![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুরআনের পঠন-পাঠন, তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন এবং কুরআনের অনুশাসন মেনে চলাকে আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন বলে সূরা আল-কামারে মোট চারবার ঘোষণা দিয়েছেন।
﴿وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْآنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرٍ﴾
‘‘আর আমি নিশ্চয়ই কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি উপদেশ গ্রহণের জন্য, অতএব কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি?[12]
আল-কুরআনের শব্দমালা সহজেই তিলাওয়াত ও হিফয করা যায়, এর অর্থ সহজেই বোধগম্য হয় এবং শেখা যায়; কেননা তা বাক্যবিন্যাসের দিক থেকে সবচেয়ে সাবলীল ও সুন্দর, শৈল্পিকতায় সবচেয়ে নিপূণ ও শ্রেষ্ঠ, অর্থের দিক থেকে সবচেয়ে সত্যবাদী, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে সবচেয়ে স্পষ্ট। যে বা যারাই কুরআনের জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হয় আল্লাহ তাদের জন্য তা নিতান্তই সহজ করে দেন। পৃথিবীর বড় বড় অমুসলিম বিজ্ঞানী যারা আরবী ভাষা শিখেনি তাদের অনেকেই শুধু কুরআনের তরজমা পড়েই আল্লাহর Message পেয়ে যায় এবং সেজন্যই পাশ্চাত্যের অনেক বড় পন্ডিত হয়েও তারা ইসলাম গ্রহণ করতে দ্বিধা করে না। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ﴾
‘‘অতঃপর আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’’[13]
﴿فَإِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِينَ وَتُنْذِرَ بِهِ قَوْماً لُدّاً﴾
‘‘আর আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাকীদের সুসংবাদ দিতে পার এবং কলহপ্রিয় কওমকে তদ্বারা সতর্ক করতে পার।’’[14]
কুরআনকে সহজ করে দিয়ে আল্লাহ আমাদের উপর বড়ই অনুগ্রহ করেছেন। তা না হলে এটা অন্য ধর্মের মত পুরোহিতদের কঠিন নিয়ন্ত্রণেই আবদ্ধ থাকত। অতএব আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কে আছেন কুরআনের দিকে সর্বান্তকরণে এগিয়ে আসবেন, কুরআনের উপদেশ গ্রহণ করবেন, কুরআন শিখবেন এবং কুরআনের মর্মবাণী উপলব্ধি করে জীবনকে কুরআনের রঙে রঙিন করবেন?
কুরআন বুঝা এবং কুরআন নিয়ে গবেষণা কি শুধু আলেমগণেরই কাজ?
কুরআন বুঝা এবং কুরআন নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা শুধু আলেমদের মধ্যেই ইসলাম সীমাবদ্ধ রাখেনি। বরং প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য কর্তব্য হচ্ছে ঐ পরিমাণ কুরআন চর্চা করা, যতটুকু সাধ্য আল্লাহ তাকে দিয়েছেন এবং যতটুকু জ্ঞান, বুদ্ধি ও বুঝ তার রয়েছে। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সকলকেই কুরআন বুঝা ও তা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করার প্রতি আহবান করেছেন। কোন নির্দিষ্ট শ্রেণীকে তিনি বিশেষভাবে এ দায়িত্ব দেননি। কুরআন বুঝা ও গবেষণা যদি কোন একদল লোকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা হত তাহলে কুরআনের কল্যাণ সীমিত হয়ে যেত এবং আয়াতের আহবান স্পষ্টভাবে শুধু তাদের ব্যাপারেই ব্যক্ত করা হত, কিন্তু কুরআনের আহবান এমনটি নয় - এটা উম্মাহর সকলেরই জানা।
ইবন আববাস রা. বলেন, কুরআনের তাফসীর চারভাগে বিভক্ত;
একভাগ আরবরা তাদের নিজেদের কথা থেকেই জানে।
দ্বিতীয় প্রকার তাফসীর না বুঝার ওজর কারো পক্ষ থেকেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তৃতীয় প্রকার তাফসীর অনুধাবন শুধু আলেমগণের পক্ষেই সম্ভব।
আর চতুর্থ প্রকার আল্লাহ ছাড়া আর কেই জানেন না।[15]
