নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অংশীদারী ব্যবসা করার আগে জেনে নিন। অংশীদারী ব্যবসায়ে লিখিত চুক্তি ও নিবন্ধন কেন জরুরী এবং চুক্তির বিষয়বস্তু

১৩ ই অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:২৫


চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কের ভিত্তিতে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত ও পরিচালিত ব্যবসায়কে অংশীদারি ব্যবসায় বলে। অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি হলো চুক্তি। অর্থাৎ একাধিক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে চুক্তিবদ্ধ সম্পর্কেক ভিত্তিতে যে ব্যবসায় পরিচালনা করে তাকেই অংশীদারি ব্যবসায় বলে

যৌথভাবে কোনো ব্যবসা পরিচালনা করতে চাইলে অবশ্যই অংশীদারি চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। চুক্তি করতে হবে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে।

**অংশীদারি ব্যবসায়ের সদস্য সংখ্যা কত?

অংশীদারি ব্যবসায় সাধারণত সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন অংশীদারের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন অনুসারে, সাধারণ অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ২০ জন সদস্য সংখ্যা। আবার, ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ২ জন এবং সর্বোচ্চ ১০ জন সদস্য সংখ্যা হবে।

চুক্তিতে যা থাকা উচিত
চুক্তিতে অংশীদারগণের নাম-ঠিকানা ,ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা , ব্যবসায় কার কতটুকু , কে কতটুকু লভ্যাংশ পাবে, ব্যবসা শুরুর তারিখ এবং অবসানের তারিখ, ব্যবসার পুঁজি কত এবং এ থেকে কীভাবে লভ্যাংশ আদায় হবে, ব্যবসার ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি বিষয় অবশ্যই চুক্তিতে থাকতে হবে।
ব্যবসার ধরন , লাভ-ক্ষতিসংক্রান্ত বিষয়ে কার কতটুকু প্রাপ্য থাকবে এবং কী শর্তে তা ভাগ হবে, তা স্পষ্ট উল্লেখ না থাকলে ভবিষ্যতে ব্যবসা পরিচালনায় জটিলতা দেখা দেবে । ব্যবসা সংক্রান্ত কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা কীভাবে নিষ্পত্তি হবে, তা স্পষ্ট উল্লেখ করতে হবে। চুক্তি শেষে দুই পক্ষের স্বাক্ষর এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষর থাকতে হবে। যে তারিখে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছে, সে তারিখ চুক্তিপত্রে দিতে হবে। যথা-
অংশীদারি চুক্তিপত্রের বিষয়বস্তু সমূহ
১. অংশীদারি ব্যবসায়ের নাম
২. ব্যবসায়ের ঠিকানা
৩. ব্যবসায়ের প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও আওতা
৪. ব্যবসায়ের কার্যক্রম বিস্তৃতির বর্তমান ও সম্ভাব্য এলাকা
৫. ব্যবসায়ের অস্তিত্ব
৬. অংশীদারদের মোট মূলধনের পরিমাণ
৭. ব্যবসায়ের মোট মূলধনের পরিমাণ
৮. অংশীদারদের প্রত্যেকের প্রদত্ত পুঁজির পরিমাণ ও তা পরিশোধ পদ্ধতি
৯. মূলধনের উপর সুদ দেয়া হবে কি না, হলে কি হারে
১০. অংশীদারগণ ব্যবসায় হতে কোন অর্থ উত্তোলন করতে পারবে কিনা, পারলে কত বা কি হারে
১১. উত্তোলিত অর্থের উপর সুদ ধরা হবে কিনা, হলে কি হারে
১২. ব্যবসায়ের লাভ লোকসান বণ্টন পদ্ধতি ও হার
১৩. ব্যবসায়ের পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি
১৪. ব্যবসায়ের হিসাবরক্ষণ ও হিসাব নিরীক্ষা পদ্ধতি
১৫. ব্যবসায়ের বিলোপসাধন পদ্ধতি


