নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের বাঁকে বাঁকে স্বপ্ন দেখি

মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন

রিয়াজ উদ্দিন

স্বপ্ন দেখতে, স্বপ্নের কথা বলতে ভালোবাসি

রিয়াজ উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাজুর ঈদ(গল্প)

১২ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:৫৬

শহরের যেখানে সাজুরা থাকে সেখানকার পরিবেশ খুবই খারাপ। সাজুর সাথে ওর মা বাবা আর ছোটবোন তন্বি থাকে। যখন ওর বাবা শহরে আসেন তখন সাজু অনেক ছোট। তন্বির বয়সও তখন দু কিংবা তিন। সাজুর বাবা সোহরাব মিয়া রিকশা চালান। বস্তির একটি রুম নিযে় ওদের বসবাস। সাজুর মা কখনো কখনো বস্তির হোটেলগুলোতে রান্নার কাজ করে। শহরে কী সবাই ভালোভাবে থাকতে পারে? সোহরাব মিয়া মাঝে মাঝে স্ত্রীর সাথে কথা বলে। কষ্টের কথা শুধু স্ত্রী নাদিয়া বেগমকে জানাত। সোহরাব মিয়ার ইচ্ছে ছিল সাজু আর তন্বিকে স্কুঠে পাঠাবেন। পড়ালেখা শেখাবেন। মানুষ বানাবেন। মনের ভেতর সব ইচ্ছেগুলোকে পোষণ করতেন অনেক যতন করে। রিকশা চালিযে় যা আয় করেন তা দিযে় কোনো রকম খাবারের পেছনে ব্যয় করতে পারেন। ঘর ভাড়া দেন। ছোটবেলা থেকেই সাজু মাযে়র সাথে হোটেলে যেত। মাযে়র সাথে বসে মাযে়র কাজগুলো দেখত। বস্তির খুব কাছাকাছি কোনো স্কুল নেই। সাজুকে যে কয়টি বই কিনে দেয়া হযে়ছিল সেগুলো সাজু অনেক যতœ করে পড়ার চেষ্টা করেছে। বর্ণমালা শিখেছে বাবার কাছেই। সাজুও ছোট বোন তন্বিকে পড়ায়। যতটুকু লিখতে পারে তন্বিকে লেখা শেখায়। দু’ভাইবোনের পড়ার দৃশ্য সত্যিই ভালো লাগার। ছোট্ট ঘরে শিক্ষার আলো জ্বালানোর প্রচেষ্টা সাজুর।

অনেক রাতে সাজুর বাবা ঘরে ফিরেন। ক্লান্ত দেহটা নিযে় যখন ঘরে ফেরেন তখন কথা বলার শক্তিটুকুও হারিযে় ফেলেন। কোনোরকম রাতের খাবার খেযে় শরীরটাকে বিছানার ওপর রাখেন। চোখ বন্ধ করতেই সোহরাব মিয়ার ঘুম চলে আসে। চোখ বন্ধ হলেও মনের চোখে কল্পনায় ভাসেন। নানান স্বপ্ন তার চোখের কাছে উডে় বেড়ায়। রঙিন রঙিন স্বপ্ন হাতছানি দিযে় ডাকে। এই বুঝি ছোট্ট ঘরে সুখের বাতাস বইবে। সাজু আর তন্বি স্কুলে যাবে। নাদিয়া বেগমকে পছন্দের শাডি় কিনে দিবেন। কোনো অভাবই আর তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। রিকশা চালানো বন্ধ করে বস্তির কাছেই একটি মুদি দোকান দিযে় ব্যবসা করবেন। আরো হাজারো স্বপ্ন সোহরাব মিয়ার কাছে ধরা দেয়। স্বপ্নের ঘোরে সোহরাব মিয়া আনন্দে আত্মহারা হযে় ওঠেন। মনের অজান্তেই বলে ওঠেনÑসাজু ব্যাগ গুছিযে় নে বাবা স্কুলের সময় হযে়ছে।’ ঘুমের ভেতর এমন কথা শুনে নাদিয়া বেগম চোখ বড় বড় করে তাকান। না। তার স্বামী ঘুমাচ্ছেন। নাদিয়া বেগমের বুঝতে কষ্ট হয় না সোহরাব মিয়া স্বপ্ন দেখছেন। স্বামীর এমন আচরণে তার মনের ভেতরও কষ্ট উঁকি দেয়। বুঝতে পারেন সোহরাব মিয়া সারাদিন তাদের নিযে় ভাবেন। ভাবেন সাজু আর তন্বিকে নিযে়ও।