তন্মধ্যে যে তাফসীর না বুঝার ক্ষেত্রে কারো ওজর শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয় তা হলো কুরআনে যে সব আহকাম ও বিধান স্পষ্ট, হৃদয়কে নাড়া দেয়া সুন্দর উপদেশাবলী, শক্তিশালী ও সুস্পষ্ট দলীল ও প্রমাণসমূহ এবং সে সব সাধারণ বক্তব্য যা আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।
যেমন আপনি যখন আল্লাহর কালাম নিয়ে ভাববেন, আপনি কি উপলব্ধি করবেন? আপনি উপলব্ধি করবেন, আপনি এমন এক সত্তাকে পেয়েছেন সকল কিছুই যার মালিকানাভূক্ত, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা, প্রতিটি বিষয়ই তাঁর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, সবকিছুর উৎস তিনি এবং তাঁর কাছেই সবার প্রত্যাবর্তন, তিনি আরশের উপর আছেন, জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নেই, তিনি বান্দার অন্তরের কথাও জানেন, তাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল অবস্থা তাঁর জানা, তিনি একাই জগত পরিচালনা করছেন, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা, তিনি দান করেন ও কেড়ে নেন, তিনিই পুরস্কুত করেন ও শাস্তি দান করেন, তিনিই সম্মানিত করেন ও অপদস্থ করেন, তিনিই সৃষ্টি করেন ও রিয্ক দেন, তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, তিনিই তাকদীর ও ফয়সালা নির্ধারণ করেন, তাঁর অনুমতি ছাড়া কোন অণুও আন্দোলিত হয় না, তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোন একটি পাতাও ঝরে না, যমীন ও আসমানের কোন কিছু তাঁর অজ্ঞাত নেই...
এরপর ভাবুন আল-কুরআনে কিভাবে তিনি তাঁর নিজের প্রশংসা করেছেন, গুণগান বর্ণনা করেছেন, বান্দাদেরকে নসীহত করেছেন আর বান্দাদেরকে ঐ পথের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন যাতে রয়েছে তাদের সুখ-শান্তি ও সাফল্য এবং সতর্ক করেছেন সে সব বিচ্যুতি ও বিভ্রান্তি থেকে যাতে রয়েছে তাদের অশান্তি ও ধ্বংস। কুরআনের মাধ্যমেই বান্দা অতি সহজেই জানতে পারছে আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ ও মহান গুণাবলী সহ তাঁর পরিচয়। আল-কুরআন বান্দার সামনে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে আল্লাহর অনুগ্রহ ও নেয়ামতসমূহ তুলে ধরেছে, আর অনুগত বান্দাদের জন্য আল্লাহর দেয়া মর্যাদা, সুখ-শান্তি ও মহা পুরস্কারের সংবাদ এবং পাপিষ্ঠ ও অবাধ্য বান্দাদের ভয়াবহ ও মর্মান্তিক শাস্তির দুঃসংবাদ প্রদান করেছে।[16] এ বিষয়গুলো এবং এছাড়াও আরো বহুবিধ বিষয় আল্লাহর যে কোন বান্দা চাইলেই সহজে অনুধাবন করতে পারে। তবে এজন্যে তাদের প্রয়োজন কুরআন অধ্যয়ন করা এবং কুরআন নিয়ে কিছুটা চিন্তা-গবেষণা করা এবং এক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত অথচ Authentic কিছু তাফসীরের সাহায্য নেয়া।
পাশাপাশি কুরআনে এমন সব বিষয়ও দেখা যায় যা বুঝার জন্য আলেম ও স্কলারদের বিশেষ জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, সাধারণ মানুষ মাত্রই তা বুঝতে পারে না। যেমন কুরআনের কাব্যিক অভিব্যক্তি, সাহিত্যিক শৈল্পিকতা এবং আরবীভাষার অলংকরণ ও বর্ণনাভঙ্গির বহু সুক্ষ বিষয় আরবী ভাষায় পারদর্শী বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য কারো পক্ষে বুঝা সম্ভব নয়। একইভাবে কুরআন থেকে হালাল-হারামের প্রতিটি বিষয় গবেষণা করে বের করা ফাকীহ ও মুহাদ্দিস-মুফাসসির ছাড়া অন্য সাধারণের পক্ষে অসম্ভব। কুরআনে খুবই স্বল্প কিছু শব্দ ও বাক্য রয়েছে যার মর্ম শুধু আল্লাহই জানেন, যেমন কিছু সূরার শুরুতে ‘আলিফ-লাম-মীম’ ইত্যাদি Expression-সমূহ। (সংকলিত)
©somewhere in net ltd.