নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুশি মারইয়াম

আমার মাটি , আমার মা রাজাকারের হবে না

তুশি মারইয়াম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরাজিতা-১

২৩ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩০

হালকা আকাশী শাড়ি আর হাতভর্তি নীল চুড়ি পরে টিএসসি’র বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে অপরাজিতা । পায়ের নীচের মাটিটা কেমন যেন নড়বড়ে মনে হচ্ছে , মাথাটা ঘুরছে । আজ তার পুরো পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেছে । কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না । সুন্দর একটা দিন পাওয়ার আশায় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছিল সে । গোসল করে পলাশের পছন্দের আকাশী শাড়িটা পরে চোখে কাজল দিয়েছে । শাড়ির আঁচলের সাথে মিলিয়ে কপালে নীল টিপ আর হাতে নীল কাঁচের চুড়ি । অপরাজিতাকে এভাবে দেখতে নাকি পলাশের খুব ভালো লাগে । পলাশকে আজ একটা সুসংবাদ দিয়ে চমকে দেওয়া হবে তাই এই সাজ । নতুন একটা বেসরকারী চ্যানেলে পার্ট টাইম জার্নালিজমের কাজ পেয়েছে আপরাজিতা । পরশুদিন চাকরী কনফার্ম হলেও পলাশকে বলেনি । নিজের মাঝে এই দুইদিন চেপে রেখেছিল । ঘটনাটা সামনাসামনি বলে পলাশকে একটা ছোটখাটো আনন্দের ধাক্কা দিতে চেয়েছিল । ভালোবাসার মানুষকে আনন্দের ধাক্কা দেওয়ার আগে নিজেই দুঃখের ধাক্কায় পড়ে গেছে অপরাজিতা ।

গতকাল বিকেলে ফোন করে আজ সকাল দশটায় পলাশকে টিএসসিতে আসতে বলেছিল । সাড়ে নয়টা থেকে একাই বসে আছে অপরাজিতা । গত তিন বছরে একটি দিনের জন্যও অপরাজিতাকে অপেক্ষা করতে হয় নি । নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে এসে পলাশ বসে থাকতো । আজ আসে নি । এগারোটার সময় চোখ মুখে যথাসম্ভব বিরক্তি নিয়ে পলাশ এসে বসলো । 'শোন , একটা সুখবর আছে ! ' এতুটুকু বলে আর কথা আগানোর সুযোগ পেল না অপরাজিতা । তার আগেই থামিয়ে দিয়ে পলাশ বলে উঠলো , ' তোমার সুখবর পরে শুনবো তার আগে আমার কথা শোন , আমার পক্ষে আর সম্পর্ক রাখা সম্ভব না । ক্যারিয়ার নিয়ে আমাকে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয় প্রেম ভালোবাসা করার মত যথেষ্ট সময় আমার হাতে নাই ' এই বাক্যটিই এলোমেলো করে দিল অপরাজিতার পৃথিবী । 'আমার তাড়া আছে , আমি গেলাম । আর শোন যখন তখন ফোন আমাকে ফোন দিও না ' অপরাজিতাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উঠে চলে গেল পলাশ । ছলছল চোখে কিছুক্ষণ পলাশের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থেকে একসময় উঠে আসলো অপরাজিতা । সোয়া বারোটার বাসে বাসায় চলে যাবে সে । ঘড়িতে বাজে প্রায় সাড়ে এগারোটা । এখনো ৪৫ মিনিট বাকী । এই সময়টা রোকেয়া হলের সামনের রাস্তায় বসে থাকা যায় । এই সেই জায়গা যেখানে পলাশের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা পার করেছে । ক্যাম্পাসের ছোট ফুল বিক্রেতাদের কাছে ওরা পরিচিত মুখ । শাড়ি পরে ক্যাম্পাসে আসলেই পলাশ একটা ফুলের মালা কিনে দিবে এটা অলিখিত নিয়ম । মতি নামের একটা রোগা পটকা ছেলে আছে । ওর কাছে থেকেই বেশীর ভাগ ফুল কেনা হয় । আজ একা বসে থাকতে দেখে মতি এসে বললো , ' আফা , আফনি একা বইসা আছেন ক্যান ? ভাইজান কই ? মালা নিবেন না ? টাটকা ফুলের মালা আনছি ' ,

'মালা নিবো না , বিরক্ত করিস না , যাহ '

'একটা মালা নেন আফা , সকাল থেইকা না খাওয়া , মালা বেইচা দুফুরে খামু '

আজকে অপরাজিতার মালা প্রয়োজন নাই তারপরও মতির অনুরোধে একটা মালা নিল । পলাশ প্রায় দিন মতিকে দুই এক টাকা বেশী দিত । আজ পলাশের কাজটা অপরাজিতাই করল । দশ টাকার নোটটা মতির হাতে দিয়ে বললো ' বাকী টাকা ফেরত দেওয়া লাগবে না '

