতম অপরাধবোধ আমাদের মাঝে কাজ করে না। তাহলে আজ আমরা কোথায়? আমাদের অবস্থান সম্ভবত একেবারেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এবার আমাদেরকে সচেতন হওয়া দরকার। আজ আমরা সত্যি সত্যি শিক্ষককে সম্মান করতে ভুলে গেছি। আমাদের ধ্বংস অনিবার্য।
মনে হয় শিক্ষক ব্যতিত সবার গায়ে কিছুটা কাদাঁ লেগে যাচ্ছে শিক্ষককে সম্মান না করার জন্য অথবা শিক্ষককে অপমান করার অপরাধে। এই মুহুর্তে যে সকল ব্যক্তি নিজেকে অপরাধী ভাবতেছেন আমি তাদেরকে বলছি আমি শুধুমাত্র সত্য উম্মচনের চেষ্টা করেছিমাত্র,আমার উপর ক্ষিপ্ত হওয়াটা একেবারেই অর্থহীন। ইতোপূর্বে এই বিষয় নিয়ে কিছু সংখ্যক ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করেছিলাম কিন্তু তাদের মাঝে অনেকেই আমার বিরোধিতা করেছিলেন। তাদের ভাষ্য মতে, যুগের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাছাড়া রাসূল (সাঃ) ছিলেন এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব যাকে সৃষ্টি না করা হলে হয়তোবা পৃথিবী সৃষ্টি হতনা। সুতরাং তাঁহার সথে আমাদের তুলনা হয়না। আজ আমি তাদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছি, আমরা যারা স্কুল জীবন শেষ করে বড় বড় অফিসাড় হয়ে গেছি অথবা পড়াশুনা শেষ না করে বখে যাওয়াদের হাজিরা খাতায় নাম লিখিয়েছি ছাত্রজীবনে সবাই আমরা ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটি পড়েছিলাম কিন্তু বাস্তব জীবনে পুরোপুরি ভুলে গেছি। এটা শুধুমাত্র আমাদের ব্যর্থতা। সত্য বলতে কি আজ আর আমরা শিক্ষকদের সম্মান করতে চাই না, কিন্তু সেই কথা প্রকাশ্যে না বলে বিভিন্ন অজুহাতে তা এড়ানোর চেষ্টা করি। কারণ আমরা সত্য বলতে ভয় পাই। যেসকল ভদ্র ব্যক্তিগণ আমাকে বলেছিলেন যুগের পরির্বতন ঘটেছে অর্থাৎ নিজেদেরকে আধুনিযুগের মানুষ হিসেবে দাবি করেন তাদেরকে বলছি যে আধুনিকযুগ শিক্ষকদের সম্মান করতে শিখেয় না বরং অসম্মান করতে উৎসাহিত করে। সেই আধুনিক যুগের কোন প্রয়োজন আছে কী? মনে হচ্ছে সেই দিনগুলো বেশি ভালো ছিল যে দিনগুলোতে ছাত্ররা থাকতেন ছাত্রের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এবং শিক্ষকগন থাকতেন নিজের আর্দশ ধারণ করে। যা হওয়া আবশ্যক।
আজকের এ অবস্তার জন্য শুধুমাত্র ছাত্ররা দায়ী তা কিন্তু না, ছাত্রদের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের ব্যর্থতাও কম দায়ী না। যা শিক্ষকদের নিকট হতে কোন ভাবে আশা করা যায় না। বর্তমান শিক্ষকদেরকে নিয়ে কিছু না বললেই নয়। বর্তমানে কে হচ্ছেন একজন শিক্ষক? প্রতিদিন ভোরের আলো ফুটার আগে ভারী একগাঁধা বই কাঁেধ করে ছেলে-মেয়েদের পাঠিয়ে দিচ্ছি স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসায়। কিন্তু আমরা কি কখনও অনুধাবন করে দেখেছি, যে শিক্ষকগণ আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন, তিনি কে? তার শিক্ষক হবার যোগ্যতা আছে কিনা?
