![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হালকা আকাশী শাড়ি পরে টিএসসির বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে অপরাজিতা । পায়ের নীচের মাটিটা কেমন নড়বড়ে মনে হচ্ছে । মাথাটা ঘুরছে । আজ তার পুরো পৃথিবী এলোমেলো হয়ে গেছে । এমনটা হওয়ার কথা ছিল না । সুন্দর একটা দিন পাওয়ার আশায় খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পলাশের পছন্দের আকাশী শাড়িটা পরে চোখে কাজল দিয়েছে সে । শাড়ির আঁচলের সাথে মিলিয়ে কপালে নীল টিপ আর হাতে নীল কাঁচের চুড়ি । নতুন একটা বেসরকারী চ্যানেলে পার্টটাইম জার্নালিজমের কাজ পেয়েছে আপরাজিতা । দু’দিন আগে চাকরী কনফার্ম হলেও পলাশকে বলেনি চমক দেওয়ার জন্য ।
আজ সকাল দশটায় পলাশকে টিএসসিতে আসতে বলেছে । সাড়ে নয়টা থেকে একাই বসে আছে অপরাজিতা । গত তিন বছরে একটি দিনের জন্যও অপরাজিতাকে অপেক্ষা করতে হয় নি । নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে এসে পলাশ বসে থাকতো । আজ আসে নি । এগারোটার সময় চোখ মুখে যথাসম্ভব বিরক্তি নিয়ে পলাশ এসে বসলো । ‘একটা সুখবর আছে ' এতুটুকু বলেই থামতে হল কথা আগানোর আগেই পলাশ বলে উঠলো , ' তোমার সুখবর পরে শুনব আগে আমার কথা শোন । আমার পক্ষে সম্পর্ক রাখা সম্ভব না । ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকতে হয় । প্রেম-ভালোবাসা করার মত যথেষ্ট সময় আমার হাতে নাই ' এই বাক্যটিই এলোমেলো করে দিল অপরাজিতার পৃথিবী । 'আমার তাড়া আছে , আমি গেলাম । আর শোন যখন তখন ফোন দিয়ে বিরক্ত করাটা আমার পছন্দ না মিটিং এ থাকতে হয়। ' অপরাজিতাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই উঠে চলে গেল পলাশ । ছলছল চোখে কিছুক্ষণ পলাশের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে থেকে একসময় উঠে আসলো অপরাজিতা । বারোটার বাসে বাসায় চলে যাবে সে । বাসের এখনো ৩০ মিনিট বাকী । এই সময়টা রোকেয়া হলের সামনের রাস্তায় বসে থাকা যায় । এখানেই পলাশের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে গল্প করেছে । শাড়ি পরে ক্যাম্পাসে আসলেই পলাশ একটা ফুলের মালা কিনে দিবে এটা অলিখিত নিয়ম । মতি নামের একটা রোগা পটকা ছেলের থেকেই বেশীরভাগ ফুলেরমালা কেনা হয় । আজ একা বসে থাকতে দেখে মতি এসে বললো ' আফা একা বইসা আছেন ক্যান ? ভাইজান কই ? মালা নিবেন না ? টাটকা ফুলের মালা আনছি '
মালা নিবো না বিরক্ত করিস না
'একটা মালা নেন আফা’
মতির অনুরোধে অনিচ্ছা স্বত্বেও মালা নিল
ব্যাগের চেইন খুলে মালা রাখতে গিয়েই চোখ গেল গোলাপের দিকে । পলাশকে দেয়ার জন্য কিনেছিল দেওয়ার সুযোগ হয়নি।
আজ নতুন করে পুরাতন স্মৃতিগুলো মনে পড়ছে অপরাজিতার । এক চৈত্রের দুপুরে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানে পলাশের সাথে পরিচয় খুবই সাদামাটাভাবে । জানা গেল দু'জনই ঢাবিতে পড়ে । তবে ইয়ার এবং ডিপার্টমেন্ট আলাদা । সেদিনের ঘটনা এখানেই শেষ । সপ্তাহখানিক পরের ঘটনা । সেদিন ভার্সিটির বাস মিস করেছিল অপরাজিতা । জহির স্যারের ক্লাসে পাঁচমিনিট দেরী হলেই ঢোকার নিয়ম নেই তাই পরের বাসে ক্যাম্পাসে এসে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়াতে বসে ছিল । ক্লাস শেষে বন্ধুরা সবাই টিএসসিতে পড়বে। কোনার দিকের ফাঁকা একটা টেবিলে বসতেই চোখাচোখি হয় পলাশের সাথে । ‘ ভাইয়া কি একাই এসেছেন ? ফ্রী থাকলে আমার টেবিলে বসতে পারেন’ পলাশ এসে বসলো অপরাজিতার পাশে । ভাগ্যদেবতা প্রসন্ন ছিল কিনা জানিনা হঠাৎ বান্ধবী শীলার ম্যাসেজ ‘দোস্ত স্যার আজ দুইঘন্টা ক্লাস নিবেন তুই টিএসসিতেই থাক । আমরা ক্লাস শেষে আসবো’ দুজনের গল্প চললো বেশ কিছুটা সময় । ফোন নম্বর দেওয়া নেওয়া । অপরাজিতার বান্ধবীরা আসলে ওদের সাথে পরিচিত হয়ে বিদায় নিল পলাশ ।