সকাল হলেই সোহরাব মিয়া রাস্তায় বের হওয়ার জন্য ব্যস্ত হযে় পডে়ন। নাদিয়া বেগম ঘরে যা থাকে তা খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। কখনো সোহরাব মিয়ার পেট ভরে কখনো না। যেদিন খালি পেটে বের হতে হয় সেদিন রিকশা চালাতে কষ্ট হয়। টাকা রোজগার করতে পারলে হোটেলে গিযে় পেট ভরে খাবার খেযে় নেয়। খাবারের টাকা পরিশোধ করে সাজুদের কথা ভাবেন। ওরা বাডি়তে বসে কী পেট ভরে খেতে পারছে? ছেলে মেযে়দের ভাবার পাশাপাশি নিজের শরীরের শক্তির কথা ভাবেন। নিজের শক্তি না থাকলে কীভাবে রিকশা চালাবেন। নানান বিষযে় ভেবে চিন্তে রিকশার পেডেলে পা রাখেন। যাত্রীদের নিযে় তাদের গন্তব্যে পৌঁছান। শুধু নিজের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। আর জানেনও না তার গন্তব্য আসলে কোথায়? সোহরাব মিয়ার দিন কাটে রাজপথের কালো পিচের ওপর। যাত্রীদের বহন করা যতটা না কষ্টের তার চেযে় কষ্টের নিজের সংসার বহন করা।

বছরের মাসগুলো কখন যে কেটে যায় তা সোহরাব মিয়ার পরিবারের কারো কাছে হিসেব থাকে না। ঘরের ভেতর দু একটি ক্যালেন্ডার থাকলেও কেউই তার দিকে লক্ষ রাখে না। রমযান মাস চলে এসেছে। চারদিকে কেমন যেন আলাদা পরিবেশ। এ মাসেই বুঝি সবাই পরম করুণাময় আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় ধর্মীয় কাজগুলো ভালোভাবে সবাই পালন করার চেষ্টা করে। সাজুদের বস্তির পরিবেশও কিছুটা ভিন্ন। হোটেলের সামনে কযে়কটি পুরনো ব্যানার সেলাই করে পর্দা টানিযে় দেয়া হযে়ছে। সাজু বুঝতে পারে রমযানকে সম্মান জানিযে় এমন ব্যবস্থা। কিন্তু এর আড়ালে বসে যারা দিনের বেলায় খাবার খায় তারা যদি আল্লাহকে সম্মান জানাত তাহলে কতই না ভালো হত। ছোট্ট সাজুর কল্পনায় এসব বিষয় উঁকি দেয়। ঘরের জানালার পাশে দাঁডি়যে় এমনটি ভাবে। সোহরাব মিয়া প্রতিবছরের মত এবারও রোযা রেখে দুপুর পর্যন্ত রিকশা চালায়। বাকি সময়টা ঘরে থেকে শুযে় বসে কাটায়। সাজু আর তন্বির সাথে গল্প করে। সাজুকে এবার নতুন পোশাক না দিতে পারলেও তন্বিকে দেয়ার ইচ্ছে আছে সোহরাব মিয়ার। কীভাবে দিবে? যা রোজগার করেন তা দিযে়ও তো সংসার চলে না। দু’পাঁচশ’ টাকা খরচ করার চিন্তাও মাথায় নিতে পারেন না। তারপর দুপুর পর্যন্ত গাডি় চালান। সোহরাব মিয়া ইফতারের পর রিকশা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। নিজের কষ্ট হলেও কিছু বাড়তি টাকা আয় করে তন্বির পছন্দ মত পোশাক কিনে দিবেন। সাজু বাবার কাছে এসে আস্তে স্বরে বলে ‘বাবা! এবার ঈদে আমাকে পাঞ্জাবি কিনে দিবে না?’ সোহরাব মিয়া নিরব থাকেন। সাজু পুনরায় জিজ্ঞেস করে। কখন যে তন্বি এসে দাঁডি়যে় আছে সোহরাব মিয়া খেয়াল করেন নি। ‘বাবা আমাকেও নতুন জামা কিনে দিবে হবে।’ তন্বি কথাটি বলেই বাবার গলা জডি়যে় ধরে। ‘দিব মা, দিব মা।’