এই মুহুর্তে যদি কোন বাবা-মা আমার এই লেখাটি পড়তে থাকেন তাহলে আপনাদের কিছুটা হলেও ঘাবড়ানোর কথা। এবার সকল বাবা-মায়ের প্রতি আমার প্রশ্ন আপনারা কি কখনও একবারের জন্য অনুসন্ধান করে দেখেছেন আপনি আপনার সন্তানদের যে প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছেন শিক্ষা অর্জনের জন্য সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ কোত্থেকে এসেছেন? আমি খুব ভাল করে জানি আপনাদের মাঝে অধিকাংশ বাবা-মায়ের উত্তর দেবার মত কিছু নাই কারণ এ ব্যাপারে আমরা সর্বদাই কিছুটা উদাসীন। শুধুমাত্র এ কারনেই আপনার আমার সন্তানরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে কিন্তু সুশিক্ষা অর্জন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হচ্ছেন।
যাহোক শিক্ষকদের সঙ্গে আমার কোন প্রকার শত্র“তা নেই বরং আমি তাদেরকে সম্মান করি অনেক বেশি। আমার বাবা ছিলেন একজন সাধারন স্কুল শিক্ষক। অবসরে গেছেন কয়েক বছর আগে বয়সটা সত্তর পার করছেন বলে। আমার জানা মতে আমার বাবা কোন কিছুর বিনিময়ে শিক্ষকতার আদর্শের আপোস করেননি। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি কারণ আমার বাবা ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। আমার বাবার মুখে শুনেছিলাম অনেক আদর্শবান শিক্ষকের গল্প। যে গল্পগুলো আমাকে বুঝতে শিক্ষিয়েছে একজন আদর্শবান শিক্ষকের মাঝে কোন কোন গুণাবলী থাকে অথবা একজন আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে কি কি গুনাবলী অর্জন করা একান্ত জরুরী।
১৯৮০ বা ১৯৮২ সালের কথা বী-রহীম নামের একজন শিক্ষক ছিলেন যিনি প্রতিদিন সন্ধা হলে তার সাধ্যমত ছাত্রদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়া বুঝিয়ে আসতেন। স্কুলে যদি কোন ছাত্র-ছাত্রী অনুপস্থিত থাকতেন তাহলে তিনি নিজেই ছাত্র-ছাত্রিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোজ নিয়ে আসতেন কেন সেই ছাত্র বা ছাত্রী স্কুলে উপস্থিত ছিল না। শুধুমাত্র একজন বী-রহীম নয় বরং এমন হাজারো বী-রহীম আছে যাঁদের গল্প লিখতে হয়তোবা কলমের কালি শেষ হয়ে যাবে কিন্তু তাঁদের গল্প শেষ হবে না।
আব্রাহাম লিঙ্কন একটি চিঠি লিখেছিলেন তার পুত্রের শিক্ষকের নিকট। সেই চিঠিটা পড়ার পড়ে আমার মনে হয়েছিল তিনি যা বুঝাতে চেয়েছিলেন তার অর্থ হচ্ছে যে একজন শিক্ষক হয়ে ছাত্রদেরকে কি কি শিক্ষা দেওয়া উচিত। আমার মনে হয় আজকে যারা শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত আছেন তার বেশির ভাগই আব্রাহাম লিঙ্কনের এই চিঠি পড়েন নাই অথবা এই চিঠির অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত নন। যা কাম্য নয়।
এবার আপনাদের নিকট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করতে চাচ্ছি। বর্তমান ঢাকা সহ বড় বড় শহরের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মান মোটামুটি ভাল বলা চলে। কিন্তু গ্রামের অবস্থা এতটাই খারাপ যা কল্পনার বাইরে। আমার কথায় অনেকে অভিমান করতে পারেন কিন্তু আমার করার কিছু নেই। যারা আমার কথায় অভিমান করেছেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন আপনদের এলাকার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মান সম্পর্কে আপনি কতটুকু অবগত। আপনি যদি আগে থেকেই জানেন তা হলে ভাল, আর যদি না জানেন তাহলেও কোন সমস্যা নেই। কারণ আজ আমি আপনাদের বলছি, যারা স্কুল কমিটির সদস্য পদে নির্বাচিত হয়ে আসেন তাদের সকলেই কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করেই আসেন। সাধারন একটি স্কুল কমিটির সদস্য হবার জন্য লক্ষ টাকা খরচ করেন এটা খুব বেশি বিশ্বাস যোগ্য কথা না হলেও সত্য। তাহলে স্কুলে কি এমন সোনার হরিণ লুকিয়ে আছে যে, স্কুলের কমিটি সদস্য পদের জন্য লক্ষ টাকা খরচ করতে হবে ! এই লক্ষ টাকার হারজিত এর বাজিতে হেরে যাচ্ছে সততা। যার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের সšানদেরকে। এই সোনার হরিণের সকল রহস্যের কথা আমি বলতে চাই না। কারণ এই গুরু দায়িত্ব আমার উপর বর্তায় না।