কিছুদিন নিরুত্তাপ চলার পর হঠাৎ একদিন পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানাতে ফোন দেয় পলাশ।
ওদের সাধারণ কিংবা অসাধারণ ভালোবাসার শুরুটা এভাবেই । একেবারেই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে পলাশ । মফস্বল থেকে ঢাবি'তে পড়তে আসা । আর পাঁচটা সাধারণ ছাত্রের মতই হলের গণরুমে থাকার মধ্যদিয়ে জীবনের নতুন সংগ্রামের শুরু । পলাশের বাবা সরকারী চাকরী থেকে রিটায়ার্ড করেছেন পাঁচ বছর আগে । ছোট ভাই ক্লাস টেনে পড়ে । বাবার পেনশনের টাকাগুলোই চারজনের সংসারের একমাত্র সহায় ।
বাড়ি থেকে খুব একটা টাকা পয়সা নেওয়ার সুযোগ ছিল না পলাশের । হলের এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে একটা টিউশনি জোগাড় হয়ে গেল একদিন । তারপরে ধীরে ধীরে টিউশনির পরিমাণ বেড়ে গেল ।
অপরাজিতারও একই অবস্থা । বাবার ছোট একটা চাকরী । বাসা ভাড়া , ছোট দুই ভাইবোনের স্কুলের বেতন আর দৈনন্দিন চাল ডাল কিনতেই ফুরিয়ে যায় সব টাকা । তারও একমাত্র সহায় টিউশনির টাকা । এভাবেই জীবনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে ভালোবাসার ভেলা এগিয়ে চলে । পলাশের জন্য খুব মায়া হতো অপরাজিতার । দিনের পর দিন পুরাতন শার্ট আর শতছিন্ন স্যান্ডেল পরে কাটিয়ে দেওয়া পলাশকে তাই মাঝে মাঝে টিউশনির টাকা দিয়ে নিউমার্কেট থেকে দামাদামি করে শার্ট কিনে দিতো । খুব কষ্ট করেই টাকা গুছাতো অপরাজিতা । সহজে রিকশায় চড়তো না । রিকশা ভাড়ার ১০-১৫ টাকাও তার কাছে অনেক বেশী । জীবনের সাথে সংগ্রাম করা দুটো প্রাণ যখন টিএসসির আঙ্গিনায় হাত ধরে বসে থাকতো তখন অন্যদের ঈর্ষা হতো বৈ কি !
প্রতিদিন ছাত্রের মায়ের হাজারটা অভিযোগে টিউশনি করতে বিরক্ত ধরে যায় । একসময় টিউশনি ছেড়ে পত্রিকায় কন্ট্রিবিউটর ফিচার লেখক হিসেবে যোগ দেয় পলাশ । এর কিছুদিন পরেই মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মত সুযোগ চলে আসে একটা বেসরকারী টিভি চ্যানেলে পার্টটাইম জার্নালিস্ট হিসেবে কাজ করার । অপরাজিতার অনেক স্বপ্ন ছিল পড়াশোনা শেষ করে দু’জনই একসাথে সাংবাদিকতা করবে । কিন্তু পার্টটাইম সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করার ছয় মাস পরেই মাস্টার্স শেষ হয়ে যায় পলাশের । এরপর এক বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি শুরু করে । চাকরিটা কোনভাবেই পছন্দ হয়নি অপরাজিতার । বারবার পলাশকে অনুরোধ করেছিল সাংবাদিকতায় ফুলটাইম না হয়ে বহুজাতিক কোম্পানির চাকরি বেছে নিল পলাশ । সাংবাদিকের অনিশ্চিত জীবন নাকি তার ভালো লাগে না । এরপর থেকেই বদলে যেতে থাকে পলাশ । অপরাজিতাকে এড়িয়ে চলতে থাকে । পলাশের কাছের বন্ধুরা অপরাজিতাকে অনেকবার বলার চেষ্টা করেছে পলাশ তার অফিসের এক সহকর্মীর সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে । অপরাজিতা কখনই কান করেনি । আজ বুঝতে পারছে পলাশের বন্ধুরা ভুল বলেনি । দুনিয়াভেঙ্গে কান্না আসলেও পরিচিত লোকজন দেখে ফেলবে ভয়ে কাঁদতে পয়ারছে না । বিধাতা বোধহয় অপরাজিতার মনের কথা বুঝতে পেরেছিলেন তাই আকাশভেঙ্গে বৃষ্টি দিলেন । অঝোরে কাঁদতে কাঁদতেই সিদ্ধান্ত নেয় পলাশকে ছড়া সে থাকবে না আর এই পৃথিবীতে । বাসায় ফেরার সময় মোড়ের দোকানটা থেকে কিছু ঘুমের ঔষধ কিনবে । তারপর সবার অগচোরে পৃথিবী ছাড়বে । এমন সময় সেই বান্ধবী শীলার ফোন ‘দোস্ত আমাদের বাড়িওয়ালার ছোট ছেলেটা স্কুল থেকে ফেরার সময় অ্যাকসিডেন্ট করেছে । ও পজেটিভ ব্লাড লাগবে তুই কি ডিএমসিতে এসে ব্লাড দিতে পারবি ? ধরা গলায় অপরাজিতা বললো ‘আসছি’
ব্লাড দিয়ে মেডিকেল থেকে বের হয়ে অপরাজিতার মনে হল পৃথিবীটা খুব সুন্দর । বেঁচে থাকলে বাঁচিয়ে দেওয়া যাবে আরো অনেক প্রাণ । আত্মহত্যা করার কোন মানে হয় না ।
দশ বছর পরের ঘটনা
