নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।

এম টি উল্লাহ

আমি এম টি উল্যাহ। আইনি উপন্যাস ‘‘অসমাপ্ত জবানবন্দী’’ ও ‘‘নিরু”, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই ‘‘মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ’’ ও ‘‘একাত্তরের অবুঝ বালক’’ এর লেখক। পেশায়-আইনজীবী।www.facebook.com/mohammad.toriqueullah , Email- [email protected]

এম টি উল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চেকের মামলা করতে হলে চুক্তি থাকা কি বাধ্যতামূলক? চেকের মামলার রায় যেভাবে আপনার পক্ষে পেতে পারেন

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:৫৬


এখন হতে চেকের মামলা করতে হলে চুক্তিপত্র বা কন্ট্রাক্ট ডিড বাধ্যতামূলক এমন কথা প্রায়ই শোনা যাচ্ছে এবং অনেকে মনে করছেন চুক্তি না থাকলে চেকের মামলা করে রায় পক্ষে পাওয়া যাবে না। প্রকৃত বিষয়টি আসলে এমন না।

বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিলেট ডিভিশন কর্তৃক ২০১৭ ইং সনের ৬৩-৬৬ নং ফৌজদারী আপিল মোকাদ্দমাসমূহে মাননীয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ কর্তৃক প্রদত্ত বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকি কর্তৃক লিখিত সর্বসম্মত রায়ে- এখন হতে চেকের মামলা করতে হলে চুক্তিপত্র বা কন্ট্রাক্ট ডিড বাধ্যতামূলক- এমন ধরণের কথা ঐ রায়ের কোথাও বলা হয়নি, লেখা হয়নি, এমনকী এমন ধরণের বিধান প্রণয়নের ন্যূনতম ইঙ্গিতও দেয়া হয়নি।

তবে হ্যাঁ, চেকের মামলা মানেই সাজা নয়। রায়ের মূূল কথা হলো চেকদাতা ও গ্রহীতার মধ্যে লেনদেন সম্পর্কিত কোনও বৈধ চুক্তি/লেনদেন প্রমাণ করতে হবে। ধরুন, আপনি করো কাছ থেকে ২০,০০,০০০/- (বিশ লক্ষ) টাকা পাবেন মর্মে চেকের মামলা করেছেন এবং এক্ষেত্রে উক্ত পাওনা সংক্রান্ত উপযুক্ত কারন ও প্রমাণটা আপনাকে দিতে হবে। চুক্তি নয় বরং যে কোন যুক্তিসঙ্গত প্রমাণাদি আপনি উপস্থাপন কররে হবে। তা হতে পারে ভাউচার, ক্রাশ ম্যামো, ব্যাংকিং লেনদেন, ওয়ার্ক অর্ডার বা যে কোন ধরনের বৈধ লেনদেনের প্রমাণ। মোট কথা, বাদীকেই প্রমাণ করতে হবে কী কারণে চেকদাতা চেক ইস্যু করেছিলেন এবং সেই চুক্তিটি ব্যর্থ হয়নি যার কারণেই বিবাদীর কাছে বাদীর পাওনা বলবৎ রয়েছে। আইন মোতাবেক প্রতিকার পেতে হলে অবশ্যই দুই পক্ষের মধ্যে একটা উপযুক্ত ‘কনসিডারেশন’ বিনিময় হতে হবে বা বিনিময় হওয়ার অঙ্গীকার থাকতে হবে।

অন্যভাবে বললে বলা যায়, অভিযুক্তকেই প্রমাণ করতে হবে চেক এর বিনিময়ে কোনো কনসিডারেশন ছিলো না। কনসিডারেশন ছিলো না এটা প্রমাণ করার পুরো দায় অভিযুক্তের। যদি সে তা প্রমাণ করতে না পারে তবে ধরেই নেয়া হবে কনসিডারেশন ছিলো। শুধু মুখে মুখে বললেই হবে না, যে কনসিডারেশন ছিলোনা বরং তা হাতে কলমে দেখিয়েও দিতে হবে।

চেকের মামলার করার ক্ষেত্রে করণীয়

মনে রাখতে হবে, চেক ডিজঅনারের ক্ষেত্রে কিছু সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমা পার হয়ে গেলে আর প্রতিকার পাওয়া যায় না। প্রথমেই যেটি জেনে রাখতে হবে তা হলো, যেকোনো চেক ইস্যু করার তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে ব্যাংকে উপস্থাপন না করলে চেকটির কার্যকারিতা আর থাকে না। এ ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে, চেকটি ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাস সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে ক্যাশ করার জন্য জমা দিতে হবে।