বর্তমান সময়ে স্কুলের কমিটির সদস্যগণ নির্বাচিত হন দুই ভাবে । এক; রাজনৈতিক প্রভাব বা ক্ষমতার জোরে, দুই; শুধুমাত্র অগাধ টাকার প্রভাবে। কমিটির সদস্যগণ সর্বদাই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন কিভাবে শিক্ষক নেয়া যাবে। যদি কমিটি সদেস্যগণ কোন ভাবে স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্তা করতে পারেন তাহলে সকল সদেস্যগণ ভাবতে থাকেন এটা বুঝি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য অশেষ রহমত। এরপর নিলামে ডাক হয় শিক্ষকের ঐ শূন্য পদটিকে। খোলা বাজারে যে ব্যক্তি সর্বোচ্চ দাম হাকতে পারবেন তিনি হবেন যোগ্য ব্যক্তি। শুধুমাত্র টাকার মানদন্ডে বিচার করে একজন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হবে তা আমার মতে অপরাধের সামিল। আমরা যদি এক যুগ পিছনে ফিরে যাই তাহলে দেখতে পাবো যে গত এক যুগ বা তার কিছুটা বেশি সময় পূর্বে থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত হাতে গোনা কিছু প্রতিষ্ঠান ব্যতীত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যে সকল শিক্ষকদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে ৯০ ভাগেই শিক্ষক হবার অযোগ্য। কারণ যে সম্মানীত ব্যক্তিগণ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তার বেশির ভাগই নিয়োগ পেয়েছিলেন টাকার বিনিময়ে অথবা রাজনৈতিক প্রভাবে।
যারা এক সময় এলাকার রাজনৈতিক দলগুলোর ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিল, চাঁদাবাজি করত, যাদের নামে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষরা ভয় পায় সেই অশান্তি প্রিয় ব্যক্তিরাই শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাচ্ছে; শান্তিপ্রিয় ব্যক্তিদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগড় হিসাবে। ব্যাপারটা হাস্যকর বটে।
আপনি কি ভাবছেন, শুধুমাত্র চাঁদাবাজি,সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক ক্ষমতা, টাকার প্রভাব ইত্যাদি যোগ্যতা দিয়ে শিক্ষক হওয়া যায়? তাহলে কি শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন প্রয়োজন হয় না? প্রয়োজন হয়! সরকারী আইনকে ফাঁকি দেওয়ার মত সর্বনিম্নমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা হলেই যথেষ্ঠ। আর যদি তা না থাকে তা হলেও সমস্যা নাই, প্রথমে টাকা দিয়ে চেয়ারটা নিজের নামে কিনে নিয়ে যে কোন একটি নিম্ন মানের প্রতিষ্ঠান থেকে সনদ সংগ্রহ করে নিজের নামে মনোনীত চেয়ারে বসে যেতে পারেন।
চাঁদাবাজি,সন্ত্রাসী,আদর্শহীনদের নিকট হতে শিক্ষা গ্রহণের পরে আপনার আমার সন্তানরা যে চোর, বদমাস,সন্ত্রাসী,চাঁদাবাজ হচ্ছে না এটা আমাদের জন্য বড় সৌভাগ্যের। সন্তানরা সুশিক্ষা অর্জন করতে পারেনি বলে দুঃখ করাটা খুব বেশি অসংগত হবেনা। কারন আমরা তাদের সুশিক্ষার পথ সুগম করতে পারিনি।