অপরাজিতা আত্মহত্যা করেনি । পড়ালেখা শেষ করে এখন সে ফুলটাইম জার্নালিস্ট । পলাশকে পাশে না পেলেও জীবনসাথী হিসেবে পেয়েছে সাংবাদিক অপুকে । এই দশবছরে জীবনে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হয়েছে । সাংবাদিকতা করতে যেয়ে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে । বিপদে-আপদে বন্ধুর মত পাশে পেয়েছে অপুকে । কাজ করেছে নারী নির্যাতন , ধর্ষণ , এসিড সন্ত্রাস , নারী পাচারের মত বিষয়গুলো নিয়ে । নিউজ রিপোর্টিং করে থামিয়ে দিয়েছে হাজারো অপরাজিতার অপমৃত্যু । পাঁচ বছরের ছেলে আদিত্য মাকে নিয়ে গর্ব করে বন্ধুদের বলে ‘জানিস আমার আম্মু ইয়া বড় সাংবাদিক । কতগুলা গুন্ডা একটা মেয়েকে মেরেছিল । আমার আম্মু টিভিতে নিউজ করে গুন্ডাগুলোকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে’
ছোট আদিত্য জানে না সেই গুন্ডাগুলোই ধর্ষক , নারী নির্যাতক , নারী পাচারকারী কিংবা এসিড নিক্ষেপকারী ....................................
০৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৪৪
তুশি মারইয়াম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ
২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:০২
আমিনুর রহমান বলেছেন:
গতানুগতিক কাহিনীতে সাবলীল লিখায় চমৎকার একটা বিষয় উপস্থাপন।
গল্পে +++
০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:৫৫
তুশি মারইয়াম বলেছেন: জেনে ভালো লাগল
৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:২৬
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: সুন্দর সাবলীল লেখা!!! ভাল লাগল।
০৮ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৬:২৪
তুশি মারইয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ
৪| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:০১
নিষ্কর্মা বলেছেন: কিছুদিন পরে এমন নারী স্বাধীনতার গল্প লিখতে পারবেন না, শুধু লোল ঝরবে। মেয়েরা তেতুলে মত, জানে আশাকরি ইতোমধ্যে। এখন থেকে জামাইয়ের বাড়ীর আসবাব দেখে এমন মেয়েদের গল্প লেখা শুরু করেন, অনেক বেশি লাইক পাবেন।
০৮ ই জুলাই, ২০১৩ ভোর ৬:২৩
তুশি মারইয়াম বলেছেন: আল্লামা তেঁতুল আর জুনায়েদ তেঁতুলনগরী আমাদের জীবন পুরাই তেঁতুলময় করে দিবে
৫| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৭:৫৩
মামুন রশিদ বলেছেন: জীবনের গল্প ।
১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২৪
তুশি মারইয়াম বলেছেন: জীবনের গল্প...............
৬| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:১৬
সকাল রয় বলেছেন:
হুম
১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২৫
তুশি মারইয়াম বলেছেন:
৭| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১২
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:
সবকিছুর পরও আমাদের বেচে থাকার উপকরন খুঁজে নিতে হয়। ভাল লিখেছেন। +++++
১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২৬
তুশি মারইয়াম বলেছেন: বেঁচে থাকার জন্যই বেঁচে থাকার উপকরণ খুঁজতে হয় ...........
৮| ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:৫৪
শুকনোপাতা০০৭ বলেছেন: খুব সুন্দর গল্প.. ভালো লাগল
১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:২৬
তুশি মারইয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ
৯| ১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৮
মাহবু১৫৪ বলেছেন: ++++++++
খুব সুন্দর
১২ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
তুশি মারইয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৪
মোসতাকিম রাহী বলেছেন: আপনার নামের প্রথম অংশটা আমাকে লগডইন হতে বাধ্য করলো!
পুরো লেখাটা পড়ি নি, সময় কম, শুরুর কিছু অংশ আর শেষটা পড়লাম। এণ্ডিং গতানুগতিক না হওয়ায় গল্পটা পরে পুরো পড়ার আগ্রহ জারি রইলো।
নিয়মিত লিখুন। চর্চায় আপনাকে শাণিত করবে।
অশেষ শুভেচ্ছা!