চেকটি ব্যাংক থেকে ডিজঅনার হওয়ার পর থেকে ৩০ দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধের জন্য চেক প্রদানকারীকে লিখিতভাবে নোটিশ দিতে হবে। প্রথমে চেষ্টা করতে হবে নোটিশটি ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি চেক প্রদানকারীর ওপর জারি করতে। যদি এ ক্ষেত্রে সম্ভব না হয়, তাঁর বাসস্থান বা যে স্থানে তিনি সর্বশেষ কাজ করেছেন, সেই ঠিকানায় প্রাপ্তি স্বীকার রসিদসহ (এডি) ডাকযোগে নোটিশ পাঠাতে হবে। উল্লেখ্য, নোটিশটি ফেরত না এলেও নোটিশটি চেক প্রদানকারীর ওপর সঠিকভাবে জারি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হবে। নোটিশ জারির তৃতীয় পদ্ধতিটি হচ্ছে, একটি বহুল প্রচারিত জাতীয় পত্রিকায় নোটিশটি প্রকাশ করা। ওই নোটিশে চেক প্রদানকারীকে টাকা পরিশোধের জন্য ৩০ দিনের সময় বেঁধে দিতে হবে। এ সময়ের মধ্যে চেক প্রদানকারী টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এ সময় পার হওয়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। কোনোভাবেই নোটিশ প্রেরণ না করে সরাসরি মামলা করা যাবে না। কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হলে এই আইনের ১৩৮ ধারার পাশাপাশি ১৪০ ধারা উল্লেখ করে মামলা করতে হবে। এ ধরনের নোটিশ জারি ও মামলা করার জন্য আপনি একজন আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে পারেন।

মামলা করার সময় আদালতে মূল চেক, ডিজঅনারের রসিদ, আইনি নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তির কপি, পোস্টাল রসিদ, প্রাপ্তি রসিদ আদালতে প্রদর্শন করতে হবে। এসবের ফটোকপি ফিরিস্তি আকারে মামলার আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হয়। সংক্ষেপে মনে রাখুন,


কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ

১) একটি চেকের মেয়াদ চেকের গায়ে চেক দাতার দেওয়া উল্লেখিত বা লিখিত তারিখ হতে ৬ মাস পর্যন্ত।তাই উক্ত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর ব্যাংক গ্রহন না করার কারনে আদালতে Negotiable Instrument Act এর ১৩৮ ধারা অনুযায়ী আর টাকা দাবি করা যায় না।তাই ৬ মাস এর ভিতর চেক এর টাকা তোলার জন্য ব্যাংক এ উপস্থাপন করতে হয়।
২) উপরল্লিখিত নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর উপস্থাপনে চেকদাতার একাউনট এ টাকা না থাকলে ডিসঅনার স্লিপ সংগ্রহ করে চেকের টাকা দাবি করে এক মাসের সময় দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে Negotiable Instrument Act এর ১৩৮ ধারা মোতাবেক টাকা পরিশোধের দাবি জানিয়ে নোটিশ সরবরাহ করতে হয় এবং নোটিশটি ছাড়তে হয় ডিসঅনার হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে।
৩) নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিন পর মামলার কারন উদ্ভব হয়।মামলার কারন উদ্ভব হওয়ার ১ মাসের মধ্যে একজন ১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করা যায়।আর নোটিশ গ্রহন না করলে নোটিশ ফেরত আসার তারিখ হতে এক মাসের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করা যায়।
৪) চেকের প্রাপক বা দাবিদার এর পক্ষে তার নিজুক্তিও Attorney Holder মামলা করতে পারেন।
৫) অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে ডিসঅনার কয়বার করাতে হয়।উত্তরটা হল একবার ডিসঅনার করালে ও মামলা করা যায়।

৬) নোটিশ সরবরাহ না করলে বা নোটিশ জারি না করে চেকের মামলা করা যায় না। নোটিশ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রাপ্তি স্বীকারোক্তি সহ জারি করাই উত্তম অথবা জাতীয় পত্রিকায় নোটিশ প্রচার করা যায়।

৭) স্থানীয় অধিক্ষেত্রঃ যে ব্যাংকে চেক উপস্থাপন করা হয় সেই ব্যাংক আদালতের যে স্থানীয় অধিক্ষেত্রে অবস্থিত সেই আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।

৮) যে কোন ধরনের ডিসঅনার এর কারনে মামলা দায়ের করা যায়।

৯) কোন কারনে আইনের নির্ধারিত মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে প্রতারনার জন্য মামলা করা যায়।

১০)কখনও কোন চেক হারিয়ে গেলে সাথে সাথে নিকটস্থ থানায় জি, ডি দায়ের করে ব্যাংক এর মাধ্যমে চেক স্টপ করাতে হয়।

১১) হারান চেক উদ্ধারের জন্য মামলা করা যায়।

১২) কিছু না লিখে বা টাকার সংখ্যা না লিখে অর্থাৎ খালি চেক কখন কাওকে সরবরাহ করা উচিত নয়।

১৩) শাস্তি : সর্বোচ্চ ১বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, বা চেকে উল্লেখিত অর্থ দণ্ডের সর্বোচ্চ ৩ গুণ পর্যন্ত জরিমানা, বা উভয় দণ্ড।
এ ক্ষেত্রে আপিলের সুযোগ আছে। তবে আপিল করার পূর্বশর্ত হচ্ছে, চেকে উল্লেখিত টাকার কমপক্ষে শতকরা ৫০ ভাগ যে আদালত দণ্ড প্রদান করেছেন, সেই আদালতে জমা দিতে হবে।

-মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:১২

জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: তথ্যগত সুন্দর পোস্ট। প্রিয়তে রাখলাম।
শুভেচ্ছা।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৩

এম টি উল্লাহ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে

২| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:০৪

এম টি উল্লাহ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.