কিছুদিন আগে এক হাইস্কুল প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে আমার কথা হচ্ছিল। আপনাদের বলাই ভাল উনার সঙ্গে কথা শেষ হবার পরেই ভেবেছিলাম শিক্ষকদেরকে নিয়ে কিছু লিখবো। সেই প্রধান শিক্ষকের ভাষ্যমতে, তিনি যে স্কুল পরিচালনা করে আসছেন সেই স্কুলের কিছু সংখ্যক শিক্ষক রাজনীতির সাথে ওতপ্রত ভাবে জড়িত। যাদের মধ্যে দুই জন হচ্ছেন বর্তমান ক্ষমতাশীন দলের বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা। সেটা মনে হয় বড় কিছু নয়। ব্যাপারটা অন্য জায়গায়। তা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরে সেই দুই রাজনৈতিক ব্যক্তি একদিনের জন্য স্কুলের বারান্দায় পা রাখেননি। আরও দুঃখজনক ব্যাপার হলো প্রতিমাস শেষে পিয়নকে পাঠাতে হতো সেই রাজনৈতিক দুই ব্যক্তির বাড়িতে। যারা কিনা বাড়িতে বসে গোটা মাসের হাজিরা খাতাসহ মাসিক ভাতার কাগজ-পত্রে স্বাক্ষর করেন। এবার মনে হচ্ছে মাসের টাকাটা হালাল হল! শুধুমাত্র এই দুই শিক্ষক নন এভাবে হাজারও শিক্ষক সুবিধা নিচ্ছেন বিভিন্ন ভাবে। এটা শেষ কথা নয়,বাকি আছে আরও অনেক কথা। সেই প্রধান শিক্ষক বলেন যদি কোন কারণে সরকারি দল বদল হয়ে যায় তখন নতুন করে যে দল ক্ষমতায় আসে সেই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা স্কুলের বারান্দায় পা রাখবেন না পরর্বতী পাঁচ বছর। বাড়িতে বসেই স্বাক্ষর করে দিবেন সকল প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র। দলবদলের চক্রে যদি শিক্ষকগণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে হাওয়া হয়ে যান কয়েক বছরের জন্য তা হলে আপনার আমার সন্তানদেরকে শিক্ষা প্রদান করবেন কে? একটি জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য দুঃখজনক ও লজ্জাকর।
আমরা বাবা মায়ের পরে যাকে স্থান দিয়ে থাকি তিনি হচ্ছেন শিক্ষক। এটা হওয়া আবশ্যক। আমরা সর্বদাই ভাবি আমাদের সন্তানরা সর্বোচ্চ নিরাপদ থাকেন শিক্ষকদের নিকট। সে ছেলে অথবা মেয়ে যাই হোকনা কেন। কিন্তু আজ আমাদের দেখতে হচ্ছে তার বিপরীত দৃশ্য। বর্তমান সময়ে কিছু সংখ্যক লম্পট চরিত্রের শিক্ষক প্রাইভেট ও কোচিং এর নাম করে নীরবে শ্লীলতাহানি করে যাচ্ছেন আমাদের নিষ্পাপ সন্তানদের। প্রকাশিত হচ্ছে দুই থেকে একটা আর পর্দার আড়ালে থেকে যাচ্ছে এধরনের হাজারো নোংরা ও অপ্রীতিকর ঘটনা।
মহান পেশায় নিয়োজিত সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা যদি কোন ভাবে জানতে পারেন ছাত্রীর শ্লীলতাহানি ঘটেছে শিক্ষকের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সাংবাদিকগণ বড় বড় অক্ষরে সেই শিক্ষক ও ছাত্রীর নাম পত্র-পত্রীকাতে প্রকাশ করে ফেলেন। যা আইন কখনও সমর্থন করে না। শ্লীলতাহানির সঙ্গে সঙ্গে ভিক্টিম এর রঙ্গীন স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় অপরদিকে অন্ধকারে ঢেকে যায় জীবন। আর সাংবাদিকগন সেই ভিক্টিমের নাম ও ঠিকানা পত্র-পত্রীকায় প্রকাশ করে সারা জীবনের জন্য তাকে ফেলে দেন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ এর মুখে। ফলে সেই ভিক্টিমের জীবনে আধাঁর কেটে নতুন করে আলো প্রবেশ করতে পারেনা। শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যে ক্ষতিটা হয় তা হল একজন শিক্ষকের অপরাধের ফলে অপরাধী হন হাজারও নিরপরাধ শিক্ষক। আর সকল শিক্ষক তাদেরও বিশ্বাসের অবস্থান হারিয়ে দাড়ান অবিশ্বাসের কাঠগড়ায়। এটা আমাদের কাম্য নয়। তবে সাংবাদিকগন কখনো এই ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পারছেন কিনা জানি না।
প্রচলিত আছে নৌকা তার কাঠের গুনা-গুন বহন করে। সন্তানদের বেশীর ভাগই মায়ের আর্দশে গড়ে উঠে। আর শিষ্য তৈরী হয় গুরুও আর্দশে। কথাটা অনেক পুরাতন তাই আপনাদের কাছে এর মূল্য সামান্য হতে পারে কিন্তু এই কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নাই। আপনারা যদি আমার সঙ্গে একমত প্রকাশ করতে পারেন তাহলে আপনাদের প্রতি আমার প্রশ্ন থকলো আমাদের দেশের বর্তমান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের অবহেলা, দূর্ণীতি বা অন্যান্য অবহেলার কারনে ছাত্র-ছত্রীদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে কি না?