‘বাবা আমারটা?’ সাজু আবার জানতে চায়।

‘টাকা থাকলে দিব বাবা।’

সাজুর চোখে জল এসে যায়। রাগ আর ক্ষোভ ওর ভেতর কাজ করে। বাবাকে বলতে ইচ্ছে করে না বাবা দেয়ার দরকার নেই। নতুন পাঞ্জাবি চাই না।

সাজু কিছুই বলতে পারে না। মনের ভেতর ও কান্না শুরু করে। কান্নার আওয়াজ শুধু সাজুর কানেই বাজে।

রমযানের দিনগুলো কেমন যেন দ্রতই চলে যাচ্ছে। দিনের বেলার চেযে় সন্ধ্যার পরই রাস্তা ঘাটে মানুষের কোলাহল বেশি। শহরের মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার ধুম। সোহরাব মিয়া মার্কেটের সামনে যাওয়ার সময় মানুষদের কেনাকাটা দেখে সাজু আর তন্বির কথা মনে করে। এবারের ঈদে ওদের পছন্দমত জামা-কাপড় কিনে দিতে পারবে কিনা সেটাও ভাবে। নিজের মত করে বাজেট করে সোহরাব মিয়া। প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিজের বিছানার নিচে জমায়। চাঁদ রাতে ফুটপাত দিযে় ওদের জন্য পোশাক কিনে দিবেন। বাড়তি টাকা থাকলে নাদিয়া বেগমের জন্যও একটা কম দামি শাডি় আনার পরিকল্পনা করে। আর নিজের জন্য? না। সোহরাব নিজের কিছুই কেনার প্রযে়াজন মনে করেন না। অথচ পরনের লুঙ্গিটি দু’বছর হযে় গেছে। সন্ধ্যা পরে প্রতিদিনই রিকশা নিযে় সোহরাব মিয়া বের হন। রাত অধিক পর্যন্ত রিকশা চালিযে় টাকা আয় করে ঘরে ফিরেন। নাদিয়া বেগমের কষ্ট হয় স্বামীর এমন পরিশ্রম দেখে। সব দেখেও কিছু বলতে পারেন না। গুনতে গুনতে চাঁদ রাতে এসে তন্বির জন্য পোশাক আর সাজুর জন্য একটা লাল রঙের পাঞ্জাবি কিনে। কেনার সময় কত কথা বলে কমানোর চেষ্টার ত্র“টি ছিল না। সোহরাব মিয়ার ভেতরে আনন্দের বন্যা বইছে। ছেলে মেযে়র হাতে পোশাক দিতে পারছেন। ওদের ঈদ অনেক আনন্দের হবে। সাজু আর তন্বি বাবার অপেক্ষায় দরজার পাশে বসে থাকে। হঠাৎ বাবার শব্দ শুনতে পেযে় দুজনই দরজা খুলল। বাবার হাতে ব্যাগ দেখে দুজনই আনন্দে আত্মহারা হল। পছন্দের পোশাক দেখে কারোরই যেন বিশ্বাস হচ্ছে না। বাম হাতের ব্যাগটি নিযে় নাদিয়া বেগমের কাছে গিযে় সোহরাব মিয়া বলল ‘নাদিয়া তোমার জন্য এই শাডি়টা এনেছি।’

নাদিয়া বেগম শাডি়র ব্যাগটা হাতে নিযে় জিজ্ঞেস করে-

‘তোমার জন্য কি কিনেছ?’

সোহরাব মিয়া নিরুত্তর থাকেন।

নাদিয়া বেগম কিছুক্ষণ সোহরাব মিয়ার দিকে তাকিযে় থেকে নিজের অজান্তেই চোখের পানি ফেললেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২

খেলাঘর বলেছেন:

এ রকম কোটী পল্প জমা হয়ে আছে বাংলায়; আমরা সাজুদের স্বপ্নকে বাস্তবতা দেয়ার দায়িত্ব নেবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.