![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাবা দিবস , মা দিবস , মায়ের জন্মদিন , বাবার জন্মদিন কত দিবস কত উপলক্ষ আসে কিন্তু আমি কোন উপলক্ষই কাজে লাগাতে পারি না । শত প্ল্যান প্রোগ্রাম করেও বাবা মাকে একবারের জন্য ও 'ভালোবাসি' কথাটা বলতে পারি নি । ছোটবেলায় ভাবতাম বড় হয়ে বলবো , বড় হলে হয়তোবা এত লজ্জা থাকবে না । কিন্তু বড় হয়েই বিপত্তি বাঁধলো , এখন শুধু লজ্জা-ই না প্রচন্ড কান্নাও পায় । মাঝে মাঝে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় , তবুও অপরাধের বৃত্ত থেকে বের হতে পারি না । এবারের বাবা দিবসটাও কেটে যাবে তবুও বাবাকে বলা হবে না । থাক, নাহয় না-ই বললাম । বাবা তো আমাকে কোন দিন বলেন নি 'মারে তোকে অনেক ভালোবাসি ' তাতে কি বাবার আদর স্নেহ কমে গিয়েছে না কি ? আমার বাবা তো পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা-ই আছেন । আমাদের বাবা-মেয়ের অনেক অনেক মজার স্মৃতি আছে । আমি ভেবে রেখেছি এবারের বাবা দিবসে বাবাকে সেই স্মৃতিগুলো মনে করিয়ে দিবো ।
ছোটবেলাটা কেটেছে কুষ্টিয়ায় । আমাদের এলাকায় খুব একটা কারেন্ট যেত না । যখন কারেন্ট যেত তখন আর পাঁচটা সাধারণ মফস্বলের মতই পুরোপুরি অন্ধকারে চাদরে মুড়িয়ে যেত চারপাশ । আর এই সময়টা ছিল চাঁদ দেখা কিংবা তারা গোণার মোক্ষম সময় । তীর্থের কাকের মত চেয়ে থাকতাম কখন কারেন্ট যাবে ? কারেন্ট গেলেই যে অনেক অনেক মজা হবে । যেদিন কারেন্ট যেত , সেদিন মহাউৎসাহে বাবার হাত ধরে মাদুর আর একটা কোলবালিশ নিয়ে ছাদে চলে যেতাম । মাথার সাথে মাথা লাগিয়ে শুয়ে শুয়ে গল্প করতাম , সারাদিনের জমে থাকা অভিযোগ দেন দরবার যা ছিল সব পেশ করতাম । সবচেয়ে বেশী অভিযোগ মায়ের বিরুদ্ধে । জোর করে খাওয়ানো , জোর করে পড়তে বসানোর মত অপ্রিয় কাজগুলো যে মা-ই করতেন ! অভিযোগ না করে উপায় আছে ? বায়না ধরতাম গল্প বলার জন্য । বাবা বানিয়ে বানিয়ে অ্যাং গাড়ি - ব্যাং গাড়ির গল্প বলতেন , এই গল্পটা প্রায় প্রতিদিনই শুনতাম । শিয়াল কুমীরের প্রচলিত গল্পটাও শুনতাম । বাবা আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে গল্প বলতেন আর আমিও আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে সেসব গল্প শুনতাম । একসময় বাবাকে থামিয়ে দিয়ে বলতাম , ' বাবা, এই তারাটার এত আলো কেন ? ওই তারাটা এত বড় কেন ? ওটা অমন ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন ? বাবা ! দেখো এই তারাটা কেমন নীল রঙের ' এভাবেই চলত । এক সময় গল্প রেখে আমারা তারার মাঝে হারিয়ে যেতাম । এরপরে শুরু হত তারা গণনা । কে কয়টা গুণতে পারে ? এক , দুই , তিন , চার করে গুণতে গুণতে একসময় হারিয়ে ফেলতাম । বাবাকে ডেকে বলতাম 'বাবা, আমি তো তারা হরিয়ে ফেলেছি । এখন কী করবো ? ' বাবার উত্তর 'আম্মাজান , আবার শুরু হোক । আমিও হারিয়ে ফেলেছি । ' এভাবেই চলতো । কোন দিন তারা গোণাও শেষ হতো না , গল্পও ফুরাতো না ............
এখনো কারেন্ট যায় । ব্যস্ত আর কৃত্রিম নান্দনিক এই ঢাকা শহর জেনারেটর আর আইপিএসের আলোয় জ্বলে ওঠে । পুরোপুরি অন্ধকার হয় না । আমি আর বাবা বারান্দায় বসে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি । কিন্তু গ্রীলে ঘেরা বারান্দায় বসে প্রাণ খুলে আকাশ দেখা হয় না , তারা গোণা হয় না ।
পৃথিবীর সব মেয়েই তার বাবার কাছে অনেক কিছু চায় । আমি কিছুই চাই না বাবা । শুধু একটা দিনের জন্য আমার সেই সোনালী শৈশবটাকে ফিরে পেতে চাই । যেদিন তোমার কাধেঁ চড়ে ছাদে উঠবো আর ছাদে বসে তোমার সাথে প্রাণ খুলে গল্প করবো । জীবনের বিশটা বছরে যে আমার অনেক অনেক অভাব অভিযোগ জমে গিয়েছে ।তুমি ছাড়া আর কাকে বলবো ???? প্লীজ বাবা চলো টাইম মেশিনে করে আমরা সেই আগের দিনগুলোতে ফিরে যায় ..................
বাবা দিবসে ভালো থাকুন পৃথিবীর সকল বাবা ।
২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৫৪
তুশি মারইয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ । খুব ভালো কথা বলেছেন , 'শুধু বাবাদিবসে না , সবসময় সবখানে সব বাবামায়েরা সন্তানদের নিয়ে ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন '
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১৫
খেয়া ঘাট বলেছেন: বাবার সাথে সোনালি শৈশবের চিরসবুজ স্ম্বতি। ভালো লাগলো।
বাবা দিবসে ভালো থাকুন পৃথিবীর সকল বাবা ।
শুধু বাবাদিবসে না , সবসময় সবখানে সব বাবামায়েরা সন্তানদের নিয়ে ভালো থাকুন , সুস্থ থাকুন।