যাদের সঙ্গে চুক্তি করা যাবে না

নাবালক, পাগল, দেউলিয়া ব্যক্তি, সরকারি কর্মচারী, রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, বিদেশি রাষ্ট্রদূত, বিদেশি শত্রু ও দেশদ্রোহী ব্যক্তির সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য কোনো চুক্তি করা যাবে না। যদি কোনো চুক্তি করা হয় তাহলে তা আইনত কার্যকর বলে গণ্য হবে না।
অংশীদার হবার অযোগ্য :
১. নাবালক
২. পাগল
৩. দেউলিয়া ব্যক্তি
৪. অজ্ঞান ব্যক্তি
৫. সরকারি কর্মচারি
৬. রাষ্ট্রীয় বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি (রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রিবর্গ, ইত্যাদি)
৭. প্রতিষ্ঠান বা সংঘ
৮. মানসিক প্রতিবন্ধী
৯. বিদেশি রাষ্ট্রদূত
১০. বিদেশি শত্রু ও দেশদ্রোহী

চুক্তিপত্রটি নিবন্ধিত হতে হবে

ব্যবসার অংশীদারি চুক্তিপত্রটি নিবন্ধন করে নেওয়া উচিত। সাধারণত অংশীদারি চুক্তি করতে হয় দুই হাজার টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে। এ চুক্তি নিবন্ধন করাতে হবে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ থেকে। চুক্তির শর্ত না মানলে আইনে ক্ষতিপূরণসহ অন্যান্য প্রতিকার পাওয়ার জন্য আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে।

অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন সম্পর্কে বলা হয়েছে- ১৯৩২ সালের অংশীদারি আইনের ৫৮ ধারায়
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন বলতে বোঝায়- চুক্তিপত্রের নিবন্ধন
লিখিত ও নিবন্ধিত চুক্তিপত্রকে আদালত- প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে
অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধনের জন্য দরখাস্থ জমা দিতে হয়- সরকার নিযুক্ত নিবন্ধকের অফিসে
সাধারণ ও ব্যাংকিং অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন- বাধ্যতামূলক নয়
সীমিত অংশীদারি ব্যবসায়ের নিবন্ধন- বাধ্যতামূলক


অংশীদারি ব্যবসায় নিবন্ধন না করার ফলাফল

১. ৩য় পক্ষের বিরুদ্ধে ১০০ টাকার বেশি পাওনা আদায়ের জন্য আদালতে মামলা করতে পারবে না
২. উক্ত প্রতিষ্ঠান বা এর অংশীদার ৩য় পক্ষের বিরুদ্ধে চুক্তিজনিত অধিকার আদায়ের জন্য মামলা করতে পারবে না
৩. ৩য় পক্ষ প্রতিষ্ঠান বা অংশীদারদের বিরুদ্ধে মামলা করলে উক্ত প্রতিষ্ঠান বা তার অংশীদার ৩য় পক্ষের বিরুদ্ধে দাবী আদায়ের জন্য মামলা করতে পারবে না

**অংশীদারি ব্যবসায় এর বিলোপসাধন পদ্ধতি:

১। চুক্তি অনুসারে বিলোপসাধন
২। বাধ্যতামূলক বিলোপসাধন
৩। বিশেষ ঘটনা সাপেক্ষে বিলোপসাধন
৪। বিজ্ঞপ্তির দ্বারা বিলোপসাধন
৫। আদালত কর্তৃক বিলোপসাধন

অংশীদারি ব্যবসায়ের মূল ভিত্তি হলো চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। অংশীদারি ব্যবসায় চুক্তি অনুযায়ী, বাধ্যতামূলক, বিশেষ ঘটনা সাপেক্ষে, বিজ্ঞপ্তির দ্বার, আদালত কর্তৃক বিলোপসাধন হতে পারে।

- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ (এম টি উল্যাহ)
আইনজীবী
01733 594 270


মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.