![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একাত্তর পরবর্তী প্রজন্ম । মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা আমাকে দেখতে হয়নি । মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে পেরেছি বড়দের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে আর বই পড়ে । যে বইটি পড়ে মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি বুঝতে শিখেছি সেটি হল ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম ম্যাডামের আমি বিরাঙ্গনা বলছি । এই বইটি আমাকে হাজার বার কাঁদিয়াছে, কাঁদাচ্ছে এবং হয়তবা ভবিষ্যতেও কাঁদাবে । হয়তবা ভবিষ্যতেও কাঁদবো সেইসব বিরাঙ্গনাদের কথা মনে করে ।
আলোকপাত করতে চাই সেইসব হতভাগ্য বিরাঙ্গনাদের প্রতি । গণহত্যার কথা অনেকেই বলেছেন, সে তুলনায় গণধর্ষণের কথা কম এসেছে । আমরা মুখে দুই লক্ষ ধর্ষিতা নারীর কথা বললেও প্রকৃত ধর্ষিতা নারীর সংখ্যা এর চেয়েও অনেক বেশি । কী দোষ ছিল সেইসব নারীদের ? কেন তাঁদের বরণ করতে হল গণধর্ষণের চরম যন্ত্রনা? কেন? কেন? কাদের জন্য হল এদেশের সহজ সরল রমণীদের সম্ভ্রমহানি ? নেপথ্য খলনায়ক কারা? তারা তো এদেশের কিছু কুলাঙ্গার , রাজাকার , আলবদর, আলশামস । যারা তুলে দিয়েছিল আমাদের মা বোনদের পাক হানাদার বাহিনীর হাতে । আর সময় সুযোগ বুঝে নিজেরাও ধর্ষণের নোংরা লীলায় মত্ত হয়েছিল । যাদের বিচার স্বাধীনতার এত বছর পরও করতে পারিনি । আমরা কি চিন্তা করতে পারি গণধর্ষিতা সেই নিষ্পাপ রমণীদের করুণ সময়ের কথা ? রাতের পর রাত যাঁদেরকে ভোগ করতে হয়েছে নরকীয় গণ ধর্ষণের যন্ত্রণা । পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী যাঁদেরকে নিয়ে মেতে উঠেছিল আমোদ ফুর্তিতে , যাঁদের পরনে পোশাক ছিল না , পেটে খাবার ছিল না, ছিল শুধু রাতের পর রাত রক্তাক্ত হবার করুণ কাহিনী , যাঁদের আর্ত চিৎকারে স্রষ্টার আরশ কাঁপলেও কাঁপে নি পাষাণ হানাদার বাহিনীর অন্তর । যারা রাতের পর রাত গণ ধর্ষণের যন্ত্রণা ভোগ করেন তাদের কষ্ট কোন অংশে মৃত্যু যন্ত্রণার চেয়ে কম ? এই সব যুদ্ধ জয়ী মহীয়সী রমণীদের পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশেও নিদারুণ অপমানের বোঝা নিয়ে পথ চলতে হয়েছিল । মনে করিয়ে দেই সেই সব হতভাগ্য পিতামাতার কথা , যাঁদের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছিল তাঁদের কুমারী মেয়েকে , কি দোষ ছিল তাঁদের ? মনে পরে সেই স্বামী কিংবা ভাইয়ের কথা যাদের চোখের সামনে সম্ভ্রম হারাতে হয়েছিল প্রিয়তমা স্ত্রী কিংবা আদরের ছোট বোনকে ।
এই সব প্রশ্নের একটাই উত্তর । তাঁদের কোন দোষ ছিল না । তাঁরা নিষ্পাপ ছিলেন , আছেন এবং থাকবেন । কিন্তু তারপরও এদেশীয় কিছু নরপশু কুলাঙ্গারের কারনে নিরপরাধ রমণীদের ভাগ্যে জুটেছিল নষ্টা মেয়ের খেতাব।
যে জানোয়ার গুলোর জন্য আমাদের লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানি, স্বাধীন দেশেও লাঞ্চনা আর অপমানের গ্লানি বয়ে বেড়ান , জগৎসংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কিংবা আত্মহত্যার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হওয়া সেই সব নরপশুদের কী কোন বিচার হোবে না ? স্বাধীন বাংলাদেশ কেন পাপীদের পাপের বোঝা বোয়ে বেড়াবে ? কেন এই জানোয়ার গুলো শান্তির ধর্ম ইসলাম কে ব্যবহার করে নিজেদের অপকর্ম ঢাকার সুযোগ পাবে ? আমাদের বিবেক কি একবারও মহীয়সী বিরাঙ্গনাদের পক্ষে কথা বলবে না ? একবারও কি সেই সব ধর্ষিতা মা বোনদের আর্ত চিৎকার আমাদের অন্তরের কর্ণ কুহরে প্রবেশ করবে না ? নাকি আমরা বারবার তাঁদের কাছে মাথা নিচু করে ক্ষমা চেয়ে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করবো ?
হে মহীয়সী বিরাঙ্গনা মা বোনেরা তোমরা আমাদের ক্ষমা করো না , আমরা ক্ষমা পাবার যোগ্য নই । আমরা স্বাধীনতার এত বছর পরও যে বিচার করতে পারি নি নরপশু আলবদর গুলোর যারা তোমাদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়ে অট্ট হাসি হেসেছিল । আমরা হয়তবা ফিরিয়ে দিতে পারব না তোমাদের সম্ভ্রম , ফিরিয়ে দিতে পারবো না তোমাদের স্বর্নালি অতীত তাই বলে কি নরপশুদের বিচারও করতে পারবো না ? এটা কীভাবে হয় ?
পরিশিষ্টঃ ধন্যবাদ ডঃ নীলিমা ইব্রাহিম ম্যাডামকে । আপনার লেখনীর কারণেই জানতে পেরেছি বিরাঙ্গনা নারীদের বীরত্ব গাঁথা ইতিহাসের গল্প । শ্রদ্ধা বঙ্গবন্ধুর প্রতি । তিনি পরম মমতায় মহীয়সী বিরাঙ্গনাদের বাবার দায়িত্ব নিয়েছেন । শ্রদ্ধা সেইসব মানুষদের যারা পাশে দাঁড়িয়েছেন বীর সন্তানদের , অস্পৃশ্য বলে ঠেলে দেননি দূরে বরং পরম মমতায় আগলে রেখেছিলেন তাঁদের । ঘৃণা থাকলো তাদের প্রতি যারা এই মহীয়সী রমণীদের তিরস্কার করে, অস্পৃশ্যতার দোহাই দিয়ে ফিরতে দেয়নি স্বাভাবিক জীবনে । নতুন প্রজন্মের একজন হয়ে বলছি আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস চায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক । কিন্তু আজ কাদের মোল্লার রায় শুনে আমি হতবাক ।
©somewhere in net ltd.