আপনাদের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে,তাহলে কিভাবে আমাদের সন্তানেরা স্কুল,কলেজ,মাদ্রাসা পার করে বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নিচ্ছেন। এর উত্তরটা খুবই সহজ এবং আমি আপনাদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করছি। আপনার সন্তানরা সত্যি সত্যি উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছে। নিশ্চয় আপনি ভুলে যাননি, আপনার সন্তান যখন ছোট ছিল তখন অনেক ভারি ভারি বই পড়িয়ে ছিলেন। শুধুমাত্র সে কারণেই আজ আপনার সন্তানগণ উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু প্রধান সমস্যাটি হচ্ছে আপনার সন্তানরা যে সুশিক্ষা অর্জন করতে পারেনি তা ইতোপূর্বে আপনি কখনও উপলব্ধি করেছেন কিনা সে বিষয়ে আমার গভির সন্দেহ আছে। নামি-দামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন বিষয়ের উপর ভাল ফলাফলের সনদ নিতে পারলে যদি মনে করি আমাদের সন্তানরা সুশিক্ষা অর্জন করেছেন তাহলে ভুল হবে। কারণ শিক্ষা ও সুশিক্ষার মাঝে ব্যবধান অনেক। আপনি যদি বলেন আপনাদের সন্তানরা শুধুমাত্র শিক্ষা বা উচ্চ শিক্ষা অর্জন করেছেন তাহলে সে ব্যপারে আমার কোন আপত্তি নেই। যদি আপনি বলেন আপনাদের সন্তানেরা বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করেছেন মানে সুশিক্ষা অর্জন করেছেন সে বিষয়ে আমার যথেষ্ঠ আপত্তি আছে। আমার মনে হয় আজকাল আমরা শিক্ষা ও সুশিক্ষার মাঝে পার্থক্যটা বুঝিনা। আমাদের অবশ্যই জানা দরকার শিক্ষা ও সুশিক্ষা কাকে বলে? তবে আমার এই লেখাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জনের ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতে পারে তাতে কোন সমস্যা নাই। কারণ আমি শুধু আমার মত এককভাবে প্রকাশ করছি।
সর্বশেষে আমি বলব, বর্তমানে শুধুমাত্র সুশিক্ষিত ও আদর্শবান শিক্ষকের অভাবে আমাদের জাতি সুশিক্ষা অর্জন করতে ব্যার্থ হচ্ছেন। আমরা যদি নিজেদেরকে এই ধবংসের পথ থেকে রক্ষা করতে চাই তাহলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। এবং যাতে করে আদর্শহীন ব্যক্তিগন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক হতে না পারেন সেজন্য দেশের সর্বউচ্চ থেেেক সর্বনিম্ন পর্যায় পর্যন্ত সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে । সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে রাখতে হবে রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত। এজন্য দরকার দেশের সকল মানুষের সমান সহযোগিতা। শুধুমাত্র গুটি কয়েক ব্যক্তির চেষ্টার দ্বারা সফলতা অর্জন সম্ভব না। দেশ ও জাতির স্বার্থ সবকিছুর উর্ধ্বে। তাই আসুন আমরা সকলে একসাথে দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করি। যদি আমরা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের ধ্বংশ অনিবার্য।
শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়োজিত সকলের প্রতি আমার সম্মান আকাশ চুম্বি। আপনারা সবাই আপনাদের এই মহান পেশাকে দায়িত্বশীলভাবে পালন করেন সেটা আমার একান্ত কামনা। কারণ আপনাদের হাতে আমাদের এ জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আপনারা যদি আপনাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হন তাহলে আমাদের এ জাতি হয়তোবা আলোর পথ হারিয়ে ভুল পথে ধাবিত হবে। আপনারা যারা শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়োজিত আছেন একমাত্র তারাই পারেন আমাদের জাতিকে সুশিক্ষার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করতে। আল্লাহ আমার এবং আপনাদের সকলের সহায়ক হোন।
তোফায়েল আহমেদ
সাংবাদিক ও কলাম লেখক
©somewhere in net ltd.