দশ টাকার নোট হাতে পেয়ে মুখে এক চিলতে হাসি লাগিয়ে মতি বলে গেল , 'আফা চিন্তা নিয়েন না , ভাইজান জলদি চইলা আইবো ' মতি জানে না ভাইজান আর কখনোই আসবে না

ব্যাগের চেন খুলে মালা রাখতে গিয়েই চোখ গেল গোলাপের দিকে । পলাশকে দিবে বলে শাহবাগের মোড় থাকে কিনেছিল । আজ ফুল নেওয়ার সময় হয় নি পলাশের ।

আজ একটা একটা করে পুরাতন দিনের স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছে অপরাজিতার । কোন এক চৈত্রের দুপুরে পলাশের সাথে প্রথম পরিচয় হয়েছিল অপরাজিতার । নীলক্ষেতের ফুটপাত দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে এমন সময় দেখে একটা ছেলে বিভূতিভূষণের অপরাজিত বইটা নেড়েচেড়ে দেখছে । পথের পাঁচালী পড়া হয়েছে অনেক দিন হল কিন্তু অপরাজিত পড়ব , পড়ছি করেও পড়া হচ্ছে না । তাছাড়া বইটা সংগ্রহে নেই । হাতে কিছু টাকা আছে কিনে ফেলা যায় । 'মামা , এই বই আমাকে একটা দেখান তো । ' 'অপেক্ষা করেন মামা আনতাছি ' এই বলেই প্রায় আধা ঘন্টার জন্য উধাও বইওয়ালা মামা । বইওয়ালাকে বইয়ের টাকা দেওয়া হয়নি বলে পলাশ দাঁড়িয়ে আছে । অপরাজিতাও অপেক্ষা করছে বইয়ের জন্য । নিতান্তই ভদ্রতার খাতিরে নাম জানতে চাইলো পলাশ । ভদ্রতার খাতিরে আরো কিছু কথা দু'জনকেই চালিয়ে যেতে হল । জানা গেল দু'জনই ঢাবিতে পড়ে । তবে ইয়ার এবং ডিপার্টমেন্ট আলাদা , সেদিনের ঘটনা এখানেই শেষ । এর সপ্তাহখানিক পরের ঘটনা । সেদিন ভার্সিটির বাস মিস করেছিল অপরাজিতা । জহির স্যারের ক্লাস । ৫ মিনিট দেরী হলেই স্যারের ক্লাসে ঢোকার নিয়ম নেই । পরের বাসে ক্যাম্পাসে এসে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়াতে বসে ছিল । সেদিন মাত্র একটা ক্লাস ছিল , ক্লাস শেষে বন্ধুরা সবাই টিএসসিতে এসে পড়বে । ইদানিং আবার টেবিল ফাঁকা পাওয়াই যায় না । সেদিন ভাগ্য ভালো ছিল বলতে হবে । কোণার দিকের দুইটা টেবিল ফাঁকা । একটাতে গিয়ে বসল । কিছুক্ষণ পরে পাশের ফাঁকা টেবিলে পলাশ । চোখাচোখি হতেই পলাশ সৈজন্যতার হাসি হাসল । ‘ ভাইয়া কি একাই এসেছেন ? ফ্রী থাকলে আমার টেবিলে বসতে পারেন । আমি অনেকক্ষণ ধরে একেই বসে আছি ‘ পলাশ এসে বসলো অপরাজিতার পাশে । ভাগ্যদেবতা প্রসন্ন ছিল কিনা জানিনা । হঠাৎ করেই বান্ধবী শীলার ম্যাসেজ ' দোস্ত স্যার আজ দুই ঘন্টা ক্লাস নিবেন ' তুই টিএসসিতেই থাক , আমরা ক্লাস শেষে এসে যাবো ' দুজনের গল্প চললো বেশ কিছুটা সময় । ফোন নম্বর দেওয়া নেওয়া । অপরাজিতার বান্ধবীরা আসলে ওদের সাথে পরিচিত হয়ে বিদায় নিল পলাশ ।

চলবে..................











মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩৯

অন্তহীন বালক বলেছেন: +++++++

২৩ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৮

তুশি মারইয়াম বলেছেন: খুশী হলুম । এতগুলো প্লাস দেখে

২| ২৪ শে জুন, ২০১৩ রাত ১:২৭

ঘাসফুল বলেছেন: সুন্দর লেখা... এক টানে পড়া শেষ... ১ম প্লাস :)

২৪ শে জুন, ২০১৩ রাত ১:৩৩

তুশি মারইয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ , ভালো থাকবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.